রাজধানী ঢাকা নগরীর রাজপথে সভা-সমাবেশ, মিছিল-বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। একজন উচ্চ শিক্ষিত ও
দায়িত্ববান মন্ত্রীর কাছ থেকে এমন অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণা মোটেই
অভিপ্রেত ছিল না। এতে দেশের মানুষ স্তম্ভিত। কেননা, তাদের এটাই জানা, দেশের
জরুরি অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের ঘোষণা আসতে পারে। দেশে এমন
কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যে কারণে সভা-সমাবেশ, মিছিল-বিক্ষোভ ইত্যাদি
নিষিদ্ধ হতে পারে।
মানুষের বিস্ময় ও ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ, ঘোষণাটি প্রথাগতভাবে বা নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের নয়, এমন কি সরকারের পক্ষ থেকেও নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার বাইরে একটি অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন।
রাজপথে সভা-সমাবেশ ইত্যাদি নিষিদ্ধের ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অনেক কথার অবতারণা হয়। বেশিরভাগ লোকের দাবি, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন ছিল।
এদিকে সরকারের আরেক মন্ত্রী বলেছেন, ত্রাণ কাজে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধকরণ যৌক্তিক, তবে দীর্ঘায়িত হলে তা হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এদিকে ড. শাহদীন মালিক, ড. পিয়াস করীম, অধ্যাপক আসিফ নজরুলসহ বিশিষ্ট আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিক বলেছেন, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সংবিধান বিরোধী ও অগণতান্ত্রিক। সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক স্বার্থ রক্ষার কথা বলা আছে। ওই মৌলিক স্বার্থের মধ্যে উল্লেখ আছে—সভা-সমাবেশ করার অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
এ কথা সত্য, গত কয়েক মাস ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলে আসছে। হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশের বেপরোয়া অভিযান। এতে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়। জনমনে অস্বস্তি, অশান্তির সৃষ্টি হয়। দেশে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। এসব কাণ্ড কারখানা বন্ধ করে দেশে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে, এর জন্য প্রয়োজন ছিল সংবিধান অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া। অর্থাত্ আগে সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে তারপর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে পারত। কিন্তু সরকার সে নিয়ম পালন করেনি বলেই ঘোষণাটি নিয়ে এ সমালোচনার ঝড় বইছে।
দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ নির্বাচন। কেননা, জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাদের মতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে সরকার চাইছে, নির্বাচিত ও ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এর আগেও অশান্ত হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ওই গোলযোগে ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তখন সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারণ হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কয়েকটি সবার কাছে গ্রহণীয় নির্বাচনও হলো। এমনকি শেখ হাসিনা সরকারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে সরকারে এসেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার এই, শেখ হাসিনা সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়। আর তারপর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। ১৮ দলীয় জোট কিছুতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। সরকারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে না। আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে।
এদিকে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্রসমাজ, শিক্ষক সমাজ প্রভৃতি সবার স্পষ্ট অভিমত বর্তমান প্রেক্ষপটে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত।
মূল কথা হচ্ছে—সরকারের লাগাতার কিছু কর্মকাণ্ড জনগণের আস্থাহীনতার সুযোগ সৃষ্টি করে। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কুইক রেন্টাল কেলেঙ্কারি ইত্যাদির কোনো সুরাহা করতে না পারা, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ না করা, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না করা; বিশ্বজিত্ হত্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচার, সর্বশেষ হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা প্রদান না করা, অন্যদিকে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করার উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়া, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, প্রধান দল আ.লীগের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকা, ক্রমান্বয়ে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সব ব্যবস্থাকে দলীয়করণ, একনায়ক শাসনব্যবস্থা চালু, ফ্যাসিবাদের নির্লজ্জ প্রকাশ ইত্যাদি আরও অনেক জনগণের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যার যথোপযুক্ত সমাধান না করা এবং বিরোধী দলের ওপর অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক নির্যাতন-মামলা ও গ্রেফতার এবং সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ, কিছু টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে তার উপযুক্ত কারণ না দর্শানো ইত্যাদি কারণে সরকারের ভাবমূর্তি বহুলাংশে ক্ষুণ্ন হয়। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দলের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক। জনগণ ধরেই নিয়েছিল এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। বিদ্যুত্ সমস্যা দূর হবে, গ্যাস-পানি নিয়মিত পাওয়া যাবে। নিত্যপণ্যের মূল্য সাধ্যের মধ্যে থাকবে, দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল থাকবে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দেশে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে। কিন্তু জনগণ দেখল তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিগত সোয়া চার বছরে জনগণ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিতই হয়েছে—সমাধান হয়নি কোনোটারই। জনগণ তাই হতাশ।
এরকম অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হোক এটা জনগণের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। সরকারের উচিত জনগণের মনের ভাবকে উপলব্ধি করা এবং সে মোতাবেক কাজ করা, একনায়কত্ব ও ফ্যাসিবাদ পরিহার করা। অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা; তাহলেই সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন পড়বে না— রাজনৈতিক হট্টগোলের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হবে না। দেশ শান্ত হবে—সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও হবে। আমরা আশা করব, সরকারের বোধোদয় হবে। (Mahfoj siddiki)
মানুষের বিস্ময় ও ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ, ঘোষণাটি প্রথাগতভাবে বা নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের নয়, এমন কি সরকারের পক্ষ থেকেও নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার বাইরে একটি অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন।
রাজপথে সভা-সমাবেশ ইত্যাদি নিষিদ্ধের ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অনেক কথার অবতারণা হয়। বেশিরভাগ লোকের দাবি, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন ছিল।
এদিকে সরকারের আরেক মন্ত্রী বলেছেন, ত্রাণ কাজে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধকরণ যৌক্তিক, তবে দীর্ঘায়িত হলে তা হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এদিকে ড. শাহদীন মালিক, ড. পিয়াস করীম, অধ্যাপক আসিফ নজরুলসহ বিশিষ্ট আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিক বলেছেন, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সংবিধান বিরোধী ও অগণতান্ত্রিক। সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক স্বার্থ রক্ষার কথা বলা আছে। ওই মৌলিক স্বার্থের মধ্যে উল্লেখ আছে—সভা-সমাবেশ করার অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
এ কথা সত্য, গত কয়েক মাস ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলে আসছে। হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশের বেপরোয়া অভিযান। এতে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়। জনমনে অস্বস্তি, অশান্তির সৃষ্টি হয়। দেশে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। এসব কাণ্ড কারখানা বন্ধ করে দেশে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে, এর জন্য প্রয়োজন ছিল সংবিধান অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া। অর্থাত্ আগে সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে তারপর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে পারত। কিন্তু সরকার সে নিয়ম পালন করেনি বলেই ঘোষণাটি নিয়ে এ সমালোচনার ঝড় বইছে।
দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ নির্বাচন। কেননা, জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাদের মতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে সরকার চাইছে, নির্বাচিত ও ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এর আগেও অশান্ত হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ওই গোলযোগে ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তখন সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারণ হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কয়েকটি সবার কাছে গ্রহণীয় নির্বাচনও হলো। এমনকি শেখ হাসিনা সরকারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে সরকারে এসেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার এই, শেখ হাসিনা সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়। আর তারপর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। ১৮ দলীয় জোট কিছুতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। সরকারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে না। আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে।
এদিকে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সমাজ, সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্রসমাজ, শিক্ষক সমাজ প্রভৃতি সবার স্পষ্ট অভিমত বর্তমান প্রেক্ষপটে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত।
মূল কথা হচ্ছে—সরকারের লাগাতার কিছু কর্মকাণ্ড জনগণের আস্থাহীনতার সুযোগ সৃষ্টি করে। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কুইক রেন্টাল কেলেঙ্কারি ইত্যাদির কোনো সুরাহা করতে না পারা, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ না করা, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না করা; বিশ্বজিত্ হত্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচার, সর্বশেষ হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা প্রদান না করা, অন্যদিকে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করার উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়া, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, প্রধান দল আ.লীগের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকা, ক্রমান্বয়ে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সব ব্যবস্থাকে দলীয়করণ, একনায়ক শাসনব্যবস্থা চালু, ফ্যাসিবাদের নির্লজ্জ প্রকাশ ইত্যাদি আরও অনেক জনগণের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যার যথোপযুক্ত সমাধান না করা এবং বিরোধী দলের ওপর অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক নির্যাতন-মামলা ও গ্রেফতার এবং সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ, কিছু টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে তার উপযুক্ত কারণ না দর্শানো ইত্যাদি কারণে সরকারের ভাবমূর্তি বহুলাংশে ক্ষুণ্ন হয়। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দলের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক। জনগণ ধরেই নিয়েছিল এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। বিদ্যুত্ সমস্যা দূর হবে, গ্যাস-পানি নিয়মিত পাওয়া যাবে। নিত্যপণ্যের মূল্য সাধ্যের মধ্যে থাকবে, দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল থাকবে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দেশে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে। কিন্তু জনগণ দেখল তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিগত সোয়া চার বছরে জনগণ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিতই হয়েছে—সমাধান হয়নি কোনোটারই। জনগণ তাই হতাশ।
এরকম অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হোক এটা জনগণের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। সরকারের উচিত জনগণের মনের ভাবকে উপলব্ধি করা এবং সে মোতাবেক কাজ করা, একনায়কত্ব ও ফ্যাসিবাদ পরিহার করা। অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা; তাহলেই সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন পড়বে না— রাজনৈতিক হট্টগোলের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হবে না। দেশ শান্ত হবে—সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও হবে। আমরা আশা করব, সরকারের বোধোদয় হবে। (Mahfoj siddiki)