বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫
বর্ষবরণ
বর্ষবরণ এখন যেন আর বর্ষবরণ নেই। তা যেন হয়ে উঠেছে উলঙ্গ উম্মাদনার এক মাধ্যম। কপত কপোতিদের নোংরামি করে স্মরণীয় বরণীয় করে রাখার দিন।
গতকাল মঙ্গলবার সাভারে গিয়েছিলাম একটি ব্যাক্তিগত কাজে। শুরুতেই আমাকে সময় দিয়েছেন আলাউদ্দিন ভাই। এর পর দেখা করি তৌহিদ স্যারের সাথে। অনেক বিষয়ে আলাপ করলাম।
মাহবুব ভাই, হাসান ভাইসহ কাজ শেষ করে যখন ফিরছিলাম, তখন হেলাল ভাইকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চক্কর দেয়ার লোভ জাগলো। হেলাল ভাইকে বলে তিনিসহ মোটর সাইকেল নিয়ে ঢুকলাম। অনেক সুন্দর এই বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে একটি হল আছে সেটি কিনা এশিয়ার সর্ববৃহৎ হল। মীর মোশারফ হোসেন হল দেখতেই অনেক চমৎকার। পনেরশ’য়েরও বেশি ছাত্র থাকতে পারে হলটিতে।
এক এক করে ঘুরে ঘুরে সব দেখলাম। হেলাল ভাই অনেকটা গাইডের ভূমিকায়। চারুকলার তত্ত্বাবধানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। অনেক দর্শক বসে দেখছেন। সবার মাঝে একটা নুতন নতুন ভাব। গায়ে চুন অঙ্কিত পাঞ্জাবি–পায়জামা। কেউ এসেছেন লাল-সাদা শাড়ী–ব্লাউজ, ছেলোয়ার-কামিজ পরে। তাদের কারো হাতে ফুল কারো মাথায় ফুলের বেনি। অনেকে এসেছেন ছেলে মেয়েদের নিয়ে। এত সুন্দর ফুট ফুটে ছেলে মেয়েদের দেখলে অনেক সময় লোভ হয়। একটু কাছে যাই; কোলে তুলে নেই। একটু আদর করে দেই। আনন্দে মেতে উঠি। করিও কোনো কোনো সময়।
অনেকে এখানে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এসেছেন দেখানোর জন্য, কিছু শিখানোর জন্য। কিন্তু আসলে আমরা কি শিখছি আর আমাদের শিশু সন্তানদেরই বা কী শিখাচ্ছি?
আমরা তাদের দেখাচ্ছি কিভাবে প্রেম ভালোবাসার নামে জোড়ায় জোড়ায় বসে ছেলে-মেয়েদের অনৈতিক আড্ডা দেয়া। রিকশায় করে কীভাবে ছেলে-মেয়েরা জোড়া মিলিয়ে নেশাখোরের মত সময় অতিবাহিত করে। কীভাবে পর পুরুষ-মহিলাদের দিয়ে নিজের শরীরে উল্কি আকার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হতে হয়। পান্তা-ইলিশের নামে কীভাবে সমাজে বৈষম্য তৈরির রাস্তাকে উন্মুক্ত করে তুলতে হয়। কীভাবে হোলি খেলার নামে রং মাখা-মাখি করা হয়। এক্ষেত্রে মেয়েরা যেন ছেলেদের ছেয়ে এগিয়ে।
সন্ধ্যায় যখন ফেসবুক লগইন করলাম দেখি বন্ধুরা বিভিন্ন পত্রিকার লিংক শেয়ার করেছেন। ছাত্রী উত্তক্ত করার অপরাধে চানখারপুলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর, ছবি তুলতে চেষ্টা করায় ছাত্রলীগকর্মীর হাতে সাংবাদিক নাজেহাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ৩০-৩৫ জন ছেলের একটি দল কয়েকজন মেয়েকে বিবস্ত্র করে অন্যায় আবদার পুরনের চেষ্টা, বাধা দিতে গিয়ে আহত কয়েকজন, এক ছাত্রসংগঠনের প্রতিবাদী কর্মসূচি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করা।
আমরা ভুলিনি ১৯৯৯ সালে এরকম বর্ষবরণে রাত ১২.০১ মিনিটে বাঁধনকে বিবস্ত্র করার কথা। যদিও সংসদে দাঁড়িয়ে তখন জয়নাল হাজারীর মত ব্যক্তি উল্টো বাঁধনেরই বিচার দাবি করেছিলেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে হিংস্র জানোয়ারের ছবি, কার্টুন, ঢোল, তবলা, বাঁশিই যেন আমাদের মূল সংস্কৃতি।
অথচ আমরা ছোট বয়েসে দেখেছি ঠিক এর উল্টো চিত্র। নতুন বর্ষকে বরণ পুরাতন বর্ষকে বিদায় উদযাপনে ছিল ভিন্ন আমেজ। এই দিনে সকাল বেলা মা বোনেরা কোরআন পড়ে শুরু করতেন। অন্যদিন কোরআন না পড়তে পারলেও সেদিন বাদ দিতেন না। চিন্তা থাকতো আজ সারাদিন কারো সাথে কোনো খারাপ আচরণ করবো না। কাউকে দেখতাম রোজা রাখতে। কেউ রাত জেগে নামাজ পড়তেন। মসজিদগুলোতে দোয়ার আয়োজন করা হতো। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা পুরাতন হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন হিসাবের খাতায় খুলতেন। হিসাব চুকিয়ে ফেলার জন্য হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। মানুষের মাঝে লেনদেন পরিশোধের জন্য এক ধরনের পেরেশানি দেখতাম।
কিন্তু সময়ের ব্যাবধানে আমরা অতি আধুনিক হতে শুরু করেছি। বর্ষবরণ মানেই আমরা যেন এক নোংরা খেলায় মেতে উঠছি। আমাদের ঐতিহ্যকে হারিয়ে অনৈতিকতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি।
সচেতন যুব সমাজকেই এর জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবর্তনের আওয়াজ তুলতে হবে। আমরা নোংরামী চাই না। বৈষম্য চাই না। অনৈতিকতা চাই না। মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন দেখতে চাই না। সাংস্কৃতির নামে অসুস্থ সাংস্কৃতির সয়লাব চাই না। আমরা চাই সুন্দর, সুস্থ, সুখি সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ ।
আসুন আমরা বাংলাদেশের আকাশে গেড়ে বসা অপসংস্কৃতিকে দূর করে সুস্থ্য ধারার সংস্কৃতিকে লালন করার মধ্যমেই নববর্ষ উজ্জাপনসহ জাতীয় দিবসগুলোকে অর্থবহ করে তুলি।collection
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন