রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৩

১৫ নভেম্বর শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ : হাটহাজারীতে লক্ষাধিক তৌহিদি জনতার সমাবেশে আল্লামা শফীর ঘোষণা

 

আগামী ১৫ নভেম্বর ফের রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পার্বতীপুর হাইস্কুল মাঠে হেফাজতের বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে ১৫ নভেম্বরের এ মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বাধা দিলে পরে হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হাটহাজারীর মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। একই সঙ্গে শাপলা চত্বরের ১৫ নভেম্বর এ মহাসমাবেশের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ৭ নভেম্বর সিলেট, ৮ নভেম্বর খুলনায় মহাসমাবেশ করার পাশাপাশি সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন হেফাজত নেতারা।
মহাসমাবেশে অবিলম্বে শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার, রাসুলের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী ব্লগার ও নাস্তিকদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি জানানো হয়। অন্যথায় এদেশের সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদি জনতা তাদের ঈমানি শক্তি দিয়ে ওইসব নাস্তিক-মুরতাদদের কঠোরহস্তে প্রতিহত করবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
গতকালে হাটহাজারীর এ মহাবেশে লাখো আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার ঢল নামে। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন দেশ শীর্ষ আলেম ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। মহাসমাবেশ থেকে আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ইসলাম ও সত্য কথা লেখার কারণে আটক রাখা হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন হেফাজতের নেতারা। অন্যথায় বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
প্রসঙ্গত মতিঝিলের শাপলা চত্বরেই ব্লগে আল্লাহ, রাসুল (স.) ও পবিত্র কোরআন নিয়ে অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় কটূক্তির দায়ে নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসিসহ ১৩ দফা দাবিতে গত ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ও পরে ৫ মে ঢাকা অবরোধের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের বিশাল জনসমাগম ঘটিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি। তবে ৫ মে’র সমাবেশ লাখ লাখ আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার ওপর রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খল বাহিনী বর্বর গণহত্যা চালালে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এ গণহত্যার পর হেফাজতে ইসলাম ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও গত ছয় মাসে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। তবে ১৫ নভেম্বর আবারও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে নতুন করে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশের ঘোষণা দিল হেফাজত।
গতকাল হাটহাজারীর মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতের নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে শাপলা চত্বর থেকে আলেম-ওলামাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেই শাপলা চত্বরেই আবার তারা জমায়েত হবেন। এই সমাবেশে বাধা দিলে সরকারকে এর কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আইন পাস থেকে সরকারকে বিরত থাকা, উলামা-মাশায়েখ ও কওমি মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ও কটূক্তি বন্ধ, সংসদ বহাল থাকতেই সংবিধান সংশোধন করে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর কটূক্তিকারীদের ফাঁসির আইন পাস, ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও দমন-পীড়ন বন্ধ করাসহ ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল হাটহাজারীতে ওই মহাসমাবেশ করা হয়।
গতকালের মহাসমাবেশে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। দেশ বর্তমানের চেয়ে অনেক ভালো চলবে। আমাদের ১৩ দফায় কোনো মারামারি, হানাহানি, মিথ্যাচার, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী নেই। ওলামায়ে কেরাম সবসময় দুর্নীতি, মিথ্যাচার, সন্ত্রাস, হানাহানি ও জোর-জুলুমের বিরুদ্ধে। ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে দেশের শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার পাবে। গামেন্টকর্মীরা তাদের নিরাপত্তা, ন্যায্য বেতন-ভাতাসহ তাদের সব অধিকার ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও কর্তাব্যক্তিরা মিথ্যাচার ও কটূক্তি করে যাচ্ছেন। আমি যা বলেছি, তা ঠিকমত প্রকাশ না করে তারা মিথ্যা ও কারসাজির আশ্রয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমি মহিলাদের ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছি। রানীর সঙ্গে তুলনা করেছি। তারা মায়ের জাত। ওলামায়ে কেরাম সবসময় নারী জাতির সম্মান, ইজ্জত ও নিরাপত্তার কথা বলে থাকেন। ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে, কোনো ধর্ম সে সম্মান দেয়নি।
হেফাজতের আমির বলেন, আমাদের ঈমানি আন্দোলনে শাপলা চত্বরসহ সারাদেশে যারা শহীদ হয়েছেন, জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের আল্লাহ কবুল করুন।
তিনি একই সঙ্গে বলেন, ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে দেড় লাখ গুলি খরচ হয়েছে। কতজন আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ নবীপ্রেমিকদের হত্যা করেছেন, তার হিসাব সরকারের কাছে আছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি জানাচ্ছি।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী সরকারের সাম্প্রতিক কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাসের উদ্যোগের প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের শর্ত মেনে যদি সনদ দেয়া হয়, তবে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সনদের কোনো উল্লেখ না করে সরকার কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং দেশ থেকে ইসলামী শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য আইন পাস করতে চাচ্ছে। ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ও বিধ্বংসী আইন পাস করতে দেবে না।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, রাউজান, ফতেয়াবাদ, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মিরেরসরাই, রাঙামাটি, রামগড়, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষাধিক ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতা, সাধারণ মানুষ, আলেম-ওলামা এ মহাসমাবেশে যোগ দেয়।
এ সময় জনস্রোতে পরিণত হাটহাজারী এলাকা। ওলামা-মাশায়েখ, কওমি মাদরাসা ও তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে মহাজোট সরকারের ষড়যন্ত্র ও ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাস ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে মহাসমাবেশ এলাকা।
একই সঙ্গে তৌহিদি জনতা সরকারের ইসলাম ও দেশবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ, দুর্নীতি ও জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। এ সময় মিছিলকারীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল।
নানুপুর জামিয়া ওবাইদিয়ার পরিচালক আল্লামা সালাহউদ্দীন নানুপুরীর সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা মির ইদরীস, এম আহসান উল্লাহ ও মাহমুদ হোসাইনের পরিচালনায় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মজলুম জননেতা আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী। মহাসমাবেশে সংহতি জানিয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক আল্লামা মুফতি নূর হোসাইন কাসেমী, প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, আল্লামা আবদুল হামিদ পীরসাহেব মধুপুর, আল্লামা তাজুল ইসলাম, মাওলানা মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা সলিম উল্লাহ নাজিরহাট, মাওলানা মুঈনুদ্দিন রুহী, মাওলানা ইসহাক রাঙ্গুনিয়া, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা আহমদ দিদার, মাওলানা আনাস মাদানি, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন ঢাকা, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফি, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মুফতি আবদুল আজিজ, মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা হাফেজ ফয়সল, মাওলানা আজিজুর রহমান বাবুনগর, মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা মুহিউদ্দিন একরাম, মাওলানা ইবরাহিম শিকদার, মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা আবদুল্লাহ চারিয়া, মাওলানা ওসমান চারিয়া, মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান, মাওলানা আলমগীর প্রমুখ।
প্রধান বক্তা আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আমরা আগেও বলেছি, ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে ঈমান-আকিদার বিপক্ষে, ইসলামের বিপক্ষে এবং নাস্তিক ব্লগারসহ ধর্মদ্রোহীদের পক্ষে এভাবে অবস্থান নিয়ে কেউ ক্ষমতায় যেমন টিকে থাকতে পারবে না, তেমনি কেউ ক্ষমতায় যেতেও পারবে না। এদেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতা, আলেম-ওলামা এখন দল-মত ও ছোটখাট মতভেদ ভুলে গিয়ে ১৩ দফা ঈমানি দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। মুসলমানদের ঈমানি দৌলত ও হিম্মতের কাছে ষড়যন্ত্র করে কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, আমি আবারও পরিষ্কার বলতে চাই—হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি এদেশের অধিকাংশ মানুষের দাবি। এ দাবি গণদাবি। জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করার পরিণাম শুভ হবে না। যারা নাস্তিক ব্লগার, রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারী ধর্মদ্রোহীদের পক্ষ নিচ্ছেন, তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।
তিনি রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারী নাস্তিক ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান, ধর্ম অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে আইন পাস, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থার নীতি ফিরিয়ে আনাসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় জনগণ আপনাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
হেফাজত মহাসচিব আলেম-ওলামাদের ওপর হয়রানি বন্ধ, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং মুফতি ওয়াক্কাস, মুফতি সাখাওয়াত, মুফতি হারুনসহ গ্রেফতার করা আলেম-ওলামাদের মুক্তির দাবি জানান।
মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ইসলাম ও সত্য কথা তার পত্রিকায় লেখার কারণে এই সরকার তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে।
তিনি অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি করে বলেন, বাংলাদেশের লাখ মানুষের প্রাণপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ-এর বন্ধ প্রেস খুলে দিতে হবে, অন্যথায় বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কঠোর কর্মসূচি দেবে।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধ্বংস ও ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সরকারের অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপের নীল নকশা, অবিলম্বে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস, ইসলাম অবমাননাকারী ব্লগারদের ফাঁসি ৫, মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা ও পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার বিচার, সরকারের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন নীতি বাতিল এবং উলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়ে বক্তৃতা করেন।
বক্তারা বলেন, তৌহিদি জনতার একটাই দাবি, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই বাংলাদেশে ইহুদিদের এজেন্ট নাস্তিক-মুরতাদদের যেমন বেঁচে থাকার অধিকার নেই, তেমনি নাস্তিক্যবাদের সহায়ক ও দোসরদের ক্ষমতায় থাকারও কোনো সুযোগ নেই। এদেশের মুসলমানদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতেও ইসলাম ও নবীকে (সা.) নিয়ে জঘন্যতম কটূক্তিকারী ও ইসলামবিরোধী ধর্মহীন নাস্তিক সরকারকে বরদাস্ত করবে না, বরদাশত করা যায় না।
সমাবেশে বক্তারা শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা ও পীর আউলিয়ার এ দেশে আলেম-উলামা, ইসলামী শিক্ষা, মসজিদ-মাদরাসার বিরুদ্ধে অবস্থান, নবী (সা.) সম্পর্কে কটাক্ষ এবং ইসলামকে নির্মূলের যে কোনো ষড়যন্ত্র জীবন দিয়ে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ইসলামের মর্মবাণী না বুঝে ইহুদি-নাসারাদের এজেন্টের মতো তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদসহ ক্ষমতাসীন সরকারের কিছু মন্ত্রী-এমপি লাগামহীনভাবে উলামা-মাশায়েখ, কওমি মাদরাসা ও ইসলামবিরোধী বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে আঘাত হানছেন।
তারা বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, ইসলাম ও রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বন্ধ, শাপলা চত্বরের গণহত্যায় দায়ী এবং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক চক্রের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হওয়া ছাড়া ফুঁসে ওঠা উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতা ঘরে ফিরবে না। সুতরাং অবিলম্বে সরকারকে তার ইসলামবিরোধী নীতি বদল করে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নসহ আমাদের সব দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে, অন্যথায় ইসলামের দুশমন এই জালিম সরকারের পতনসহ আগামী নির্বাচনে কোটি কোটি তৌহিদি মানুষ সমুচিত জবাব দেবে।
হেফাজতে ইসলমের নায়েবে আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, বর্তমান সরকার পবিত্র ইসলাম ও ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সরকার নাস্তিক-মুরতাদদের মদতদাতা, নাস্তিকদের পক্ষ অবলম্বন করে সরকার একের পর এক ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকার নাস্তিক্যবাদের মদতদাতা হিসেবে জাতির কাছে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে।
যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ধর্ম কারও সম্পত্তি নয়। দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা নতুন করে চালু হওয়ার পর থেকেই ইসলামবিরোধীদের আস্ফাালন লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আড়ালে সারাদেশে অনাচার-ব্যাভিচার ছড়িয়ে দেয়ার অপতত্পরতা চলছে।
তিনি সরলমনা জনসাধারণ প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন পরিষ্কার বুঝে গেছে যে, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা সরকারের ছত্রছায়ায় তরুণ সমাজের আবেগকে বিভ্রান্ত করে এক জঘন্য ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
তিনি তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত না হয়ে নাস্তিক-মুরতাদ ও তাদের সহায়তাকারীদের প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারকে অবিলম্বে রাসুলের অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তিসহ সব ইসলামবিরোধী অপতত্রতা বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় ইসলামী নেতারা তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এর প্রতিরোধে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির আচরণ ও বক্তব্যে মনে হচ্ছে, মহাজোট সরকার সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সরকার ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে প্রমাণ করেছে এই সরকার তৌহিদি জনতা ও ইসলামবিরোধী। তাই বর্তমান ইসলামবিরোধী সরকার ও কুলাঙ্গার নাস্তিকদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী ক্যাডাররা মসজিদের খতিবদের নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে এই ধরনের হুমকি বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশে ইসলামের এ দুঃসময়ে যদি মুসলমানরা বসে থাকে, তবে এই মুরতাদ সরকারের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করা যাবে না।
মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ কোরবানির জন্য সর্বস্তরের তৌহিদি জনতাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পবিত্র হাদিস শরীফে আছে, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নবীজীর প্রতি মহব্বত নিজের, পরিবার-পরিজনের, ছেলে-সন্তানদের মহব্বতের চেয়ে অধিক হবে।’ অথচ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে সেক্যুলার বর্তমান মহাজোট সরকারের ছত্রছায়ায় নাস্তিক, মুরতাদ ও গোমরাহ ব্লগাররা সরাসরি মহান আল্লাহ তায়ালা, প্রিয় নবীজী, ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে নির্লজ্জভাবে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার দুঃসাহস দেখানোর সাহস পাচ্ছে। এই মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, অবিলম্বে শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার, রাসুলের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা ব্লগার ও নাস্তিকদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিতে হবে; অন্যথায় এদেশের সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদি জনতা তাদের ঈমানি শক্তি দিয়ে ওই নাস্তিক-মুরতাদদের কঠোর হস্তে প্রতিহত করবে।
মাওলানা মীর ইদরীস বলেন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়ার ফলে নতুন প্রজন্ম ইসলামের ভাবাদর্শ থেকে ছিটকে পড়ে নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে দ্রুত ধাবিত হয়ে পড়ছে। যার কুফল এরই মধ্যে আমরা অবলোকন করতে শুরু করেছি। দাড়ি-টুপিধারী ও ইসলামপন্থীদের ওপর আক্রমণ এবং আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব তৈরি হওয়া ছাড়াও দেশব্যাপী সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ধর্ষণ-ব্যাভিচার বিরামহীনভাবে বেড়ে গিয়ে আদর্শ ও নৈতিকতার ধস নামতে শুরু করেছে।
মহাসমাবেশে হেফজাতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব কর্মসূচি ঘোষণা করন। এতে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম ৭ নভেম্বর সিলেট ও ৮ নভেম্বর খুলনায় মহাসমাবেশ, ১৫ নভেম্বরের আগে সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ, ১৫ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করবে।