শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে দেড় শতাধিক প্রার্থী

ফারুক হোসাইন : আওয়ামী লীগ সরকারের একতরফা নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিকসংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এই প্রথম কোন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক দেড় শতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ১০৫টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, দেড়শ’ আসনে কমিশনকে নির্বাচন করতে হবে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে একক প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর যাচাই বাচাই শেষে একক প্রার্থী হিসেবে বৈধতা পান ৩৩ জন প্রার্থী। সর্বশেষ গতকাল (শুক্রবার) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সারাদেশে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রায় দেড় শতাধিক প্রার্থী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন ৭ জন প্রার্থী। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ৩০০টি সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো রিপোর্ট হতে এ তথ্য জানা যায়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারের একতরফা নির্বাচনে ৪৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। বিএনপির ওই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ৪১টি রাজনৈতিক দল। তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ১ হাজার ৪৫০ জন প্রার্থী এবং মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ১ হাজার ৯৮৭ জন প্রার্থী। কিন্তু বর্তমান শেখ হাসিনার অধীনে হতে যাওয়া নির্বাচনে অংশ নেয়া দলের সংখ্যা ১৪টি। যদিও প্রথমে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচনের পরিবেশ নেই এবং সব দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ.এম. এরশাদ। এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ১০৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলে যাচাই বাচাইয়ে ২৬০ জন প্রার্থী বাতিল হয়। আপিল শুনানি শেষে ৩৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পান। সব মিলিয়ে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮০ জন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কারণে শতাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকা থেকে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রায় দুইশতাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করছে নির্বাচন কমিশন। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে সরকার একদলীয় বা একতরফা নির্বাচন দিয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করল। দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষকদের কাছে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সরকারের অনড় অবস্থান রাজনৈতিক সংঘাত ও সংকটের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
ঢাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম (ঢাকা-২), নসরুল হামিদ বিপু (ঢাকা-৩), ফজলে নুর তাপস (ঢাকা-১০), আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২), জাহাঙ্গীর কবীর নানক (ঢাকা-১৩ ), ডা. এনাম (ঢাকা-১৯ ), এম.এ. মালেক (ঢাকা-২০)। এছাড়া সারাদেশে মো. দবিরুল ইসলাম (ঠাকুরগাঁও-২), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), টিপু মুন্সী (রংপুর-৪), আহসানুল হক চৌধুরী (রংপুর-২), এইচ.এন. আশিকুর রহমান (রংপুর-৫), নুরুজ্জামান আহমেদ (লালমনিরহাট-২), ওমর ফারক চৌধুরী (রাজশাহী-১), ফজলে হোসেন বাদশা (ওয়ার্কার্স পার্টি) (রাজশাহী-২), এনামুল হক (রাজশাহী-৪), মো. আবুল কালাম (নাটোর-১), মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল (নাটোর-২), মো. আব্দুল কুদ্দুস (নাটোর-৪), মো. নাসিম (সিরাজগঞ্জ-১), মো. হাবিবে মিল্লাত (সিরাজগঞ্জ-২), মো. ইসহাক হোসেন তালুকদার (সিরাজগঞ্জ-৩), তানভীর ইমাম (সিরাজগঞ্জ-৪), মো. হাসিবুর রহমান স্বপন (সিরাজগঞ্জ-৬), শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), শেখ হেলাল উদ্দিন (বাগেরহাট-১), মীর শওকত আলী বাদশা (বাগেরহাট-২), তোফায়েল আহমেদ (ভোলা-১), আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (ভোলা-৪), আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ (বরিশাল-১), আমির হোসেন আমু (ঝালোকাঠি-২), এ.কে.এম.এ. আউয়াল (সাঈদুর রহমান) (পিরোজপুর-১), আমানুর রহমান খাঁন রানা (টাঙ্গাঈল-৩), প্রমোদ মানকিন (ময়মনসিংহ-১), শরীফ আহমেদ (ময়মনসিংহ-২), আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন (ময়মনসিংহ-৯), সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১), রেজওয়ান আহমদ তৌফিক (কিশোরগঞ্জ-৪), মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২), মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সিগঞ্জ-৩), আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), রাজি উদ্দিন আহমেদ (নরসিংদী-৫), মো. নজরুল ইসলাম বাবু (নারায়নগঞ্জ-২), শামীম ওসমান (নারায়নগঞ্জ-৪), কাজী কেরামত আলী (রাজবাড়ী-১), মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১), খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ফরিদপুর-৩), নূর-ই-আলম চৌধুরী (মাদারীপুর-১), শাজাহান খান (মাদারীপুর-২), আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম (মাদারীপুর-৩), বি.এম. মোজাম্মেল হক (শরীয়তপুর-১), শওকত আলী (শরীয়তপুর-২), নাহিম রাজ্জাক (শরীয়তপুর-৩), মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভী বাজার-৪), অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (কুমিল্লা-৭), আ.হ.ম. মুস্তফা কামাল (কুমিল্লা-১০), ড. মহিউদ্দিন খাঁন আলমগীর (চাঁদপুর-১), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (চাঁদপুর-২), ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩),ড. মো. শামছুল হক ভূইয়া (চাঁদপুর-৪), মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (চাঁদপুর-৫), নিজাম উদ্দিন হাজারী (ফেনী-২), মোরশেদ আলম (নোয়াখালী-২), ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), এ.কে.এম. শাহজাহান কামাল (লক্ষীপুর-৩), ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (চট্টগ্রাম-১), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬), মো. হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), মাঈন উদ্দীন খান বাদল (জাসদ) (চট্টগ্রাম-৮), আফসারুল আমিন (চট্টগ্রাম-১০), নজরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), আবুল মাল আব্দুল মুহিত (সিলেট-১), কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩), মো. ফজলে রাব্বি মিয়া (গাইবান্ধা-৫), আব্দুল মান্নান (বগুড়া-১), শরিফুল ইসলাম জিন্না (জাতীয় পার্টি) (বগুড়া-২), মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার (জাতীয় পার্টি-জেপি) (বগুড়া-৩), মো. হাবিবুর রহমান (বগুড়া-৫), মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী (চাপাইনবাবগঞ্জ-১), মো. আব্দুল ওয়াদুদ (চাপাইনাবাবগঞ্জ-৩), মো. ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬), তালুকদার আব্দুল খালেক (বাগেরহাট-৩), আব্দুল হাফিজ মল্লিক (বরিশাল-৬), আনোয়ার হোসেন (পিরোজপুর-২), মো. আব্দুর রাজ্জাক (টাঙ্গাইল-১), আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৪), মো. একাব্বর হোসেন (টাঙ্গাইল-৭), শওকত মোমেন শাহজাহান (টাঙ্গাইল-৮), সালাইদ্দিন আহমেদ মুফতি (ময়মনসিংহ-৫), মো. সোহরাব উদ্দীন (কিশোরগঞ্জ-২), মো. আফজাল হোসেন (কিশোরগঞ্জ-৫), নজমুল আহসান পাপন (কিশোরগঞ্জ-৬), জাহিদ মালেক (মানিকগঞ্জ-৩), মো. জাহিদ আহসান রাসেল (গাজীপুর-২), মো. রহমত আলী (গাজীপুর-৩), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর-৫), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (নরসিংদী-৪), সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (ফরিদপুর-২), সৈয়দ মোহসিন আলী (মৌলভীবাজার-৩), আশেক উল্লাহ রফিক (কক্সবাজার-২) ও সাইমুম সরওয়ার কমল (কক্সবাজার-৩)।
এদিকে কমিশনের উপ সচিব ফরহাদ আহমেদ খান গতকাল জানান, যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন তাদের বাদ দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখন প্রকাশ করা হবে। কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবে ইসি। আজ দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় আসলেও এখন নির্বাচন কমিশনের জন্য বিষয়টি জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। গতকাল সন্ধ্যায় ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। দলের প্রতীক বরাদ্দ ও প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান সিইসি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পাঠানো চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তা করবেন আইন মোতাবেক। আমরা বলে দিয়েছি, সে মোতাবেক করবেন। চলমান সংলাপ ও বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কাজী রকিব বলেন, ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ সব সময় থাকবে। সবাই যদি বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্তে আসেন উনারাই বলে দিবেন কীভাবে আমরা অগ্রসর হবো।from Daily inkilab

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন