তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার অতিগোপনে দেশ ছেড়ে কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করেও শাহজালাল বিমানবন্দরে পুলিশের বাধার কারণে যেতে পারেননি। শনিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের ঘোষিত মহাসমাবেশ ঠেকাতে ইমরান এইচ সরকারকে সরকার মাঠে রাখতে চায় বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করেছেন।
ডা. ইমরান কোনোভাবে বিদেশে যেতে পারলে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে না পারলে তিনি আগামী কয়েক বছর দেশে ফিরবেন না বলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।
এ নিয়ে অনলাইন নিউজ এজেন্সি ‘এ ওয়ান নিউজ’ খবর প্রকাশ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে।
এদিকে শাহবাগি আন্দোলনের ১১ নেতা কানাডার ভিসা পেয়েছেন বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে।
এছাড়া গায়ক প্রীতম আমেরিকার, ব্লগার অমি রহমান পিয়াল কানাডার, নির্ঝর মজুমদার আমেরিকার, রাকিবুল বাশার ফিনল্যান্ডের, মারুফ রসুল লন্ডনের, দেওয়ান তকি ফ্রান্সের, ইয়াসিন ফিদা হোসেন আমেরিকার, মাহমুদুল হক মুন্সী আমেরিকার ভিসার জন্য চেষ্টা করছেন বলে এসব মাধ্যমে বলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঘোষিত তফসিল বাতিল দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের লাগাতার নজিরবিহীন আন্দোলনে ভীত হয়ে নিরপেক্ষতাহীনতার অজুহাতে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ শাহবাগি আন্দোলনের নেতারা।
তাছাড়া ব্লগে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগারদের ফাঁসিসহ ১৩ দফা আন্দোলনের দাবিতে ফের আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় হেফাজতের মহাসমাবেশ করার ঘোষণায়ও শাহবাগি আন্দোলনের নেতারা আতঙ্কিত বলে জানা গেছে।
তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা দেশ ছাড়তে চাইছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জল্পনা-কল্পনা চলছিল।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপদ মনে করছেন। তাদের কারণেই দলের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে মনে করছেন গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অন্যতম সহযোগী, পৃষ্ঠপোষক, সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ। তাদের কারণেই পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতা।
আওয়ামী লীগের এসব নেতা মনে করছেন, বিরোধী দলের লাগাতার আন্দোলনের মাঝে হেফাজতসহ ইসলামপন্থীরা মাঠে নামলে শাহবাগি আন্দোলনের নেতারা টার্গেট হতে পারেন, তখন তাদের রক্ষায় প্রশাসন আগের মতো আন্তরিক নাও হতে পারে। এসব চিন্তা থেকে দলটির অনেক নেতাই চাইছেন, গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা আপাতত বিদেশে চলে যাক।
এসব কারণে শাহবাগি আন্দোলনের নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকার দেশ ছেড়ে কানাডায় যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ডা. ইমরান এইচ সরকার তাকে বিদেশে যেতে বাধা দেয়া হলো কেন—এ বিষয়ে পুলিশের কাছে জানতে চাইলেও তাকে কোনো উত্তর দেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আপনাকে দেশের বাইরে যেতে না দেয়ার জন্য উপরের নির্দেশ রয়েছে।’
ডা. ইমরানের ঘনিষ্ঠ গণজাগরণ মঞ্চের এক কর্মী অভিযোগ করেন, নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজত ১৩ দফা বাস্তবায়নের নামে নতুন করে ‘নৈরাজ্য’ সৃষ্টি করতে চাইছে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর সংগঠনটি সমাবেশ কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছে। হেফাজত মাঠে নামলে গণজাগরণ মঞ্চকেও সরকার মাঠে চায়। এজন্যই সরকার ডা. ইমরানকে আপাতত দেশের বাইরে যেতে দিতে চাইছে না।
এ ব্যাপারে ওসি ইমিগ্রেশন বেল্লাদ হোসেন জানান, রাত ১০টার আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি-না তা আমার জানা নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে কথিত গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে আন্দোলন করে দেশজুড়ে নিন্দিত হন ডা. ইমরান।
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের ব্যানারে এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার শাহবাগে রাস্তা বন্ধ করে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয়। আওয়ামী মিডিয়ার প্রচারের বদৌলতে অল্পদিনেই আন্দোলন দেশ-বিদেশে আলোচনায় উঠে আসে। আন্দোলনকারীদের তিন-চার স্তরের নিরাপত্তা দেয় সরকার। পাশাপাশি সরবরাহ করা হয় বিরিয়ানির হাজার হাজার প্যাকেট। ইমরান এইচ সরকার তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেন।
এ অবস্থায় আমার দেশসহ দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশ হয় ব্লগারদের জঘন্য আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী লেখা। তাদের ফাঁসির দাবিতে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম নামের অরাজনৈতিক সংগঠনের। ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম মহাসমাবেশ করে সংগঠনটি। একই রাতে ঘুমন্ত ও জিকিররত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।amerdesh
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন