বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের বিশ্বনন্দিত নেতা, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা আর নেই।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় জোহানেসবার্গের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ম্যান্ডেলা দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। কয়েক মাস হাসপাতালে থাকার পর সম্প্রতি নিজের বাসভবনেই নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন তিনি।
ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বের মানুষের মনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ম্যান্ডেলার মৃত্যু ঘোষণা করে বলেন, ‘আমরা হারিয়েছি আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।’
দক্ষিণ আফ্রিকাকে নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছিলের দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা।
প্রেসিডেন্ট জুমা জানান, ১৫ ডিসেম্বর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত নেলসন ম্যান্ডেলাকে সমাধিস্থ করা না হবে ততদিন পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ভাষণে জুমা বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, আমাদের সবার প্রিয় নেলসন ম্যান্ডেলা চলে গেছেন। নিজের বাড়িতেই শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মারা গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম যে বিদায়ের এই দিন একদিন আসবে। কিন্তু তবুও, তার বিদায়ে আমরা যে গভীর বেদনা পেয়েছি, যে অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের হয়েছে, তা কিছুতেই কমানো সম্ভব নয়।’
১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তবে নিজের দেশের মানুষের কাছে অনেক বেশি পরিচিত ‘মাদিবা’ নামে। এটি তার গোত্র নাম। নিজের গোত্রে অজ গ্রামীণ জীবন থেকেই তার উত্থান। তার বাবা ছিলেন ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের থেম্বো রাজকীয় পরিবারের কাউন্সিলর।
দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ সমপ্রদায়ের আধিপত্য, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক শাসন ব্যবস্থা চলছিল তখন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় নামেন ম্যান্ডেলা। প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডের অপরাধে দীর্ঘ ২৭ বছর তিনি কারাবন্দি জীবন কাটিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ শাসনের আধিপত্যের অবসান ঘটে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ে শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ৩০ বছরের সংগ্রামের পরে দেশটিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা ধীরে ধীরে নমনীয় হতে শুরু করলে দেশ পুনর্গঠন ও ক্ষমা ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও বিলম্ব করেননি মহান এই নেতা।
১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে প্রথম নির্বাচনে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি আফ্রিকার অন্যান্য দেশের নেতাদের জন্যও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
১৯৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ নেতা এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন ম্যান্ডেলা।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার সামনে ছিল বর্ণবাদের ভিত্তিতে অসমতা ও বঞ্চনায় কয়েক যুগ ধরে পিষ্ট হতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে একত্রিত করার বিপুল কর্মযজ্ঞ। দায়িত্ব নেয়ার পর এ লক্ষ্যেই কাজ করে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে বর্ণবাদবিরোধী দীর্ঘ সংগ্রামের সময়ে উভয়পক্ষের দ্বারা সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার করেন। এর মধ্যে দিয়ে জাতিগত দাঙ্গার ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পায় দেশটির নাগরিকরা।
২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলার সময় শেষবারের মতো জনসমক্ষে আসেন ম্যান্ডেলা। সোয়েতোর সেই স্টেডিয়ামে ৯০ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সেদিন তাকে স্বাগত জানায়। এই সোয়েতোতেই সংগ্রামের নেতা হিসেবে অভিষেক হয়েছিল ম্যান্ডেলার।
১৯৬৩ সালে কুখ্যাত রিভোনিয়া ট্রায়ালে হত্যার অভিযোগে বিচারের সময় কাঠগড়ায় ম্যান্ডেলার দেয়া বক্তব্যটি তার রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন সম্পর্কে তার সাক্ষ্য বহন করে।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সারা জীবন আমি উত্সর্গ করেছি আফ্রিকার জনগণের জন্য। আমি লড়েছি শ্বেতাঙ্গ শোষণের বিরুদ্ধে, আমি লড়েছি কৃষ্ণাঙ্গ শোষণের বিরুদ্ধেও।’
ম্যান্ডেলার বর্ণাঢ্য জীবন
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু বর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর রসবোধ, তিক্ততা ভুলে বৈরী প্রতিপক্ষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মতো উদারতা এবং বর্ণাঢ্য ও নাটকীয় জীবনকাহিনী মিলিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
বর্ণবাদের অবসানের পর ১৯৯৪ সালের ১০ মে নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এর মাত্র এক দশক আগেও সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গশাসিত দক্ষিণ আফ্রিকায় এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছিল এক অকল্পনীয় ঘটনা। এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও তিনি ভূমিকা রাখেন।
তরুণ বিপ্লবী
তরুণ বয়সে নেলসন ম্যান্ডেলা চলে আসেন জোহানেসবার্গে, সেখানে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে।
একই সঙ্গে তিনি কাজ শুরু করেন একজন আইনজীবী হিসেবেও। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা অলিভার টাম্বোর সঙ্গে মিলে তিনি তার অফিস খোলেন জোহানেসবার্গে।
১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আদৌ আর লাভ হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
এ সময় এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিষম্ফল।
কারাগার থেকে রাজপ্রাসাদে
ম্যান্ডেলার দল এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উত্খাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নেলসন ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেন দ্বীপে তার দীর্ঘ কারাজীবন।
কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এএনসির শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দি করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ টাউনশিপগুলোতে বর্ণবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান শত শত কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ।
নেলসন ম্যানডেলার মুক্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান।
সেদিন কারাগারের সামনে দেয়া বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা তার সমর্থকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন সেই কথা, যা তিনি তার বিচারের সময় আদালতে বলেছিলেন।
ম্যান্ডেলা বলেন, এমন এক দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন দেখেন তিনি, যেখানে সব জাতি, সব বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘এটা এমন এক আদর্শ, যেটির আশায় আমি বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু যদি দরকার হয়, এই আদর্শের জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’
পুরনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে নতুন আফ্রিকা গড়ার কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা অতীতের তিক্ততার প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে তার সাবেক শ্বেতাঙ্গ নিপীড়কদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন। শুরু হলো এক নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার পথ চলা।
মুক্তির পর দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের সঙ্গে নতুন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়, যেখানে সব বর্ণ এবং সব জাতির সমানাধিকার থাকবে। এর পথ ধরেই ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নেলসন ম্যান্ডেলা।
রাজনৈতিক জীবনের মতো, নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বারের মতো বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার প্রথম স্ত্রী ইভলিন মেস। ইভলিনের ঘরে চার ছেলেমেয়ে জন্ম নেয়ার পর ১৯৫৮ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
দ্বিতীয় স্ত্রী এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা উইনি ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটি ছিল তার জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্তগুলোর একটি। ৮০তম জন্মদিবসে তিনি তৃতীয় বার বিয়ে করেন মোজাম্বিকের সাবেক ফার্স্ট লেডি গ্রাসা মার্শেলকে।
বিশ্বশান্তির প্রতীক
অবসরে যাওয়ার পরও নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যস্ততা থামেনি। স্বাধীনতা এবং বিশ্বশান্তির এক আইকন বা প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি। সুতরাং তার ডাক পড়তে থাকে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে।
তার এক ছেলে মারা গিয়েছিলেন এইডসে। এ ঘটনার পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় এইডস প্রতিরোধ এবং এর চিকিত্সা নিয়ে সোচ্চার হন। বাকি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এইডস নিরাময়ের লক্ষ্যে প্রচারণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
নেলসন ম্যান্ডেলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাকে কীভাবে মনে রাখলে খুশি হবেন তিনি? তার উত্তর ছিল, ‘আমি চাই আমার সম্পর্কে এ রকম কথাই বলা হোক— এখানে এমন এক মানুষ শায়িত আছেন, যিনি পৃথিবীতে তার কর্তব্য সম্পাদন করেছেন। আমি চাই এটুকুই বলা হোক আমার সম্পর্কে।’
বিশ্বনেতাদের শোক
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা।
ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘একজন মানুষ যা অর্জন করতে পারে ম্যান্ডেলা তার থেকেও বেশি কিছু অর্জন করেছেন। তিনি অন্যদের স্বাধীনতার জন্য নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘আজ তিনি চলে গেছেন এবং আমরা হারিয়েছে সবচেয়ে প্রভাবশালী, সাহসী ও সুগভীর ভালো মানুষটিকে।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘পৃথিবীর একটি মহান বাতি নিভে গেছে। ম্যান্ডেলা ছিলেন আমাদের সময়ের হিরো।’
বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটু বলেন, ‘মাদিবা ১৯৯০ সালে যখন জেল থেকে বের হন তখন তিনি ছিলেন মাটির নিচে মহামূল্যবান হীরার মতোই নিখুঁত। তিনি রক্তের বদলা রক্ত নিতে চাননি। এর পরিবর্তে তিনি ক্ষমা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে অসাধারণ মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ‘ন্যায়বিচারের মহীরুহ ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি ছিলেন গোটা বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণা।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ এবং সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠকরা একজন মহান নেতাকে হারিয়েছেন। স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য তার প্রচণ্ড আবেগ সারা বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের জন্য আশার সঞ্চার করেছে। তার কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা আজ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ।’
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল বলেন, ‘নেলসন ম্যান্ডেলার অহিংস রাজনীতির উত্তরাধিকার এবং সব ধরনের বর্ণবাদের নিন্দা বছরের পর বছর বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।’
বাংলাদেশে নেলসন ম্যান্ডেলা
বিশ্ববরেণ্য এই নেতার আগমন ঘটেছিল বাংলাদেশেও। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উত্সবে অংশ নিতে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ তিনি ঢাকায় আগমন করেন। সেই সময় আরও এসেছিলেন ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেদা ইয়াসির আরাফাত ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল। তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত শিখা চিরন্তন উদ্বোধন করবেন।
বাংলাদেশের মানুষ তার সেই ঐতিহাসিক সফরকে স্মরণে রেখেছে। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত শোক পালনকালে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
রাষ্ট্রপতির শোক
বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গতকাল এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাকে সুবিশাল ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে বিশ্ব অন্যতম এক প্রভাবশালী ও সাহসী নেতাকে হারালো।
আবদুল হামিদ বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলা জনগণের মুক্তি অর্জন ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তার দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলার পরিবার ও দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের প্রতি তার গভীর শোক জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ও বিংশ শতাব্দীর রাজনীতির বিশাল ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ এক শোকবার্তায় ম্যান্ডেলাকে মানবজাতির একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার মৃত্যুতে শান্তি, স্বাধীনতা ও সাম্যের জন্য নিরলস সংগ্রামী এক জীবনের অবসান হলো।
খালেদা জিয়ার শোক প্রকাশ
ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক মর্যাদা এবং সব মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠায় তিনি অপরিসীম সাহস দেখিয়েছেন। এই সর্বজনীন মূল্যবোধে যারা বিশ্বাস করেন তাদের কাছে তিনি চিরকাল অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে বিশ্ব হারিয়েছে এক মহান রাষ্ট্রনায়ককে।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন