ভোটার ও প্রার্থীবিহীন ধিকৃত নির্বাচন, সংবিধান লঙ্ঘন করে নবম সংসদ বহাল রেখেই দশম সংসদের এমপিদের গেজেট ও শপথ কেলেঙ্কারির পর এবার একটি নজিরবিহীন গোঁজামিলের সরকার শপথ নিয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশও পূরণ করছেন। এর মধ্য দিয়ে বিরোধী দলবিহীন অভিনব একদলীয় শাসনের যাত্রা শুরু হয়েছে। অনেকটা নবরূপে বাকশালী শাসনই কয়েম হয়েছে। ভাগাভাগির নির্বাচনী প্রহসনে জয়ী ঘোষণা
করা সব রাজনৈতিক দলেরই প্রতিনিধিত্ব আছে নয়া সরকারে। সংসদে যত দল, সরকারেও তত দল। সংসদীয় গণতন্ত্রে অপরিহার্য বিরোধী দল বলে কিছু থাকলো না গতকালের শপথ অনুষ্ঠানের পর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ নিয়েছেন নতুন সরকারের ৪৯ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। নতুন মন্ত্রিসভায় ২৯ জনকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। শপথ পড়েছেন ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দু’জন উপমন্ত্রী। বিকাল সাড়ে তিনটায় বঙ্গভবনে এ শপথ অনুষ্ঠান হয়। মন্ত্রীদের শপথ নেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো শপথ নেন শেখ হাসিনা।
দেশি-বিদেশি কঠোর সমালোচনা ও চাপ উপেক্ষা করে অদ্ভূত রকমের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর শেখ হাসিনা আবারও বেশ দম্ভভরে ঘোষণা করেছেন ‘শেখ হাসিনা কোনো চাপের কাছে মাথানত করে না। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক চাপ, যা-ই হোক।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, ‘আমরা পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা গ্রহণ করেছি’। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মোটামুটি ক্লিন মন্ত্রিসভা হয়েছে’। বহু নাটকের জন্ম দিয়ে সিএমএইচ থেকে গতকাল বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে যোগদানের পর জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, ‘মন্ত্রিসভা ভালোই হয়েছে’।
অন্যদিকে গতকাল শপথ নেয়া সরকারকে অবৈধ অভিহিত করে বিএনপি ১২ জানুয়ারিকে কালো দিন হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি কালো দিন। অনৈতিক ও অবৈধ সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অশুভ যাত্রা শুরু হলো। গণতান্ত্রিক চেনতাকে কবর দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্রের কালিমাময় যাত্রা শুরু হলো।
আবার অভিনব সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনরা। জাতীয় পার্টির একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা ও বিরোধী দলে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হক বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি বিরোধী দল ও সরকারি দলে থাকছে। এটা হলো নিউ বেনিফিসিয়াল ডেমোক্রেসি।’ বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের একথা বলেন রফিক-উল হক।
কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ শপথ অনুষ্ঠানের পর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নতুন সরকার গোঁজামিলের সরকার। জাতীয় পার্টি সরকারেও আছে, বিরোধী দলেও আছে। জাতীয় পার্টি একটি সুবিধাবাদী দল। তাদের এই স্ট্যান্ডবাজিতে তারা গৃহপালিত নয়, তার চেয়েও বেশি জঘন্য বিরোধীদলে পরিণত হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের কাছে নতুন এ মন্ত্রিসভা ‘জগাখিচুড়ি’র মতো। সংসদের বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা সরকারে যুক্ত হওয়ায় নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, এটি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাজনৈতিক ভাষ্যকার মীজানুর রহমান শেলী বলেছেন, মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলের সদস্যদের উপস্থিতির নজির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে দুষ্কর। এটাকে বলা চলে সোনার পাথরবাটি বা কাঁঠালের আমসত্ত্ব, কিংবা নভেল এক্সপেরিমেন্ট (অভিনব পরীক্ষা-নিরীক্ষা)। মন্ত্রিত্ব বঞ্চিত আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শনিবার বলেছিলেন, ‘আমরা একটি নির্ভেজাল বিরোধী দল চাই, যারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবে। মাথাটা সরকারি দলের, আর লেজটা বিরোধী দলের, এটা করা যাবে না। মাথা-লেজ বিরোধী দলের আর পেট সরকারি দলের; এটাও হবে না, হয়ও না। সবাই যদি মন্ত্রিত্বের জন্য কাঙাল হয়ে পড়ি, তাহলে গণতন্ত্রের কাঙাল হবে কে?’
এদিকে সরকারের শপথের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যায় জাপা চেয়ারম্যান এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ছয় উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দিয়ে চারজনকে আবারও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী।
নতুন সরকারের স্থায়ীত্বের ব্যাপারে গভীর সংশয়ের মধ্যে শপথ নেয়া মন্ত্রীদের মধ্যে দফতরও বণ্টন করা হয়েছে অস্বাভাবিক দ্রুততায়। শপথ নেয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন মন্ত্রিপরিষদের দফতর বণ্টন করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সন্ধ্যর পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজের কাছে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, জ্বালানির মতো মন্ত্রণালয়গুলো। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রতে প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রীদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ-বাণিজ্য, মোহাম্মদ নাসিম-স্বাস্থ্য, আনিসুল হক-আইন, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান-ধর্ম, এডভোকেট কামরুল ইসলাম-খাদ্য, রাশেদ খান মেনন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন, আসাদুজ্জামান নূর-সংস্কৃতি, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু-পরিবেশ ও বন, আবুল মাল আবদুল মুহিত- অর্থ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম-স্থানীয় সরকার, মতিয়া চৌধুরী-কৃষি, নুরুল ইসলাম নাহিদ-শিক্ষা, হাসানুল হক ইনু-তথ্য, ওবায়দুল কাদের-যোগাযোগ, মুজিবুল হক-রেল, খন্দকার মোশাররাফ হোসেন- প্রবাসী কল্যাণ, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী- ডাক ও টেলিযোগাযোগ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন-গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, আকম মোজাম্মেল হক- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, ছায়েদুল হক- মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ, ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক- বস্ত্র ও পাট, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ- পানিসম্পদ, শাহজাহান খান- নৌ পরিবহন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া- ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)- পরিকল্পনা, মোস্তাফিজুর রহমান- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, সৈয়দ মহসিন আলী- সমাজকল্যাণ, শামসুর রহমান শরিফ- ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
এছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মুজিবুল হক চুন্নু- শ্রম, ইয়াফেস ওসমান- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এম এ মান্নান- অর্থ, মির্জা আজম- পাট ও বস্ত্র, প্রমোদ মানকিন- সমাজকল্যাণ, বীর বাহাদুর উশৈসিং- পার্বত্য চট্টগ্রাম, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ- মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ, বীরেন শিকদার- যুব ও ক্রীড়া, আসাদুজ্জামান খান- স্বরাষ্ট্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী- ভূমি, ইসমত আরা সাদেক- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মেহের আফরোজ- মহিলা ও শিশু, মশিউর রহমান রাঙ্গা- পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, শাহরিয়ার আলম- পররাষ্ট্র, জাহিদ মালেক- স্বাস্থ্য, নসরুল হামিদ- বিদ্যুত্ ও জুনাইদ আহমেদ পলক- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব- পানিসম্পদ ও আরিফ খান জয় যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
বিগত মহাজোট সরকারে আলোচিত-সমালোচিত ও দাপুটে অনেক মন্ত্রীর স্থান হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়। বাদপড়া মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীন, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, মত্স্যমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ, একসময়ের রেলমন্ত্রী ও পরে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নির্বাচনকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।
এছাড়া গত সরকারের যেসব প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়লেন তারা হলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহাজাহান মিয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, মত্স্য প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান।
এদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আবার দলেও বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আগের সরকারে থাকা বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অতিকথন এবং প্রচুর সম্পদ অর্জনসহ নানা বিতর্ক ওঠায় আপাতত সুশীল সমাজের গ্রহণযোগ্যতা পেতে তাদের মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।
নতুন মন্ত্রিসভার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এবং মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন। ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় এই তিনজনের কেউই জায়গা পাননি ‘সংস্কারপন্থী’ হওয়ার অভিযোগে। অবশ্য এবারের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় ছিলেন তোফায়েল ও আমু। এর আগে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময় তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার বহুল বিতর্কিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন একযুগ পর ফিরেছেন শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভায়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় ছিলেন। তিনিও আগে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময় মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। নির্বাচনকালীন সরকারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মেনন এবার পেয়েছেন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার ঐকমত্যের সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। নির্বাচনকালীন সরকারে তিনি উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৯৬ সালের আরেক বিতর্কিত প্রতিমন্ত্রী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ১২ বছর পর শেখ হাসিনার সরকারে ফিরেছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে। মায়াপুত্র দীপু চৌধুরীর সন্ত্রাস ও দখলের রাজত্ব ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের ভরাডুবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়।
শেয়ারবাজারসহ নানা বিষয়ে বিতর্কিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আনিসুল হককে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আনিসুল হক কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত।
নতুন মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন নওগাঁ-৪ আসনের ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, পাবনা-৪ আসনের এমপি শামসুর রহমান শরিফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের এমপি ছায়েদুল হক এবং মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি সৈয়দ মহসীন আলী। ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তার আসনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ নির্বাচিত হয়েছেন। মনোনয়ন বঞ্চনার পুরস্কার হিসেবে তাকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৩), জাহিদ মালেক (মানিকগঞ্জ-৩), নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), এম এ মান্নান (সুনামগঞ্জ-৩), নসরুল হামিদ বিপু (ঢাকা-৩), মির্জা আজম (জামালপুর-৩), বীরেন শিকদার (মাগুরা-২), বীর বাহাদুর উশৈসিং (বান্দরবান), আসাদুজ্জামান খান কামাল (ঢাকা-১২), ইসমত আরা সাদেক (যশোর-৬), শাহরিয়ার আলম (রাজশাহী-৬) ও জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গা (রংপুর-১) এবং মুজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্জ-৬)। এর মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে। আর ইসমত আরা সাদেক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকের স্ত্রী।
উপমন্ত্রী হিসেবে জায়গা পাওয়া ভোলা-৪ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব তোফায়েল আহমেদের ঘনিষ্ঠজন এবং নেত্রকোনা-২ আসনের এমপি জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ খান জয় ক্রীড়াঙ্গনের তারকা।