আধুনিক সভ্যতার কথা বলে, নারীর ক্ষমতায়নের নামে আজকের পাশ্চাত্য সমাজ নারীকে ভোগ লালসার সামগ্রীতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের সমাজেও আজ তার ঢেউ লেগেছে। শত বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবে বাংলাদেশের নারীরাও পাশ্চাত্য নারীর কায়দায় সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ছিড়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে। তারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী আদর্শ ভূলে গিয়ে পাশ্চাত্যর প্রচার প্রগান্ডায় স্বকীয়তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আজ আধুনিকতার স্লোগানে উজ্জীবিত বিশ্ব। আধুনিক ও অধিকার আদায়ের নামে যুগে যুগে বিভিন্ন সভ্যতা নারীকে করেছে নির্যাতিত,নিপিড়ীত,শোষিত ও বঞ্চিত। অধিকার প্রদানের নাম দিয়ে নারীকে মাধ্যম বানিয়ে একটি বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণী লুফে নিয়েছে নিজের মুনাফা। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত নারীদের ব্যাপারে ইতিহাসে বহুবিধ দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। গ্রীক দাশৃনিক সক্রেটিসের ভাষায় নারী হলো জগতের বিশৃংখলা ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ট উৎস। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সে নারী,শিশু,পাগল এ তিন শ্রেণীর মানুষ অধিকার ও দাযিত্বহীন বলে বিবেচিত ছিল। চীন সভ্যতায় নারীকে ধিঃবৎং ড়ভ ঃযব ড়িব বা দুঃখের প্রস্রবণ বলা হত। বর্তমান বিশ্বে শিক্ষা,সংস্কৃতি,রাজনীতি,প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল স্তরে নারীদের অবস্থান রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আজ নারী মহাকাশ থেকে সমুদ্রপৃষ্ট পর্যন্ত পরিব্যপ্ত। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উভয় ক্ষেত্রেই সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের র্হা ১৫.৪%(আ: খালেক,নারী,১৯৯৯,পৃ ৭৯) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলীয় নেত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী,কৃষিমন্ত্রী(যে সমস্ত মন্ত্রনালয়ের সাথে দেশের নাড়ীর সম্পর্ক) হলো নারী। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ মন্ত্রানালয়ের পররাস্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনও নারী। এ পর্যন্ত ইাতহাসে ২১ জনেরও বেশি নারী রাষ্ট্রপ্রধান ছিল। দুঃখজনক নারীদের সবচেয়ে বড় অধিকার যৌতুক বিরোধী তেমন কিছ দেখাতে পারেনি এই নারী নেত্রিরা। নারী প্রগতিবাদের আন্দোলনের জন্মদানকারী পাশ্চাত্য বিশ্বের নৈতিক অবক্ষয়জনিত চিত্র আজ আকার ধারন করেছে। ধর্মীয় বন্ধন ছিন্ন করে নারী পুরূষের অবাধ মেলামেশা আরো তরান্বিত করেছে। যার ফলশ্রূতিতে অশ্লীলতা,অবাধ যৌনাচার, সমকামিতা,সেক্য্রক্লাব,কুমারী মাতৃত্ব,ডিজে পার্টির মতো অপসংস্কৃতি স্বাভাবিকভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিকতা ও নারীর ক্ষমতায়নের নেতৃত্বদান কারী আমেরিকাতে নৃত্যশলা, ক্লাব,নৈশ ক্লাব,বিউটি পার্লার,মেসেজ সেলুন, ইত্যাদি গুলি এখন পতিতালয়ে পরিনত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশেষজ্ঞদের ধারনা শতকারা ৯০ জন যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত। মোট চিকিৎসকদের ৬১% যৌন রোগীর চিকিৎসক(এনসাইক্লোডীয়া ব্রিটেনিকা,অধ্যায় ২৩,পৃষ্টা ৪৫) বাংলাদেশেও এখন লিভ টুগেদারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।এই দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্রে আধুনিকতা ও অধিকার আদায়ের নামে দেহ ব্যবসা চলছে অবাধে। থার্টি ফাস্ট নাইট,বিশ্ব ভালোবাসা দিবস,এপ্রিল ফুল থেকে শুরু করে আধুনিকাতার নামে উম্মুক্ত যৌন ব্যবসাও চলছে এই দেশে। উচ্চবিত্তের মেয়ে থেকে শুরু করে যারা শহরে হোষ্টেলে থেকে লেখাপড়া করছে তাদের অনেকেই এই অভিজাত যৌন ব্যবসায় জড়িত। নিম্মবিত্ত পরিবারের মেয়েরা অর্থ উপার্জন আর উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা শখের বসে তৃপ্তির আশায় এই পেশায আসছে। গৃহবধূরাও আসছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। মেয়ে কালো হলেও যদি কোন প্রতিষ্টানের ছাত্রী হয় তাহলে তার অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউস থেকে যাদেরকে গ্রেফতার করে তারা অধিকাংশই স্বীকার করেছে স্বেচ্ছায় টাকার জন্য এই পেশায় এসেছে। মিডিয়ার মারফতে আরো জানা যায় টিভি-সিনেমার তারকা হওয়ার আশায় পরিচালক বসদের সন্তুষ্টির পাশাপাশি অনেকে এই সহজ আইয়ের পথ দেহ ব্যবসাকে বেছে নিয়েছে। গত অক্টোবর ০৯ বনানীর একটি ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব-১, ৮০ জন নারী পুরূষকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। পরিচয় পাওয়া গেছে এরা সবাই অভিজাত পরিবারের সন্তান,কেউ টাকার অভাবে এই পথে আসেনি,অভাব শুধু নৈতকতার। সাপ্তাহিক ২০০০ গত নভেম্বর ০৯ সংখ্যার প্রতিবেদনে বলা হয় অভিজাত যৌন ব্যবসার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো মোবাইল ফোন,ইন্টারনেট। সাইবারক্যাফেতে বসলেই পূর্ববর্তী ব্যবহৃত ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে ১০টিতে ৮টি সেক্য্র ওয়েবসাইট। সেখানে যুবক-যুবতদীদের ছবি ও মোবাইল নং দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি আমাদেরকে যেমনি বিশ্বকে হাতের মুটোয় এনে দিয়েছে তেমনিভাবে নৈতিকতা ধ্বংস করার জন্য বলিষ্ট ভূমিকা রাখছে। টিভি ও চলচ্চিত্রের অনেক তারকারা এই অভিজাত সেক্য্র বিজনেসের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ বিভিন্ন সময় পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে র্যাব এর ইয়াবা বিরোধী অভিযানে কথিত নায়িকা মডেল গ্রেফতার হয়,মাদক ব্যবসার পাশাপাশি সে যৌন ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান নিহত হবার পর তার সাথে শীর্ষ নায়িকা পূর্ণিমার দৈহিক সম্পর্কের কথা বেরিয়ে আসে। বাংললিংকের বিজ্ঞাপনের সাবেক মডেল তিন্নিকে ব্লু-ফিল্মে অভিনয় করার অভিযোগে বিজ্ঞাপন থেকে বাদ দেয়া হয়(অবশ্য তিন্নি বলেছে সে ব্লাকমেইলের স্বীকার) এ ছাড়া ঢাকার গুলশান.বনানী,ফকিরাপুল,সায়েদাবাদ ও চট্টগ্রামের লালখান বাজার,খুলশী,সুগন্ধা আবাসিক,মেহেদীবাগ,চান্দগাও আবসিক,নতুনবাজার,ঘাটফরহাদবেগ সহ বিভিন্ন এলাকায় ভদ্রবেশে বাসা বাড়া নিয়ে চলছে যৌন বৗবসা।( সাপ্তাহিক ২০০০ সেপ্টেম্বর সংখ্যা)। চট্ট্রগ্রামের লালদিঘি ও ও স্টেষন রোড এলাকার হোটেল ঢাকা থেকে ১৫-২৫ বছর বয়সি কিছু তরূণীকে আপত্তিকর অবস্থায় গ্রেফতার করে পুলিশ(দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ,০৬.০৩.১০) মাঝে মধ্যে পুলিশ লালদিঘিী ও সিনেমা প্যালেস এলাকা থেকে পতীতা-খদ্দের গ্রেপতার করলেও হাই সোসাইটি এবং ভাসমান পতীতার ব্যাপারে তেমন একটা ভূমিকা পুলিশের নেই। স্টেষন রোডের অভিযুক্ত ঢাকা হোটেলের বয় সপনের সাথে কথা বলে জানা যায় চাকরির পাশাপাশি সে দেহব্যবসার মধ্যস্থতা করে ভাল আয় রোজগার করতেছে। তার কথা মতে হোটেলে এক বার ( তাদের বাসায এক শট ) করলে ৩০০ টাকা বাসায় নিয়ে গেলে ৫০০ টাকা আর সারা রাত থাকলে ১২০০-১৫০০ টাকা নিবে। কলেজ-বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্রীর ব্যবস্থা করে দিতে পারবে সে, তবে সে ক্ষেত্রে দাম বেশি পরিশোধ করতে হবে।(ধিক! আমাদের সমাজ ব্যবস্থা) ঢাকার ফকিরাপুলের ইসালাম জানান ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রী সহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে,ইসালাম জানায় সে কোন চাকরি করেনা শুধু মাত্র ফকিরাপুলের বিভিন্ন হোটেল ম্যানেজারদের সাথে তার চুক্তি রয়েছে,সে গেস্টদের আশপাশের বিভিন্ন ফ্লাট বাড়ীতে নিয়ে যায়। চাঁদপুরের এই ২১ বছরের যুবক ইসালামের মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয়ের কথা জানায় সে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে চট্টগ্রামে ২০-১০০ টাকা দামেরও দেহব্যবসা চলতেছে। নগরীর কাজীর দেউড়ীর এপেলো শপিং সেন্টারের সামনে ৭/৮ জন পতীতা দাড়িয়ে থাকে। এনি (১৫)নামের এক ভাসমান পতীতার সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের মূল্য ২০-১০০ টাকা তাদের কাস্টমার হলো বেশিরভাগ ড্রাইভার এবং কিছু চাকুরিজীবী ফুটপাতের যুবক সহ স্কুল-কলেজের ছাত্র। তাদের নিরাপত্তা কতোটুকু জানতে চাইলে সে ইশারা করে দেখায় সামনে ১০ হাত দূরের পুশিল বক্য্র। আয়ের বিশেষ একটা অংশ তারা পুলিশকে দিয়ে দেয়। মাঝেমধ্যে পুলিশের সাথে চা খেতেও দেখা যায় এদের। কোন পাবলিক বাধা দিলে তার খবর আছে। লালখান বাজারের সরকারী অফিসার কলোনীর সামনে এবং সিনেমাপ্যালেস বারেকবিল্ডিং,জাকির হোসেনরোড,টাইগারপাস নৌ-বাহিনীর সিনেমা হল এলাকায়ও চলছে এই ভাসমান দেহব্যবসা। টাইগার পাস নৌ-বাহিনী সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত দেহ ব্যবসায়ি চৈতিকে জিঞ্জেস করা হলে সে জানায় সব পতিতাদের রিক্য্র থাকলেও তাদের কোন রিক্য্র নাই। কারণ বাংলাদেশের একটি বাহিনীর সিনেমা হলেই তাদের ব্যবসা। বাংলাদেশে ১৮ বছরের বেশি হলে কোন নারী হলফনামা দিয়ে দেহব্যবসায় অংশগ্রহন করতে পারে।(ধিক!দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্রের সংবিধান) কিন্তু ১৮ বছরের নিচে অনেক পতীতা ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে। নোয়াখালীর ১১ বছরের এক কিশোরীকে চট্টগ্রামে এনে উন্নত চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নোয়া বাজার এলাকায় একটি বাসায় বন্দি করে দেহব্যবসায় বাধ্য করে। পুলিশ মহিলা সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে(কালের কন্ঠ ০৩.০৩.১০)। একটি বেসরকারী সমীক্ষায় দেখা গেছে ৫০ শতাংশ দেশে বানিজ্যিক যৌনকর্ম বৈধ। ৪০ শতাংশ দেশে সীমিত বৈধতা আছে। যে সমস্ত দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ আফগানিস্তান,সৌদিআরব,ইরান,ইরাক,কিউবা,জর্ডান,স্লোভেনিয়া সহ কিছু মুসলিম প্রধান দেশ। তবে অনেক দেশে সাংবিধানিক ভাবে অবৈধ হলেও বাস্তবে কার্যকর নাই। থাইলেন্ডে নিষিদ্ধ হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতি বছরে ৪.৩ বিলিয়ন ডলার যোগ হয় যৌন ব্যবসা থেকে,যা দেশীয় আয়ের ৩ ভাগ। সম্প্রতি ইডেন কলেজের গোপন ঘটনা ফাস হয়ে যাওয়ার পর দেশবাসী আতংকে উটেছে। জুনিয়র ছাত্রীদেরকে মন্ত্রী,আমলা,এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বাসায় পাটানো হচ্ছে মনোরঞ্জনের জন্য।(২৯ মার্চ.১০ লালদিঘিী জনসভায় সরকারের সমালোচনা করে বি.এন.পি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার অভিযোগ) ইডেন কলংখ কলংখিত করেছে পুরো শিক্ষিত সমাজকে(ধিক! উচ্চ শিক্ষার নামে দেহব্যবসা) । আমার আধুনিকতা হতে হবে ধর্মীয় ও নিজস্ব সংস্কৃতি লালন করে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতি আমদানি করে নয়। আমরা শিক্ষাঙ্গনে যাব নৈতিকতার সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষিত হবার জন্য আধুনিকাতা কিংবা সমঅধিকারের নামে দেহ বিক্রির জন্য নয়। আমি নারী নেত্রীদের আহবান জানাবো (যারা সমধিকার ও আধুনিকতার স্লোগানে উজ্জীবিত) আপনারা আগে আপনাদের সতীত্ব এবং যৌতুক প্রথার বিরোদ্ধে অধিকার নিশ্চিত করূন। বর্তমানে যৌতুক প্রথা,বাল্য বিয়ে,ইভ টিজিং সহ নারীরা বিভিন্ন অপমানজনক সমস্যায় জর্জরিত। আমরা আমাদের বোনদের উচ্চশিক্ষা করাতে গিয়ে দেহ বিক্রি করতে দেবোনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন