সাভারে ভবন ধস
নিয়ে আমাদের দক্ষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুবই সুন্দর তথ্য দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সাহসী তথ্য সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে মুহূর্তের
মধ্যে। কারণ বিবিসি বাংলাকে তিনি সরাসরি এ তথ্যটি দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
এই বক্তব্য মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। মহীউদ্দীন খান আলমগীর
বিবিসিকে জানিয়েছেন, হরতাল সমর্থক মৌলবাদী ও বিএনপির কিছু লোক ফাটলধরা
ভবনটির খুঁটি ও গেট ধরে নাড়াচাড়া করছিলেন। এটাও ভবনটি ধসে পড়ার একটি কারণ
হতে পারে বলে তিনি বিবিসিকে জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে
পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগগুলো। তারা হয়তো তাত্ক্ষণিক এ তথ্য
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছে। না হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা দেখার কথা নয়।
গোয়েন্দারা দেখেছেন বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। সাবেক আমলা,
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনী গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী মহীউদ্দীন
খান আলমগীর নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে দেরি না করে বিবিসির মাধ্যমে পুরো
দুনিয়ার কাছে তথ্যটি ফাঁস করেন। সাবাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! ধন্যবাদ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার জন্য। আসলে শুধু
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়, আমাদের গোটা সরকার এবং সরকারের তল্পিবাহক সব
ইনস্টিটিউশন এরকম হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আজব তথ্যে যেমন জাতির
টনক নড়ে না, তেমনি আইনের রক্ষক হিসেবে বিচার বিভাগে যারা রয়েছেন তাদের
কর্মকাণ্ডেও কেউ মাথা ঘামায় না। জাতির এই নির্লিপ্ততা আমাদের দেশকে কোথায়
নিয়ে যাবে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর গতি নেই।
দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড। ফিল্মি স্টাইলে তাকে পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের পর বলা হলো—বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও প্রবাসী আহমদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের কারণে দায়ের করা মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। এটা ছিল পুলিশের মুখপাত্রের ভাষ্য। সেদিনই তাকে আদালতে হাজির করা হলো আরও দুটি বানোয়াট মামলা দিয়ে। অর্থাত্ মোট তিনটি মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হলো। অপর দুটি মামলা হলো তেজগাঁও থানার মামলা নং ১৭/০৩/২০১৩ ও ৩৩/০৩/২০১৩। এ দুটি মামলার অভিযোগ হলো—হরতালে ফার্মগেট এলাকায় গাড়ি ভাংচুরে তিনি উসকানি দিয়েছেন এবং পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন। এই তিন মামলায়ই রিমান্ড চাইল পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুর রহমান কোনো আইনজীবী দিলেন না। তিনি শুধু আদালতকে বললেন, ‘আমি আইনজীবী দিলে তারা জামিন চাইবেন, আপনি জামিন দিতে পারবেন না। তারা রিমান্ডের বিরোধিতা করবেন আপনি সেটা গ্রহণ করবেন না। উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি আদেশ দেবেন। আপনার চাকরি রক্ষার স্বার্থে সেটা মেনে চলবেন। সুতরাং আপনি যে আদেশ দেয়ার দিয়ে দিন।’
মাহমুদু রহমানের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে আদালতের সঠিক চিত্র। আদালতপাড়ায় এটা দিবালোকের মতো সত্য। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী জামিন দেয় ও রিমান্ড মঞ্জুর করে থাকে। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। গাড়ি ভাংচুরে উসকানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায়ও তাকে তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। এছাড়া স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রিমান্ড দেয়া হলো সাত দিন। অর্থাত্ টানা ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেছে! আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে এসব মামলায় কখনও মাহমুদুর রহমানের মতো কোনো ব্যক্তির রিমান্ড মঞ্জুর হতে পারে না। তিনি গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে বাস করছিলেন। সেটা দুনিয়ার সব মানুষ জানেন। তিনি কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে অবস্থানকালীন ফার্মগেটে গায়েবি উপস্থিতির মাধ্যমে গাড়ি ভাংচুরে উসকানি দিয়েছেন? এই প্রশ্নটি কি ম্যাজিস্ট্রেটের বিবেকে একবারও জেগেছে? আর যেসব পুলিশ এই মামলা দিয়ে তাকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে—তাদের বিবেক কি একবারের জন্যও নাড়া দিয়েছে? কারণ মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের দরকার। এজন্য যা ইচ্ছা তা লিখে আদালতে উপস্থাপন করলেই চলবে। আদালত তাদের দাবি মেনে মাহমুদুর রহমানকে জামিন দেবে—এই বিশ্বাস পুলিশের রয়েছে। পুলিশ জানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই সাহস নেই, পাল্টা প্রশ্ন করে পুলিশের কাছে জানতে চাইবে—মাহমুদুর রহমান এই কাজটি করতে পারেন কী-না। সে কারণেই পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে যে কোনো অভিযোগ দিয়ে আদালতে উপস্থাপন করছে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের সুযোগ পাচ্ছে। এটাই হলো আমাদের আদালত ও পুলিশের বাস্তবতা। আর মাহমুদর রহমান গ্রেফতার হয়েও আদালতে সেই সত্য বাস্তব কথাটি বলেছেন।
স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সাত দিনের রিমান্ড দেয়া হলো। ম্যাজিস্ট্রেটের মনে কি একবারের জন্য এই প্রশ্ন জেগেছে—যারা স্কাইপের মাধ্যমে একটি স্পর্শকাতর বিচার নিয়ে এ রকম জঘন্য কাজটি করেছেন তারা বহাল তবিয়তে। আর এই অন্যায় কাজটি জাতিকে জানিয়েছে মাহমুদুর রহমান পাপ করেছেন! সংবাদপত্রের কাজ কী? সংবাদপত্রের কাজ কি শুধু সরকারের জয়গান করা! বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও আহমদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে কথোপকথনের যেটুকু প্রকাশিত হয়েছে সবই হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় কেন প্রকাশ করা হলো এজন্য রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের সুযোগ করে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট! এটাই কি হলো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার নমুনা? অর্থাত্ বিচারপতিরা অন্যায় করলেও সেটা প্রকাশ করা যাবে না। বিচার নিয়ে কারও সঙ্গে সংলাপ করলে বা রায় লিখিয়ে নিয়ে আসা হলে সেটা বলা যাবে না।
ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড মঞ্জুরের পর মাহমুদুর রহমানকে ডিবি (ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ) অফিসে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হলো। ইলেকট্রিক শক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হলো তার শরীর। সাত দিন রিমান্ডে নির্যাতনের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাকে আদালতে উপস্থাপন করার জন্য নিয়ে আসা হলো সিএমএম কোর্টের গারদখানায়। সেখান থেকে তাকে আদালতের সামনে না এনেই জেলখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছিল। আইনজীবীদের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত মাহমুদুর রহমানকে আদালতের কাঠগড়ায় আনা হয়। সেখানে তাকে বিধ্বস্ত দেখা যায়। তার আইনজীবীরা জানান, তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি কথাও বলতে পারছিলেন না। তিনি আইনজীবীদের জানিয়েছেন, ইলেকট্রিক শকই শুধু নয়, নির্যাতনের যত রকম উপকরণ রয়েছে সবই প্রয়োগ করা হয়েছে। তার হাতের ও পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ইলেকট্রিক শকের কালো ক্ষত দেখা গেছে তখন। অর্থাত্ সরকার জেদ মিটিয়েছে তার ওপরে। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরছিল। এই সত্য সরকারের পছন্দ হচ্ছিল না।
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের দিনেই দৈনিক আমার দেশ প্রেস তালা লাগিয়ে দিল পুলিশ। ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়া হলো এক রকম গায়ের জোরে। যেন আমার দেশ আর ছাপতে না পারে, এটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। ছাপাখানা বন্ধের জন্য আদালতের কোনো আদেশও নেই। অথচ তথ্যমন্ত্রী বললেন, আমার দেশ প্রকাশে কোনো বাধা নেই!
পরে জানা গেল আল্লাহ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন হুকুম আহকামকে ব্যঙ্গ করে এক শ্রেণীর ব্লগারের ব্লগে প্রচারিত মন্তব্যগুলো আমার দেশে প্রকাশের কারণে ছাপাখানা বন্ধ করা হয়েছে। ব্লগারদের বিষয়টি খুঁজে বের করতে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আমার দেশের সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার যন্ত্রপাতি জব্ধ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে একটি আদেশ নেয় পুলিশ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ব্লগারদের বিষয়টি শুধু আমার দেশ প্রকাশ করেনি। দৈনিক ইনকিলাবসহ (হালে সরকার সমর্থক) আরও কয়েকটি পত্রিকা এগুলো প্রকাশ করেছে। সরকার ও সাংবিধানিক ইন্সস্টিটিউশনের অন্যায় বা জাতীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের বিষয়গুলো যদি প্রকাশ করতে না পারে তাহলে পত্রিকার কাজ কী! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত বুধবার জাতীয় সংসদে এই তথ্য জানিয়েছেন। ব্লগারদের বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, আমার দেশ ও মাহুমুদর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খুবই সুন্দর যুক্তি! শাহবাগি নাস্তিক ব্লগারদের কর্মকাণ্ড জাতির সামনে তুলে ধরাটাই হলো মাহমুদুর রহমানের বড় অন্যায়! তারা অন্যায় করবে—মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত পত্রিকা আমার দেশ এগুলো পরিবেশন করবে কেন? এটাই হচ্ছে অপরাধ!
শুধু তাই নয়, মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নির্যাতানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন তার স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদ। এই রিট আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মাহমুদুর রহমানকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তিনি জ্বলজ্যান্ত একটি অসত্য তথ্য আদালতকে দিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কি হলফ করে বলতে পারবেন, মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন করা হয়নি সেটা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন? তিনি মাহমুদুর রহমানের শরীরে ইলেকট্রিক শকের ক্ষত চিহ্নগুলো অস্বীকার করবেন কেমন করে? এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আইনের ব্যাখ্যায় বলেছেন, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রীর এই রিট করার এখতিয়ার নেই। কারণ মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন বলে আদালতকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। সারা দুনিয়াজুড়ে এমনকি বাংলাদেশেও অতীতে হাজার হাজার মামলায় দেখা গেছে, স্বামী জেলে থাকলে স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে স্বামীর পক্ষে রিট করে থাকেন। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর স্বীকৃত প্রথা। বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টে খুঁজলে হাজারও মামলা পাওয়া যাবে যেগুলো স্ত্রী করেছেন স্বামীর পক্ষে। স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন, মানবাধিকার রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন এরকম হাজারও নজির রয়েছে সুপ্রিমকোর্টে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নতুন তথ্য উপস্থাপন করলেন, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হতে পারেন না। মাহমুদুর রহমানের স্ত্রীর এই রিট দায়েরের এখতিয়ার নেই! এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আরেকটি আজব যুক্তি দিলেন, সেটা হলো রিমান্ড নিয়ে উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে সেটা মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কারণ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দু’রকমভাবে প্রযোজ্য হবে। একটি হলো মাহমুদুর রহমানের বেলায়, আরেকটি হবে অন্যের বেলায়। মাহমুদুর রহমানের বেলায় আইন এক রকম, আর অন্যের বেলায় আইন আরেক রকম। আমাদের হাইকোর্ট বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেলের এই যুক্তিগুলো গ্রহণ করে রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে।
এই বাস্তবতাগুলো সামনে রাখলে এটা বলা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর একেবারে খারাপ বা বাজে কিছু বলেননি। ভবন ধসের আগে হরতাল সমর্থক বিএনপি ও মৌলবাদীরা ভবনের ফটক ও খুঁটি ধরে নাড়াচাড়া করতেই পারেন। মাহমুদুর রহমানের মতো একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে যদি গাড়ি ভাংচুরের উসকানির অভিযোগে মামলা হতে পারে, সেই মামলায় যদি আবার রিমান্ড মঞ্জুর হয়, স্কাইপ সংলাপে বিচার নিয়ে কথা বলে যারা পুরো বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছেন তারা যদি বহালতবিয়তে থাকতে পারেন—আর মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত পত্রিকায় এই কথোপকথন প্রকাশ করার অভিযোগে যদি গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানোর জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করা যায়, ব্লগারদের ইসলাম নিয়ে কটূক্তি প্রকাশ করার অভিযোগে যদি আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধ করা যায়, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী যদি স্বামীর মানবাধিকার রক্ষায় উচ্চ আদালতে যাওয়ার এখতিয়ার না থাকে, আর উচ্চ আদালত সেই যুক্তি গ্রহণ করে আবেদন খারিজ করে দেয়, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একথা বলার মধ্যে আমি আশ্চর্য হওয়ার কিছু দেখি না। আসলে জাতি হিসেবে আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা একবার ভেবে দেখতে হবে। শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য শপথ নিয়ে যারা আদালতে বিচারকের আসনে বসেছেন তাদের উক্তি ও
কার্যক্রম কিন্তু জাতিকে সামনে (!) এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন ও উচ্চ আদালতের ভূমিকা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে ব্যঙ্গ করে যারা ব্লগ লিখবে বা প্রচারণা চালাবে সেই সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারবে না। সরকারের সমর্থক বিচারকরা যত অন্যায়ই করুক সেগুলো লিখলে কেউ রেহাই পাবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে যদি বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সাভারে ভবন ফাটলে নাড়াচাড়া ও খুঁটি ধরে নাড়াচাড়া করার জন্য উসকানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাতে আশ্চার্য হওয়ার কিছু থাকবে না। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলবেন সেটাই হলো বাস্তব।
আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল যেটাই বলবেন সেটাই হলো আইন। এটাই এখন প্রমাণিত সত্য।
দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড। ফিল্মি স্টাইলে তাকে পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের পর বলা হলো—বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও প্রবাসী আহমদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের কারণে দায়ের করা মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। এটা ছিল পুলিশের মুখপাত্রের ভাষ্য। সেদিনই তাকে আদালতে হাজির করা হলো আরও দুটি বানোয়াট মামলা দিয়ে। অর্থাত্ মোট তিনটি মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হলো। অপর দুটি মামলা হলো তেজগাঁও থানার মামলা নং ১৭/০৩/২০১৩ ও ৩৩/০৩/২০১৩। এ দুটি মামলার অভিযোগ হলো—হরতালে ফার্মগেট এলাকায় গাড়ি ভাংচুরে তিনি উসকানি দিয়েছেন এবং পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন। এই তিন মামলায়ই রিমান্ড চাইল পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুর রহমান কোনো আইনজীবী দিলেন না। তিনি শুধু আদালতকে বললেন, ‘আমি আইনজীবী দিলে তারা জামিন চাইবেন, আপনি জামিন দিতে পারবেন না। তারা রিমান্ডের বিরোধিতা করবেন আপনি সেটা গ্রহণ করবেন না। উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি আদেশ দেবেন। আপনার চাকরি রক্ষার স্বার্থে সেটা মেনে চলবেন। সুতরাং আপনি যে আদেশ দেয়ার দিয়ে দিন।’
মাহমুদু রহমানের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে আদালতের সঠিক চিত্র। আদালতপাড়ায় এটা দিবালোকের মতো সত্য। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী জামিন দেয় ও রিমান্ড মঞ্জুর করে থাকে। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। গাড়ি ভাংচুরে উসকানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায়ও তাকে তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। এছাড়া স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রিমান্ড দেয়া হলো সাত দিন। অর্থাত্ টানা ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেছে! আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে এসব মামলায় কখনও মাহমুদুর রহমানের মতো কোনো ব্যক্তির রিমান্ড মঞ্জুর হতে পারে না। তিনি গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে বাস করছিলেন। সেটা দুনিয়ার সব মানুষ জানেন। তিনি কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে অবস্থানকালীন ফার্মগেটে গায়েবি উপস্থিতির মাধ্যমে গাড়ি ভাংচুরে উসকানি দিয়েছেন? এই প্রশ্নটি কি ম্যাজিস্ট্রেটের বিবেকে একবারও জেগেছে? আর যেসব পুলিশ এই মামলা দিয়ে তাকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে—তাদের বিবেক কি একবারের জন্যও নাড়া দিয়েছে? কারণ মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের দরকার। এজন্য যা ইচ্ছা তা লিখে আদালতে উপস্থাপন করলেই চলবে। আদালত তাদের দাবি মেনে মাহমুদুর রহমানকে জামিন দেবে—এই বিশ্বাস পুলিশের রয়েছে। পুলিশ জানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই সাহস নেই, পাল্টা প্রশ্ন করে পুলিশের কাছে জানতে চাইবে—মাহমুদুর রহমান এই কাজটি করতে পারেন কী-না। সে কারণেই পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে যে কোনো অভিযোগ দিয়ে আদালতে উপস্থাপন করছে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের সুযোগ পাচ্ছে। এটাই হলো আমাদের আদালত ও পুলিশের বাস্তবতা। আর মাহমুদর রহমান গ্রেফতার হয়েও আদালতে সেই সত্য বাস্তব কথাটি বলেছেন।
স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সাত দিনের রিমান্ড দেয়া হলো। ম্যাজিস্ট্রেটের মনে কি একবারের জন্য এই প্রশ্ন জেগেছে—যারা স্কাইপের মাধ্যমে একটি স্পর্শকাতর বিচার নিয়ে এ রকম জঘন্য কাজটি করেছেন তারা বহাল তবিয়তে। আর এই অন্যায় কাজটি জাতিকে জানিয়েছে মাহমুদুর রহমান পাপ করেছেন! সংবাদপত্রের কাজ কী? সংবাদপত্রের কাজ কি শুধু সরকারের জয়গান করা! বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও আহমদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে কথোপকথনের যেটুকু প্রকাশিত হয়েছে সবই হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় কেন প্রকাশ করা হলো এজন্য রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের সুযোগ করে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট! এটাই কি হলো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার নমুনা? অর্থাত্ বিচারপতিরা অন্যায় করলেও সেটা প্রকাশ করা যাবে না। বিচার নিয়ে কারও সঙ্গে সংলাপ করলে বা রায় লিখিয়ে নিয়ে আসা হলে সেটা বলা যাবে না।
ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড মঞ্জুরের পর মাহমুদুর রহমানকে ডিবি (ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ) অফিসে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হলো। ইলেকট্রিক শক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হলো তার শরীর। সাত দিন রিমান্ডে নির্যাতনের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাকে আদালতে উপস্থাপন করার জন্য নিয়ে আসা হলো সিএমএম কোর্টের গারদখানায়। সেখান থেকে তাকে আদালতের সামনে না এনেই জেলখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছিল। আইনজীবীদের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত মাহমুদুর রহমানকে আদালতের কাঠগড়ায় আনা হয়। সেখানে তাকে বিধ্বস্ত দেখা যায়। তার আইনজীবীরা জানান, তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি কথাও বলতে পারছিলেন না। তিনি আইনজীবীদের জানিয়েছেন, ইলেকট্রিক শকই শুধু নয়, নির্যাতনের যত রকম উপকরণ রয়েছে সবই প্রয়োগ করা হয়েছে। তার হাতের ও পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ইলেকট্রিক শকের কালো ক্ষত দেখা গেছে তখন। অর্থাত্ সরকার জেদ মিটিয়েছে তার ওপরে। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরছিল। এই সত্য সরকারের পছন্দ হচ্ছিল না।
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের দিনেই দৈনিক আমার দেশ প্রেস তালা লাগিয়ে দিল পুলিশ। ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়া হলো এক রকম গায়ের জোরে। যেন আমার দেশ আর ছাপতে না পারে, এটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। ছাপাখানা বন্ধের জন্য আদালতের কোনো আদেশও নেই। অথচ তথ্যমন্ত্রী বললেন, আমার দেশ প্রকাশে কোনো বাধা নেই!
পরে জানা গেল আল্লাহ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন হুকুম আহকামকে ব্যঙ্গ করে এক শ্রেণীর ব্লগারের ব্লগে প্রচারিত মন্তব্যগুলো আমার দেশে প্রকাশের কারণে ছাপাখানা বন্ধ করা হয়েছে। ব্লগারদের বিষয়টি খুঁজে বের করতে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আমার দেশের সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার যন্ত্রপাতি জব্ধ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে একটি আদেশ নেয় পুলিশ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ব্লগারদের বিষয়টি শুধু আমার দেশ প্রকাশ করেনি। দৈনিক ইনকিলাবসহ (হালে সরকার সমর্থক) আরও কয়েকটি পত্রিকা এগুলো প্রকাশ করেছে। সরকার ও সাংবিধানিক ইন্সস্টিটিউশনের অন্যায় বা জাতীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের বিষয়গুলো যদি প্রকাশ করতে না পারে তাহলে পত্রিকার কাজ কী! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত বুধবার জাতীয় সংসদে এই তথ্য জানিয়েছেন। ব্লগারদের বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, আমার দেশ ও মাহুমুদর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খুবই সুন্দর যুক্তি! শাহবাগি নাস্তিক ব্লগারদের কর্মকাণ্ড জাতির সামনে তুলে ধরাটাই হলো মাহমুদুর রহমানের বড় অন্যায়! তারা অন্যায় করবে—মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত পত্রিকা আমার দেশ এগুলো পরিবেশন করবে কেন? এটাই হচ্ছে অপরাধ!
শুধু তাই নয়, মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নির্যাতানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন তার স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদ। এই রিট আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মাহমুদুর রহমানকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তিনি জ্বলজ্যান্ত একটি অসত্য তথ্য আদালতকে দিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কি হলফ করে বলতে পারবেন, মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন করা হয়নি সেটা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন? তিনি মাহমুদুর রহমানের শরীরে ইলেকট্রিক শকের ক্ষত চিহ্নগুলো অস্বীকার করবেন কেমন করে? এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আইনের ব্যাখ্যায় বলেছেন, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রীর এই রিট করার এখতিয়ার নেই। কারণ মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন বলে আদালতকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। সারা দুনিয়াজুড়ে এমনকি বাংলাদেশেও অতীতে হাজার হাজার মামলায় দেখা গেছে, স্বামী জেলে থাকলে স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে স্বামীর পক্ষে রিট করে থাকেন। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর স্বীকৃত প্রথা। বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টে খুঁজলে হাজারও মামলা পাওয়া যাবে যেগুলো স্ত্রী করেছেন স্বামীর পক্ষে। স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন, মানবাধিকার রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন এরকম হাজারও নজির রয়েছে সুপ্রিমকোর্টে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নতুন তথ্য উপস্থাপন করলেন, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হতে পারেন না। মাহমুদুর রহমানের স্ত্রীর এই রিট দায়েরের এখতিয়ার নেই! এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আরেকটি আজব যুক্তি দিলেন, সেটা হলো রিমান্ড নিয়ে উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে সেটা মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কারণ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দু’রকমভাবে প্রযোজ্য হবে। একটি হলো মাহমুদুর রহমানের বেলায়, আরেকটি হবে অন্যের বেলায়। মাহমুদুর রহমানের বেলায় আইন এক রকম, আর অন্যের বেলায় আইন আরেক রকম। আমাদের হাইকোর্ট বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেলের এই যুক্তিগুলো গ্রহণ করে রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে।
এই বাস্তবতাগুলো সামনে রাখলে এটা বলা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর একেবারে খারাপ বা বাজে কিছু বলেননি। ভবন ধসের আগে হরতাল সমর্থক বিএনপি ও মৌলবাদীরা ভবনের ফটক ও খুঁটি ধরে নাড়াচাড়া করতেই পারেন। মাহমুদুর রহমানের মতো একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে যদি গাড়ি ভাংচুরের উসকানির অভিযোগে মামলা হতে পারে, সেই মামলায় যদি আবার রিমান্ড মঞ্জুর হয়, স্কাইপ সংলাপে বিচার নিয়ে কথা বলে যারা পুরো বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছেন তারা যদি বহালতবিয়তে থাকতে পারেন—আর মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত পত্রিকায় এই কথোপকথন প্রকাশ করার অভিযোগে যদি গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানোর জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করা যায়, ব্লগারদের ইসলাম নিয়ে কটূক্তি প্রকাশ করার অভিযোগে যদি আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধ করা যায়, মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী যদি স্বামীর মানবাধিকার রক্ষায় উচ্চ আদালতে যাওয়ার এখতিয়ার না থাকে, আর উচ্চ আদালত সেই যুক্তি গ্রহণ করে আবেদন খারিজ করে দেয়, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একথা বলার মধ্যে আমি আশ্চর্য হওয়ার কিছু দেখি না। আসলে জাতি হিসেবে আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা একবার ভেবে দেখতে হবে। শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য শপথ নিয়ে যারা আদালতে বিচারকের আসনে বসেছেন তাদের উক্তি ও
কার্যক্রম কিন্তু জাতিকে সামনে (!) এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন ও উচ্চ আদালতের ভূমিকা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে ব্যঙ্গ করে যারা ব্লগ লিখবে বা প্রচারণা চালাবে সেই সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারবে না। সরকারের সমর্থক বিচারকরা যত অন্যায়ই করুক সেগুলো লিখলে কেউ রেহাই পাবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে যদি বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সাভারে ভবন ফাটলে নাড়াচাড়া ও খুঁটি ধরে নাড়াচাড়া করার জন্য উসকানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাতে আশ্চার্য হওয়ার কিছু থাকবে না। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলবেন সেটাই হলো বাস্তব।
আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল যেটাই বলবেন সেটাই হলো আইন। এটাই এখন প্রমাণিত সত্য।
(অ লি উ ল্লা হ নো মা ন)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন