মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আলোচিত প্রার্থী নদভী

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত শিবিরের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে এবারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবু রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন হাসান চৌধুরীসহ এক ডজন নেতাকে ডিঙিয়ে আবু রেজা নদভী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অবাক হয়েছেন তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী। তারা বলেছেন, তিনি অতীতে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর সাথে আবু রেজা নদভীর পরিচয়ও নেই। এমনকি উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাও তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না। এরপরও নেত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন কিছু আওয়ামী লীগ নেতা। আবার কেউ কেউ বলছেন নদভী এক সময় জামায়াতের পক্ষে ভোট চাওয়ায় এখন নৌকার পক্ষে ভোট আদায় করাটা একটু কঠিন হবে। অনেকে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেউ বলছেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের কাছে নদভী এখন ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ নেতা হিসাবে পরিচিত। তবে এলাকায় তিনি ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনেক মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করেছেন। সে সুবাদে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষের সাথে নদভীর সুসম্পর্ক রয়েছে। এদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। আবু রেজা নদভীকে দলের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। প্রত্যেক ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে নৌকা প্রতীকের পক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। লোকজন যথেষ্ট সাড়াও দিয়েছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া ছাড়াও নেত্রী আমাকে যখন যেখানে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা সঠিক ভাবে পালন করে এলাকার মানুষের সম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবু রেজা নদভীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সে বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। নেত্রীর সিদ্ধান্তকে আমি সব সময় শ্রদ্ধা করি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আবু রেজা নদভী এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে তিনি ভোটও চেয়েছেন। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। এরপরও নেত্রী যেহেতু তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। নেত্রী বলেছেন প্রার্থী নয়, নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য।
এ বিষয়ে আবু রেজা নদভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দেয়ার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবো। ইতোমধ্যে আমি কাজ শুরু করেছি। নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে সাড়াও পাচ্ছি। অতীতে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত না থাকলেও অনেক দলের অনেক নেতা-কর্মীর সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আশা করছি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, সমর্থকদের পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোটে আমি এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।
লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, অতীতে লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আবু রেজা নদভীর কোন সম্পর্ক ছিলনা। দলের হয়ে তাকে কোন কাজ করতে দেখিনি। আমার সাথে নদভীর ব্যক্তিগত কোন সম্পর্কও নেই। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমিনুল ইসলাম আমিন দলের হয়ে অনেক কাজ করেছেন। তার সাথে উপজেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। আমিন মনোনয়ন পেলে কাজ করতে কিছুটা সহজ হতো। তবে নেত্রী আমাদেরকে বলেছেন প্রার্থীর পক্ষে নয়, নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে। আমরা নদভীর পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করবো।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ মতলব জানান, নেত্রী নদভীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো। অতীতে নদভীর জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার ফরিদুল আলম জানান, আবু রেজা নদভী অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি এক সময় জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছুই নেই। এখন যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এসেছেন আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। নৌকা প্রতীককে জয়ী করতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করবো।
এদিকে জামায়াতের সাথে আবু রেজা নদভীর এখনো সুসম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, আবু রেজা নদভীর পিতা আল বদরের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষের এই লোককে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা চরমভাবে হতাশ হয়েছি। নদভী এখনো আওয়ামী লীগের সদস্য ফরমও পূরণ করেন নি। ভোটের পরে তিনি আওয়ামী লীগ করবেন কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে নেত্রী যেহেতু নদভীকে প্রার্থী করেছেন আমরা তার বিপক্ষে ভূমিকা রাখবো না।
লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আবু রেজা নদভীকে আমি চিনি না। দলের নেতা-কর্মীদের সাথেও তার পরিচয় নেই। তার পক্ষে ভোট আদায় করাটা একটু কঠিন হবে।
সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল মমতাজ চৌধুরী বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় অতীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভাল করতে পারেন নি। নদভীর সাথে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের সুসম্পর্ক রয়েছে। আবু রেজা নদভীকে মনোনয়ন প্রদান করায় আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। নদভী অতীতের প্রার্থীদের চেয়ে ভাল করবেন।From Daily Azadi


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন