মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৪

আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন উত্থান আবু রেজা নদভী

আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন উত্থান ড. আবু রেজা নদভী। নির্বাচনের দুই মাস আগে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে হৈ-চৈ ফেলে দেন। জীবনে প্রথম নির্বাচন করে নতুন এ রাজনীতিবিদ এবার জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আবারো আলোচনার টেবিলে চলে এসেছেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিগত ৪১ বছরে আওয়ামী লীগের কেউই এ আসন থেকে নির্বাচিত হতে পারেননি। এমনকি গত ৮টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেন নি। এমনকি বিগত ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তৃতীয় হয়েছিলেন। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৪৭২ ভোট।
গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ড. আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভী ১ লাখ ১ হাজার ৮৬৬ ভোট পেয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনএফের জয়নাল আবেদীন কাদেরী পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৪৮ ভোট। গত ৪১ বছর আগে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এন সিদ্দিক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের অধরাই থেকে যায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বারবার পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়েছে। ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রার্থী।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর আমীর আ ন ম শামসুল ইসলাম ১ লাখ ২০ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রার্থী এলডিপি’র চেয়ারম্যান কর্নেল ড. অলি আহমেদ পেয়েছেন ৬৩ হাজার ৪১২ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হয়েছেন তৃতীয়। তিনি ভোট পান ৪৯ হাজার ৪৭২ ভোট। এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপির কর্নেল ড. অলি আহমেদ, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির ইব্রাহিম বিন খলিল, ১৯৭৯ সালে বিএনপির মোস্তাক আহমেদ এবং ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম সিদ্দিক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এদিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর কর্মী-সমর্থকরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তারা বলাবলি শুরু করেছেন নতুন সরকারের মন্ত্রী পরিষদে আবু  রেজা নদভী স্থান পাচ্ছেন। তিনি হবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে তাঁর সম্পর্ক ভাল। আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর এই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আরো জোরালো করতে চায়।

সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে ডেকে নিয়ে মনোনয়ন দেন। এরপর তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সুবিধা পেয়ে যান আবু রেজা নদভী। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। একতরফা নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করলেও রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে- সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে নদভীর রাজনীতির যাত্রা শুরু। ধীরে ধীরে তিনি দলকে এই এলাকায় শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলবেন। এলাকায় নিজেকে নিয়ে যাবেন শক্ত অবস্থানে।
আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নতুন মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, হেফজখানা, অজুখানা, শিক্ষাভবন নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, ইফতার ও কোরবানি কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী ও কোরবানির মাংস বিতরণ, এতিম পুনর্বাসন, গৃহনির্মাণ, হজ কর্মসূচি, দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান, দরিদ্র নারীদের বিয়ের সহযোগিতা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা, শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, নারী ও শিশুর উন্নয়নসহ সমাজ সেবায় অনন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি যত কাজ করেছেন তার ৭০ শতাংশ করেছেন সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়।
আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ১৯৬৮ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের বাবুনগর গ্রামের প্রসিদ্ধ মক্কার বাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা ৬ ভাই ও ৪ বোন। তিনি ভাইদের মধ্যে চতুর্থ। এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জনক আবু রেজা নদভীর পিতা মরহুম আল্লামা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ (রহ.) একজন প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ছিলেন। তিনি ১৯৮৭ সালে ভারতের নদওয়াতুল উলামা লক্ষ্ণৌ থেকে বিএ (অনার্স), আরবী ভাষা, সাহিত্য ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ হতে দ্বিতীয় শ্রেণি লাভ করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে (১৯৯৩-৯৪) শিক্ষাবর্ষে আরবী সাহিত্যে এমএ পরীক্ষায় ১ম শ্রেণিতে দ্বিতীয়স্থান লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতের লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন