টিউশনিতে তখন প্রথম প্রথম। সেজেগুজে যেতাম; যেন টিউশনিতে নয়, শ্বশুরবাসায় যাচ্ছি।
আমি আবার বাইরে কারো বাসায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে ভীষণ লাজুকপ্রকৃতির মানুষ। যেমনঃ টিউশনিতে বিস্কিট যদি ৮ টা দিত, আমি ১টা খেতাম, দুধ/চা এক কাপ দিলে আমি তিন ভাগের একভাগ খেতাম, এমন। আবার কখনো কিছু খেতে সাধলে প্রথমেই “না” বলে দিতাম, তবে পরে ঠিকই খেতাম একটু সাধাসাধি করলে। তবে এই “না” বলা স্বভাটার জন্য মনে মনে নিজেকে অনেক শাসিয়েছি - “বেটা খেতে ইচ্ছা করছে, আর তুই না বলে দিলি কোন সাহসে? তুই না খেলে নাই, আমাকে খাওয়া।” টাইপ শাসানো আর কি।
যাই হোক, একদিন এরকম 'কম খেয়ে' রেখে দেওয়া বাকি খাবারগুলো ফেরত নিতে এসে ছাত্রী পায়েলের মা বলে বসলেন “তুমি একদম আমাদের বড় জামাইটার মত।”
“জ্বী আন্টি?”
“মানে আমাদের বড় জামাইটাও আমার বড় মেয়ের টিউশন মাস্টার ছিল।”
(ব্যাপারটা বুঝলাম না। পায়েলের আম্মমুর মতলব কি? ওঁর জামাই টিউশন মাস্টার ছিল, আমিও টিউশন মাস্টার, এটা কি আর এমন মিল? ওই মাস্টার তাঁর বড় মেয়ে বিয়ে করছে, আমি তাঁর ছোট মেয়ে বিয়ে করলেইনা বলার মত একটা মিল হত!অথচ পায়েল তখন ক্লাস সেভেনে পড়ত)
চুপ করে রইলাম।
একটু পর মহিলা খাবারের ট্রে-টা কিচেনে রেখে এসে শুরু করলেন গল্পের টুইস্টওয়ালা অংশ। কথাগুলো এগজ্যাক্টলি মনে নেই। তবে অনেকটা এমন ছিল- তাঁর বড় মেয়ের জামাই নাকি এই বাসায় টিউশন মাস্টার ছিলেন। আমার মতোই পান্জাবী আর জিন্স পড়ে পোজপাজ মেরে আসতেন। আর খুব লাজুক ছিলেন। বছরখানেক পরে তাঁর বড় মেয়েটাকে পটিয়ে ফেলে। তারপরের কাহিনী শুধুই হিস্ট্রী।
তবে শেষে একটা কথা বলেছিলেন,“তুমিও অনেকটা ওর মতো।”
পায়েলকে দেখলাম আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে, আমি চোখ পিটপিট করে একবার মাকে দেখি, আবার পায়েলক।
কপাল আর নাক ঘেমে গেল! গা দিয়ে দরদর করে ঘাম ছুটছে। জীবনে কোনদিন এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, তাই সামাল দেব কিভাবে বুঝছিলাম না। তাই কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। একটু পরে পায়েলকে ছুটি দিয়ে কোনমতে হেঁটে ওদের দরজা অবধি এসেই দিলাম এক ভোঁ দৌড়। এরপরে আর ওই বাসায় পড়াতে যাইনি। মহিলা ফোন দেবে ভেবে ওই রাতেই আমার 4216 সিমটা চেঞ্জ করে ফেললাম।
একটা ব্যাপারে এখনও মাঝে মাঝে খটকায় পড়ে যাই- মহিলা কি বুঝাতে চেয়েছিল ওদিন আমাকে? সতর্ক করে দিতে চেয়েছিল? নাকি পোজপাজ মারা লাজুক বড় জামাইয়ের লিটল ভার্সন হতে উত্সাহ দিতে চেয়েছিল??:
তবে হ্যাঁ, এরপরে পায়েল স্কুলে যাওয়ার সময় ওয়াসামোড়ে যখনই আমাকে দেখত, দেখতাম হাসত অনেক।
হয়ত আমার বোকামী দেখে হাসত।
অথবা আল্লায় না করুক, তার দুলাভাই’র মতো একটা ছেলে পেয়ে আবার হারিয়ে ফেলায় মাথা নষ্ট হয়ে গেছিল। হাঃহাঃহাঃ
দীর্ঘ ৩ বছর পর আজ সকালে ছোট মামার বাসা থেকে আসার সময় ডা: খাস্তগীর স্কুলের সামনে দেখা হয়ে গেল পায়েলেরে..............পায়েলের প্রথম প্রশ্ন ছিল স্যার বিয়ে করেছেন???আমার শেষ প্রশ্ন ছিল তোমাকে কে পড়ায়? স্যার না ম্যাডাম??
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন