শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

সত্যের পক্ষে অকুতোভয় সৈনিক : মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই (অধ্যাপক মুহাম্মদ আমিনুল হক)

আবারও গ্রেফতার হলেন মাহমুদুর রহমান। বেশ কিছুদিন দৈনিক আমার দেশ-এর নিজ অফিসে অবরুদ্ধ থাকার পর গ্রেফতার হলেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালের ১ জুন ভোরে তাকে পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। টানা দশ মাস সীমাহীন নির্যাতন ও কারাভোগের পর ২০১১ সালের ১৭ মার্চ মুক্তি পান তিনি।
মাহমুদুর রহমান সত্যের পথে লড়াকু এক অকুতোভয় সৈনিকের নাম। সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যিনি রাতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও দ্বীন ইসলামের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের মেধা, যোগ্যতা, সাহস ও বিশ্বাস দিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের পানে। কোনো ধরনের মরণের ডর যাকে স্পর্শ করে না, বাতিলের হুঙ্কারে যার হৃদয়ে কাঁপন ধরে না তার নাম মাহমুদুর রহমান। সত্যের পক্ষে কলম ধরে যুক্তির নিরিখে বাতিলকে একের পর এক পদাঘাত করছেন তিনি। জেল-জুলুম-হুলিয়া মাহমুদুর রহমানের কাছে পান্তা ভাতের মতো। মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসী বীর বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নেই, নিকট অতীতেও ছিল না।
মাহমুদুর রহমানের ঈমানি তেজ আমাদের বিস্মিত করেছে। কালের অনেক মহারথীকে দেখেছি পরাশক্তি ও ফ্যাসিবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। কিন্তু মাহমুদুর রহমান সেরকম পাত্র নন। ভেঙে যাবেন তো মচকে যাবেন না। পবিত্র হাদিসে জালেমের সামনে হক কথা বলাকে জিহাদ হিসেবে বলা হয়েছে। মাহমুদুর রহমান কাউকে পরোয়া না করে সত্য কথা প্রচার করে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মর্দে মুজাহিদ কাকে বলে। এক মাহমুদুর রহমান আজকে দেশের স্বাধীনতার শত্রুদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে রাজশাহীতে মহাসমাবেশ করেছেন। টিপাইমুখে বাঁধ দেয়ার বিরুদ্ধে লংমার্চ করেছেন। ভারতকে করিডোর দেয়ার বিরোধিতা করেছেন তিনি।
মাহমুদুর রহমানের বড় অপরাধ তিনি জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির পেছনে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপিসহ সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে যখন বাম অপশক্তিগুলো কোণঠাসা করে ফেলেছে, তখন মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের সব ধরনের অন্যায়-অবিচারকে সুনিপুণ কায়দায় জনগণের সামনে প্রকাশ করেছে আমার দেশ পত্রিকা। রেলগেট কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার লুণ্ঠন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারিসহ হাজারও দুর্নীতির সবিস্তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দৈনিক আমার দেশ। যুদ্ধাপরাধীর বিচার সবাই চায়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার করার নামে প্রহসনের বিচার কেউ চায় না। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ দৈনিক আমার দেশ সাহসের সঙ্গে জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেয়। যে কারণে একজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন।
শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণকে একাই ফুটো করে দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান। শাহবাগের ওই আন্দোলন দু’দিন পর্যবেক্ষণ করার পর মাহমুদুর রহমানের আমার দেশ পত্রিকা সাহসের সঙ্গে নিউজ করেছে ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ শিরোনামে। এরপর কয়েকদিন যেতে না যেতেই শাহবাগের আসল চরিত্র গণমানুষের কাছে প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে মানুষের মোহ ভাঙে শাহবাগ নিয়ে। শাহবাগি ব্লগারদের ইসলামবিদ্বেষী লেখাগুলো দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করলে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ৬ এপ্রিল নাস্তিক ব্লগারদের বিচারের দাবিতে লংমার্চের আয়োজন করেন। ৬ তারিখের ওই লংমার্চকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয় তার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ। সব মিডিয়া, সরকারি শক্তি ও অর্থকড়ি দিয়ে শাহবাগে যে জাগরণ সৃষ্টি করা যায়নি; সেই জাগরণ সৃষ্টি হয় শাপলা চত্বরসহ সারা বাংলায় এক মাহমুদুর রহমানের প্রচেষ্টায়। সারা বাংলার তৌহিদি জনতার কাছে নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের মেসেজগুলো মুহূর্তেই পৌঁছে দিয়েছে আমার দেশ।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পরপরই এ দেশে যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল তার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে একের পর এক রিপোর্ট করেছে দৈনিক আমার দেশ। মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ এদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। তাই দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও দশের পাশে দাঁড়িয়েছের মাহমুদর রহমান ও তার পত্রিকা। যেখানে অন্য মিডিয়া একপেশে সিন্ডিকেটেড রিপোর্ট করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেতনাকে পাশ কাটিয়ে বিদেশি চেতনা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান ডাক দিলেন নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ নাস্তিক্যবাদের করদরাজ্যে পরিণত হতে পারে না। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইসলাম ও ইসলামী চেতনার বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল পাকিস্তানি শাসকদের জুলুম ও অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে। এ সত্য কথাটিও তিনি বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ করেছেন।
খুন-গুম, ধর্ষণ, সীমান্ত হত্যা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সারা বছর যে পত্রিকাটি সরব থেকেছে তার নাম আমার দেশ। মাহমুদুর রহমানের সফল দিকনির্দেশনায় দৈনিক আমার দেশ এখন বাংলার কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের পত্রিকা। গরিবের হাতিয়ার এই আমার দেশ। ইসলামের মুখপত্র এই আমার দেশ। স্বাধীনতার রক্ষাকবচ এই আমার দেশ। মাহমুদুর রহমান দেশ ও জাতির সঙ্গে কোনো প্রতারণা করেননি। অন্য মিডিয়া যখন দলের গোলাম হয়ে কাজ করেছে, তখন নির্মোহভাবে সবার জন্য কাজ করেছে আমার দেশ। গণহত্যাকে পাশ কাটিয়ে বৃক্ষ নিধন নিয়ে রিপোর্ট করতে যায়নি আমার দেশ। বছরের পর বছর সম্পাদকের পদ আঁকড়ে ধরেও যারা দু’চার কলাম লিখতে পারেননি, মাহমুদুর রহমান তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে লিখতে হয়।
মাহমুদুর রহমান এখন আর কোনো ব্যক্তি নন। মাহমুদুর রহমান একটি আদর্শের নাম। মাহমুদুর রহমান একটি প্রতিষ্ঠান। মাহমুদুর রহমান সত্যের পক্ষের সিপাহসালার। নৈতিকতার মানে অনুসরণীয় এক ব্যক্তিত্বের নাম মাহমুদুর রহমান। মাহমুদুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা। মাহমুদুর রহমান আমাদের চেতনার বাতিঘর। মাহমুদুর রহমান এদেশের তৌহিদি জনতার হৃদয়ের মুকুট। মাহমুদুর রহমানকে আটক করা মানে এদেশের স্বাধীনতাকে আটক করা। তাকে বন্দী করা মানে গণতন্ত্রের পরাজয়। মাহমুদুর রহমান বন্দী থাকা মানে সত্যের বাতি নিভে যাওয়া। মাহমুদুর রহমান আমাদের ভাসানী। মাহমুদুর রহমান আমাদের নজরুল ইসলাম। মাহমুদুর রহমান আমাদের জিয়াউর রহমান। সরকার ভুল করে হোক আর কারও ইশারায় হোক মাহমুদুর রহমানকে আবার আটক করে খারাপ নজির স্থাপন করেছে। আমরা সবাই মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট(দৈনিক আমার দেশ থেকে সংকলিত)

1 টি মন্তব্য: