মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৩

না পাওয়ার বেদনা

যেটা পায়নি সেটা না পাওয়ায থাক
বেশি পেলে নষ্ট জীবন
না পাওয়ার বেদনা নাই
পাওয়ার কৃতজ্ঞতা করি সব সময়

রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৩

ভবন ধসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্য ও মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন

সাভারে ভবন ধস নিয়ে আমাদের দক্ষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুবই সুন্দর তথ্য দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সাহসী তথ্য সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে মুহূর্তের মধ্যে। কারণ বিবিসি বাংলাকে তিনি সরাসরি এ তথ্যটি দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। মহীউদ্দীন খান আলমগীর বিবিসিকে জানিয়েছেন, হরতাল সমর্থক মৌলবাদী ও বিএনপির কিছু লোক ফাটলধরা ভবনটির খুঁটি ও গেট ধরে নাড়াচাড়া করছিলেন। এটাও ভবনটি ধসে পড়ার একটি কারণ হতে পারে বলে তিনি বিবিসিকে জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগগুলো। তারা হয়তো তাত্ক্ষণিক এ তথ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছে। না হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা দেখার কথা নয়। গোয়েন্দারা দেখেছেন বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। সাবেক আমলা, মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনী গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী মহীউদ্দীন খান আলমগীর নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে দেরি না করে বিবিসির মাধ্যমে পুরো দুনিয়ার কাছে তথ্যটি ফাঁস করেন। সাবাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! ধন্যবাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার জন্য। আসলে শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়, আমাদের গোটা সরকার এবং সরকারের তল্পিবাহক সব ইনস্টিটিউশন এরকম হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আজব তথ্যে যেমন জাতির টনক নড়ে না, তেমনি আইনের রক্ষক হিসেবে বিচার বিভাগে যারা রয়েছেন তাদের কর্মকাণ্ডেও কেউ মাথা ঘামায় না। জাতির এই নির্লিপ্ততা আমাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর গতি নেই।
দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড। ফিল্মি স্টাইলে তাকে পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের পর বলা হলো—বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও প্রবাসী আহমদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের কারণে দায়ের করা মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। এটা ছিল পুলিশের মুখপাত্রের ভাষ্য। সেদিনই তাকে আদালতে হাজির করা হলো আরও দুটি বানোয়াট মামলা দিয়ে। অর্থাত্ মোট তিনটি মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হলো। অপর দুটি মামলা হলো তেজগাঁও থানার মামলা নং ১৭/০৩/২০১৩ ও ৩৩/০৩/২০১৩। এ দুটি মামলার অভিযোগ হলো—হরতালে ফার্মগেট এলাকায় গাড়ি ভাংচুরে তিনি উসকানি দিয়েছেন এবং পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন। এই তিন মামলায়ই রিমান্ড চাইল পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুর রহমান কোনো আইনজীবী দিলেন না। তিনি শুধু আদালতকে বললেন, ‘আমি আইনজীবী দিলে তারা জামিন চাইবেন, আপনি জামিন দিতে পারবেন না। তারা রিমান্ডের বিরোধিতা করবেন আপনি সেটা গ্রহণ করবেন না। উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি আদেশ দেবেন। আপনার চাকরি রক্ষার স্বার্থে সেটা মেনে চলবেন। সুতরাং আপনি যে আদেশ দেয়ার দিয়ে দিন।’
মাহমুদু রহমানের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে আদালতের সঠিক চিত্র। আদালতপাড়ায় এটা দিবালোকের মতো সত্য। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী জামিন দেয় ও রিমান্ড মঞ্জুর করে থাকে। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। গাড়ি ভাংচুরে উসকানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায়ও তাকে তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। এছাড়া স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রিমান্ড দেয়া হলো সাত দিন। অর্থাত্ টানা ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেছে! আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে এসব মামলায় কখনও মাহমুদুর রহমানের মতো কোনো ব্যক্তির রিমান্ড মঞ্জুর হতে পারে না। তিনি গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে বাস করছিলেন। সেটা দুনিয়ার সব মানুষ জানেন। তিনি কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে অবস্থানকালীন ফার্মগেটে গায়েবি উপস্থিতির মাধ্যমে গাড়ি ভাংচুরে উসকানি দিয়েছেন? এই প্রশ্নটি কি ম্যাজিস্ট্রেটের বিবেকে একবারও জেগেছে? আর যেসব পুলিশ এই মামলা দিয়ে তাকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে—তাদের বিবেক কি একবারের জন্যও নাড়া দিয়েছে? কারণ মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের দরকার। এজন্য যা ইচ্ছা তা লিখে আদালতে উপস্থাপন করলেই চলবে। আদালত তাদের দাবি মেনে মাহমুদুর রহমানকে জামিন দেবে—এই বিশ্বাস পুলিশের রয়েছে। পুলিশ জানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই সাহস নেই, পাল্টা প্রশ্ন করে পুলিশের কাছে জানতে চাইবে—মাহমুদুর রহমান এই কাজটি করতে পারেন কী-না। সে কারণেই পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে যে কোনো অভিযোগ দিয়ে আদালতে উপস্থাপন করছে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের সুযোগ পাচ্ছে। এটাই হলো আমাদের আদালত ও পুলিশের বাস্তবতা। আর মাহমুদর রহমান গ্রেফতার হয়েও আদালতে সেই সত্য বাস্তব কথাটি বলেছেন।
স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সাত দিনের রিমান্ড দেয়া হলো। ম্যাজিস্ট্রেটের মনে কি একবারের জন্য এই প্রশ্ন জেগেছে—যারা স্কাইপের মাধ্যমে একটি স্পর্শকাতর বিচার নিয়ে এ রকম জঘন্য কাজটি করেছেন তারা বহাল তবিয়তে। আর এই অন্যায় কাজটি জাতিকে জানিয়েছে মাহমুদুর রহমান পাপ করেছেন! সংবাদপত্রের কাজ কী? সংবাদপত্রের কাজ কি শুধু সরকারের জয়গান করা! বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও আহমদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে কথোপকথনের যেটুকু প্রকাশিত হয়েছে সবই হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় কেন প্রকাশ করা হলো এজন্য রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের সুযোগ করে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট! এটাই কি হলো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার নমুনা? অর্থাত্ বিচারপতিরা অন্যায় করলেও সেটা প্রকাশ করা যাবে না। বিচার নিয়ে কারও সঙ্গে সংলাপ করলে বা রায় লিখিয়ে নিয়ে আসা হলে সেটা বলা যাবে না।
ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড মঞ্জুরের পর মাহমুদুর রহমানকে ডিবি (ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ) অফিসে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হলো। ইলেকট্রিক শক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হলো তার শরীর। সাত দিন রিমান্ডে নির্যাতনের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাকে আদালতে উপস্থাপন করার জন্য নিয়ে আসা হলো সিএমএম কোর্টের গারদখানায়। সেখান থেকে তাকে আদালতের সামনে না এনেই জেলখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছিল। আইনজীবীদের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত মাহমুদুর রহমানকে আদালতের কাঠগড়ায় আনা হয়। সেখানে তাকে বিধ্বস্ত দেখা যায়। তার আইনজীবীরা জানান, তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি কথাও বলতে পারছিলেন না। তিনি আইনজীবীদের জানিয়েছেন, ইলেকট্রিক শকই শুধু নয়, নির্যাতনের যত রকম উপকরণ রয়েছে সবই প্রয়োগ করা হয়েছে। তার হাতের ও পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ইলেকট্রিক শকের কালো ক্ষত দেখা গেছে তখন। অর্থাত্ সরকার জেদ মিটিয়েছে তার ওপরে। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরছিল। এই সত্য সরকারের পছন্দ হচ্ছিল না।
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের দিনেই দৈনিক আমার দেশ প্রেস তালা লাগিয়ে দিল পুলিশ। ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়া হলো এক রকম গায়ের জোরে। যেন আমার দেশ আর ছাপতে না পারে, এটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। ছাপাখানা বন্ধের জন্য আদালতের কোনো আদেশও নেই। অথচ তথ্যমন্ত্রী বললেন, আমার দেশ প্রকাশে কোনো বাধা নেই!
পরে জানা গেল আল্লাহ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন হুকুম আহকামকে ব্যঙ্গ করে এক শ্রেণীর ব্লগারের ব্লগে প্রচারিত মন্তব্যগুলো আমার দেশে প্রকাশের কারণে ছাপাখানা বন্ধ করা হয়েছে। ব্লগারদের বিষয়টি খুঁজে বের করতে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আমার দেশের সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার যন্ত্রপাতি জব্ধ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে একটি আদেশ নেয় পুলিশ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ব্লগারদের বিষয়টি শুধু আমার দেশ প্রকাশ করেনি। দৈনিক ইনকিলাবসহ (হালে সরকার সমর্থক) আরও কয়েকটি পত্রিকা এগুলো প্রকাশ করেছে। সরকার ও সাংবিধানিক ইন্সস্টিটিউশনের অন্যায় বা জাতীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের বিষয়গুলো যদি প্রকাশ করতে না পারে তাহলে পত্রিকার কাজ কী! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত বুধবার জাতীয় সংসদে এই তথ্য জানিয়েছেন। ব্লগারদের বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, আমার দেশ ও মাহুমুদর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খুবই সুন্দর যুক্তি! শাহবাগি নাস্তিক ব্লগারদের কর্মকাণ্ড জাতির সামনে তুলে ধরাটাই হলো মাহমুদুর রহমানের বড় অন্যায়! তারা অন্যায় করবে—মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত পত্রিকা আমার দেশ এগুলো পরিবেশন করবে কেন? এটাই হচ্ছে অপরাধ!
শুধু তাই নয়, মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নির্যাতানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন তার স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদ। এই রিট আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মাহমুদুর রহমানকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তিনি জ্বলজ্যান্ত একটি অসত্য তথ্য আদালতকে দিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কি হলফ করে বলতে পারবেন, মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন করা হয়নি সেটা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন? তিনি মাহমুদুর রহমানের শরীরে ইলেকট্রিক শকের ক্ষত চিহ্নগুলো অস্বীকার করবেন কেমন করে? এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আইনের ব্যাখ্যায় বলেছেন, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রীর এই রিট করার এখতিয়ার নেই। কারণ মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন বলে আদালতকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। সারা দুনিয়াজুড়ে এমনকি বাংলাদেশেও অতীতে হাজার হাজার মামলায় দেখা গেছে, স্বামী জেলে থাকলে স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে স্বামীর পক্ষে রিট করে থাকেন। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর স্বীকৃত প্রথা। বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টে খুঁজলে হাজারও মামলা পাওয়া যাবে যেগুলো স্ত্রী করেছেন স্বামীর পক্ষে। স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন, মানবাধিকার রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন এরকম হাজারও নজির রয়েছে সুপ্রিমকোর্টে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নতুন তথ্য উপস্থাপন করলেন, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হতে পারেন না। মাহমুদুর রহমানের স্ত্রীর এই রিট দায়েরের এখতিয়ার নেই! এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আরেকটি আজব যুক্তি দিলেন, সেটা হলো রিমান্ড নিয়ে উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে সেটা মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কারণ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দু’রকমভাবে প্রযোজ্য হবে। একটি হলো মাহমুদুর রহমানের বেলায়, আরেকটি হবে অন্যের বেলায়। মাহমুদুর রহমানের বেলায় আইন এক রকম, আর অন্যের বেলায় আইন আরেক রকম। আমাদের হাইকোর্ট বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেলের এই যুক্তিগুলো গ্রহণ করে রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে।
এই বাস্তবতাগুলো সামনে রাখলে এটা বলা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর একেবারে খারাপ বা বাজে কিছু বলেননি। ভবন ধসের আগে হরতাল সমর্থক বিএনপি ও মৌলবাদীরা ভবনের ফটক ও খুঁটি ধরে নাড়াচাড়া করতেই পারেন। মাহমুদুর রহমানের মতো একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে যদি গাড়ি ভাংচুরের উসকানির অভিযোগে মামলা হতে পারে, সেই মামলায় যদি আবার রিমান্ড মঞ্জুর হয়, স্কাইপ সংলাপে বিচার নিয়ে কথা বলে যারা পুরো বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছেন তারা যদি বহালতবিয়তে থাকতে পারেন—আর মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত পত্রিকায় এই কথোপকথন প্রকাশ করার অভিযোগে যদি গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানোর জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করা যায়, ব্লগারদের ইসলাম নিয়ে কটূক্তি প্রকাশ করার অভিযোগে যদি আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধ করা যায়, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী যদি স্বামীর মানবাধিকার রক্ষায় উচ্চ আদালতে যাওয়ার এখতিয়ার না থাকে, আর উচ্চ আদালত সেই যুক্তি গ্রহণ করে আবেদন খারিজ করে দেয়, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একথা বলার মধ্যে আমি আশ্চর্য হওয়ার কিছু দেখি না। আসলে জাতি হিসেবে আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা একবার ভেবে দেখতে হবে। শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য শপথ নিয়ে যারা আদালতে বিচারকের আসনে বসেছেন তাদের উক্তি ও
কার্যক্রম কিন্তু জাতিকে সামনে (!) এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন ও উচ্চ আদালতের ভূমিকা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে ব্যঙ্গ করে যারা ব্লগ লিখবে বা প্রচারণা চালাবে সেই সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারবে না। সরকারের সমর্থক বিচারকরা যত অন্যায়ই করুক সেগুলো লিখলে কেউ রেহাই পাবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে যদি বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সাভারে ভবন ফাটলে নাড়াচাড়া ও খুঁটি ধরে নাড়াচাড়া করার জন্য উসকানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাতে আশ্চার্য হওয়ার কিছু থাকবে না। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলবেন সেটাই হলো বাস্তব।
আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল যেটাই বলবেন সেটাই হলো আইন। এটাই এখন প্রমাণিত সত্য।
(অ লি উ ল্লা হ নো মা ন)

শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৩

নলিশাহ’র মাজার এবং মাহমুদুর রহমান বিরোধী বিষোদ্গার (মিনার রশীদ)

আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক। বাড়ি চট্টগ্রামে। জাহাজে বিভিন্ন জিনিসপত্র সরবরাহের ব্যবসা করেন। কিন্তু জীবন শুরু করেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের একজন সাধারণ শ্রমিক হিসেবে। এক সময় সেই চাকরিটিও চলে যায়। তখন ‘নলিশাহ’ হুজুরের মাজারের নামে রসিদ বই ছাপিয়ে চাঁদা তোলা শুরু করেন। নলি শাহ নামটি তারই দেয়া। নলি হলো খাদ্যনালী। নিজের গায়ের শ্রম দিয়ে যতটুকু আয় করতেন সামান্য বুদ্ধি খাটিয়ে আয় করলেন তার চেয়ে দশগুণ। তার তৃপ্তিটি হলো তিনি তার ঈমান নষ্ট করেননি। নিজের খাদ্যনালীর সেবার কথা জানিয়েই তিনি অন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছেন। সেই টাকা নলিশাহ অর্থাত্ নিজের খাদ্যনালীর কাছেই যথাযথভাবে অত্যন্ত ঈমানদারীর সঙ্গে পৌঁছে দিয়েছেন।
বিদেশ বিভূইয়ে সব হারিয়ে এই ভদ্রলোক নলিশাহর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সব জায়গায় ধরা খাওয়া বর্তমান সরকারও তেমনি এক ‘নলিশাহ’কে খুঁজছিল। শাহবাগ চত্বরে সরকার যেন সেই নলিশাহকেই খুঁজে পেয়েছে। নিজের খাদ্যনালীর সেবায় এই নলিশাহকে নিয়োজিত করলেও সরকার ও সরকারবান্ধব দেশের অধিকাংশ মিডিয়া ছড়াচ্ছে এই ‘নলিশাহ’ অত্যন্ত কামেলে পীর। খুবই জাদরেল ও অত্যন্ত গরম পীর শাহবাগের এই নলিশাহ।
শাহবাগ চত্বরে এমনি এক অভিনব শিশুর জন্ম হয়। এমন রহস্যময় শিশু বাংলাদেশে আর কখনোই জন্মগ্রহণ করেনি। শিশুটির হাত পা মুখে বামপন্থীদের চেহারাটিই বেশি স্পষ্ট হয়েছিল। আওয়ামী লীগ এ শিশুটিকে অত্যন্ত আহ্লাদের সঙ্গেই নিজের কোলে তুলে নিয়েছে। জন্ম প্রক্রিয়ায় যেই থাকুক না কেন, এখন পিতৃস্নেহের বড় চুম্বনটি পড়ছে আওয়ামী লীগের ঠোঁট থেকে। আকিকা করে নাম রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। পাকিস্তান গন্ধযুক্ত শাহবাগ স্কয়ার নাম বদলিয়ে এখন রাখা হয়েছে প্রজন্ম চত্বর।
শাহবাগ চত্বরের এ শিশুটিকে এখন অত্যন্ত ‘গরম পীর’ বানিয়ে ফেলেছে এদেশের মিডিয়া। শাহবাগ চত্বরের নির্দেশ পীরের নির্দেশ হিসেবে গণ্য করছে পুরো দেশ। রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান ধরনের কেউ না হলেও জনৈক ডাক্তার ইমরানের কথা মতোই এদেশের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকাটি উঠছে ও নামছে। রাষ্ট্রের পুরো নির্বাহী বিভাগ আজ ডা. ইমরানের অঙ্গুলি হেলনে উঠছে বসছে। কোন অথরিটিতে স্বাচিপ নেতা ডা. ইমরান এ নির্দেশ দিচ্ছেন এই প্রশ্নটি কারও মাথায় ঢুকছে না। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আমরা কতটুকু দেউলিয়া ও পঙ্গু হয়ে পড়েছি এ ঘটনাটিই তার বড় প্রমাণ। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের গুরুত্ব দিয়ে টিভি চ্যানেলগুলো তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করছে। এই শিশু-পীরের ইমেজ তৈরিতে মুরিদ কিংবা এজেন্টের ভূমিকাটি পালন করছে বলতে গেলে দেশের তাবদ মিডিয়া। তাদের সবচেয়ে বড় ও সফল ‘শিশু-পীর’ প্রজেক্টটি হলো প্রজন্ম চত্বর।
এই শিশু-পীরটির জন্য বিশেষ সমীহ সবার কাছ থেকে আদায় করে ফেলেছে। এই শিশু পীরের মুরিদ বা সাগরেদ হয়েছেন বিশেষ ঘরানার তাবদ সাংস্কৃতিক জগত্। এই চত্বরটিতে গিয়ে একে একে আনুগত্য প্রকাশ করে এসেছেন বা বাইয়াত গ্রহণ করেছেন দেশের তাবদ বুদ্ধিজীবীকুল। তবে এই শিশু-পীরের সামনে আদব-লেহাজ না দেখিয়ে সবচেয়ে বড় বেয়াদবিটি করেছেন আমার দেশ ও তার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। কাজেই কাদের মোল্লার ফাঁসির কথা ভুলে এ শিশু-পীর মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার চেয়েছে। গ্রেফতারের পর উল্লাসও প্রকাশ করেছে।
বোধগম্য কারণেই এই শিশু পীরের বিশেষ মুরিদ সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। শাহবাগ আন্দোলনের যারা বিরোধিতা করেন সেসব সাংবাদিকের সঙ্গে এক সঙ্গে থাকাকে অসম্ভব মনে করেছেন। হিতাহিত জ্ঞান ভুলে জনাব মাহমুদুর রহমানকে কুলাঙ্গার সাংবাদিক বলে গালি দিয়েছেন। যা পুরো জাতিকে স্তম্ভিত ও হতবাক করে দিয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এরা আসলেই ব্যাংকরাপসি বা পুরো দেউলিয়া বনে গেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামির প্রতিক্রিয়া প্রকাশ অত্যন্ত স্বাভাবিক। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ফাঁসির রায় শুনে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আনোয়ার হোসেন ও মুনতাসির মামুন বলেন, কুত্তার বাচ্চা থাম ...’।
পাঠক চিন্তা করুন, সাদ্দাম হোসেন এক সময় পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। সেই সাদ্দামকেও ফাঁসিরকাষ্ঠে মানসিকভাবে কষ্ট দিলে পুরো পৃথিবীর মানুষ খেপে যায়। কাজেই আমরা এ কোন সমাজে বসবাস করছি? যাদের একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হয় তারাই হয়েছেন সাংবাদিক সমাজের নেতা। তারাই হয়েছেন দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি!
সরকারের ভাবখানা এমন যে এই শিশু পীরের নির্দেশ না মেনে উপায় নেই। কিছু কাজ সরকার করে ফেললে প্রশ্নের সম্মুখীন হতো। এখন এই শিশু পীরের নির্দেশে করেছে বলে সেই ভয় সরকারের মধ্যে নেই। এই শিশু পীরকে পেয়ে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির ভয়, বিবেকের তাগিদ সব উবে গেছে সরকারের মন থেকে। এই শিশুটির জন্মদাতার পরিচয় নিয়ে আগে একটু রাখ ঢাক ছিল। ভারতের বহুল প্রচারিত পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়ে দিয়েছে এর পেছনে স্বয়ং ভারত। ভারতের পত্রিকা এই সাহসটি করলেও আমার দেশ ও দু-একটি পত্রিকা ছাড়া অন্য কোনো বাংলাদেশী পত্রিকা এই সাহসটি করেনি।
আমেরিকা প্রবাসী এক বন্ধু ই-মেইলে আমার কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, কিছুদিন আগে মনে হতো সব পত্র-পত্রিকা সরকারের বিরুদ্ধে। এখন মনে হচ্ছে সবাই সরকারের পক্ষে। এটা একটা বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। কোন পত্রিকা দেশের কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে সমর্থন করবে, কিংবা কোন দলের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হবে এটা অস্বাভাবিক কিছু না। প্রায় সব দেশেই এটা দেখা যায়। কিন্তু এদেশের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
প্রতিবেশী একটি দেশের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের বড় রক্ষক হয়ে পড়েছে এদেশের মিডিয়ার বড় একটা অংশ। ইকনোমিস্ট আমাদের চোখ কিছুটা খুলে দিয়েছিল তাদের টাকা ও উপদেশের থলির ব্যাপারে। এ থলেগুলোর বড় প্রাপক সম্ভবত এদেশের মিডিয়া। পশ্চিমবঙ্গের মতো সচেতন সমাজে যেখানে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি পত্রিকা সেখানে আমাদের দেশে এতগুলো রং-বেরঙের পত্রিকা মনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। পাঠকদের চাহিদার চেয়ে এখানে অন্য কোনো চাহিদাটিই স্পষ্ট হয়ে পড়ে।
দেশের মানুষকে বোকা বানানোর নিমিত্তে এ পত্র-পত্রিকাগুলোকে তিনটি স্তরে রাখা হয়েছে। প্রথম স্তরে অন্ধ সমর্থক কিছু পত্রিকা। এ পত্রিকার লেখাগুলো অন্ধ সমর্থকদের জন্য উপাদেয়। অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান সমর্থকদের জন্য রয়েছে দ্বিতীয় সারিতে রাখা কিছু পত্রিকা। এরা পছন্দের দলের বা সরকারের সমালোচনা করে। তবে বড় ধরনের বা স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে কি না সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে তথাকথিত নিরপেক্ষ পত্রিকা। এদের অনেক অবকাশ দেয়া থাকে। আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো কাউকে দিয়ে মাঝে মাঝে গালি দেয়ানো হয়। এদের মূল মিশনটি হলো বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করা। প্রিয় দল বা সরকারের সমর্থন ও সমালোচনার মাত্রায় এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু একটি জায়গায় এদের মধ্যে চমত্কার মিল রয়েছে। এরা কখনোই তাদের প্রিয় দেশটির কর্মকাণ্ড বা স্বার্থের বিরুদ্ধে মুখ খুলে না।
কাজেই টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদকে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। দেশের মানুষ জানেও না যে কী ভয়ঙ্কর পত্রিকাগুলোকে তাদের অজ্ঞতায় দেশের এলিট পত্রিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। ঝকমকে তকতকে ছুরিগুলো দিয়ে কীভাবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের গলায় ছুরি চালাচ্ছে। আমরা এখনও বাসায় বা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দৈনিক পত্রিকা রাখি নিজেকে উদার বা নিরপেক্ষ পরিচয় দেয়ার মানসে। পাছে লোকে কিছু বলে এই তাড়ায় তাড়িত দেশের শিক্ষিত সমাজের বড় অংশ। বিএনপির নেতাকর্মী বা সমর্থকদের মধ্যে এ তাড়াটি কেন যেন আরও বেশি করে কাজ করে। একটা জায়গা থেকে সচেতনভাবে এ হীনম্মন্যটুকু ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সেই টেকনিকটি এখন কিছুটা অকার্যকর হয়ে পড়ছে দেখে এদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যেসব পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল এ ব্যাপারে মানুষের চোখ খুলে দিচ্ছে তাদের প্রতি চোখ লজ্জা ভুলে প্রকাশ্যে নেমেছেন।
এ স্বার্থের সবচেয়ে বড় হুমকি হলো মাত্র গুটিকয়েক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান। শফিক রেহমানের হাত থেকে তার নিজের সৃষ্টি যায়যায়দিন পত্রিকাটি কেড়ে নেয়া হয়েছে। এখন সামনে পড়েছেন একমাত্র মাহমুদুর রহমান। তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে মাহমুদুর রহমান যে জাগরণের ডাক দিয়েছেন তাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোকাবিলা করা এই শক্তিটির জন্য আসলেই কঠিন হয়ে পড়েছে।
মাহমুদুর রহমানের প্রতি প্রজন্ম চত্বরের গালি, সরকারের গালি এবং ইকবাল সোবহানদের গালি এখন একাকার হয়ে গেছে। সাগর-রুনির হত্যার বিচারকে সামনে নিয়ে বিভক্ত সাংবাদিক সমাজ এক হয়েছিলেন। সেই নেতাদের লিস্ট দেখে তখনই এ আন্দোলন কতটুকু সফল হবে তা স্পষ্ট হয়ে পড়েছিল। টক-দই ওয়ালার প্রতি তর্জন-গর্জন যতটুকু দেখা গেছে, তাতে দইয়ের টকত্বে কোনো হেরফের হয়নি। সাংবাদিকদের প্রফেশনাল হ্যাজার্ড আজ বহুগুণে বেড়ে গেছে। চোখে যা দেখা যাবে, হৃদয়ে যা অনুভব করা যাবে তা বলা যাবে না, লেখা যাবে না। দালালি করলে কোনো কথা নেই কিন্তু সাংবাদিকতা করতে গেলেই কুলাঙ্গার হয়ে পড়তে হবে। মনে হচ্ছে সেই কুলাঙ্গার হওয়ার দৃঢ প্রত্যয়ই গ্রহণ করেছেন সময়ের সাহসী সন্তান মাহমুদুর রহমান।
পৃথিবীর সব দেশে সাংস্কৃতিক জগত্, মিডিয়া জগত্ ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগত্ থাকে সব সময় ন্যায়ের পক্ষে। মুক্ত চিন্তার পক্ষে, মানবতার পক্ষে। কিন্তু আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র। পদ্মা সেতুর মহাদুর্নীতি নিয়ে যখন মিডিয়ার ব্যস্ত থাকার কথা, তখন তারা লেগেছে এই শাহবাগ চত্বর নিয়ে। কাদের মোল্লার কথা স্মরণ হয়েছে তাতে দোষ নেই। কিন্তু আবুলদের কথা কেন মনে পড়ল না তা বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। যেখানে কচি বাচ্চাদের কচিকণ্ঠে জবাই করার কথা, ফাঁসির কথা তুলে দেয়া হয়েছে। হলমার্ক, ডেসটিনি, কুইক রেন্টাল প্রভৃতি চলে গেছে অনেক পেছনে। চরম ধর্মদ্রোহী শক্তি, দুর্নীতিবাজ অপশক্তি এবং সাংস্কৃতিক-মিডিয়া-বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের মধ্যে এক অশুভ আঁতাত দেখা গেছে এ শাহবাগ চত্বরে। এ চত্বর থেকে একবারও এসব মহাদুর্নীতির কথা উচ্চারিত হয়নি। সিংহের বাচ্চার মতো এই কথা উচ্চারণ করেছেন মাহমুদুর রহমান। এটাই তার বড় অপরাধ।
হাইকোর্টের এক বিচারপতি তাকে অভিহিত করেছিলেন ‘চান্স’ সম্পাদক হিসেবে। হাতে কিছু টাকা এবং মনে সামান্য শখ থাকলে যে কেউ সম্পাদক হওয়ার সুযোগ বা চান্সটি গ্রহণ করতে পারেন। তবে বিচারালয় থেকে শুরু করে সমাজের অন্যান্য আলয়কে এমনভাবে নাড়া দিতে পারেন না। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী তাকে ‘কুলাঙ্গা’ র বলে গালি দিয়েছেন। সাংবাদিক নেতা হয়ে অন্য একজন পত্রিকার সম্পাদককে কুলাঙ্গার ডাকার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনা জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। রিকশাওয়ালা, শ্রমিক এদের শব্দের ভাণ্ডার সীমিত। কারও প্রতি রেগে গেলে এদের মুখ থেকে সহজেই গালি বের হয়ে পড়ে। নিজের ক্রোধ ও হতাশা প্রকাশ করার জন্য এমনই শব্দ সঙ্কটে ভুগছেন ইকবাল সোবহান চৌধুরীর মতো সাংবাদিক নেতা, ড. আনোয়ার হোসেন ও মুনতাসির মামুনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও শিক্ষক।
মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তবুদ্ধির চেতনা ধারণ করাতে এরা সব সভ্যতা ও ভব্যতার ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। নজরুলের একটি লেখায় পড়েছিলাম, মুয়াজ্জিন যে কেউ হতে পারেন কিন্তু ইমাম হন আল্লাহর ইচ্ছায়। নজরুলের সেই কথা ধরেই বলতে হয়, ইকবাল সোবহান যে কেউ হতে পারেন কিন্তু মাহমুদুর রহমান হন সম্ভবত আল্লাহর ইচ্ছায়। ইঁদুরের ছানা যে কেউ হতে পারে কিন্তু সিংহের বাচ্চা হয় আল্লাহর ইচ্ছায়। (দৈনিক আমার দেশ,২১ এপ্রিল ২০১৩ থেকে সংকলিত) minarrashid@yahoo.com


বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

কারাগারে ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার, বন্দি ৭২ হাজার : চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার (সুলতানা কামাল)

হিউম্যান রাইটস ফোরামের আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। তবে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং হিউম্যান রাইটস ফোরামের প্রত্যাশা নিয়ে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। সুলতানা কামাল জানান, গত চার বছরে দেশে গুম হয়েছে ১৫৬ জন, এর মধ্যে লাশ পাওয়া গেছে ২৮ জনের। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের (ক্রসফায়ারের নামে) শিকার ৪৬২ জন। র্যাবের গুলিতে পা হারিয়েছে ঝালকাঠির কলেজছাত্র লিমন হোসেন। ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে ২৭০ জন বাংলাদেশী মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘কারাগারে ধারণক্ষমতা আছে ৩০ হাজার ৬৩০ জন বন্দির। কিন্তু বর্তমানে কারাগারে প্রায় ৭২ হাজার বন্দি রয়েছে।
তিনি জানান, কারাবন্দিদের শারীরিক মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে চলছে। সুলতানা কামাল জানান, জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফেরামের পক্ষ থেকে তার নেতৃত্বে আগামী ২০ এপ্রিল ১০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবেন। ২৯ এপ্রিল মূল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে ২৭টি প্রতিবেদন জমা হয়েছে। তবে ২ মে সার্বিক পর্যালোচনার পর মানবাধিকারের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হবে। তিনি বলেন, ওই সম্মেলনে তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। একইসঙ্গে ওই সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকেও মানবাধিকারের বিষয়ে পৃথক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনা বন্ধে দায়িত্ব সরকারের। আর রাজনৈতিক কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, ‘সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে, আদিবাসীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। সম্প্রতি এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেড়েছে।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে দুর্নীতি বাড়ছে এবং অনেক ভালো কাজের ফল জনগণ পাচ্ছে না।’ তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান সরকারের পক্ষেই কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাকির হোসেন, শাহীন আনাম, সালেহ আহমেদ প্রমুখ মানবাধিকারকর্মী।

শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

সত্যের পক্ষে অকুতোভয় সৈনিক : মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই (অধ্যাপক মুহাম্মদ আমিনুল হক)

আবারও গ্রেফতার হলেন মাহমুদুর রহমান। বেশ কিছুদিন দৈনিক আমার দেশ-এর নিজ অফিসে অবরুদ্ধ থাকার পর গ্রেফতার হলেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালের ১ জুন ভোরে তাকে পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। টানা দশ মাস সীমাহীন নির্যাতন ও কারাভোগের পর ২০১১ সালের ১৭ মার্চ মুক্তি পান তিনি।
মাহমুদুর রহমান সত্যের পথে লড়াকু এক অকুতোভয় সৈনিকের নাম। সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যিনি রাতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও দ্বীন ইসলামের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের মেধা, যোগ্যতা, সাহস ও বিশ্বাস দিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের পানে। কোনো ধরনের মরণের ডর যাকে স্পর্শ করে না, বাতিলের হুঙ্কারে যার হৃদয়ে কাঁপন ধরে না তার নাম মাহমুদুর রহমান। সত্যের পক্ষে কলম ধরে যুক্তির নিরিখে বাতিলকে একের পর এক পদাঘাত করছেন তিনি। জেল-জুলুম-হুলিয়া মাহমুদুর রহমানের কাছে পান্তা ভাতের মতো। মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসী বীর বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নেই, নিকট অতীতেও ছিল না।
মাহমুদুর রহমানের ঈমানি তেজ আমাদের বিস্মিত করেছে। কালের অনেক মহারথীকে দেখেছি পরাশক্তি ও ফ্যাসিবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। কিন্তু মাহমুদুর রহমান সেরকম পাত্র নন। ভেঙে যাবেন তো মচকে যাবেন না। পবিত্র হাদিসে জালেমের সামনে হক কথা বলাকে জিহাদ হিসেবে বলা হয়েছে। মাহমুদুর রহমান কাউকে পরোয়া না করে সত্য কথা প্রচার করে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মর্দে মুজাহিদ কাকে বলে। এক মাহমুদুর রহমান আজকে দেশের স্বাধীনতার শত্রুদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে রাজশাহীতে মহাসমাবেশ করেছেন। টিপাইমুখে বাঁধ দেয়ার বিরুদ্ধে লংমার্চ করেছেন। ভারতকে করিডোর দেয়ার বিরোধিতা করেছেন তিনি।
মাহমুদুর রহমানের বড় অপরাধ তিনি জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির পেছনে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপিসহ সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে যখন বাম অপশক্তিগুলো কোণঠাসা করে ফেলেছে, তখন মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের সব ধরনের অন্যায়-অবিচারকে সুনিপুণ কায়দায় জনগণের সামনে প্রকাশ করেছে আমার দেশ পত্রিকা। রেলগেট কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার লুণ্ঠন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারিসহ হাজারও দুর্নীতির সবিস্তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দৈনিক আমার দেশ। যুদ্ধাপরাধীর বিচার সবাই চায়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার করার নামে প্রহসনের বিচার কেউ চায় না। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ দৈনিক আমার দেশ সাহসের সঙ্গে জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেয়। যে কারণে একজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন।
শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণকে একাই ফুটো করে দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান। শাহবাগের ওই আন্দোলন দু’দিন পর্যবেক্ষণ করার পর মাহমুদুর রহমানের আমার দেশ পত্রিকা সাহসের সঙ্গে নিউজ করেছে ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ শিরোনামে। এরপর কয়েকদিন যেতে না যেতেই শাহবাগের আসল চরিত্র গণমানুষের কাছে প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে মানুষের মোহ ভাঙে শাহবাগ নিয়ে। শাহবাগি ব্লগারদের ইসলামবিদ্বেষী লেখাগুলো দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করলে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ৬ এপ্রিল নাস্তিক ব্লগারদের বিচারের দাবিতে লংমার্চের আয়োজন করেন। ৬ তারিখের ওই লংমার্চকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয় তার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ। সব মিডিয়া, সরকারি শক্তি ও অর্থকড়ি দিয়ে শাহবাগে যে জাগরণ সৃষ্টি করা যায়নি; সেই জাগরণ সৃষ্টি হয় শাপলা চত্বরসহ সারা বাংলায় এক মাহমুদুর রহমানের প্রচেষ্টায়। সারা বাংলার তৌহিদি জনতার কাছে নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের মেসেজগুলো মুহূর্তেই পৌঁছে দিয়েছে আমার দেশ।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পরপরই এ দেশে যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল তার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে একের পর এক রিপোর্ট করেছে দৈনিক আমার দেশ। মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ এদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। তাই দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও দশের পাশে দাঁড়িয়েছের মাহমুদর রহমান ও তার পত্রিকা। যেখানে অন্য মিডিয়া একপেশে সিন্ডিকেটেড রিপোর্ট করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেতনাকে পাশ কাটিয়ে বিদেশি চেতনা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান ডাক দিলেন নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ নাস্তিক্যবাদের করদরাজ্যে পরিণত হতে পারে না। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইসলাম ও ইসলামী চেতনার বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল পাকিস্তানি শাসকদের জুলুম ও অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে। এ সত্য কথাটিও তিনি বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ করেছেন।
খুন-গুম, ধর্ষণ, সীমান্ত হত্যা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সারা বছর যে পত্রিকাটি সরব থেকেছে তার নাম আমার দেশ। মাহমুদুর রহমানের সফল দিকনির্দেশনায় দৈনিক আমার দেশ এখন বাংলার কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের পত্রিকা। গরিবের হাতিয়ার এই আমার দেশ। ইসলামের মুখপত্র এই আমার দেশ। স্বাধীনতার রক্ষাকবচ এই আমার দেশ। মাহমুদুর রহমান দেশ ও জাতির সঙ্গে কোনো প্রতারণা করেননি। অন্য মিডিয়া যখন দলের গোলাম হয়ে কাজ করেছে, তখন নির্মোহভাবে সবার জন্য কাজ করেছে আমার দেশ। গণহত্যাকে পাশ কাটিয়ে বৃক্ষ নিধন নিয়ে রিপোর্ট করতে যায়নি আমার দেশ। বছরের পর বছর সম্পাদকের পদ আঁকড়ে ধরেও যারা দু’চার কলাম লিখতে পারেননি, মাহমুদুর রহমান তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে লিখতে হয়।
মাহমুদুর রহমান এখন আর কোনো ব্যক্তি নন। মাহমুদুর রহমান একটি আদর্শের নাম। মাহমুদুর রহমান একটি প্রতিষ্ঠান। মাহমুদুর রহমান সত্যের পক্ষের সিপাহসালার। নৈতিকতার মানে অনুসরণীয় এক ব্যক্তিত্বের নাম মাহমুদুর রহমান। মাহমুদুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা। মাহমুদুর রহমান আমাদের চেতনার বাতিঘর। মাহমুদুর রহমান এদেশের তৌহিদি জনতার হৃদয়ের মুকুট। মাহমুদুর রহমানকে আটক করা মানে এদেশের স্বাধীনতাকে আটক করা। তাকে বন্দী করা মানে গণতন্ত্রের পরাজয়। মাহমুদুর রহমান বন্দী থাকা মানে সত্যের বাতি নিভে যাওয়া। মাহমুদুর রহমান আমাদের ভাসানী। মাহমুদুর রহমান আমাদের নজরুল ইসলাম। মাহমুদুর রহমান আমাদের জিয়াউর রহমান। সরকার ভুল করে হোক আর কারও ইশারায় হোক মাহমুদুর রহমানকে আবার আটক করে খারাপ নজির স্থাপন করেছে। আমরা সবাই মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট(দৈনিক আমার দেশ থেকে সংকলিত)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন ডিজির দলবাজি চরমে : এখনই বিদায় করুন

বর্তমান সরকারের সর্বব্যাপী আওয়ামীকরণ নীতির সুযোগ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিও দলবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমেই। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের প্রধান দায়িত্ব পালনের ধারেকাছে না গিয়ে তিনি ক্ষমতাসীনদের তৈলমর্দনের অপকম্মে ব্যস্ত রয়েছেন ন্যক্কারজনকভাবে। দৈনিক আমার দেশ-এর এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নিজের এবং তার পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের গুণকীর্তনের পাশাপাশি মসজিদের ইমামদের প্রতি সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ উদ্দেশ্যে দেশের ৬৪ জেলায় সমাবেশ করেছেন তিনি। উপজেলা পর্যায়ে ফাউন্ডেশনের অধীন রিসোর্স সেন্টারগুলোকে দিয়ে টেলিভিশন ভাড়া করিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনিয়েছেন। নামাজের সময় হওয়া সত্ত্বেও ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ মুসল্লিরা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, রিসোর্স সেন্টারগুলো মসজিদের ভেতরে অবস্থিত। এর ফলে মুসল্লিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ডিজি সাহেবের তৈলমর্দনের নীতি ও কর্মকাণ্ডে তাই বলে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তিনি বরং ঠিক একজন আওয়ামী লীগ নেতার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। শাহবাগের ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের পক্ষে প্রকাশ্যে অ্বস্থান নেয়ার মাধ্যমেও তিনি নিন্দনীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেই থেমে পড়েননি তিনি, শাহবাগিদের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের ৩৮ হাজার মসজিদে জাতীয় পতাকা তো উঠিয়েছেনই, জাতীয় সঙ্গীতও পরিবেশন করিয়ে ছেড়েছেন। তার সর্বশেষ তত্পরতা দেখা গেছে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চকে কেন্দ্র করে। হেফাজতের বিরুদ্ধে ফাউন্ডেশনের অর্থে ২০ লাখ লিফলেট ছাপিয়ে সারা দেশে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং বেছে বেছে ঠিক লংমার্চের দিনটিতেই জেলায় জেলায় ইমাম ও খতিবদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠানের হুকুম জারি করেছেন তিনি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মসজিদভিত্তিক যে গণশিক্ষা কার্যক্রম ফাউন্ডেশন পরিচালনা করে সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্যও লংমার্চের দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলেন সরকারের এই কীর্তিমান ডিজি। উদ্দেশ্য ছিল সমন্বয় সভা ও বেতন দেয়ার নামে ইমাম ও খতিবদের যত বেশি সম্ভব ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের যার-যার এলাকায় আটকে রাখা। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে গিয়েও তিনি শাহবাগিদের পক্ষে এবং হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে বক্তৃতা ঝেড়েছেন। তার এই তত্পরতা চলছে দীর্ঘ চার বছর ধরেই। ক্ষমতাসীনদের তৈলমর্দনের জন্য হেন কোনো কাজ নেই যা তিনি চার বছরে না করেছেন। ফাউন্ডেশনে তো বটেই, হাজী ক্যাম্পে পর্যন্ত সঙ্গীতের আসর বসিয়েছেন এই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ডিজি। ২০১০ সালের নভেম্বরে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে হাফ প্যান্ট ও মিনি স্কার্ট পরা মার্কিন তরুণীদের জড়াজড়ি ও ব্যালে নৃত্য উপভোগ করেছেন। তাদের সঙ্গে সাগ্রহে হাত মিলিয়েছেন, উচ্ছ্বসিত আবেগে মার্কিন তরুণীদের জড়িয়ে ধরেছেন। প্রশ্ন ও আপত্তির জবাবে বলেছেন, ওটা নাকি ঠিক ব্যালে নৃত্য ছিল না, ছিল সুইং ডান্স! ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে কোনো ধরনের নাচেরই আসর বসাতে পারে না, সে কথাটা দিব্যি পাশ কাটিয়ে গেছেন তিনি। উল্লেখ্য, সরকারের অনুগ্রহে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হলেও চাকরির অবস্থানগত দিক থেকে তিনি একজন জেলা ও দায়রা জজ। সে হিসেবে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী।
বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে শুধু নয়, বিশেষ করে ইসলামিক ফাউন্ডশনের মতো মূলত ইসলামকেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ডিজি হিসেবেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত থাকতে পারেন না। নাচের আসর বসানোর মতো কর্মকাণ্ডে তো নয়ই। অন্যদিকে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের মূল দায়িত্বে দিব্যি ফাঁকি দিয়ে তিনি শুধু সরকারের সেবাদাসের ভূমিকাই পালন করছেন না, অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ইসলামবিরোধী অবস্থানেও চলে গেছেন। নাস্তিক শাহবাগিদের পক্ষে এবং লংমার্চসহ হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির বিরুদ্ধে তিনি যেভাবে ভূমিকা পালন করেছেন তা কোনোক্রমেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। মাত্র কিছুদিন আগে তার নির্দেশে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের গেটে তালা লাগানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করে দেয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয়ও করেছেন তিনি। হাজী ক্যাম্প ও ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মতো ধর্মীয় স্থানগুলোতে নৃত্য ও সঙ্গীতের আসর বসানোর পাশাপাশি সর্বাত্মকভাবেই তিনি বহু অন্যায় করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে বড় ধরনের গুনাহ করেছেন। সব মিলিয়েই আমরা মনে করি না যে, অমন একজন সেবাদাসের ইসলামিক ফাউন্ডশনের মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের ডিজির পদে বহাল থাকার কোনো অধিকার থাকতে পারে। আমরা তাই তার আশু অপসারণ দাবি করছি। জেলা ও দায়রা জজের পদেও তাকে ফিরিয়ে নেয়া চলবে না। কারণ, সেখানেও তিনি সরকারের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করবেন, সরকারের হুকুমই তামিল করবেন। যার ফলে দেশের বিচার বিভাগও ক্রমাগত কলঙ্কিত হতে থাকবে।(দৈনিক আমার দেশ থেকে সংকলিত)

বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

মাহামুদুর রহমানকে গ্রেফতার করায় সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা

ভীন্ন মত পোষন করার অধিকার না থাকলে সেটাকে গণতন্ত্র বলা হবে? ভীন্ন মত পোষনকারীকে গ্রেফতারের পরিনাম কখনো ভালো হয়নি। বর্তমান সরকারতো মায়ানমারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।কারণ সেই মায়ানমারে এখন ভীন্নমত পোষন করার স্বাধীনতা আছে।

রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৩

পাকিস্তানে যাওয়ার সহজ উপায়... শ ফি ক রে হ মা ন

স্থান  : সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খাস কামরা। একটা টিভিতে দিগন্ত টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান
চলছে।
কাল : ৬ মার্চ ২০১৩-র দুপুরবেলা।
চরিত্র : বঙ্গবন্ধু কোট পরিহিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মাঝারি সারির জনৈক নেতা।
সতর্কীকরণ : সকল ঘটনা, চরিত্র ও সংবাদ সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (বিরস মুখে নিরস স্বরে) : আসুন। (চেয়ার দেখিয়ে) বসুন। সচিবালয়ে ঢুকতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? গেইটে বলা ছিল।
আওয়ামী নেতা (হাতের ব্যাগটা কার্পেটে রেখে চেয়ারে বসে) : না। সচিবালয়ে ঢুকতে কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে সচিবালয় পর্যন্ত আসতে খুব অসুবিধা হয়েছে। আজ ঢাকায় শাপলা চত্বরে আল্লামা শফীর মহাসমাবেশে সারা বাংলাদেশে থেকে হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ আসছে। ট্রেন, লঞ্চ, কোচ বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা থেকে মানুষ হেটেই আসছে। অনেকে তো দু’একদিন আগেই এসে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছিল। তারাও আজ বিভিন্ন এলাকায় একত্র হয়ে দলে দলে শাপলা চত্বরের দিকে যাচ্ছে। আমি আমার বঙ্গবন্ধু কোটটা ব্যাগে (ব্যাগটা দেখিয়ে) রেখে এখানে এসেছি। একটু পানি খাওয়াবেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (ইন্টারকমে তার পিএ-কে রুমে এক গ্লাস পানি দিতে বলে বিরক্ত মুখে) : এমন দিনেই আপনি এলেন! আমরা তো আজ সবাই হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ নিয়ে মহাব্যস্ত। কখন যে কি হয়ে যায়, কে বলতে পারে? একটা পুলিশের একটা গুলিতে একটা হুজুর নিহত! ব্যস, তারপর সারা দেশে লংকা কাণ্ড বেধে যাবে। তারপর হয়তো ওরা চলে আসতে বাধ্য হবে। আর তখন আমরা কোথায় যাবো? (হঠাত্ চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে) একটু টয়লেটে যেতে হবে। আপনি বসুন। টিভিটা দেখুন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (মিনিট পাচেক পরে টয়লেট থেকে ফিরে এসে) : আজ না আসলেই পারতেন। আমার শরীর ভালো না। শুনেছি প্রধানমন্ত্রীরও ডায়ারিয়া হয়েছে। তারও শরীর ভালো নেই। আর দেশের অবস্থা যে ভালো নেই তা তো টিভি দেখেই বুঝতে পারছেন। সব হুজুররা দেশ দখল করে ফেলেছে। শাহবাগিদের পেছনে আমরা এত শ্রম ও সাহায্য দিলাম। আওয়ামী টিভি আর দৈনিক পত্রিকাগুলো তাদের দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা দুই মাস জুড়ে এত সাপোর্ট দিল, এমনকি বিরিয়ানির প্যাকেট, মিনারাল ওয়াটার, ক্যাশ টাকা দিল, তাতে কি লাভ হলো? আজ তারা কোথায়? প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে মাত্র শ’খানেক এসেছিল। তা-ও তারা এসেছিল সকাল দশটার পরে আমাদেরই চাপে। তারপর পালিয়ে গেছে। মত্স্য ভবনের সামনে এসেছিল জনা পঞ্চাশেক। ওরা চলে গেছে। শাহবাগের সামনে এখনো আছে সত্তর জন। এই তো! এই তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান প্রজন্মের বাহাদুরি। (আত্মগতভাবে) কাদের সিদ্দিকী আমার নামে বলেন, আমার বহু কলিগ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও, আমি মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। তার ভাষায় আমি রাজাকার। তার কথায় ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে আমি শাহবাগে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলাম। কিন্তু কি লাভ হলো?
আওয়ামী নেতা (সহানুভূতির স্বরে) : স্যার খুব হতাশ হয়ে পড়েছেন মনে হচ্ছে! দিগন্ত টেলিভিশন দেখছেন কেন? ওটা দেখে তো ডিপ্রেশন আরো বাড়বে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : একমাত্র ওরাই তো এখন কনটিনিউয়াসলি সরাসরি সম্প্রচার করছে। আর কোনো টিভি স্টেশন তো শাপলা চত্বর থেকে কনটিনিউয়াস লাইভ টেলিকাস্ট করছে না। আমাকে তো প্রতি মুহূর্তে জানতে হবে হুজুররা কি বলছে। শাপলা চত্বরে কি হচ্ছে। এই পদে আমার আগে ছিলেন সাহারা খাতুন। তিনি সেদিন স্বীকার করেছেন বিডিআর বিদ্রোহের খবর প্রথমে তিনি পান মিডিয়ার কাছ থেকে। কোনো সরকারি সংস্থা থেকে নয়। তিনি খুব সাকসেসফুল হোম মিনিস্টার ছিলেন। তাই আমি তাকেই ফলো করছি। তবে হ্যা, এটা ঠিক যে আমাকে এখন শুধু দিগন্ত টেলিভিশনের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। যদি দিগন্ত টেলিভিশন নিষিদ্ধ করে দিতাম তাহলে তো জানতাম না আমার পুলিশরা কেমন আচরণ করছে। একটু আগেই শুনলাম এক জায়গায় কিছু পুলিশ হাত নেড়ে হুজুরদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বুঝতে পারছি না গোপালীরা বিট্রে করছে কিনা। এখন তো দিগন্ত টেলিভিশন নিষিদ্ধ করা অসম্ভব। যেমন অসম্ভব দৈনিক আমার দেশ নিষিদ্ধ করা। যদিও আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ আছে পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করার। কিন্তু ওটাও আর এখন নিষিদ্ধ করা যাবে না, ইটস টু লেট। খুব দেরি হয়ে গিয়েছে।
আওয়ামী নেতা : কি হবে নিষিদ্ধ করলে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ওই যে টিভিতে যেসব হুজুরদের দেখছেন, তারা সবাই আমার দেশ-এর পাঠক। ওই পত্রিকাটি পড়েই তারা এখানে এসেছেন। লক্ষ্য করুন কয়েকজন হুজুরের হাতে আমার দেশ। মনে রাখতে হবে, এদের বাইরে আছে আমার দেশ ও নয়া দিগন্তের কয়েক লক্ষ পাঠক। ওরা সবাই দেশে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তা আমরা কনট্রোল করতে পারবো না। আজকের মহাসমাবেশ দেখুন। কোচ, লঞ্চ, ট্রেন বন্ধ করে দিলাম। ঘাদানিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এবং বামপন্থী বিশ-বাইশটা দলকে দিয়ে হরতাল-অবরোধ ডাকিয়ে দিলাম। তারপরও হাজার হাজার মানুষ।
আওয়ামী নেতা : বেয়াদবি মাফ করবেন স্যার। হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষ। আজ সকালে হেফাজতে ইসলামের জনৈক সংগঠককে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কতো মানুষ এই সমাবেশে উপস্থিত হবে বলে আশা করছেন। তখন তিনি উত্তর দেন, “যদি সরকার আয়োজিত হরতাল-অবরোধ না হতো, তাহলে ঢাকায় আজকের জনসমাবেশে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ হতো। যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও বাধা সৃষ্টির ফলে, আজ হয়তো পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ এখানে হবে।” মনে হচ্ছে তার কথাই সঠিক। শাহবাগে জাগরণের প্রথম সপ্তাহে সেখানে মানুষের ভিড় দেখে কেউ কেউ সেটাকে কায়রো বিপ্লবে তাহরির স্কোয়ারের সমাবেশের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু আজকের তুলনায় সেটা কিছুই নয়। এছাড়া মনে রাখতে হবে, শাহবাগের ওই ভিড়ে যুক্ত ছিল বাংলা একাডেমিতে গমনেচ্ছু বই ক্রেতারা এবং মিডিয়ার রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফাররা, সুশীল সমাজের লোকরা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সকল বামপন্থী দল, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং ড. বি চৌধুরীর বিকল্পধারা প্রভৃতির নেতা-কর্মীরা। সবচেয়ে বড় কথা, কিছু তরুণীও সেখানে ছিল। এখন দেখুন, আজকের এই সমাবেশে শুধু ইসলামবিশ্বাসীরাই আছেন। কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ভিড় এখন পর্যন্ত হয়নি। যদিও আসার পথে শুনলাম জাতীয় পার্টির কাজী জাফর আহমদ কিছু লোক নিয়ে মিছিল করে আসছেন। তার ক্লিয়ারেন্স পেলে তার নেতা এরশাদও আসতে পারেন। তবে শাহবাগিদের ওখানে প্রথম প্রহরেই ওদের হাইজ্যাক করে আওয়ামী লীগ যে বিরাট ভুল করেছিল এবং যে ভুলের খেসারত এখন তাদের আরো বিরাটভাবে দিতে হচ্ছে — ঠিক সেই রকম ভুলই হয়তো এরশাদ করবেন। এখানে সবাই জানেন, সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফিরে এসে তিনি এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি শাহবাগে যেতে চেয়েছিলেন। কাজী জাফরের উপদেশে তিনি সেদিন সেখানে যান নি। এরশাদ বেঁচে গিয়েছেন এবং এখন শাহবাগ কলংকিত না হয়ে শাপলা চত্বরকে স্বাগত জানাতে পারছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে শাহবাগিদের সঠিক মূল্যায়ন করেছিলেন। সিঙ্গাপুরে দাতের চিকিত্সার পর ফিরে এসে সেই রাতেই তিনি তার গুলশান অফিসে বিএনপি নেতাদের ডাকেন এবং তারপর শাহবাগিদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেন। তাই আজ শাপলা চত্বরে তিনি তার দুই প্রতিনিধি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাদেক হোসেন খোকাকে তার পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের প্রতি সমর্থন জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আক্ষেপের স্বরে) : আমাদের নেত্রী তো কারো কথা শোনেন না। তিনি সবসময় বলেন, “আমি তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা।” তাই তাকে কোনো উপদেশ দেওয়ার সাহস কারো হয় না। কারো উপদেশ না নিয়েই প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বলে বসেন, তার মন কাদে শাহবাগে ছুটে যাবার জন্য। তিনি সেখানে যান নি বটে; কিন্তু ব্লগার রাজীবের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন তার বাড়িতে। সহানুভূতি ও সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন শাহবাগিদের প্রতি। দলের নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হয়েছেন রাজীব।
আওয়ামী নেতা : একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো স্যার। প্রথম মুক্তিযুদ্ধটা তো ছিল পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধটা কার বিরুদ্ধে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : অনেকেই এখন মনে করছেন আমরা মুখে যা-ই বলি না কেন, আসলে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধটা ইসলামের বিরুদ্ধে। আর সেজন্যই শাহবাগিদেরই শুধু নয়, আওয়ামী লীগকেও ছেড়ে গিয়েছেন অনেকে। তার ফলে আজকে ৬ এপৃলের এই ফাইনাল ম্যাচে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে দেখা যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। শাহবাগিদের পক্ষে এই মুহূর্তে সারা দেশে এক হাজার মানুষও নেই। মনে হচ্ছে, আজ থেকে তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। (চিন্তিত স্বরে) এই তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধটা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। শাপলা চত্বরের বক্তারা আওয়ামী লীগকে চিহ্নিত করছেন ইসলামবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী এবং গণতন্ত্রবিরোধী রূপে। একাত্তরের নয় মাসের চেতনা হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় চৌদ্দশ বছর আগের ইসলামী চেতনার কাছে।
আওয়ামী নেতা : ইসলামী চেতনা মুক্তিযুদ্ধ চেতনার বিরোধী নয়। কখনোই তা ছিল না। শাহবাগে একটা ভুল ধারণার জন্ম আমরাই দিয়েছি আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য। আমরা চেয়েছিলাম বিডিআর বিদ্রোহ, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, কুইক রেন্টাল কেলেংকারি, হলমার্ক কেলেংকারি, ডেসটিনি কেলেংকারি, পদ্মা সেতু কেলেংকারি, সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে পুজি করে পরবর্তী নির্বাচনে জিততে। বিএনপি-জামায়াতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলন থেকে ভোটারদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে। কিন্তু আমরা বোধহয় সেটা পারলাম না। (টিভির দিকে তাকিয়ে) আমরা আজ এখানে দেখছি পুরুষদের সমাবেশ। কোনো নারী এখানে নেই। শুধু পুরুষরাই এতো! এদের পেছনে আছে লক্ষ লক্ষ নারী—যারা এদের চাইতেও বেশ ধর্মপরায়ণ। আর কে না জানে, সাধারণ নারীদের অধিকাংশই পছন্দ করে বিএনপি নেত্রীকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : হ্যা। তাই তো! নারীদের ছাড়াই পুরুষদের এতো বড় সম্মেলন। ভোটকেন্দ্রে যখন এই পুরুষদের পাশে দাড়াবে নারীরা তখন কি হবে?
আওয়ামী নেতা : শেখ হাসিনা হয়তো এবার নির্বাচনে গোপালগঞ্জেই হারবেন। অন্যখানে পরাজিত হবার অভিজ্ঞতা তার আছে। কিন্তু তার হোম কনস্টিটুয়েন্সিতে পরাজিত হবার অভিজ্ঞতা হয়তো এই প্রথম হবে। যদি অবশ্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বা করার সুযোগ পান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : সে কথায় আমরা পরে আসবো। এখন বলুন আজকের সমাবেশে আপনি আর কি লক্ষ্য করছেন।
আওয়ামী নেতা : এক. এখানে ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারের সংখ্যা খুবই কম; বাংলাদেশের পতাকা আছে। কিন্তু তার সংখ্যাও কম। দুই. কোনো নেতা, নেত্রী অথবা কোনো পরিবারের ছবিসহ একটাও পোস্টার নেই। তিন. আওয়ামী লীগের জনসমাবেশের মতো কারো হাতে লাঠি-বৈঠা-লগি নেই। কারো পকেটে পিস্তল আছে বলে মনে হচ্ছে না। চার. কোনো দলীয় প্রতীক নেই। ধানের শীষ, নৌকা, লাঙ্গল, দাড়িপাল্লা নেই। পাচ. শাহবাগিদের মতো মঞ্চ থেকে কারো লম্বা বোরিং স্লোগান মার্কা বক্তৃতা নেই। এখন পর্যন্ত সব বক্তাই এক মিনিটের মধ্যে তাদের বক্তব্য শেষ করেছেন। ছয়. কারো পরনে জিন্স ও টি-শার্ট নেই। সাত. অধিকাংশ মানুষই তরুণ। তাদের পরনে পায়জামা ও লম্বা পাঞ্জাবি যার রং শাদা। অনেকের মাথায় শাদা টুপি। কারো মাথায় ছোট পাগড়ি। অনেকের দাড়ি আছে। অনেকের নেই। আট. নির্ধারিত সময়ের মাত্র পাচ মিনিট পরে, সকাল দশটা পাচে সমাবেশের কাজ শুরু হয়েছে। এই সময়ানুবর্তিতা প্রশংসনীয়। এ থেকে হেফাজতে ইসলামের অর্গানাইজিং পাওয়ারের পরিচয় পাওয়া গেছে। নয়. মঞ্চে প্রথমে শুধু দিগন্ত টিভির মাইক্রোফোন দেখা গেছে। শাহবাগে অনেক সময় বক্তাদের চাইতে টিভি রিপোর্টার, ক্যামেরামেন ও মাইক্রোফোনের সংখ্যা বেশি ছিল। দশ. শাপলা মঞ্চ থেকে জনতাকে পরিবেশসচেতন থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। পানির প্লাস্টিক বোতল পথে না ফেলতে বলা হয়েছে। শাহবাগে পরিবেশশত্রুতা দেখা গেছে। এগার, আল্লামা শফী লংমার্চকারীদের শুধু তিনটা জিনিস আনতে বলেছিলেন—জায়নামাজ, তসবিহ এবং মেসওয়াক বা টুথব্রাশ। এই ধরনের কোনো নির্দেশ শাহবাগে ছিল না। বারো. শাহবাগে পথনাটক ও গানবাজনা ছিল। শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠানের সূচনায় একটি নতুন গান ছিল—যার কয়েকটি লাইন ছিল কাজী নজরুলের। তের. শাহবাগে বিরিয়ানি ও পানি সাপ্লাই করেছিল আওয়ামী সমর্থক মিডিয়া ও আওয়ামী বিজনেসম্যানরা। শাপলা চত্বরে এবং সেখানে যাবার পথে পথে সব রকম খাবার, ফল ও শরবত স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাপ্লাই করেছে স্থানীয় মানুষ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আরো কিছু বলবেন?
আওয়ামী নেতা : বক্তাদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্যের মধ্যে ছিল—এক. এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। দুই. প্রধানমন্ত্রী মুখে গণতন্ত্রের বুলি, চাপার মধ্যে আটক। তিন. আর কোনোদিনই কোনো মসজিদে তালা দেয়া যাবে না। ঢাকা ছিল মসজিদ নগরী। চার. এই সরকার ইসলামবিরোধী সরকার, এই সরকার গণতন্ত্রবিরোধী সরকার। পাচ. যেখানেই লংমার্চের বিরুদ্ধে অবরোধ, সেখানেই প্রতিরোধ। লাগাতার হরতাল। ছয়. দাবি না মানলে সরকারকে এখনই বিদায় নিতে হবে। সাত. বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য উদিত হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। নাস্তিকদের কবর রচিত হবে চট্টগ্রাম থেকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (হঠাত্ উঠে পড়ে) : আমাকে আবার টয়লেটে যেতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (পাচ মিনিট পরে টয়লেট থেকে ফিরে এসে) : সরকার কিভাবে বিদায় নেবে? সেটা কি সম্ভব?
আওয়ামী নেতা : সম্ভব। পাচ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় মার্চ। মাত্র একষট্টি দিন। এর মধ্যে আমাদের সরকার, আমাদের পার্টি ধরা খেয়ে গিয়েছে। আমরা কি ফেব্রুয়ারিতে ভেবেছিলাম আজ এই দশা হবে? আমাদের বিদায় নিতে হবে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : সেটা ঘটতে পারে?
আওয়ামী নেতা : শাপলা চত্বরীরা বলছে তাদের তের দফা দাবি সরকারকে মানতে হবে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে—ইসলামের বিরুদ্ধে যারা কটূক্তি করেছে, মহানবীর বিরুদ্ধে যারা কুত্সা রটনা করেছে, তাদের বিচার করতে হবে এবং সেজন্য আইন সংশোধন করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা প্রকাশ করতে হবে। তারা সবশেষে আবারো বলেছে, এই সরকার ইসলামের শত্রু। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মনে হচ্ছে বাংলাদেশে দ্বিতীয় আয়াতুল্লাহ খোমেনির আবির্ভাব ঘটেছে, যিনি ইসলাম রক্ষা করতে চান কিন্তু ক্ষমতা চান না।
আওয়ামী নেতা : হ্যা। আজকের একটা স্লোগান ছিল— “সব ধর্ম বাচাও, দেশ বাচাও।” আমাদের নেত্রী হাসিনা ইসলামী লেবাসে হাতে তসবিহ রেখে পোস্টার ছাপেন। তিনি প্রায়ই বলেন, তিনি একজন মুসলমান এবং পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। কিন্তু তার কথা মুসলিমরা আর কেউ বিশ্বাস করছেন না। শেখ হাসিনা অনেক ভুল করেছেন। এক. তিনি ভুলে গিয়েছেন এই ভূখণ্ডের শোষিত বঞ্চিত অনগ্রসর মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম নেতা ছিলেন তারই পিতা। দুই. স্বাধীন বাংলাদেশ যে মানচিত্র পেয়েছে সেটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এই মানচিত্র ছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। আর যেহেতু এই দেশের শতকরা পচাশি থেকে শতকরা নব্বই জনই মুসলিম, সেহেতু সেই মানচিত্রে প্রতিফলিত হবে প্রধানত মুসলিমদের আশা-আকাঙ্ক্ষা। তিন. কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সংখ্যালঘুরা বিপদে থাকবে। বস্তুত এই দেশের মুসলিমরা সবসময়ই অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে শান্তিপূর্ণসহ অবস্থানের পরিবেশ বজায় রেখেছে। শেখ হাসিনা ভুল করে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন চেয়েছেন। চার. এই দেশের মুসলিমরা এখন প্রতিবাদ করছে কারণ, যারা নাস্তিক অথবা ইসলামবিরোধী তারা নিজেদের গণ্ডির বাইরে গিয়ে ইসলামবিশ্বাসীদের চরম অপমান ও অশ্লীল আক্রমণ করেছে। সমস্যাটা হয়ে গেছে সেখানেই। শেখ হাসিনা এটা বুঝতে পারেননি। তাই তিনি প্রকাশ্যে নাস্তিকদের সমর্থন জানিয়েছেন এবং সংসদের ভাষণে বিচার বিভাগকে অনুরোধ করেছেন তারা যেন নাস্তিকদের অনুভূতির প্রতি সদয় বিবেচনা করে রায় দেন। শেখ হাসিনা এই লক্ষ্যে সম্প্রতি সিনিয়রিটি ডিঙিয়ে জনৈক বহু বিতর্কিত বিচারপতিকে আপিল বিভাগে প্রমোশন দিয়েছেন। পাচ. শেখ হাসিনা বোঝেন নি যে ইসলামের নামে এদেশে নিয়মিতভাবে মহা জনসমাবেশ হয়। প্রতি বছর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমায় এবং শোলাকিয়ায় ঈদে। এছাড়া প্রতি বছর মুসলিমরা চেষ্টা করেন বিশ্বের সর্ববৃহত্ জনসমাবেশ হজে যেতে। (একটু থেমে) আসলে আমাদের নেত্রী ইসলাম ধর্মে নয় — সুযোগ ধর্মে বিশ্বাস করেন। তাই যখন দরকার তখন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করেন, আন্দোলন করেন। খেলাফতে মজলিসের সঙ্গে চুক্তি করেন। আবার যখন দরকার তখন তাদের গ্রেফতার করেন। তাদের ফাসি দেওয়ার কারসাজি করেন। ফাসি দিতে আইনও বদলান। এখন তার বহুরূপ সাধারণ মানুষ জেনে গিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মেনন তো বলেছেন আমাদের আমও গেছে ছালাও গেছে। তা-ই হয়তো হবে। এখন বলুন, আপনি কেন আজই আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আমার এতো ব্যস্ততার মধ্যেও আমি দেখা করতে রাজি হয়েছি কারণ আপনি আমার এলাকার একজন নেতা।
আওয়ামী নেতা (ব্যগ্রস্বরে) : আমি পাকিস্তানে যেতে চাই। আমাকে পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন স্যার। পারলে আজই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অবাক চোখে) : পাকিস্তানে?
আওয়ামী নেতা : আজ বিভিন্ন পত্রিকায় আছে অনেক আওয়ামী নেতা এবং আওয়ামীপুষ্ট ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা সপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ আমেরিকা, কেউ ইংল্যান্ড, কেউ দুবাই, কেউ ইনডিয়া, কেউ মালয়শিয়া, কেউ সিঙ্গাপুরে। আমি স্যার গরিব মানুষ। আমি কোথায় যাবো, কিভাবে যাবো, তা বুঝতে পারছিলাম না। ৩১ মার্চ মেহেরপুরে মুজিবনগর থানা ভবন উদ্বোধনের সময়ে সুধী সমাবেশে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে আপনি বলেন, “গণতান্ত্রিক সরকার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পছন্দ না হলে, পাকিস্তানে হিজরত করুন। হিজরতের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : হ্যা। আমি বলেছিলাম। একাত্তর থেকেই তো আমি পাকিস্তানের গুড বুকে আছি। আমি রিকোয়েস্ট করলে ওরা শুনবে।
আওয়ামী নেতা : সেজন্যই তো স্যার আপনার কাছে এসেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ঠিক আছে। আপনার ভিসা যেন তাড়াতাড়ি হয়ে যায় সেই ব্যবস্থা করবো। কিন্তু কতোদিনের ভিসা আপনি চান?
আওয়ামী নেতা : এক বছরের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : এক বছর কেন?
আওয়ামী নেতা : আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, ২৭ মার্চ ২০১৩-তে চীন-বাংলা মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবস আলোচনা সভায় বিরোধী নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনার প্রিয় পাকিস্তানে আপনি চলে যান। দিল মে যো পেয়ার হ্যায়, তা নিয়ে পাকিস্তানে যান।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : হ্যা। উনি বলেছিলেন। ওনার কথাতেই আমি ইনস্পায়ার্ড হয়ে পাকিস্তানে হিজরতের সব ব্যবস্থার অফার তাকে করেছিলাম।
আওয়ামী নেতা : আসলে আমাদের নেত্রীরই
হৃদয়ে পাকিস্তানে প্রেম দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। তাই তিনি উর্দুতে এই প্রস্তাব দেন। আমাদের নেত্রীর মধ্যে
এই পাকিস্তান প্রেম প্রীতি পেয়ার মহব্বত উত্তরাধিকার সূত্রে প্রোথিত। একাত্তরে গণআন্দোলনকে
পেছনে ফেলে তার পিতা পাকিস্তানে হিজরত করেছিলেন। এখন ২০১৩-তে তিনি সেই পথই অনুসরণ করবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (হতভম্ব মুখে) : কেন? পাকিস্তানে কেন?
আওয়ামী নেতা : কারণ শেখ হাসিনা মনে করেন নয়-দশ মাস পাকিস্তানে কাটিয়ে আসতে পারলে তিনি নিজেকে সাচ্চা মুসলমান রূপে আবার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তৌহিদি জনতার কাছে আবার গ্রহণযোগ্য হতে পারবেন। শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে তাকে নিরাপদে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার আলোচনা এই মাসের প্রথম সপ্তাহে দিল্লিতে শীর্ষ পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে হয়েছে। সরকারের পতন ঘটলে, হাসিনা ইনডিয়াতে যেতে পারবেন না কারণ পরবর্তী সরকারের সঙ্গে ইনডিয়ান সরকার সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে। হাসিনা আমেরিকায় যেতে পারবেন না কারণ আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে তিনি শত্রুতা করেছেন প্রকাশ্যে, এক ড. ইউনূসকে বেইজ্জতি করে এবং দুই সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে সমরাস্ত্র কেনার চুক্তি করে। হাসিনা কানাডাতে যেতে পারবেন না কারণ সেখানে পদ্মা সেতুর যে দুর্নীতি মামলা শুরু হবে ৮ এপৃলে তাতে তিনি জড়িয়ে যেতে পারেন। আমেরিকায় যেতে না পারলে তিনি বৃটেনেও যেতে পারবেন না। কারণ বৃটেন শোনে আমেরিকার কথা। আর আজকের মহাসমাবেশে ইসলামের শত্রু রূপে চিহ্নিত হবার পরে এখন কোনো মুসলিম দেশেও তিনি যেতে পারবেন না। পাকিস্তান হবে ব্যতিক্রম। তারা যেভাবে গত চার বছর অপমানিত হয়েছে, সেটার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ তারা হাতছাড়া করবে না। এটা জেনেও হাসিনা পাকিস্তানে যাবেন। কারণ পাকিস্তানই তাকে সুযোগ দিতে পারবে আরেকটি দশই জানুয়ারি পালন করবার। আমি ফুল নেতা হয়ে তার সঙ্গেই বাংলাদেশে ফিরে আসবো।
হঠাত্ টেলিফোনটা বেজে উঠলো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএ : স্যার। পাকিস্তানি অ্যামবাসাডরকে আপনি চেয়েছিলেন। উনি লাইনে আছেন। দেব স্যার?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : হ্যা, দেন। (পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা শুরু হলো) থ্যাংক ইউ ইয়োর একসেলেন্সি। হ্যা, ভিসা অ্যাপ্লিকেশন আমরা করছি। তবে কিছু কারেকশন আছে। ফার্স্ট. খালেদা জিয়ার জন্য নয়, শেখ হাসিনার জন্য ভিসা দরকার। সেকেন্ড. আমার এক পার্টি ওয়ার্কারের জন্য ভিসা দরকার। আর থার্ড. আমার নিজের জন্যও একটা ভিসা দরকার। ইমিডিয়েট...(দৈনিক আমার দেশ থেকে সংকলিত)


বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৩

মহা টেনশনে গণভবন


লেখক:-শওকত মাহামুদ
হাসিনা-সরকারের জন্য প্রতিটি দিন এখন আতঙ্কের। ভীতি যত বাড়ে, প্রলাপও তত তুঙ্গে ওঠে। আগামী ৬ এপ্রিল তাদের জন্য মহা-দুর্ভাবনা নিয়ে আসছে। হেফাজতে ইসলামকে ছলে-বলে নিরস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে অত্যাচারী এবং ইসলাম-বিরোধীবান্ধব বর্তমান সরকার। ইসলাম বাঁচানোর এই লংমার্চে সরকারের সঙ্গে তারাও সন্ত্রস্ত। কারা? সরকারের বর্শামুখ হিসেবে যারা ব্যবহৃত হচ্ছেন। সাপের জিভের দুই ডগার মতো একদিকে শাহবাগের ইসলামবিদ্বেষী ব্লগাররা; অন্যদিকে মাওলানা মাসউদ, মাওলানা মিছবাহুর এবং তরীকত ফেডারেশনের কর্তারা। এরা সেক্যুলার সরকারের ধ্বজা ধরে ইসলাম-বিদ্বেষীদের চেয়ে জামায়াতে ইসলামীকে বড় প্রতিপক্ষ মনে করছে। তাদের মুখে শুনলাম, লংমার্চে নাকি জামায়াত-শিবির ঢুকে মিশে গিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাবে। প্রশ্ন জাগে, সরকারই বোধহয় এটা করাতে পারে। দোষটা আগেভাগে জামায়াতের ওপর ফেলে রাখা আর কি!
একটি দল, থুক্কু একটি পরিবারের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার তীব্র খায়েশ থেকেই বর্তমান সঙ্কটের জন্ম। এর জন্য গণহত্যা চালানো হচ্ছে দেশজুড়ে। ক্ষেপে ওঠা মানুষের রক্ত ঝরাতে সরকারের বাহিনী যত্রতত্র এন্তার গুলি-গ্রেনেড ছুড়ছে। এবং তা করতে গিয়ে তাদের কব্জি উড়ে যাচ্ছে বা মাথা থেঁতলে যাচ্ছে। টিভি-পত্রিকায় আমরা রাজপথের জনপদের যে তাণ্ডব দেখছি, তার চেয়েও বেশি বর্বরতা চলছে আটক বা গ্রেফতারকৃতদের ওপর। কিন্তু সেসব আমরা দেখছি না বা জানছি না। কত তরুণ রিমান্ডে, বিনা মামলায় বা বিনা বিচারে অমানুষিক নির্যাতনে, গায়েঠেকানো বন্দুকের গুলিতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। জেলখানাগুলোতে গাদাগাদি করে রাজবন্দিরা স্রেফ নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচতে চাইছে। তপ্ত নিঃশ্বাসে তাঁরা হয়তো উচ্চারণ করছে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী ফ্রান্সের অগ্নিপুরুষ কবি লুই আসগঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘চোখের জলের চেয়ে সুন্দর’-এর ছত্রগুলো : ‘আমি যে নিঃশ্বাস নিই তাতে কেউ কেউ বাঁচতে বাধা পায়/জানি না কী অনুতাপে চমকে দিই আমি তাদের নিদ্রাকে/কবিতার মিল দিয়ে যেন শূন্য ভরি ভেরীর বাজনায়/এমন আওয়াজ নাকি মৃতেরাও জেগে ওঠে সেই ডাকে।’ একদিন এই রাজবন্দিদের ওপর বীভত্সতার কাহিনী জাতি শুনবে; শুনতেই হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা হত্যা শুরু হলে প্রথম দু’দিন কিছু মিডিয়া উল্টো কাহিনী শুনিয়েছিল। খুনিদের দাবি, কিছু মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী গদগদিয়ে সমর্থন জানাচ্ছিল। অথচ আড়ালে চলছিল হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও গণকবর বানিয়ে লাশ পুঁতে ফেলা এবং ড্রেন দিয়ে লাশ নিক্ষেপের লোমহর্ষক সব ঘটনা। সরকারের কয়েক কর্তা ও ষণ্ডা ব্যক্তি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল খুনিদের রক্ষায়। কিন্তু বিদ্রোহের অবসানে আর লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় জাতি যখন জানল প্রকৃত ঘটনা, ভেঙে পড়ল কান্নায়। ধিক্কার দিল সরকারকে—কেন ঘটতে দেয়া হলো গণহত্যাকে? একদিন তদন্ত হতেই হবে কারা কীভাবে এসব ঘটিয়েছিল। সেদিনের পিলখানায় এবং আজকের রাজপথে, জেলে জেলে, রিমান্ড সেলে এবং থানায় থানায় কোনো না কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকেই যাবে এই বর্বরতার বয়ান দেয়ার জন্য। ইতিহাসের জন্য এসব তোলা থাকবে।
পিলখানার গণহত্যা এবং আজকের গণহত্যা একই সূত্রে বাঁধা। আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই বর্তমান সরকারের ভূমিকায়। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারজি হালে পদত্যাগ করে হাসিনা-সরকারের মেরুদণ্ডহীনতা তুলে ধরেছেন। কীভাবে? ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি ইতালিয়ান পণ্যবাহী জাহাজকে জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য ইতালির দু’জন নৌ-সেনা সালভাটোরে গিরোনে এবং ম্যাসিমিলিয়ানো লাভোরে গুলি ছোড়ে। এতে দু’জন ভারতীয় জেলে মারা যায়। বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবর অনুযায়ী, গুলির আগে নৌ-সেনারা সতকর্তামূলক গুলিও ছুড়েছিল। জেলেদের নৌকাকে তারা দস্যু-নৌকা ভেবে গুলি করে। এ নিয়ে ভারত ও ইতালির মধ্যে জোর কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়। ইতালির দুই নৌ-সেনার বিচার ভারতে শুরু হয়। আটক নৌ-সেনাদের ভারত থেকে ইতালি যাওয়ার অনুমতিও দেয়া হয় বড়দিনের উত্সব ও গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটপ্রদানের সুযোগ দিতে। এরপর ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও মন্টি ঘোষণা করেন যে, এই দুই নৌ-সেনাকে আর ভারতে ফেরত পাঠানো হবে না; কারণ ভারতীয় আদালতের এখতিয়ার নেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বিচারের। কিন্তু পরিস্থিতি হঠাত্ বদলে যায় সম্প্রতি ভারত সরকার ইতালির রাষ্ট্রদূতকে ভারত ত্যাগের অনুমতি না দেয়ায়। এর দরুন এবং ভারতের কাছে হেলিকপ্টার বিক্রির ধান্ধায় প্রধানমন্ত্রী মন্টি ঘোষণা করেন, দুই নৌ-সেনাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হয়ে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এমপিদের বিপুল করতালির মধ্যে তিনি ঘোষণা করেন, ‘দেশের সম্মান, সশস্ত্র বাহিনীর মান-মর্যাদা এবং ইতালির কূটনীতির স্বার্থে আমার এই পদত্যাগ। আমি চাই না ইতালির সেনাদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া হোক। এ দুই নৌ-সেনা এখন দিল্লিতে ফেরত গেছে এবং ইতালির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সানতেলি তাদের বিচারকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন।
এ ঘটনাটি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে এজন্য যে, দু’জন সৈন্যের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। আর ভারত তার দুই নিহত নাগরিক জেলের জন্য কী না করছে! আমাদের বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কত অন্তপ্রাণ, তা তো চার বছর ধরে দেখছি। তারা পিলখানায় বিনাযুদ্ধে মরল। তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা হলো না। এখন গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য অনুরোধ। আমরাও বলি গণতন্ত্র বাঁচুক। কিন্তু গণহত্যার গণতন্ত্র? সেনাবাহিনী নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তার অনেক প্রমাণ আছে, হয়তো স্বস্তির সম্পর্ক নেই। সেনাবাহিনীকে ভোটের সময় মোতায়েন না করা তো সরকারের প্রকাশ্য অবস্থান। রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে নামানোর বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা খোলাখুলি কথা বলেছেন। বগুড়ার শাহজাহানপুরে থানা রক্ষায় সেনা মোতায়েন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইএসপিআরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য জাতি শুনেছে। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনী সম্পর্কে একটা মন্তব্য করার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বসেছেন। থাকগে, বলতে চাইছি, আমাদের সরকারের ইটালি ও ভারতের কাছ থেকে শেখার আছে। যদিও ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। তেমনি প্রায় প্রতিদিন যে ভারতীয় বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশী মারছে, ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ফেলানীকে মেরে ঝুলিয়ে রাখছে, তাতে কোনো প্রতিবাদ নেই। উল্টো আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফে পক্ষে সাফাই গায়। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব ঢাকায় বসে সীমান্ত-গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (দু’জনই চাঁদপুরের) তাত্ক্ষণিকভাবে মৃদু প্রতিবাদ করার হ্যাডমও রাখেন না। মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে মুসলিম নিধন চলছে। এতিমখানায় আগুন দিয়ে শিশুদের মেরে ফেলা হয়েছে। সরকার কোনো কথা বলে না। উল্টো সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে, যাতে নির্যাতিত বাঙালি মুসলমানরা বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে। মিয়ানমারের এই মুসলিম-নিধনে কি আমাদের সরকারের সায় আছে—এ প্রশ্ন উঠেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়দানের জন্য জাতিসংঘ, ওআইসি এবং মুসলিম বিশ্বের অনুরোধকে এ সরকার উপেক্ষাই করেনি; বরং রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দিলে তারা বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ওপর হামলা করবে—এমন আশঙ্কা উগরে দিতে রামুতে সরকারি ছকে বৌদ্ধদের ওপর আওয়ামী লীগ দিয়ে হামলা করিয়েছে। এ হামলা এখনও রহস্যাবৃত এবং যে চক্রান্তকারীর ফেসবুক থেকে উসকানি দেয়া হয়েছে, সে এখন আওয়ামী লীগের কোনো এক এমপির বাসায় নিরাপদে আছেন বলে শোনা যায়। উল্লেখ্য, বিশ্বে এখন সবচেয়ে বড় এথনিক গ্রুপ কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমান।
বাংলাদেশে চলমান ফ্যাসিবাদ ও সরকারের ইসলাম-বিদ্বেষের প্রতিবাদে সারাদেশই এখন সোচ্চার। আমাদের সমাজে এমন মনে করার লোকও আছে, যারা ভাবছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম রাজনৈতিক নিপীড়ন চালিয়ে, গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সরকার টিকে যাবে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্ব বা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতিত্ব কেউ নাকচ করতে পারবে না। এ ক’জনের মধ্যে ‘দানবাধিকার’ কমিশনের চেয়ারম্যানও থাকতে পারেন। কিন্তু তারা যদি সরকারের হাইকমান্ডের টেনশনের কথা আঁচ করতে পারতেন এবং অতীতে আন্দোলনে-জর্জরিত সরকারগুলোর শেষ সময়ের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান অবস্থার একটা পর্যালোচনা করতেন, তাহলে হুঁশে আসতেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ১৮ দলের পক্ষে যে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, জনগণ সেসব বাস্তবায়ন করছেন। শেখ হাসিনা চলে গেছেন ডিফেন্সিভ অবস্থানে। হানিফ, কামরুল, মায়া গং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বসে বা নয়াপল্টনে পুলিশ পাঠিয়ে হরতাল ভাঙতে পারছেন না। সারাদেশে প্রতিদিন রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। একমাত্র ভরসা পুলিশ আর পারছে না। সরকারের সব কথা পুলিশ শুনছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে অপসারণের জন্য বলা হলেও পুলিশ সদর দফতর এখনও বাস্তবায়ন করেনি। সরকার হরতালে বিজিবি নামায়। কিন্তু যাদের সেনা-নিরাপত্তায় থাকতে হয়, তারা কতখানি গণহত্যা চালাবে বা সরকারকে বাঁচাবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘শুট অ্যাট সাইট’ হুকুম সংলাপের সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। সরকার সংলাপ চায় না, আর সরকারের পতনের দাবিতে একমত বিরোধী দলের পক্ষে রক্তের বন্যা মাড়িয়ে সংলাপে যাওয়া সম্ভব নয়। শোনা যায় সরকার নাকি সংলাপ করতে চায়। এটা স্রেফ লংমার্চ বা আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হতে পারে। সরকারের জন্য বড় বিপদ হলো গোটা দেশের মুসল্লি, আলেম সমাজ রাজপথে নেমে এসেছেন। শাহবাগিরা স্তিমিত। খোদ আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতারা গণভবনে বসে শাহবাগের ব্লগারদের অভিসম্পাত করছে। অন্যদিকে শাহবাগে গিয়ে প্রায় পায়ে ধরে রুমী স্কয়াডের অনশন ভেঙেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। কচি-কাঁচাদের খেলাঘর দিয়ে রাজনীতিতে বুদবুদ তোলা যায়, কিন্তু আখেরে উল্টো পরিণাম হয়। ১৭৫ বছর আগে ফ্রান্সের রাজনৈতিক চিন্তক কেভিল সমাজ-বিচ্ছিন্ন, বিভ্রান্ত এসব ব্লগার সম্পর্কে বিপজ্জনক আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। পুলিত্জার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক ক্রিস হ্যাজেস তার ‘ডেথ অব দ্য লিবারেল ক্লাস’ বইয়ের ২০৮ পৃষ্ঠায় সরাসরি বলেছেন : “The great promise of the internet- to open up dialogue, breakdown cultural barriers, promote democracy, and unleash innovation and creativity- is yet another utopian dream. The internet is only accelerating our division into antagonistic clans, where we sucked into virtual tribal groups that chant same slogans and hate the same enemies. The web, like the cable news outlets, forms anonymous crowds to send collective rage, intolerance, and bigotry. These virtual slums do not seek communication and dialogue. They speak in new absurdist language. They do not enrich our culture. They create a herd mentality in which those who express emapathy for some perceived 'enemy'- whether left or right- are denounced by their fellow travelers for their impurity. And the liberal class has become as corrupted by the web as the right ring."
সরকারের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে শাহবাগ বসিয়ে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এই জাগরণ মঞ্চ সফল হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে একটা বড় ধরনের গণঅভ্যুত্থান হতে পারে—এই আশঙ্কা সরকারের। পুলিশের বেধড়ক গুলির আরেকটা উদ্দেশ্য—কেউ যেন কোথাও বসতে না পারে। বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীরা ৩১ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে বসে মতবিনিময় করবেন, সেখানেও পুলিশের বাধা। ভিন্নমতে জিরো-টলারেন্স। দমনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার কী করতে পারে? ইমার্জেন্সি? দিতে পারে, কিন্তু সেনা মোতায়েন ছাড়া ইমার্জেন্সি সম্ভব নয়। আর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছাড়া সেনাবাহিনী ‘রোড-শো’র জন্য রাস্তায় নামবে, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। বর্তমানে রাজনৈতিক তত্পরতা তো বিরোধী দলের জন্য একরকম নিষেধই আছে। সমস্যা হবে হানিফ, কামরুল, মায়া, নানক, হাজী সেলিম, শাওন ও সম্রাট সাহেবদের জন্য। তারা মিছিল নিয়ে নামলে সেনাবাহিনী তো ছাড়বে না। সে থাক, এসব কল্পনার কথা। সরকার সেনাবাহিনীকে নামাবে কিনা, বা নামাতে ভরসা পায় কিনা, তা সরকারের ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে রাজধানীতে। মানে কারফিউ। এই ধারা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের মনোবল আর অবশিষ্ট আছে কি না, দেখার বিষয়। এই মাটির ইতিহাস বলে, এসব করে কোনো সরকার গদি বাঁচাতে পারেনি। সরকারের কেউ যদি মনে করেন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে অথবা তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হতোদ্যম করা যাবে, তাহলে সরকার সবচেয়ে বড় ভুল করবে। এর জন্য তওবা করার সুযোগও অনেকের হয়তো হবে না।
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ওপর মানুষের আস্থা কেমন—এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। গণভোটও অবাস্তব, কিন্তু অমোঘ সত্য হলো, বলদর্পী সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জনমতের প্রতিকূলে যারা এর কাটাছেঁড়া করেছেন, তাদের রাজনৈতিক ইন্তেকাল হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনী বাকশাল বাঁচাতে পারেনি। বিচারপতিদের বয়স নিয়ে সংশোধনী অস্থিতি এনেছিল। আর বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী, যাতে আল্লাহ ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিসর্জন দেয়া হয়েছে, তার পরিণাম হাসিনা-সরকারকে ভোগ করতেই হবে।(আমার দেশ ৪ এপ্রিল থেকে সংগৃহিত)

নষ্ট কমিউনিস্টদের ভারে নৌকা ডুবু ডুবু!

 (পীর হাবিবুর রহমান)--টানা দুই মাস পর তৃণমূল বিস্তৃত উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের উপলব্ধি হলো শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ আর নয়। যারা শুরুতে বলেছিলেন এ আন্দোলনের এখানেই ইতি টানা উচিত, যারা বলেছিলেন সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে একাত্দতা ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও সরকারের অবস্থান খোলাসা করা ঠিক নয়; তখন তাদের দিকে বাঁকা চোখ তুলে কেউ কেউ তাকিয়েছিলেন। সমালোচকদের কেউ কেউ নব্য রাজাকার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত বলে সমালোচনার তীর ছুড়েছিলেন। একাত্তর না-দেখা একটি বেসরকারি টেলিভিশন সব বাদ দিয়ে হররোজ লাইভ দেখাতে শুরু করল শাহবাগের কর্মকাণ্ড। চিরকুমারী এক দলদাসী নারী সাংবাদিকের প্রভাবে আরেকটি টিভি চ্যানেলও কম করেনি। দু-একটি প্রিন্ট মিডিয়াও এ দীর্ঘপথের সাথী হলো। সরকারের পুলিশ, নেতা-কর্মীদের অকুণ্ঠ সমর্থন, র্যাব-পুলিশের প্রহরা, গাওয়া ঘিয়ের বিরানিসহ যত বাহারি খাবার সরবরাহ করা এমন রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তার এ আন্দোলনকে 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ' বলে প্রচার করা হলো। কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে আপসকামিতার দুর্গন্ধের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চমকের মতো খেলে যাওয়া তারুণ্যের প্রতিবাদের শাহবাগকে দখল করে চতুর সুবিধাবাদী বামরা অদৃশ্যের ইশারায় সরকারের পিঠে সওয়ার হয়ে এটিকে মতলব হাসিলের মঞ্চে পরিণত করে। তিন-চতুর্থাংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার শরিক সব দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে কিংবা নিজেদের প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের সঙ্গে কথা না বলেই যেভাবে সমর্থন দিয়ে মন্ত্রী-নেতারা শাহবাগের পক্ষে সুর তুলেছেন তা যে রাজনৈতিকভাবে কতখানি ভুল ছিল সে চিত্র আজ খোলস খুলে বেরিয়ে আসছে। জনগণ তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষেই ছিল। বিচার হচ্ছিল। রায় হচ্ছিল। তবু কেন এ রায় নিয়ে এভাবে উসকে দেওয়া হলো শাহবাগ অব্যাহত রেখে? শাহবাগে সংহতি জানাতে আসা জাতীয় বীর, '৬৯-এর নায়ক তোফায়েল আহমেদসহ মন্ত্রী-নেতারা প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা পাননি। কারও কারও প্রতি অশোভন আচরণও হয়েছে। উল্টো পিঠে একই জায়গায় মতিয়া চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদদের যখন সমাদর করা হয়েছে তখন কারও বুঝতে বাকি ছিল না এ নাটকের নেপথ্য কুশীলব কারা? আওয়ামী লীগকে সারা জীবন প্রচণ্ড ঘৃণা ও আক্রোশের চোখে দেখে আসা দু-চার জন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও ভিসি কিংবা কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী যাদের সরকার থেকে অনুকম্পা ও ফায়দা কুড়ানো আজ চারিত্রিক ধর্ম তাদের শাসক আওয়ামী লীগ চিনতে ভুল করেছিল। এরা কখনোই আওয়ামী লীগ সমর্থক নন। এরা দয়া-করুণা নিয়ে বাঁচতে আওয়ামী লীগ সরকারের বা শক্তির ওপর নির্ভরশীল। কোনো কোনো নাস্তিক ব্লগারের আল্লাহ- রাসূলকে নিয়ে কটাক্ষের পরিণতি একটি মুসলিম মডারেট কান্ট্রিতে পরিস্থিতি কোথায় নিতে, মানুষের হৃদয়ে কতটা আঘাত করতে পারে তা চিন্তায় নিয়ে সরকারকে ইনকিলাবে প্রকাশের পর আমার দেশ যখন লুফে নিল তখনই কঠোর পথ নেওয়ার দরকার ছিল। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সব মতের মানুষ থাকবে। কিন্তু কোনো নাগরিক অধিকার হরণ বা কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সাহস কেউ রাখেন না। ২০০১ সালের পর তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। গ্রেনেড হামলা থেকে আল্লাহর রহমতে বেঁচেছিলেন মুজিবকন্যা। শত শত আওয়ামী লীগ নেতার শরীরে স্প্লিন্টারের চিহ্ন। খেসারত নষ্ট বামদের দিতে হয়নি, আওয়ামী লীগের দিতে হয়। শাহবাগের শুরু থেকে এ আন্দোলন থেমে যাক তা সরকারের একজন চেয়েছিলেন তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত পরহেজগার মহিলাই নন, উদার অসাম্প্রদায়িক মানুষও। তার রাজনীতিও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শের। কিন্তু তার ডানে-বাঁয়ে সরকার ও দলে আদর্শচ্যুত আজ্ঞাবহ কমিউনিস্টরা সারাক্ষণ যেভাবে ঘিরে থাকেন বা ছিলেন বা আছেন তারা তার চিন্তার পথে অগ্রসর হতে দেননি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করলেও ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতির স্লোগান দেওয়া অনেক দলের চেয়ে বেশি ধর্মপ্রাণ। তার পরও হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সূচনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকার গত দুই দিন থেকে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জানেন না গত চার বছর সরকারি হজ প্রতিনিধি দলে কারা ঠাঁই পেয়েছেন। আমার বিশ্বাস তার হাতে তালিকা পড়লে অনেকের নাম কেটে তিনি অনেক আলেম-ওলামা বা ইমামের নাম সেখানে দিতেন। শাহবাগের মঞ্চ থেকে মুখপাত্র ইমরান সরকারকে দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অনেক হঠকারী কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বক্তব্য এসেছে। অহিংস আন্দোলনের কথা বললেও অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করতে উসকানি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে সবাই শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ উঠিয়ে দেওয়ার কথা বললেও আদর্শচ্যুত বাম দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য আপত্তি করেছেন। এদের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বক্তৃতা লিখে দেন। এদের একজন খেলাফত মজলিসের সঙ্গে পাঁচ দফা চুক্তিকে সমর্থন করেছিলেন। এদের একজন ২০০১ সালের নির্বাচনে কুত্তার মাথায় টুপি পরিয়ে নির্বাচনী পোস্টার কার্টুন অাঁকিয়েছিলেন। দল বিপর্যয়ে পড়লে এরা কাদায় নেমে মাছ খেয়ে আসা হাঁসের মতো ডানা ঝাঁপটে কাদা ফেলে সুন্দর করে তাকায়। পঁচাত্তর-উত্তর এরা খাল কাটতে যান সেনাশাসক জিয়ার সঙ্গে। হেফাজতে ইসলামের প্রধানের সঙ্গে সমঝোতায় যারা গিয়েছিলেন তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তবে আলোচনার ভিত্তিতে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে যাদের আটক করা হয়েছে তা সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত। যেখানে সরকার প্রতি ক্ষেত্রে আলোচনার বিকল্প দমননীতির পথ নিয়েছে সেখানে বিলম্বে হলেও এ উদ্যোগ ইতিবাচক। তার পরও সরকারের জোট থেকে আলাদা অবস্থান নিয়ে এরশাদ হেফাজতের লংমার্চকে সমর্থন জানালেও অন্য শরিকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, 'হেফাজতে ইসলাম যেন ইসলামের হেফাজত করে জামায়াতের নয়। এ ধরনের বক্তব্য দিতেই পারেন তবে তা যেন উসকানির পর্যায়ে না যায়। আওয়ামী লীগে একসময় মরহুম আবদুস সামাদ আজাদরা ইসলামী চিন্তাবিদ ও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তার অনুপস্থিতিতে আমির হোসেন আমু বা তোফায়েল আহমেদ কিংবা শেখ ফজলুল করিম সেলিমরা পারেন। এককালের দেউলিয়া উগ্রপন্থি ও আদর্শহারা বামেরা মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার সরকারের তরীকে এতটাই ভারী করেছেন যে একের পর এক ভুল পরামর্শ দিয়ে তাতে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে নৌকা যেন ডুবুডুবু করছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার কখনোই বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পথে না হেঁটে দমনের নীতি নিয়েছে। অথচ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতি বিবেচনায় রেখে শেষ মুহূর্তে হলেও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করছে। বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করলে আজ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে চেহারা নিয়ে যে ভাষায় কথা বলেন তাতে টিভির সামনে বসা অন্ধজনেরাও বলতে পারবেন সমঝোতা নয় সংঘাতের পরিণতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দেশ পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের দিকে হাঁটুক একটি মানুষও চায় না। দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হলেও বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ধর্মের রাজনীতিকে ব্যালটবিপ্লবে অভিষিক্ত করেনি। তেমনি উগ্রপন্থি বা বামপন্থিদেরও জনরায় দেয়নি। জনমত আদায়ে ব্যর্থ ক্ষমতালোভী আশ্রিত বামদের ভারে ও পরামর্শে আওয়ামী লীগ সরকার আজ একদিকে বিএনপি জোটের এক দফা, জামায়াতের সহিংসতা, হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ আন্দোলন ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের চোখ রাঙানির মুখোমুখি। চতুর্মুখী রাজনৈতিক আক্রমণ ও সমালোচনার মুখে পতিত সরকারের জোটে দূরে থাক দলের মধ্যেই অভিন্ন অবস্থান নেই। আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে যেদিন শাহবাগ নিয়ে খোলামেলা কথা হয় তার পর দিন শাহবাগের শহীদ রুমি স্কোয়াডে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার পরিষ্কার বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধ না হলে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। জোট শরিক রাশেদ খান মেনন বলেছেন আম ছালা দুটোই যাবে। তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দুই নৌকায় পা দিলে সব দিকেই মরার সম্ভাবনা। আমরা গোল ঠিক করতে পারিনি। রাজনীতির মঞ্চে দ্রুত একের পর এক দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। তাই যত ভয়, যত শঙ্কা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষা-আচরণে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার হাতিয়ার হিসেবে পুলিশকে মাঠে নামিয়ে একরোখা নীতি গ্রহণ করেছেন। দিনে দিনে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও কমেছে। জনগণের বন্ধুর জায়গা থেকে পুলিশকে সরিয়ে নিতে প্রতিটি সরকারের মতো এ সরকারের ভূমিকাও কম নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক বিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে পথ হাঁটার নীতিতে কেউ চলেননি। সরকারে গেলে দমননীতি, বিরোধী দলে গেলে গণতন্ত্রের বুলি- এ নীতিতে রাজনীতি চলে আসছে। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড পুলিশ দিয়ে রুখে দিয়ে যারা একদিন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন তাদের চেহারা এখন টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের কথাও বদলে গেছে। পুলিশের গুলিতে জামায়াত সমর্থকদের যেমন মৃত্যু ঘটেছে তেমনি জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় পুলিশের সদস্যরাও জীবন দিয়েছেন। এ সহিংস সংঘর্ষে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ পথচারী ও সাধারণ মানুষ। সব মিলিয়ে মানুষের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। রক্তপাত হানাহানির পরিণতি কখনোই শুভ হয়নি। ২০০৭ সালে হয়নি। ২০১৩ সালে হবে না। এমনটাই সবাই বলছেন। যে দুই নেত্রীর ওপর ৩০ বছর ধরে গণতান্ত্রিক শক্তির আস্থা অব্যাহত রেখেছে সেই জনগণের মনের ভাব জানতে হলে খলিফা হারুনুর রশিদের মতো ছদ্মবেশে তাদের রাতগভীরে বের হতে হবে না, দলকানা সুবিধাভোগী বা দলদাসদের বাইরে নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী কিংবা দলীয় সীমানার বাইরে হাঁটা বিভিন্ন পেশার মানুষজন কিংবা সাধারণের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন চলমান সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে। সর্বত্র বলাবলি হচ্ছে, আদর্শচ্যুত জনবিচ্ছিন্ন আশ্রিত নষ্ট উগ্র-বাম ও কমিউনিস্টদের ভারে শেখ হাসিনার সরকারের এ অবস্থা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তো বার বার বলেছেন, এটা কমিউনিস্ট সরকার। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। এবার খিচুড়ি সরকার। তাই এ অবস্থা। অন্যদিকে '৭১-এর কলঙ্কের ঢোল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীসহ উগ্র ডানদের গলায় বেঁধে হাঁটার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ধানের শীষ পুড়ে যাচ্ছে। দুই নেত্রী যার যার অবস্থানে অনড় থাকায় পশ্চিমা ও গণতান্ত্রিক দুনিয়াসহ এ দেশের সিভিল সোসাইটির সংলাপের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ও দমন-নির্যাতন পরিস্থিতি অবনতির শেষ তলানিতে এনে ঠেকিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নানা দাবিতে ৬ মার্চ ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচি করছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের প্রতিনিধিরা এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের শেষ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। একই দিনে ঢাকায় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চসহ তাদের সমর্থকরা যেমন আলাদা সমাবেশ ডেকেছেন, তেমনি মহাজোটের শরিক জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও বিএনপি জোট হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। জামায়াত-শিবির তো সমর্থনে মাঠেই থাকবে। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনও এ দাবিতে রাস্তায় নামছে। মাঝখানে পরিস্থিতি ৬ তারিখে কোন দিকে মোড় নেয় সেই হিসাব-নিকাশের উত্তেজনা সব দিকে বাড়ছে। ১০ এপ্রিল বিএনপি ঢাকায় সর্বশক্তি নিয়ে সমাবেশ করবে। এ অবস্থায় অনেকের প্রশ্ন ও সংশয়_ ৬ মার্চে এমন কিছু ঘটবে না তো যা পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক দুই দলের বাইরে চলে যায়।

সুমহান মুক্তিযুদ্ধের পর বার বার জাতীয় ঐক্যকে বিভক্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগেই তা ঘটানো হয়েছে। জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার-পরিজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে মুক্তিযুদ্ধের চার সফল নেতাকে খুন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে লাখো লাখো শহীদের রক্ত ও আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে মানুষ রক্ত ও জীবন দিতে কার্পণ্য করেনি। তবুও ২২ বছরের গণতন্ত্রের জমানায় সংবিধানকে জনগণের প্রত্যাশার মতো করে সংশোধন করা হয়নি। জগাখিচুড়ি করে রাখা হয়েছে। যখন যারা এসেছেন তাদের মতো করে করেছেন। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের আগ্রাসনে দিনে দিনে অভিশপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা দূরে থাক, সংসদ অকার্যকর হয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছে। সরকারের একগুঁয়ে নীতি জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২২ বছরে পেশাজীবীদের পেশাদারিত্বের বদলে দলীয় আনুগত্যের বৃত্তে বন্দী করা হয়েছে। দিনে দিনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, মনোনয়ন-বাণিজ্য, দলীয় গণতন্ত্রের চর্চার অভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষয়ে গেছে। ভেঙে ভেঙে পড়ছে সবকিছু। দুর্নীতি দিনে দিনে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির ছোবল মনে করিয়ে দেয় একুশের গ্রেনেড হামলা থেকে জনপ্রতিনিধি হত্যার নারকীয় বীভৎস চিত্র। ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে বিরোধী দল দমন সেই ধারাবাহিকতারই নগ্ন প্রকাশ মাত্র। এমনটি আমরা চাইনি। গুলি, ইটপাটকেল, আগুন, নাশকতা, সহিংসতার যে দৃশ্য দেখছে বাংলাদেশ; এমনটি আমরা চাইনি।(পীর হাবিবুর রহমান এর লিখিত এই কলামটি,দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৪ এপ্রিল সংখ্যা থেকে সংগৃহিত)

মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

হলমার্ক প্রসঙ্গে মুহিত....

অর্থমন্ত্রীর ভাষায় যারা হলমার্ক নিয়ে মাতামাতি করছে তারা রাবিশ্। তাহলে আমি কি বলব দেশের গরিব অসহায়দের শত-কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হলমার্ককে সহায়তাকারী রাঘব বোয়ালদের একজন তিনি। টাকালোভী কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত বাবু নিয়ে এখন মাতামাতি করলে মুহিত বাবু নতুন কী উপাধী দেবেন? চোরের মায়ের বড় গলা? আপনাদের জাতি কি ক্ষমা করবে?.....(আমার এই লেখাটি দৈনিক আমার দেশে ২ এপ্রিল প্রকাশিত)