(পীর হাবিবুর রহমান)--টানা দুই মাস পর তৃণমূল বিস্তৃত উপমহাদেশের
ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের উপলব্ধি হলো শাহবাগের
গণজাগরণ মঞ্চ আর নয়। যারা শুরুতে বলেছিলেন এ আন্দোলনের এখানেই ইতি টানা
উচিত, যারা বলেছিলেন সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে
একাত্দতা ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও সরকারের অবস্থান খোলাসা করা ঠিক নয়;
তখন তাদের দিকে বাঁকা চোখ তুলে কেউ কেউ তাকিয়েছিলেন। সমালোচকদের কেউ কেউ
নব্য রাজাকার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত বলে সমালোচনার তীর
ছুড়েছিলেন। একাত্তর না-দেখা একটি বেসরকারি টেলিভিশন সব বাদ দিয়ে হররোজ লাইভ
দেখাতে শুরু করল শাহবাগের কর্মকাণ্ড। চিরকুমারী এক দলদাসী নারী সাংবাদিকের
প্রভাবে আরেকটি টিভি চ্যানেলও কম করেনি। দু-একটি প্রিন্ট মিডিয়াও এ
দীর্ঘপথের সাথী হলো। সরকারের পুলিশ, নেতা-কর্মীদের অকুণ্ঠ সমর্থন,
র্যাব-পুলিশের প্রহরা, গাওয়া ঘিয়ের বিরানিসহ যত বাহারি খাবার সরবরাহ করা
এমন রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তার এ আন্দোলনকে 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ' বলে প্রচার করা
হলো। কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে আপসকামিতার দুর্গন্ধের বিরুদ্ধে
বিদ্যুৎ চমকের মতো খেলে যাওয়া তারুণ্যের প্রতিবাদের শাহবাগকে দখল করে চতুর
সুবিধাবাদী বামরা অদৃশ্যের ইশারায় সরকারের পিঠে সওয়ার হয়ে এটিকে মতলব
হাসিলের মঞ্চে পরিণত করে। তিন-চতুর্থাংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার
শরিক সব দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে কিংবা নিজেদের প্রজ্ঞাবান
নেতৃত্বের সঙ্গে কথা না বলেই যেভাবে সমর্থন দিয়ে মন্ত্রী-নেতারা শাহবাগের
পক্ষে সুর তুলেছেন তা যে রাজনৈতিকভাবে কতখানি ভুল ছিল সে চিত্র আজ খোলস
খুলে বেরিয়ে আসছে। জনগণ তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষেই ছিল। বিচার
হচ্ছিল। রায় হচ্ছিল। তবু কেন এ রায় নিয়ে এভাবে উসকে দেওয়া হলো শাহবাগ
অব্যাহত রেখে? শাহবাগে সংহতি জানাতে আসা জাতীয় বীর, '৬৯-এর নায়ক তোফায়েল
আহমেদসহ মন্ত্রী-নেতারা প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা পাননি। কারও কারও প্রতি
অশোভন আচরণও হয়েছে। উল্টো পিঠে একই জায়গায় মতিয়া চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম
নাহিদদের যখন সমাদর করা হয়েছে তখন কারও বুঝতে বাকি ছিল না এ নাটকের নেপথ্য
কুশীলব কারা? আওয়ামী লীগকে সারা জীবন প্রচণ্ড ঘৃণা ও আক্রোশের চোখে দেখে
আসা দু-চার জন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও ভিসি কিংবা কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী
যাদের সরকার থেকে অনুকম্পা ও ফায়দা কুড়ানো আজ চারিত্রিক ধর্ম তাদের শাসক
আওয়ামী লীগ চিনতে ভুল করেছিল। এরা কখনোই আওয়ামী লীগ সমর্থক নন। এরা
দয়া-করুণা নিয়ে বাঁচতে আওয়ামী লীগ সরকারের বা শক্তির ওপর নির্ভরশীল। কোনো
কোনো নাস্তিক ব্লগারের আল্লাহ- রাসূলকে নিয়ে কটাক্ষের পরিণতি একটি মুসলিম
মডারেট কান্ট্রিতে পরিস্থিতি কোথায় নিতে, মানুষের হৃদয়ে কতটা আঘাত করতে
পারে তা চিন্তায় নিয়ে সরকারকে ইনকিলাবে প্রকাশের পর আমার দেশ যখন লুফে নিল
তখনই কঠোর পথ নেওয়ার দরকার ছিল। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সব মতের মানুষ
থাকবে। কিন্তু কোনো নাগরিক অধিকার হরণ বা কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার
সাহস কেউ রাখেন না। ২০০১ সালের পর তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। গ্রেনেড
হামলা থেকে আল্লাহর রহমতে বেঁচেছিলেন মুজিবকন্যা। শত শত আওয়ামী লীগ নেতার
শরীরে স্প্লিন্টারের চিহ্ন। খেসারত নষ্ট বামদের দিতে হয়নি, আওয়ামী লীগের
দিতে হয়। শাহবাগের শুরু থেকে এ আন্দোলন থেমে যাক তা সরকারের একজন চেয়েছিলেন
তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম
ও বেড়ে ওঠা শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত পরহেজগার মহিলাই নন, উদার
অসাম্প্রদায়িক মানুষও। তার রাজনীতিও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শের।
কিন্তু তার ডানে-বাঁয়ে সরকার ও দলে আদর্শচ্যুত আজ্ঞাবহ কমিউনিস্টরা
সারাক্ষণ যেভাবে ঘিরে থাকেন বা ছিলেন বা আছেন তারা তার চিন্তার পথে অগ্রসর
হতে দেননি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির
চর্চা করলেও ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতির স্লোগান দেওয়া
অনেক দলের চেয়ে বেশি ধর্মপ্রাণ। তার পরও হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সূচনা
ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকার গত দুই দিন থেকে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা নেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী জানেন না গত চার বছর সরকারি হজ প্রতিনিধি দলে কারা ঠাঁই
পেয়েছেন। আমার বিশ্বাস তার হাতে তালিকা পড়লে অনেকের নাম কেটে তিনি অনেক
আলেম-ওলামা বা ইমামের নাম সেখানে দিতেন। শাহবাগের মঞ্চ থেকে মুখপাত্র ইমরান
সরকারকে দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অনেক
হঠকারী কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বক্তব্য এসেছে। অহিংস আন্দোলনের কথা বললেও
অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করতে উসকানি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামী
লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে সবাই শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ উঠিয়ে দেওয়ার কথা বললেও
আদর্শচ্যুত বাম দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য আপত্তি করেছেন। এদের একজনের বিরুদ্ধে
অভিযোগ তিনি বক্তৃতা লিখে দেন। এদের একজন খেলাফত মজলিসের সঙ্গে পাঁচ দফা
চুক্তিকে সমর্থন করেছিলেন। এদের একজন ২০০১ সালের নির্বাচনে কুত্তার মাথায়
টুপি পরিয়ে নির্বাচনী পোস্টার কার্টুন অাঁকিয়েছিলেন। দল বিপর্যয়ে পড়লে এরা
কাদায় নেমে মাছ খেয়ে আসা হাঁসের মতো ডানা ঝাঁপটে কাদা ফেলে সুন্দর করে
তাকায়। পঁচাত্তর-উত্তর এরা খাল কাটতে যান সেনাশাসক জিয়ার সঙ্গে। হেফাজতে
ইসলামের প্রধানের সঙ্গে সমঝোতায় যারা গিয়েছিলেন তারা খুব একটা সুবিধা করতে
পারেননি। তবে আলোচনার ভিত্তিতে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে
যাদের আটক করা হয়েছে তা সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত। যেখানে সরকার প্রতি
ক্ষেত্রে আলোচনার বিকল্প দমননীতির পথ নিয়েছে সেখানে বিলম্বে হলেও এ উদ্যোগ
ইতিবাচক। তার পরও সরকারের জোট থেকে আলাদা অবস্থান নিয়ে এরশাদ হেফাজতের
লংমার্চকে সমর্থন জানালেও অন্য শরিকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, 'হেফাজতে
ইসলাম যেন ইসলামের হেফাজত করে জামায়াতের নয়। এ ধরনের বক্তব্য দিতেই পারেন
তবে তা যেন উসকানির পর্যায়ে না যায়। আওয়ামী লীগে একসময় মরহুম আবদুস সামাদ
আজাদরা ইসলামী চিন্তাবিদ ও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তার অনুপস্থিতিতে
আমির হোসেন আমু বা তোফায়েল আহমেদ কিংবা শেখ ফজলুল করিম সেলিমরা পারেন।
এককালের দেউলিয়া উগ্রপন্থি ও আদর্শহারা বামেরা মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার
সরকারের তরীকে এতটাই ভারী করেছেন যে একের পর এক ভুল পরামর্শ দিয়ে তাতে
পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে নৌকা যেন ডুবুডুবু করছে। গণতান্ত্রিক
শাসনব্যবস্থায় সরকার কখনোই বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পথে না
হেঁটে দমনের নীতি নিয়েছে। অথচ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতি বিবেচনায় রেখে
শেষ মুহূর্তে হলেও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করছে। বিএনপির সঙ্গে বৈঠক
করলে আজ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতো না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে চেহারা নিয়ে যে ভাষায় কথা বলেন তাতে টিভির সামনে বসা
অন্ধজনেরাও বলতে পারবেন সমঝোতা নয় সংঘাতের পরিণতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
দেশ পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের দিকে হাঁটুক একটি মানুষও চায় না। দ্বিতীয়
বৃহত্তম মুসলিম দেশ হলেও বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ধর্মের রাজনীতিকে
ব্যালটবিপ্লবে অভিষিক্ত করেনি। তেমনি উগ্রপন্থি বা বামপন্থিদেরও জনরায়
দেয়নি। জনমত আদায়ে ব্যর্থ ক্ষমতালোভী আশ্রিত বামদের ভারে ও পরামর্শে আওয়ামী
লীগ সরকার আজ একদিকে বিএনপি জোটের এক দফা, জামায়াতের সহিংসতা, হেফাজতে
ইসলামের লংমার্চ আন্দোলন ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের চোখ রাঙানির মুখোমুখি।
চতুর্মুখী রাজনৈতিক আক্রমণ ও সমালোচনার মুখে পতিত সরকারের জোটে দূরে থাক
দলের মধ্যেই অভিন্ন অবস্থান নেই। আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে যেদিন শাহবাগ
নিয়ে খোলামেলা কথা হয় তার পর দিন শাহবাগের শহীদ রুমি স্কোয়াডে গিয়ে
পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার পরিষ্কার বলেছেন,
জামায়াত নিষিদ্ধ না হলে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। জোট শরিক
রাশেদ খান মেনন বলেছেন আম ছালা দুটোই যাবে। তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দুই
নৌকায় পা দিলে সব দিকেই মরার সম্ভাবনা। আমরা গোল ঠিক করতে পারিনি।
রাজনীতির মঞ্চে দ্রুত একের পর এক দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। তাই যত ভয়, যত
শঙ্কা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষা-আচরণে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার হাতিয়ার হিসেবে পুলিশকে মাঠে নামিয়ে একরোখা নীতি গ্রহণ করেছেন। দিনে দিনে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও কমেছে। জনগণের বন্ধুর জায়গা থেকে পুলিশকে সরিয়ে নিতে প্রতিটি সরকারের মতো এ সরকারের ভূমিকাও কম নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক বিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে পথ হাঁটার নীতিতে কেউ চলেননি। সরকারে গেলে দমননীতি, বিরোধী দলে গেলে গণতন্ত্রের বুলি- এ নীতিতে রাজনীতি চলে আসছে। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড পুলিশ দিয়ে রুখে দিয়ে যারা একদিন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন তাদের চেহারা এখন টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের কথাও বদলে গেছে। পুলিশের গুলিতে জামায়াত সমর্থকদের যেমন মৃত্যু ঘটেছে তেমনি জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় পুলিশের সদস্যরাও জীবন দিয়েছেন। এ সহিংস সংঘর্ষে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ পথচারী ও সাধারণ মানুষ। সব মিলিয়ে মানুষের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। রক্তপাত হানাহানির পরিণতি কখনোই শুভ হয়নি। ২০০৭ সালে হয়নি। ২০১৩ সালে হবে না। এমনটাই সবাই বলছেন। যে দুই নেত্রীর ওপর ৩০ বছর ধরে গণতান্ত্রিক শক্তির আস্থা অব্যাহত রেখেছে সেই জনগণের মনের ভাব জানতে হলে খলিফা হারুনুর রশিদের মতো ছদ্মবেশে তাদের রাতগভীরে বের হতে হবে না, দলকানা সুবিধাভোগী বা দলদাসদের বাইরে নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী কিংবা দলীয় সীমানার বাইরে হাঁটা বিভিন্ন পেশার মানুষজন কিংবা সাধারণের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন চলমান সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে। সর্বত্র বলাবলি হচ্ছে, আদর্শচ্যুত জনবিচ্ছিন্ন আশ্রিত নষ্ট উগ্র-বাম ও কমিউনিস্টদের ভারে শেখ হাসিনার সরকারের এ অবস্থা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তো বার বার বলেছেন, এটা কমিউনিস্ট সরকার। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। এবার খিচুড়ি সরকার। তাই এ অবস্থা। অন্যদিকে '৭১-এর কলঙ্কের ঢোল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীসহ উগ্র ডানদের গলায় বেঁধে হাঁটার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ধানের শীষ পুড়ে যাচ্ছে। দুই নেত্রী যার যার অবস্থানে অনড় থাকায় পশ্চিমা ও গণতান্ত্রিক দুনিয়াসহ এ দেশের সিভিল সোসাইটির সংলাপের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ও দমন-নির্যাতন পরিস্থিতি অবনতির শেষ তলানিতে এনে ঠেকিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নানা দাবিতে ৬ মার্চ ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচি করছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের প্রতিনিধিরা এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের শেষ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। একই দিনে ঢাকায় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চসহ তাদের সমর্থকরা যেমন আলাদা সমাবেশ ডেকেছেন, তেমনি মহাজোটের শরিক জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও বিএনপি জোট হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। জামায়াত-শিবির তো সমর্থনে মাঠেই থাকবে। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনও এ দাবিতে রাস্তায় নামছে। মাঝখানে পরিস্থিতি ৬ তারিখে কোন দিকে মোড় নেয় সেই হিসাব-নিকাশের উত্তেজনা সব দিকে বাড়ছে। ১০ এপ্রিল বিএনপি ঢাকায় সর্বশক্তি নিয়ে সমাবেশ করবে। এ অবস্থায় অনেকের প্রশ্ন ও সংশয়_ ৬ মার্চে এমন কিছু ঘটবে না তো যা পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক দুই দলের বাইরে চলে যায়।
সুমহান মুক্তিযুদ্ধের পর বার বার জাতীয় ঐক্যকে বিভক্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগেই তা ঘটানো হয়েছে। জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার-পরিজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে মুক্তিযুদ্ধের চার সফল নেতাকে খুন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে লাখো লাখো শহীদের রক্ত ও আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে মানুষ রক্ত ও জীবন দিতে কার্পণ্য করেনি। তবুও ২২ বছরের গণতন্ত্রের জমানায় সংবিধানকে জনগণের প্রত্যাশার মতো করে সংশোধন করা হয়নি। জগাখিচুড়ি করে রাখা হয়েছে। যখন যারা এসেছেন তাদের মতো করে করেছেন। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের আগ্রাসনে দিনে দিনে অভিশপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা দূরে থাক, সংসদ অকার্যকর হয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছে। সরকারের একগুঁয়ে নীতি জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২২ বছরে পেশাজীবীদের পেশাদারিত্বের বদলে দলীয় আনুগত্যের বৃত্তে বন্দী করা হয়েছে। দিনে দিনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, মনোনয়ন-বাণিজ্য, দলীয় গণতন্ত্রের চর্চার অভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষয়ে গেছে। ভেঙে ভেঙে পড়ছে সবকিছু। দুর্নীতি দিনে দিনে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির ছোবল মনে করিয়ে দেয় একুশের গ্রেনেড হামলা থেকে জনপ্রতিনিধি হত্যার নারকীয় বীভৎস চিত্র। ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে বিরোধী দল দমন সেই ধারাবাহিকতারই নগ্ন প্রকাশ মাত্র। এমনটি আমরা চাইনি। গুলি, ইটপাটকেল, আগুন, নাশকতা, সহিংসতার যে দৃশ্য দেখছে বাংলাদেশ; এমনটি আমরা চাইনি।(পীর হাবিবুর রহমান এর লিখিত এই কলামটি,দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৪ এপ্রিল সংখ্যা থেকে সংগৃহিত)
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষা-আচরণে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার হাতিয়ার হিসেবে পুলিশকে মাঠে নামিয়ে একরোখা নীতি গ্রহণ করেছেন। দিনে দিনে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও কমেছে। জনগণের বন্ধুর জায়গা থেকে পুলিশকে সরিয়ে নিতে প্রতিটি সরকারের মতো এ সরকারের ভূমিকাও কম নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক বিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে পথ হাঁটার নীতিতে কেউ চলেননি। সরকারে গেলে দমননীতি, বিরোধী দলে গেলে গণতন্ত্রের বুলি- এ নীতিতে রাজনীতি চলে আসছে। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড পুলিশ দিয়ে রুখে দিয়ে যারা একদিন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন তাদের চেহারা এখন টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের কথাও বদলে গেছে। পুলিশের গুলিতে জামায়াত সমর্থকদের যেমন মৃত্যু ঘটেছে তেমনি জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় পুলিশের সদস্যরাও জীবন দিয়েছেন। এ সহিংস সংঘর্ষে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ পথচারী ও সাধারণ মানুষ। সব মিলিয়ে মানুষের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। রক্তপাত হানাহানির পরিণতি কখনোই শুভ হয়নি। ২০০৭ সালে হয়নি। ২০১৩ সালে হবে না। এমনটাই সবাই বলছেন। যে দুই নেত্রীর ওপর ৩০ বছর ধরে গণতান্ত্রিক শক্তির আস্থা অব্যাহত রেখেছে সেই জনগণের মনের ভাব জানতে হলে খলিফা হারুনুর রশিদের মতো ছদ্মবেশে তাদের রাতগভীরে বের হতে হবে না, দলকানা সুবিধাভোগী বা দলদাসদের বাইরে নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী কিংবা দলীয় সীমানার বাইরে হাঁটা বিভিন্ন পেশার মানুষজন কিংবা সাধারণের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন চলমান সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে। সর্বত্র বলাবলি হচ্ছে, আদর্শচ্যুত জনবিচ্ছিন্ন আশ্রিত নষ্ট উগ্র-বাম ও কমিউনিস্টদের ভারে শেখ হাসিনার সরকারের এ অবস্থা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তো বার বার বলেছেন, এটা কমিউনিস্ট সরকার। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। এবার খিচুড়ি সরকার। তাই এ অবস্থা। অন্যদিকে '৭১-এর কলঙ্কের ঢোল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীসহ উগ্র ডানদের গলায় বেঁধে হাঁটার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ধানের শীষ পুড়ে যাচ্ছে। দুই নেত্রী যার যার অবস্থানে অনড় থাকায় পশ্চিমা ও গণতান্ত্রিক দুনিয়াসহ এ দেশের সিভিল সোসাইটির সংলাপের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ও দমন-নির্যাতন পরিস্থিতি অবনতির শেষ তলানিতে এনে ঠেকিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নানা দাবিতে ৬ মার্চ ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচি করছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের প্রতিনিধিরা এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের শেষ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। একই দিনে ঢাকায় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চসহ তাদের সমর্থকরা যেমন আলাদা সমাবেশ ডেকেছেন, তেমনি মহাজোটের শরিক জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও বিএনপি জোট হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। জামায়াত-শিবির তো সমর্থনে মাঠেই থাকবে। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনও এ দাবিতে রাস্তায় নামছে। মাঝখানে পরিস্থিতি ৬ তারিখে কোন দিকে মোড় নেয় সেই হিসাব-নিকাশের উত্তেজনা সব দিকে বাড়ছে। ১০ এপ্রিল বিএনপি ঢাকায় সর্বশক্তি নিয়ে সমাবেশ করবে। এ অবস্থায় অনেকের প্রশ্ন ও সংশয়_ ৬ মার্চে এমন কিছু ঘটবে না তো যা পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক দুই দলের বাইরে চলে যায়।
সুমহান মুক্তিযুদ্ধের পর বার বার জাতীয় ঐক্যকে বিভক্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগেই তা ঘটানো হয়েছে। জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার-পরিজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে মুক্তিযুদ্ধের চার সফল নেতাকে খুন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে লাখো লাখো শহীদের রক্ত ও আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে মানুষ রক্ত ও জীবন দিতে কার্পণ্য করেনি। তবুও ২২ বছরের গণতন্ত্রের জমানায় সংবিধানকে জনগণের প্রত্যাশার মতো করে সংশোধন করা হয়নি। জগাখিচুড়ি করে রাখা হয়েছে। যখন যারা এসেছেন তাদের মতো করে করেছেন। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের আগ্রাসনে দিনে দিনে অভিশপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা দূরে থাক, সংসদ অকার্যকর হয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছে। সরকারের একগুঁয়ে নীতি জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২২ বছরে পেশাজীবীদের পেশাদারিত্বের বদলে দলীয় আনুগত্যের বৃত্তে বন্দী করা হয়েছে। দিনে দিনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, মনোনয়ন-বাণিজ্য, দলীয় গণতন্ত্রের চর্চার অভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষয়ে গেছে। ভেঙে ভেঙে পড়ছে সবকিছু। দুর্নীতি দিনে দিনে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির ছোবল মনে করিয়ে দেয় একুশের গ্রেনেড হামলা থেকে জনপ্রতিনিধি হত্যার নারকীয় বীভৎস চিত্র। ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে বিরোধী দল দমন সেই ধারাবাহিকতারই নগ্ন প্রকাশ মাত্র। এমনটি আমরা চাইনি। গুলি, ইটপাটকেল, আগুন, নাশকতা, সহিংসতার যে দৃশ্য দেখছে বাংলাদেশ; এমনটি আমরা চাইনি।(পীর হাবিবুর রহমান এর লিখিত এই কলামটি,দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৪ এপ্রিল সংখ্যা থেকে সংগৃহিত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন