শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

পঙ্কজ-সুজাতা বাংলাদেশীদের মুখ বিস্বাদ করে দিয়েছেন

১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, শুক্রবার, ১০:৪০
একজন মানুষের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী শোকের এমন বহিঃপ্রকাশ আগে মাত্র একবারই দেখেছিলামÑ ১৬ বছর আগে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুতে। সব জনমত অনুযায়ী সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রিটিশ রাজনীতিক ছিলেন স্যার উইনস্টন চার্চিল। ১৯৬৫ সালে তার শবযাত্রার ধারাবিবরণী প্রচারের সুযোগ আমার হয়েছিল। কিন্তু তখনো সাধারণ মানুষ কিংবা মিডিয়ার মধ্যে এমন ব্যাপক শোক, এমন আবেগ আর এমন আগ্রহ দেখিনি, যেমন দেখেছি নেলসন ম্যান্ডেলার মহাপ্রয়াণে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার (ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত) শাসকেরা সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শাসন ও শোষণ চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে অ্যাপার্থাইড (বর্ণভেদ) পদ্ধতি চালু করেছিলেন। তারা ‘পাস ল’ জারি করে পাসবুক ছাড়া কৃষ্ণাঙ্গদের শ্বেতাঙ্গ বসতি এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তরুণ আইনজীবী নেলসন ম্যান্ডেলা এবং আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) দল প্রথমে আইনের সাহায্যে এবং পরে গান্ধীর মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তাদের সহিংস গেরিলা যুদ্ধ শুরু করতে হয়। ম্যান্ডেলা ও তার সহকর্মীরা গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাবাসের বিপুল গরিষ্ঠ অংশ ম্যান্ডেলা রোবেন দ্বীপে বন্দী ছিলেন। দিনের বেশির ভাগ সময় তাকে পাথর ভেঙে কুচি তৈরি করতে হয়েছে।
ম্যান্ডেলার অসহনীয় নির্যাতন ভোগ এবং আফ্রিকানদের অমানুষিক অবিচার বিশ্বমানবতার অন্তর স্পর্শ করেছিল। ম্যান্ডেলার মুক্তির ও অ্যাপার্থাইড পদ্ধতির অবসানের দাবিতে বহু দেশে আন্দোলন শুরু হয়। এসব দাবির সপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপের দাবি ওঠে সর্বত্র। কিন্তু সাবেক সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার ও প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে দাবি মেনে নেয়নি। তারা অ্যাপার্থাইড সরকারকে সমরাস্ত্রসহ যাবতীয় উপকরণ সরবরাহ করে যায়। সেসব অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যা করে চলে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। লন্ডনে-নিউ ইয়র্কে ছাত্রজনতা দিনের পর দিন অবরোধের দাবিতে প্রায়ই সহিংস আন্দোলন করে। ব্রিটিশ লেবার দলীয় সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী পিটার হেইন ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিপ্লবী লেখক তারিক আলী সে আন্দোলনেই খ্যাতি লাভ করেন। টোরিদলীয় প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ঘৃণাভরে তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় এএনসিকে সন্ত্রাসী দল বলে ঘোষণা করেন। বর্তমান টোরিদলীয় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সে সময় একটি ব্রিটিশ কোম্পানির হয়ে বাণিজ্যিক অর্ডারের তদবির করতে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার পরবর্তী সময়ে তার সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ম্যান্ডেলাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। ম্যান্ডেলার প্রয়াণে ডেভিড ক্যামেরন তার মৃত্যুকে সর্বোজ্জ্ব¡ল একটি আলোকবর্তিকা নিভে যাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ম্যান্ডেলাকে তার অনুপ্রেরণার উৎস বলে বর্ণনা করেছেন। ওবামা বলেছেন, ম্যান্ডেলার কথা মনে হলেই ব্যক্তি হিসেবে তার আরো ভালো হতে ইচ্ছে করে। ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জোহানেসবার্গের বিশ্বকাপ ফুটবল স্টেডিয়ামে ম্যান্ডেলার স্মৃতি অনুষ্ঠানে ৯০ হাজারেরও বেশি লোক যোগ দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। মুষল বৃষ্টি সত্ত্বেও ৫০ হাজারের বেশি লোক এসেছিলেন। সেখানে বাঘে-ছাগলে যেন এক ঘাটে পানি খেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা আর আমেরিকার চিরশত্রু কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো মুখোমুখি হয়েছেন, করমর্দন করে কথা বলেছেন এবং একই মঞ্চ থেকে ম্যান্ডেলার উদ্দেশে শ্রদ্ধানিবেদন করেছেন। তিনজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ আর জিমি কার্টার যোগ দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। যোগ দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং তিনজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, টোনি ব্লেয়ার ও জন মেজার।

ম্যান্ডেলার প্রতি বিশ্বমানবের শ্রদ্ধার্ঘ্য
প্রায় ১০০ দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। প্রেসিডেন্ট ওবামা ও প্রেসিডেন্ট ক্যাস্ট্রো ছাড়াও চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্রাজিল ও ভারতের রাষ্ট্রপতিরা ভাষণ দিয়েছেন সে অনুষ্ঠানে। রোববার ১৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব ট্র্যানস্কি প্রদেশে ম্যান্ডেলার পিতৃগ্রামে তাকে সমাহিত করা হবে। ম্যান্ডেলার কারাজীবনের প্রায় ২০ বছর তাকে পাহারা দিয়েছেন উগ্র অ্যাপার্থাইডপন্থী শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার গ্রেগরি। তিনি তার বইতে লিখেছেন, কারামুক্তির মুহূর্তে ম্যান্ডেলা করমর্দনের জন্য তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি ভুলব না’। গ্রেগরি লিখেছেন, তিনি তখন কান্না চেপে রাখতে পাারেননি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ম্যান্ডেলার অভিষেকে গ্রেগরি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
কারাভোগের শেষের বছরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ছিলেন এফ ডব্লিউ ডি কের্ক। শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে গিয়ে ডি কের্ক বলেছেন, কারামুক্ত হয়ে ম্যান্ডেলা তার অফিসে এলেন। তাকে দেখেই ডি কের্কের মনে হয়েছিল যে, লোকটিকে তার ভালো লাগবে। ম্যান্ডেলা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা এক দেশে আছি, আমাদের একসাথে (মিলেমিশে) কাজ করতে হবে। ডি কের্ক নাকি তখনই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু ম্যান্ডেলা চার বছর পরের নির্বাচন পর্যন্ত তাকে স্বপদে বহাল থাকতে অনুরোধ করেন। ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চাননি। দলের ও দেশের পীড়াপীড়িতে এক মেয়াদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করলেও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি কিছুতেই প্রেসিডেন্ট হতে রাজি হননি। মঙ্গলবারের স্মৃতি অনুষ্ঠানে ডি কের্কও উপস্থিত ছিলেন। এই হচ্ছে একটা মানুষের একটা পরিমাপ। তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত (এফ ডব্লিউ ডি কের্কের সাথে যৌথভাবে) করে নোবেল কমিটি অবশ্যই নিজেদের ধন্য মনে করেছিল। নিজের পরিবর্তে অন্য কাউকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে বলে যারা মেয়েশিশুর মতো কান্নাকাটি করে সব কিছু ভেঙেচুরে তছনছ করে দেন, তারা কি নিজেদের ম্যান্ডেলার নখের তুল্য বলেও মনে করেন? নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তখন প্রথম মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। সে সময় এক কলামে তাকে ম্যান্ডেলার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কি কখনো নিজের কথা ছাড়া আর কারো কথা শোনেন? ম্যান্ডেলার মাহাত্ম্যের একটু হাওয়াও কি তাদের গায়ে লেগেছে? ম্যান্ডেলা মহামানব ছিলেন এ কারণে যে, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা নয়, ক্ষমা ও সমঝোতাকে তিনি জীবনের আদর্শ করে তুলেছিলেন। ক্ষমা ও সমঝোতা শব্দ দুটো যে অভিধানে আছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জানে বলে মনে হয় না। ম্যান্ডেলার স্মৃতিতে বাংলাদেশ সরকার তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ম্যান্ডেলাকে অনুসরণ করলেই বলা যাবে, আন্তরিকতা আছে এই কর্মসূচিতে।

হাসিনার রাজনীতি এবং সুজাতার উসকানি
বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজেদের বর্তমান দেখে এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে শোকাপ্লুত। শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ নির্বাচনে রাজি নন, অতএব সংলাপের পথেও তারা যাবেন না। তারা জানেন এবং গোটা বিশ্ব জানে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় অনিবার্য। হাসিনা গোঁ ধরে বসে আছেন মধ্যযুগীয় রাজা-বাদশার মতো : লোকে সমর্থন করুক কী না-ই করুক  সিংহাসনে বসে থাকব। ভারত ছাড়া আর কেউ তাকে সমর্থন করছে না। ভারত অবশ্যই সে মূল্য আদায় করে নিচ্ছে এবং নেবে। তারা বাংলাদেশের সড়ক, নৌ, রেলপথ ও সমুদ্রবন্দরগুলো বিনামূল্যে আদায় করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া সে ‘উপহার’ আর কেউ ভারতকে দেবে না। সুতরাং যেকোনো মূল্যে দলটিকে গদিতে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত সরকার।
মনে হচ্ছে, সে প্রক্রিয়া অনুসারে ভারত সব দিক দিয়ে বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এক দিনের সফর করে গেছেন। তার পিতা ষড়যন্ত্র করে সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সুজাতা নিজে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম আদায় করে নিয়েছিলেন। চাণক্যের উপযুক্ত শিষ্যা তিনি। অবশ্যই তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আরো উসকানি দিয়ে যেতে। সুজাতা বলে গেছেন, যেসব দল অংশ নিতে রাজি আছে তাদের নিয়ে নির্বাচন করলেই সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। একই দমে তিনি বলেছেন, ‘সেটা বাংলাদেশের মানুষই স্থির করবে।’
সুজাতা আরো বলেছেন, গণতন্ত্র একেক দেশে একক রকম হয়। বাংলাদেশের মানুষ, কিন্তু জানে গণতন্ত্র মানেই হলো, গণতন্ত্র। তারা জানে স্ট্যালিনের একদলীয় নির্বাচনকে গোটা বিশ্ব গণতন্ত্র বলে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি এবং সে জন্যই অর্ধশতাব্দীজুড়ে বিশ্বব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধ হয়েছিল। অবশ্যি সুজাতার দেশ ভারত সে অর্ধ শতাব্দী ধরে স্বৈরতন্ত্রী স্ট্যালিন ও তার উত্তরসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের লেজুড় ছিল। বাংলাদেশের মানুষের আরো মনে আছে, আইয়ুব খানের কনভেনশন মুসলিম লীগের নির্বাচন কিংবা ‘বুনিয়াদি গণতন্ত্রকে’ গণতন্ত্র বলে মানতে তারা রাজি হয়নি। আজো তারা গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায়, সুজাতা সিংয়ের মতলবি গণতন্ত্র নয়।

বিজেপি ও জামায়াতে ইসলামী
সুজাতা সিং তার গণতন্ত্রের সপক্ষে বলে গেছেন, শেখ হাসিনা গদিতে না থাকলে বাংলাদেশ ‘ইসলামী সন্ত্রাসী’ হয়ে যাবে। ভারত সরকার এমনই অন্ধ হয়ে গেছে যে, প্রকৃত পরিস্থিতি তাদের চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ধর্মভীরু মুসলমান। তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দাড়ি রাখে আর টুপি পরে মসজিদে যায় এবং এ দেশে ধর্মীয় রাজনীতি আছে। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী আছে, যেমন ভারতে আছে বিজেপি, শিব সেনা প্রমুখ হাজারো উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল। তাদের কেউ কেউ ২০ কোটি মুসলমানকে ভারতের নাগরিক বলে স্বীকার করতে রাজি নয়। ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভাঙায় বড় ভূমিকা ছিল বিজেপির। সে দলের শীর্ষনেতারা নিজের হাতে মসজিদ ভেঙেছেন। ২০০২ সালে গুজরাটের বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উৎসাহ ও সাহায্যে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় দুই হাজার মুসলমান প্রাণ হারান।
মোদি তার তদন্ত কিংবা বিচার করেননিÑ যেমন বাংলাদেশ সরকার বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। শেষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টই এই দাঙ্গা আর মোদির ভূমিকা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজো নরেন্দ্র মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকার করছে। আগামী বছরের নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলে নরেন্দ্র মোদি হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেই ভারতের মুখে বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির নিন্দা পরিহাসের মতোই শোনায়। প্রকৃত পরিস্থিতি হচ্ছে, বর্তমান সরকার তার বিদেশী মুরব্বিদের মনোরঞ্জনের জন্য মুসলিম নির্যাতন করে দেখাতে চাইছে যে, তারা সন্ত্রাস দলন করছেন। ওদিকে যতই নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, বাংলাদেশী মুসলমানের ধর্মীয় অনুরাগ ততই বেড়ে চলেছে। এ সরকার গদিতে আসার আগে তো হেফাজতে ইসলাম বলে কোনো আন্দোলন বাংলাদেশে ছিল না!
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের অবাঞ্ছিত ও অশোভন হস্তক্ষেপের সমালোচনা অনেকে করেছেন। অন্যরা অবিশ্বাস আর ক্ষোভে মুখ ফিরিয়ে আছেন। তার ওপর ‘রঙের ওপর রসান চড়ালেন’ সুজাতা সিং। পঙ্কজ শরণ ও সুজাতা সিংয়ের  বোঝা উচিত, ভারতের আধিপত্যবাদ এবং সাম্প্রতিক অন্যায় হস্তক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের মানুষের মুখ বিস্বাদ হয়ে আর মন বিষিয়ে গেছে। দুই বছর আগে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মন বিষিয়ে দিচ্ছে। সেটা কতটা সত্যি জানি না, কিন্তু ইদানীং অন্যদের গোপন এবং পঙ্কজ শরণ ও সুজাতা সিংয়ের প্রকাশ্য ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষের মন বিষয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সে কাজে আর জামায়াতে ইসলামীকে কিছু করতে হবে না।

অশুভ জন্মলগ্ন!
আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে একটা ‘অশুভ প্রেতাত্মা’ যেন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে তারিখটাÑ ২৩ জুন ১৯৪৮Ñ ছিল পলাশী যুদ্ধের বার্ষিকী। ১৭৫৭ সালের ওই একই তারিখে পলাশীর আম্রকাননেই মীর জাফর ও তার সহষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার স্বাধীনতা ইংরেজের হাতে তুলে দিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের এবং তার উত্তরসূরি বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে তাদের জীবনের মূল ব্রত বলে স্বীকার করে নিয়েছে। এ দেশের জনতার আন্দোলনেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিব মুক্তি পেয়েছিলেন।
একাত্তরে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের চলে গেলেন। এদিকে বাংলাদেশের জনতা তার অনুপস্থিতিতেই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। অবশ্যি মুজিবের সপক্ষে বলতেই হবে, একাত্তরে তাজউদ্দীন আহমদের সাথে ভারতের সাত দফা চুক্তি মেনে নিতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী তুলে নিতে ইন্দিরা গান্ধীকে বাধ্য করেছিলেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান নেত্রী কি দেশের মানুষকে বিশ্বাস করেন না? তিনি জনতার স্বার্থ ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে গেছেন।
আওয়ামী লীগের চরিত্রের আরেকটা ত্রুটি, তারা ফাঁকা মাঠে রাজনীতি করতে ভালোবাসে। স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনীকে দিয়ে ৪০ হাজার সমালোচক ও বিরোধীকে হত্যা করা হয়েছিল। ৩০০ সদস্যের সংসদে মাত্র চার-পাঁচজন সদস্য মুজিবের সমালোচক ছিলেন। সেটাও সহ্য হয়নি। একদলীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কথা ভুলে গিয়ে তিনি মধ্য মেয়াদে বিভাজক নির্বাচন করেছিলেন। পত্রপত্রিকায় অশাসন-কুশাসনের সমালোচনা হচ্ছিল। তিনি সব বেসরকারি পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিলেন। তিনি রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একদলীয় ব্যবস্থায় আজীবন রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গোড়া থেকেই বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধী ও সমালোচকদের বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুম-খুন করছে, হাজার হাজার লোককে কয়েদ করে রেখেছে। বিরোধী দলের সমর্থক পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিয়ে, ১৯ জন সাংবাদিকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এবং মাহমুদুর রহমানসহ সমালোচকদের মিথ্যা মামলায় বন্দী করে বিরোধী দলের বাকরোধ করেছে। ওদিকে গৃহপালিত মিডিয়া দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বিরোধী দল এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে চলেছে। বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাইকেই মিথ্যা মামলায় জেলে পুরে রাখা হয়েছে। এভাবে তারা নির্বাচন করতে চায়, এটাকে তারা রাজনীতি বলে। আপনাদের কি নিচের কবিতাটির কথা মনে পড়ে না?
‘বাবুরাম সাপুড়ে/কোথা যাস বাপুরে/ আয় বাবা দেখে যা/ দুটো সাপ রেখে যা/ যে সাপের দাঁত নেই, চোখ নেই/ করে নাকো ফোঁস-ফাঁস/ মারে নাকো ঢুঁস-ঢাঁস/ সেই সাপ জ্যান্ত/ গোটা দুই আন তো/ তেড়ে মেরে ডাণ্ডা/ করে দিই ঠাণ্ডা।naya diganta

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন