লেখক:-শওকত মাহামুদ |
হাসিনা-সরকারের জন্য প্রতিটি দিন এখন আতঙ্কের। ভীতি যত বাড়ে, প্রলাপও তত
তুঙ্গে ওঠে। আগামী ৬ এপ্রিল তাদের জন্য মহা-দুর্ভাবনা নিয়ে আসছে। হেফাজতে
ইসলামকে ছলে-বলে নিরস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে অত্যাচারী এবং
ইসলাম-বিরোধীবান্ধব বর্তমান সরকার। ইসলাম বাঁচানোর এই লংমার্চে সরকারের
সঙ্গে তারাও সন্ত্রস্ত। কারা? সরকারের বর্শামুখ হিসেবে যারা ব্যবহৃত
হচ্ছেন। সাপের জিভের দুই ডগার মতো একদিকে শাহবাগের ইসলামবিদ্বেষী ব্লগাররা;
অন্যদিকে মাওলানা মাসউদ, মাওলানা মিছবাহুর এবং তরীকত ফেডারেশনের কর্তারা।
এরা সেক্যুলার সরকারের ধ্বজা ধরে ইসলাম-বিদ্বেষীদের চেয়ে জামায়াতে ইসলামীকে
বড় প্রতিপক্ষ মনে করছে। তাদের মুখে শুনলাম, লংমার্চে নাকি জামায়াত-শিবির
ঢুকে মিশে গিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাবে। প্রশ্ন জাগে, সরকারই বোধহয় এটা করাতে
পারে। দোষটা আগেভাগে জামায়াতের ওপর ফেলে রাখা আর কি!
একটি দল, থুক্কু একটি পরিবারের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার তীব্র খায়েশ থেকেই বর্তমান সঙ্কটের জন্ম। এর জন্য গণহত্যা চালানো হচ্ছে দেশজুড়ে। ক্ষেপে ওঠা মানুষের রক্ত ঝরাতে সরকারের বাহিনী যত্রতত্র এন্তার গুলি-গ্রেনেড ছুড়ছে। এবং তা করতে গিয়ে তাদের কব্জি উড়ে যাচ্ছে বা মাথা থেঁতলে যাচ্ছে। টিভি-পত্রিকায় আমরা রাজপথের জনপদের যে তাণ্ডব দেখছি, তার চেয়েও বেশি বর্বরতা চলছে আটক বা গ্রেফতারকৃতদের ওপর। কিন্তু সেসব আমরা দেখছি না বা জানছি না। কত তরুণ রিমান্ডে, বিনা মামলায় বা বিনা বিচারে অমানুষিক নির্যাতনে, গায়েঠেকানো বন্দুকের গুলিতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। জেলখানাগুলোতে গাদাগাদি করে রাজবন্দিরা স্রেফ নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচতে চাইছে। তপ্ত নিঃশ্বাসে তাঁরা হয়তো উচ্চারণ করছে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী ফ্রান্সের অগ্নিপুরুষ কবি লুই আসগঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘চোখের জলের চেয়ে সুন্দর’-এর ছত্রগুলো : ‘আমি যে নিঃশ্বাস নিই তাতে কেউ কেউ বাঁচতে বাধা পায়/জানি না কী অনুতাপে চমকে দিই আমি তাদের নিদ্রাকে/কবিতার মিল দিয়ে যেন শূন্য ভরি ভেরীর বাজনায়/এমন আওয়াজ নাকি মৃতেরাও জেগে ওঠে সেই ডাকে।’ একদিন এই রাজবন্দিদের ওপর বীভত্সতার কাহিনী জাতি শুনবে; শুনতেই হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা হত্যা শুরু হলে প্রথম দু’দিন কিছু মিডিয়া উল্টো কাহিনী শুনিয়েছিল। খুনিদের দাবি, কিছু মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী গদগদিয়ে সমর্থন জানাচ্ছিল। অথচ আড়ালে চলছিল হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও গণকবর বানিয়ে লাশ পুঁতে ফেলা এবং ড্রেন দিয়ে লাশ নিক্ষেপের লোমহর্ষক সব ঘটনা। সরকারের কয়েক কর্তা ও ষণ্ডা ব্যক্তি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল খুনিদের রক্ষায়। কিন্তু বিদ্রোহের অবসানে আর লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় জাতি যখন জানল প্রকৃত ঘটনা, ভেঙে পড়ল কান্নায়। ধিক্কার দিল সরকারকে—কেন ঘটতে দেয়া হলো গণহত্যাকে? একদিন তদন্ত হতেই হবে কারা কীভাবে এসব ঘটিয়েছিল। সেদিনের পিলখানায় এবং আজকের রাজপথে, জেলে জেলে, রিমান্ড সেলে এবং থানায় থানায় কোনো না কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকেই যাবে এই বর্বরতার বয়ান দেয়ার জন্য। ইতিহাসের জন্য এসব তোলা থাকবে।
পিলখানার গণহত্যা এবং আজকের গণহত্যা একই সূত্রে বাঁধা। আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই বর্তমান সরকারের ভূমিকায়। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারজি হালে পদত্যাগ করে হাসিনা-সরকারের মেরুদণ্ডহীনতা তুলে ধরেছেন। কীভাবে? ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি ইতালিয়ান পণ্যবাহী জাহাজকে জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য ইতালির দু’জন নৌ-সেনা সালভাটোরে গিরোনে এবং ম্যাসিমিলিয়ানো লাভোরে গুলি ছোড়ে। এতে দু’জন ভারতীয় জেলে মারা যায়। বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবর অনুযায়ী, গুলির আগে নৌ-সেনারা সতকর্তামূলক গুলিও ছুড়েছিল। জেলেদের নৌকাকে তারা দস্যু-নৌকা ভেবে গুলি করে। এ নিয়ে ভারত ও ইতালির মধ্যে জোর কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়। ইতালির দুই নৌ-সেনার বিচার ভারতে শুরু হয়। আটক নৌ-সেনাদের ভারত থেকে ইতালি যাওয়ার অনুমতিও দেয়া হয় বড়দিনের উত্সব ও গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটপ্রদানের সুযোগ দিতে। এরপর ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও মন্টি ঘোষণা করেন যে, এই দুই নৌ-সেনাকে আর ভারতে ফেরত পাঠানো হবে না; কারণ ভারতীয় আদালতের এখতিয়ার নেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বিচারের। কিন্তু পরিস্থিতি হঠাত্ বদলে যায় সম্প্রতি ভারত সরকার ইতালির রাষ্ট্রদূতকে ভারত ত্যাগের অনুমতি না দেয়ায়। এর দরুন এবং ভারতের কাছে হেলিকপ্টার বিক্রির ধান্ধায় প্রধানমন্ত্রী মন্টি ঘোষণা করেন, দুই নৌ-সেনাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হয়ে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এমপিদের বিপুল করতালির মধ্যে তিনি ঘোষণা করেন, ‘দেশের সম্মান, সশস্ত্র বাহিনীর মান-মর্যাদা এবং ইতালির কূটনীতির স্বার্থে আমার এই পদত্যাগ। আমি চাই না ইতালির সেনাদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া হোক। এ দুই নৌ-সেনা এখন দিল্লিতে ফেরত গেছে এবং ইতালির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সানতেলি তাদের বিচারকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন।
এ ঘটনাটি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে এজন্য যে, দু’জন সৈন্যের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। আর ভারত তার দুই নিহত নাগরিক জেলের জন্য কী না করছে! আমাদের বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কত অন্তপ্রাণ, তা তো চার বছর ধরে দেখছি। তারা পিলখানায় বিনাযুদ্ধে মরল। তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা হলো না। এখন গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য অনুরোধ। আমরাও বলি গণতন্ত্র বাঁচুক। কিন্তু গণহত্যার গণতন্ত্র? সেনাবাহিনী নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তার অনেক প্রমাণ আছে, হয়তো স্বস্তির সম্পর্ক নেই। সেনাবাহিনীকে ভোটের সময় মোতায়েন না করা তো সরকারের প্রকাশ্য অবস্থান। রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে নামানোর বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা খোলাখুলি কথা বলেছেন। বগুড়ার শাহজাহানপুরে থানা রক্ষায় সেনা মোতায়েন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইএসপিআরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য জাতি শুনেছে। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনী সম্পর্কে একটা মন্তব্য করার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বসেছেন। থাকগে, বলতে চাইছি, আমাদের সরকারের ইটালি ও ভারতের কাছ থেকে শেখার আছে। যদিও ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। তেমনি প্রায় প্রতিদিন যে ভারতীয় বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশী মারছে, ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ফেলানীকে মেরে ঝুলিয়ে রাখছে, তাতে কোনো প্রতিবাদ নেই। উল্টো আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফে পক্ষে সাফাই গায়। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব ঢাকায় বসে সীমান্ত-গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (দু’জনই চাঁদপুরের) তাত্ক্ষণিকভাবে মৃদু প্রতিবাদ করার হ্যাডমও রাখেন না। মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে মুসলিম নিধন চলছে। এতিমখানায় আগুন দিয়ে শিশুদের মেরে ফেলা হয়েছে। সরকার কোনো কথা বলে না। উল্টো সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে, যাতে নির্যাতিত বাঙালি মুসলমানরা বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে। মিয়ানমারের এই মুসলিম-নিধনে কি আমাদের সরকারের সায় আছে—এ প্রশ্ন উঠেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়দানের জন্য জাতিসংঘ, ওআইসি এবং মুসলিম বিশ্বের অনুরোধকে এ সরকার উপেক্ষাই করেনি; বরং রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দিলে তারা বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ওপর হামলা করবে—এমন আশঙ্কা উগরে দিতে রামুতে সরকারি ছকে বৌদ্ধদের ওপর আওয়ামী লীগ দিয়ে হামলা করিয়েছে। এ হামলা এখনও রহস্যাবৃত এবং যে চক্রান্তকারীর ফেসবুক থেকে উসকানি দেয়া হয়েছে, সে এখন আওয়ামী লীগের কোনো এক এমপির বাসায় নিরাপদে আছেন বলে শোনা যায়। উল্লেখ্য, বিশ্বে এখন সবচেয়ে বড় এথনিক গ্রুপ কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমান।
বাংলাদেশে চলমান ফ্যাসিবাদ ও সরকারের ইসলাম-বিদ্বেষের প্রতিবাদে সারাদেশই এখন সোচ্চার। আমাদের সমাজে এমন মনে করার লোকও আছে, যারা ভাবছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম রাজনৈতিক নিপীড়ন চালিয়ে, গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সরকার টিকে যাবে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্ব বা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতিত্ব কেউ নাকচ করতে পারবে না। এ ক’জনের মধ্যে ‘দানবাধিকার’ কমিশনের চেয়ারম্যানও থাকতে পারেন। কিন্তু তারা যদি সরকারের হাইকমান্ডের টেনশনের কথা আঁচ করতে পারতেন এবং অতীতে আন্দোলনে-জর্জরিত সরকারগুলোর শেষ সময়ের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান অবস্থার একটা পর্যালোচনা করতেন, তাহলে হুঁশে আসতেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ১৮ দলের পক্ষে যে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, জনগণ সেসব বাস্তবায়ন করছেন। শেখ হাসিনা চলে গেছেন ডিফেন্সিভ অবস্থানে। হানিফ, কামরুল, মায়া গং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বসে বা নয়াপল্টনে পুলিশ পাঠিয়ে হরতাল ভাঙতে পারছেন না। সারাদেশে প্রতিদিন রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। একমাত্র ভরসা পুলিশ আর পারছে না। সরকারের সব কথা পুলিশ শুনছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে অপসারণের জন্য বলা হলেও পুলিশ সদর দফতর এখনও বাস্তবায়ন করেনি। সরকার হরতালে বিজিবি নামায়। কিন্তু যাদের সেনা-নিরাপত্তায় থাকতে হয়, তারা কতখানি গণহত্যা চালাবে বা সরকারকে বাঁচাবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘শুট অ্যাট সাইট’ হুকুম সংলাপের সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। সরকার সংলাপ চায় না, আর সরকারের পতনের দাবিতে একমত বিরোধী দলের পক্ষে রক্তের বন্যা মাড়িয়ে সংলাপে যাওয়া সম্ভব নয়। শোনা যায় সরকার নাকি সংলাপ করতে চায়। এটা স্রেফ লংমার্চ বা আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হতে পারে। সরকারের জন্য বড় বিপদ হলো গোটা দেশের মুসল্লি, আলেম সমাজ রাজপথে নেমে এসেছেন। শাহবাগিরা স্তিমিত। খোদ আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতারা গণভবনে বসে শাহবাগের ব্লগারদের অভিসম্পাত করছে। অন্যদিকে শাহবাগে গিয়ে প্রায় পায়ে ধরে রুমী স্কয়াডের অনশন ভেঙেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। কচি-কাঁচাদের খেলাঘর দিয়ে রাজনীতিতে বুদবুদ তোলা যায়, কিন্তু আখেরে উল্টো পরিণাম হয়। ১৭৫ বছর আগে ফ্রান্সের রাজনৈতিক চিন্তক কেভিল সমাজ-বিচ্ছিন্ন, বিভ্রান্ত এসব ব্লগার সম্পর্কে বিপজ্জনক আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। পুলিত্জার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক ক্রিস হ্যাজেস তার ‘ডেথ অব দ্য লিবারেল ক্লাস’ বইয়ের ২০৮ পৃষ্ঠায় সরাসরি বলেছেন : “The great promise of the internet- to open up dialogue, breakdown cultural barriers, promote democracy, and unleash innovation and creativity- is yet another utopian dream. The internet is only accelerating our division into antagonistic clans, where we sucked into virtual tribal groups that chant same slogans and hate the same enemies. The web, like the cable news outlets, forms anonymous crowds to send collective rage, intolerance, and bigotry. These virtual slums do not seek communication and dialogue. They speak in new absurdist language. They do not enrich our culture. They create a herd mentality in which those who express emapathy for some perceived 'enemy'- whether left or right- are denounced by their fellow travelers for their impurity. And the liberal class has become as corrupted by the web as the right ring."
সরকারের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে শাহবাগ বসিয়ে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এই জাগরণ মঞ্চ সফল হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে একটা বড় ধরনের গণঅভ্যুত্থান হতে পারে—এই আশঙ্কা সরকারের। পুলিশের বেধড়ক গুলির আরেকটা উদ্দেশ্য—কেউ যেন কোথাও বসতে না পারে। বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীরা ৩১ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে বসে মতবিনিময় করবেন, সেখানেও পুলিশের বাধা। ভিন্নমতে জিরো-টলারেন্স। দমনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার কী করতে পারে? ইমার্জেন্সি? দিতে পারে, কিন্তু সেনা মোতায়েন ছাড়া ইমার্জেন্সি সম্ভব নয়। আর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছাড়া সেনাবাহিনী ‘রোড-শো’র জন্য রাস্তায় নামবে, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। বর্তমানে রাজনৈতিক তত্পরতা তো বিরোধী দলের জন্য একরকম নিষেধই আছে। সমস্যা হবে হানিফ, কামরুল, মায়া, নানক, হাজী সেলিম, শাওন ও সম্রাট সাহেবদের জন্য। তারা মিছিল নিয়ে নামলে সেনাবাহিনী তো ছাড়বে না। সে থাক, এসব কল্পনার কথা। সরকার সেনাবাহিনীকে নামাবে কিনা, বা নামাতে ভরসা পায় কিনা, তা সরকারের ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে রাজধানীতে। মানে কারফিউ। এই ধারা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের মনোবল আর অবশিষ্ট আছে কি না, দেখার বিষয়। এই মাটির ইতিহাস বলে, এসব করে কোনো সরকার গদি বাঁচাতে পারেনি। সরকারের কেউ যদি মনে করেন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে অথবা তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হতোদ্যম করা যাবে, তাহলে সরকার সবচেয়ে বড় ভুল করবে। এর জন্য তওবা করার সুযোগও অনেকের হয়তো হবে না।
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ওপর মানুষের আস্থা কেমন—এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। গণভোটও অবাস্তব, কিন্তু অমোঘ সত্য হলো, বলদর্পী সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জনমতের প্রতিকূলে যারা এর কাটাছেঁড়া করেছেন, তাদের রাজনৈতিক ইন্তেকাল হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনী বাকশাল বাঁচাতে পারেনি। বিচারপতিদের বয়স নিয়ে সংশোধনী অস্থিতি এনেছিল। আর বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী, যাতে আল্লাহ ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিসর্জন দেয়া হয়েছে, তার পরিণাম হাসিনা-সরকারকে ভোগ করতেই হবে।(আমার দেশ ৪ এপ্রিল থেকে সংগৃহিত)
একটি দল, থুক্কু একটি পরিবারের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার তীব্র খায়েশ থেকেই বর্তমান সঙ্কটের জন্ম। এর জন্য গণহত্যা চালানো হচ্ছে দেশজুড়ে। ক্ষেপে ওঠা মানুষের রক্ত ঝরাতে সরকারের বাহিনী যত্রতত্র এন্তার গুলি-গ্রেনেড ছুড়ছে। এবং তা করতে গিয়ে তাদের কব্জি উড়ে যাচ্ছে বা মাথা থেঁতলে যাচ্ছে। টিভি-পত্রিকায় আমরা রাজপথের জনপদের যে তাণ্ডব দেখছি, তার চেয়েও বেশি বর্বরতা চলছে আটক বা গ্রেফতারকৃতদের ওপর। কিন্তু সেসব আমরা দেখছি না বা জানছি না। কত তরুণ রিমান্ডে, বিনা মামলায় বা বিনা বিচারে অমানুষিক নির্যাতনে, গায়েঠেকানো বন্দুকের গুলিতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। জেলখানাগুলোতে গাদাগাদি করে রাজবন্দিরা স্রেফ নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচতে চাইছে। তপ্ত নিঃশ্বাসে তাঁরা হয়তো উচ্চারণ করছে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী ফ্রান্সের অগ্নিপুরুষ কবি লুই আসগঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘চোখের জলের চেয়ে সুন্দর’-এর ছত্রগুলো : ‘আমি যে নিঃশ্বাস নিই তাতে কেউ কেউ বাঁচতে বাধা পায়/জানি না কী অনুতাপে চমকে দিই আমি তাদের নিদ্রাকে/কবিতার মিল দিয়ে যেন শূন্য ভরি ভেরীর বাজনায়/এমন আওয়াজ নাকি মৃতেরাও জেগে ওঠে সেই ডাকে।’ একদিন এই রাজবন্দিদের ওপর বীভত্সতার কাহিনী জাতি শুনবে; শুনতেই হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা হত্যা শুরু হলে প্রথম দু’দিন কিছু মিডিয়া উল্টো কাহিনী শুনিয়েছিল। খুনিদের দাবি, কিছু মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী গদগদিয়ে সমর্থন জানাচ্ছিল। অথচ আড়ালে চলছিল হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও গণকবর বানিয়ে লাশ পুঁতে ফেলা এবং ড্রেন দিয়ে লাশ নিক্ষেপের লোমহর্ষক সব ঘটনা। সরকারের কয়েক কর্তা ও ষণ্ডা ব্যক্তি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল খুনিদের রক্ষায়। কিন্তু বিদ্রোহের অবসানে আর লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় জাতি যখন জানল প্রকৃত ঘটনা, ভেঙে পড়ল কান্নায়। ধিক্কার দিল সরকারকে—কেন ঘটতে দেয়া হলো গণহত্যাকে? একদিন তদন্ত হতেই হবে কারা কীভাবে এসব ঘটিয়েছিল। সেদিনের পিলখানায় এবং আজকের রাজপথে, জেলে জেলে, রিমান্ড সেলে এবং থানায় থানায় কোনো না কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকেই যাবে এই বর্বরতার বয়ান দেয়ার জন্য। ইতিহাসের জন্য এসব তোলা থাকবে।
পিলখানার গণহত্যা এবং আজকের গণহত্যা একই সূত্রে বাঁধা। আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই বর্তমান সরকারের ভূমিকায়। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারজি হালে পদত্যাগ করে হাসিনা-সরকারের মেরুদণ্ডহীনতা তুলে ধরেছেন। কীভাবে? ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি ইতালিয়ান পণ্যবাহী জাহাজকে জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য ইতালির দু’জন নৌ-সেনা সালভাটোরে গিরোনে এবং ম্যাসিমিলিয়ানো লাভোরে গুলি ছোড়ে। এতে দু’জন ভারতীয় জেলে মারা যায়। বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবর অনুযায়ী, গুলির আগে নৌ-সেনারা সতকর্তামূলক গুলিও ছুড়েছিল। জেলেদের নৌকাকে তারা দস্যু-নৌকা ভেবে গুলি করে। এ নিয়ে ভারত ও ইতালির মধ্যে জোর কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়। ইতালির দুই নৌ-সেনার বিচার ভারতে শুরু হয়। আটক নৌ-সেনাদের ভারত থেকে ইতালি যাওয়ার অনুমতিও দেয়া হয় বড়দিনের উত্সব ও গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটপ্রদানের সুযোগ দিতে। এরপর ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও মন্টি ঘোষণা করেন যে, এই দুই নৌ-সেনাকে আর ভারতে ফেরত পাঠানো হবে না; কারণ ভারতীয় আদালতের এখতিয়ার নেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বিচারের। কিন্তু পরিস্থিতি হঠাত্ বদলে যায় সম্প্রতি ভারত সরকার ইতালির রাষ্ট্রদূতকে ভারত ত্যাগের অনুমতি না দেয়ায়। এর দরুন এবং ভারতের কাছে হেলিকপ্টার বিক্রির ধান্ধায় প্রধানমন্ত্রী মন্টি ঘোষণা করেন, দুই নৌ-সেনাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হয়ে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এমপিদের বিপুল করতালির মধ্যে তিনি ঘোষণা করেন, ‘দেশের সম্মান, সশস্ত্র বাহিনীর মান-মর্যাদা এবং ইতালির কূটনীতির স্বার্থে আমার এই পদত্যাগ। আমি চাই না ইতালির সেনাদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া হোক। এ দুই নৌ-সেনা এখন দিল্লিতে ফেরত গেছে এবং ইতালির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সানতেলি তাদের বিচারকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন।
এ ঘটনাটি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে এজন্য যে, দু’জন সৈন্যের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। আর ভারত তার দুই নিহত নাগরিক জেলের জন্য কী না করছে! আমাদের বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কত অন্তপ্রাণ, তা তো চার বছর ধরে দেখছি। তারা পিলখানায় বিনাযুদ্ধে মরল। তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা হলো না। এখন গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য অনুরোধ। আমরাও বলি গণতন্ত্র বাঁচুক। কিন্তু গণহত্যার গণতন্ত্র? সেনাবাহিনী নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তার অনেক প্রমাণ আছে, হয়তো স্বস্তির সম্পর্ক নেই। সেনাবাহিনীকে ভোটের সময় মোতায়েন না করা তো সরকারের প্রকাশ্য অবস্থান। রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে নামানোর বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা খোলাখুলি কথা বলেছেন। বগুড়ার শাহজাহানপুরে থানা রক্ষায় সেনা মোতায়েন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইএসপিআরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য জাতি শুনেছে। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনী সম্পর্কে একটা মন্তব্য করার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বসেছেন। থাকগে, বলতে চাইছি, আমাদের সরকারের ইটালি ও ভারতের কাছ থেকে শেখার আছে। যদিও ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। তেমনি প্রায় প্রতিদিন যে ভারতীয় বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশী মারছে, ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ফেলানীকে মেরে ঝুলিয়ে রাখছে, তাতে কোনো প্রতিবাদ নেই। উল্টো আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফে পক্ষে সাফাই গায়। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব ঢাকায় বসে সীমান্ত-গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (দু’জনই চাঁদপুরের) তাত্ক্ষণিকভাবে মৃদু প্রতিবাদ করার হ্যাডমও রাখেন না। মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে মুসলিম নিধন চলছে। এতিমখানায় আগুন দিয়ে শিশুদের মেরে ফেলা হয়েছে। সরকার কোনো কথা বলে না। উল্টো সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে, যাতে নির্যাতিত বাঙালি মুসলমানরা বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে। মিয়ানমারের এই মুসলিম-নিধনে কি আমাদের সরকারের সায় আছে—এ প্রশ্ন উঠেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়দানের জন্য জাতিসংঘ, ওআইসি এবং মুসলিম বিশ্বের অনুরোধকে এ সরকার উপেক্ষাই করেনি; বরং রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দিলে তারা বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ওপর হামলা করবে—এমন আশঙ্কা উগরে দিতে রামুতে সরকারি ছকে বৌদ্ধদের ওপর আওয়ামী লীগ দিয়ে হামলা করিয়েছে। এ হামলা এখনও রহস্যাবৃত এবং যে চক্রান্তকারীর ফেসবুক থেকে উসকানি দেয়া হয়েছে, সে এখন আওয়ামী লীগের কোনো এক এমপির বাসায় নিরাপদে আছেন বলে শোনা যায়। উল্লেখ্য, বিশ্বে এখন সবচেয়ে বড় এথনিক গ্রুপ কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমান।
বাংলাদেশে চলমান ফ্যাসিবাদ ও সরকারের ইসলাম-বিদ্বেষের প্রতিবাদে সারাদেশই এখন সোচ্চার। আমাদের সমাজে এমন মনে করার লোকও আছে, যারা ভাবছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম রাজনৈতিক নিপীড়ন চালিয়ে, গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সরকার টিকে যাবে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্ব বা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতিত্ব কেউ নাকচ করতে পারবে না। এ ক’জনের মধ্যে ‘দানবাধিকার’ কমিশনের চেয়ারম্যানও থাকতে পারেন। কিন্তু তারা যদি সরকারের হাইকমান্ডের টেনশনের কথা আঁচ করতে পারতেন এবং অতীতে আন্দোলনে-জর্জরিত সরকারগুলোর শেষ সময়ের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান অবস্থার একটা পর্যালোচনা করতেন, তাহলে হুঁশে আসতেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ১৮ দলের পক্ষে যে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, জনগণ সেসব বাস্তবায়ন করছেন। শেখ হাসিনা চলে গেছেন ডিফেন্সিভ অবস্থানে। হানিফ, কামরুল, মায়া গং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বসে বা নয়াপল্টনে পুলিশ পাঠিয়ে হরতাল ভাঙতে পারছেন না। সারাদেশে প্রতিদিন রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। একমাত্র ভরসা পুলিশ আর পারছে না। সরকারের সব কথা পুলিশ শুনছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে অপসারণের জন্য বলা হলেও পুলিশ সদর দফতর এখনও বাস্তবায়ন করেনি। সরকার হরতালে বিজিবি নামায়। কিন্তু যাদের সেনা-নিরাপত্তায় থাকতে হয়, তারা কতখানি গণহত্যা চালাবে বা সরকারকে বাঁচাবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘শুট অ্যাট সাইট’ হুকুম সংলাপের সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। সরকার সংলাপ চায় না, আর সরকারের পতনের দাবিতে একমত বিরোধী দলের পক্ষে রক্তের বন্যা মাড়িয়ে সংলাপে যাওয়া সম্ভব নয়। শোনা যায় সরকার নাকি সংলাপ করতে চায়। এটা স্রেফ লংমার্চ বা আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হতে পারে। সরকারের জন্য বড় বিপদ হলো গোটা দেশের মুসল্লি, আলেম সমাজ রাজপথে নেমে এসেছেন। শাহবাগিরা স্তিমিত। খোদ আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতারা গণভবনে বসে শাহবাগের ব্লগারদের অভিসম্পাত করছে। অন্যদিকে শাহবাগে গিয়ে প্রায় পায়ে ধরে রুমী স্কয়াডের অনশন ভেঙেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। কচি-কাঁচাদের খেলাঘর দিয়ে রাজনীতিতে বুদবুদ তোলা যায়, কিন্তু আখেরে উল্টো পরিণাম হয়। ১৭৫ বছর আগে ফ্রান্সের রাজনৈতিক চিন্তক কেভিল সমাজ-বিচ্ছিন্ন, বিভ্রান্ত এসব ব্লগার সম্পর্কে বিপজ্জনক আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। পুলিত্জার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক ক্রিস হ্যাজেস তার ‘ডেথ অব দ্য লিবারেল ক্লাস’ বইয়ের ২০৮ পৃষ্ঠায় সরাসরি বলেছেন : “The great promise of the internet- to open up dialogue, breakdown cultural barriers, promote democracy, and unleash innovation and creativity- is yet another utopian dream. The internet is only accelerating our division into antagonistic clans, where we sucked into virtual tribal groups that chant same slogans and hate the same enemies. The web, like the cable news outlets, forms anonymous crowds to send collective rage, intolerance, and bigotry. These virtual slums do not seek communication and dialogue. They speak in new absurdist language. They do not enrich our culture. They create a herd mentality in which those who express emapathy for some perceived 'enemy'- whether left or right- are denounced by their fellow travelers for their impurity. And the liberal class has become as corrupted by the web as the right ring."
সরকারের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে শাহবাগ বসিয়ে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এই জাগরণ মঞ্চ সফল হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে একটা বড় ধরনের গণঅভ্যুত্থান হতে পারে—এই আশঙ্কা সরকারের। পুলিশের বেধড়ক গুলির আরেকটা উদ্দেশ্য—কেউ যেন কোথাও বসতে না পারে। বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীরা ৩১ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে বসে মতবিনিময় করবেন, সেখানেও পুলিশের বাধা। ভিন্নমতে জিরো-টলারেন্স। দমনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার কী করতে পারে? ইমার্জেন্সি? দিতে পারে, কিন্তু সেনা মোতায়েন ছাড়া ইমার্জেন্সি সম্ভব নয়। আর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছাড়া সেনাবাহিনী ‘রোড-শো’র জন্য রাস্তায় নামবে, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। বর্তমানে রাজনৈতিক তত্পরতা তো বিরোধী দলের জন্য একরকম নিষেধই আছে। সমস্যা হবে হানিফ, কামরুল, মায়া, নানক, হাজী সেলিম, শাওন ও সম্রাট সাহেবদের জন্য। তারা মিছিল নিয়ে নামলে সেনাবাহিনী তো ছাড়বে না। সে থাক, এসব কল্পনার কথা। সরকার সেনাবাহিনীকে নামাবে কিনা, বা নামাতে ভরসা পায় কিনা, তা সরকারের ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে রাজধানীতে। মানে কারফিউ। এই ধারা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের মনোবল আর অবশিষ্ট আছে কি না, দেখার বিষয়। এই মাটির ইতিহাস বলে, এসব করে কোনো সরকার গদি বাঁচাতে পারেনি। সরকারের কেউ যদি মনে করেন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে অথবা তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হতোদ্যম করা যাবে, তাহলে সরকার সবচেয়ে বড় ভুল করবে। এর জন্য তওবা করার সুযোগও অনেকের হয়তো হবে না।
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ওপর মানুষের আস্থা কেমন—এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। গণভোটও অবাস্তব, কিন্তু অমোঘ সত্য হলো, বলদর্পী সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জনমতের প্রতিকূলে যারা এর কাটাছেঁড়া করেছেন, তাদের রাজনৈতিক ইন্তেকাল হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনী বাকশাল বাঁচাতে পারেনি। বিচারপতিদের বয়স নিয়ে সংশোধনী অস্থিতি এনেছিল। আর বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী, যাতে আল্লাহ ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিসর্জন দেয়া হয়েছে, তার পরিণাম হাসিনা-সরকারকে ভোগ করতেই হবে।(আমার দেশ ৪ এপ্রিল থেকে সংগৃহিত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন