বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩
বন্ধু তুমি শত্রু তুমি
পড়াশোনা
বা কর্মক্ষেত্রে পরিচয় ঘটে অনেকের সঙ্গেই। এর মধ্যে কেউ কেউ হয়ে ওঠেন ভালো
বন্ধু। আবার অনেকের সঙ্গে ঠিকমতো বোঝাপড়া হয় না। হয়তো মুখে কিছু বলছেন না,
কিন্তু আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে। কোনো ধরনের ঝগড়া ছাড়াও এটা হতে পারে।
পারস্পরিক প্রতিহিংসা থেকেও হয়।
একসঙ্গে পড়াশোনা করছেন, আপনার সহপাঠী যদি আপনার চেয়ে ভালো করেন, তখন মেনে নিতে না পারলে এটা ঘটে। আবার একই অফিসে কাজ করার ক্ষেত্রে সহকর্মীর সাফল্য দেখেও এটা ঘটতে পারে। সহকর্মী যদি বয়সে আপনার চেয়ে ছোট হন বা চাকরিতে নতুন হন, তখন মন বেশি হিংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
সাধারণত মানুষ নিজের সঙ্গে মিলে যায় (সমমনা)—এমন অথবা তার চেয়ে একটু কম যোগ্যতার কাউকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে পছন্দ করে। তবে কাউকে পছন্দ না হলো, সেটা প্রকাশ না করাই ভালো। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে। দিনের বেশির ভাগ সময়টা তাঁর সঙ্গেই কাটাতে হয়। ফলে প্রকাশ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আবার সহপাঠীদের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।
আপনার আচরণ দেখে যেন বোঝা না যায় আপনি তাঁকে পছন্দ করছেন না। কোনো ধরনের মন্তব্য করে তাঁকে আহত করা ঠিক হবে না। একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে তাঁকে আঘাত দেওয়াও ঠিক হবে না। নির্দিষ্ট বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকুন।
অকারণে তাঁকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া থেকে দূরে থাকুন। ভালো বন্ধু মনে করতে না চাইলেও তাঁকে হিংসা করার দরকার নেই। আর আপনি যদি নিজেই চান তাঁর সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি হোক, তাহলে অবশ্যই এগিয়ে যান।
যিনি আপনার বন্ধুও হয়ে উঠতে পারতেন, কেন আপনার শত্রু হলো, সেটা নিজে নিজে ভেবে বের করুন। হয়তো তাঁর একটা ছোট্ট আচরণ আপনার কাছে খারাপ লেগেছে। অথবা এমন একটা কাজ করেছেন, যেটা তিনি চাইলেই শুধরে নিতে পারতেন। চাইলে এটা নিয়ে সরাসরি তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে বসে বা আলাদা কোনো স্থানে ডেকে নিয়ে আপনার খারাপ লাগার বিষয়টা তাঁকে খুলে বলুন। হয়তো আলোচনা করলে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারবেন।
ছোটখাটো কোনো উপহার বিনিময়, নিজেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে আলোচনা—এসব বিষয়ে আলাপ করতে করতেও আপনারা বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন। তবে কোনো অবস্থাতেই বিরক্ত হওয়া যাবে না। ধৈর্য ধরে তাঁকে বুঝে নিয়ে চলতে শুরু করুন, তাহলেই তিনি শত্রু নন, বন্ধু বনে যাবেন।
লেখক: চিকিৎ সা মনোবিজ্ঞানী, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একসঙ্গে পড়াশোনা করছেন, আপনার সহপাঠী যদি আপনার চেয়ে ভালো করেন, তখন মেনে নিতে না পারলে এটা ঘটে। আবার একই অফিসে কাজ করার ক্ষেত্রে সহকর্মীর সাফল্য দেখেও এটা ঘটতে পারে। সহকর্মী যদি বয়সে আপনার চেয়ে ছোট হন বা চাকরিতে নতুন হন, তখন মন বেশি হিংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
সাধারণত মানুষ নিজের সঙ্গে মিলে যায় (সমমনা)—এমন অথবা তার চেয়ে একটু কম যোগ্যতার কাউকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে পছন্দ করে। তবে কাউকে পছন্দ না হলো, সেটা প্রকাশ না করাই ভালো। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে। দিনের বেশির ভাগ সময়টা তাঁর সঙ্গেই কাটাতে হয়। ফলে প্রকাশ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আবার সহপাঠীদের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।
আপনার আচরণ দেখে যেন বোঝা না যায় আপনি তাঁকে পছন্দ করছেন না। কোনো ধরনের মন্তব্য করে তাঁকে আহত করা ঠিক হবে না। একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে তাঁকে আঘাত দেওয়াও ঠিক হবে না। নির্দিষ্ট বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকুন।
অকারণে তাঁকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া থেকে দূরে থাকুন। ভালো বন্ধু মনে করতে না চাইলেও তাঁকে হিংসা করার দরকার নেই। আর আপনি যদি নিজেই চান তাঁর সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি হোক, তাহলে অবশ্যই এগিয়ে যান।
যিনি আপনার বন্ধুও হয়ে উঠতে পারতেন, কেন আপনার শত্রু হলো, সেটা নিজে নিজে ভেবে বের করুন। হয়তো তাঁর একটা ছোট্ট আচরণ আপনার কাছে খারাপ লেগেছে। অথবা এমন একটা কাজ করেছেন, যেটা তিনি চাইলেই শুধরে নিতে পারতেন। চাইলে এটা নিয়ে সরাসরি তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে বসে বা আলাদা কোনো স্থানে ডেকে নিয়ে আপনার খারাপ লাগার বিষয়টা তাঁকে খুলে বলুন। হয়তো আলোচনা করলে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারবেন।
ছোটখাটো কোনো উপহার বিনিময়, নিজেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে আলোচনা—এসব বিষয়ে আলাপ করতে করতেও আপনারা বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন। তবে কোনো অবস্থাতেই বিরক্ত হওয়া যাবে না। ধৈর্য ধরে তাঁকে বুঝে নিয়ে চলতে শুরু করুন, তাহলেই তিনি শত্রু নন, বন্ধু বনে যাবেন।
লেখক: চিকিৎ সা মনোবিজ্ঞানী, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শাবাশ আওয়ামী লীগ
একজন মানুষও ভোট দেয়নি। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আসেনি। তবু আওয়ামী লীগ ও
তার মহাজোটের মিত্ররা আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে গেছে! ভোটহীন,
প্রার্থীহীন ও নির্বাচনহীন নির্বাচনে জেতার এই অনন্য রেকর্ড এই ভূবিশ্বে
একটি দলই করতে পেরেছে। সেটি আমাদের প্রিয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতারা
আমাদের অভিবাদন গ্রহণ করুন।
এই নির্বাচনী বিজয়ের মাহাত্ম্য বলে শেষ করা যাবে না। এই বিজয় সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকারকে সর্বদলীয় সরকারে রূপান্তরিত করেছে, রওশন এরশাদ ও রাশেদ খান মেননকে একসঙ্গে শপথ গ্রহণ করিয়েছে, জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র পরে ‘শিশুতোষ’ গণ্য করে এড়িয়ে গেছে! এই বিজয় সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সময় পার হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার গ্রহণ করেছে, অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দলের প্রার্থীরা নিজেরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পরও কমিশন তা গ্রহণ করতে অসম্মতি জানিয়েছে। কমিশন জাতীয় পার্টির অসম্মত ও প্রত্যাহারে ব্যর্থ প্রার্থীদের জোর করে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগে বিলীনকামী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিকে উদারহস্তে নৌকায় চড়িয়েছে! ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন ‘রিসার্চ’ করে করে এভাবে এক অভাবিত নির্বাচনহীন নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে! এই কমিশন এমন একটি অবাধ নির্বাচন করতে পারবে, তা সবচেয়ে বেশি বুঝতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। দলের নেতাদের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাকে অভিনন্দন!
এই নির্বাচনী বিজয়ের মাহাত্ম্য বলে শেষ করা যাবে না। এই বিজয় সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকারকে সর্বদলীয় সরকারে রূপান্তরিত করেছে, রওশন এরশাদ ও রাশেদ খান মেননকে একসঙ্গে শপথ গ্রহণ করিয়েছে, জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র পরে ‘শিশুতোষ’ গণ্য করে এড়িয়ে গেছে! এই বিজয় সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সময় পার হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার গ্রহণ করেছে, অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দলের প্রার্থীরা নিজেরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পরও কমিশন তা গ্রহণ করতে অসম্মতি জানিয়েছে। কমিশন জাতীয় পার্টির অসম্মত ও প্রত্যাহারে ব্যর্থ প্রার্থীদের জোর করে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগে বিলীনকামী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিকে উদারহস্তে নৌকায় চড়িয়েছে! ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন ‘রিসার্চ’ করে করে এভাবে এক অভাবিত নির্বাচনহীন নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে! এই কমিশন এমন একটি অবাধ নির্বাচন করতে পারবে, তা সবচেয়ে বেশি বুঝতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। দলের নেতাদের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাকে অভিনন্দন!
এই বিজয় সম্পন্ন করার জন্য আরও বহু কাণ্ডকীর্তি হয়েছে। বিজয় সম্পন্ন
করার প্রয়োজনে সন্ত্রাস দমনের বাহিনী র্যাব এরশাদ অসুস্থ তা বুঝতে পেরেছে,
অচিরেই হয়তো অন্য কোনো সংস্থা তার মানসিক অসুস্থতাও খুঁজে বের করবে। এই
বিজয়যাত্রা এরশাদের অর্ধযুগের সংসার ‘তছনছ’ করেছে, রওশাদ এরশাদকে শহীদ
মিলনের স্মৃতিবিজড়িত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়ে এসেছে, কাজী
জাফর ‘মীর জাফর’ কিংবা ‘মীরমদন’ কি না সেই গুরুতর বিতর্ক জাতিকে উপহার
দিয়েছে। এই বিজয়ের পথে সচরাচর জামানত হারানো বাম নেতারা নৌকায় বিলীন
হয়েছেন, গডফাদার, মাদক ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারি হিসেবে স্বনামধন্যদেরও বিজয়
নিশ্চিত করতে বাকিরা সরে গেছে। বিএনএফ নামে একটি দলের হাইব্রিড জন্ম
হয়েছে। এই বিজয়ের রূপকারদের অভিনন্দন।
গণতন্ত্রের এই নব অধ্যায় নির্মাণের পথে বাদ সাধতে চেয়েছিল প্রধান বিরোধী
দল। তাই তাদের অফিস বিরতিহীনভাবে পুলিশ-র্যাবে অবরুদ্ধ রয়েছে, বয়সের ভারে
ন্যুব্জ বিএনপির নেতাদের রিমান্ডের আদেশ হয়েছে, বাকি নেতারা বাড়িঘর ছেড়ে
টেলিফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপন করেছেন। বিএনপি অফিস থেকে অবরুদ্ধ, নিঃসঙ্গ ও
অসুস্থ সন্ত্রাসী রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তার হয়েছেন, রিজভীর ডামি সালাহ
উদ্দিন আহমদ গোপন ভিডিও বার্তায় পারদর্শী হয়ে লাদেন খেতাব পেয়েছেন। ‘নতুন
গণতন্ত্রের শত্রু’ খালেদা জিয়াকে ক্ষুব্ধ মানুষের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য
পুলিশ মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদের সঙ্গেও আসন
ভাগাভাগি করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও সর্বদলীয় করা যেত! খালেদা জিয়া
তা ভাবতে পারেননি। আওয়ামী লীগ-বিএনপির এই অসাধারণ সম্প্রীতির কথা ভেবেছেন
আমাদের প্রধানমন্ত্রী!
বাংলাদেশে নির্বাচন মানে ছিল কালোটাকা আর পেশিশক্তির খেলা। এই অশুভ
প্রবণতা থেকে নির্বাচনকে রক্ষা করার জন্য দেশে ডজন ডজন আইন আর আচরণবিধি
হয়েছে, শত শত গোলটেবিল আলোচনা হয়েছে, সেখান থেকে বহু সংবিধান বিশেষজ্ঞ আর
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে। নির্বাচনকে কলুষমুক্ত করার বেশুমার ডলার,
ইউরো আর বাংলাদেশি টাকা খরচ হয়েছে, এনজিও শিল্পের বিপুল বিকাশ হয়েছে, বহু
ধারণাপত্র, প্রস্তাব আর ‘ইন-ডেপথ’ গবেষণার প্রসব হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে
কালোটাকা আর পেশিশক্তির আস্ফাালন তাতে একটুও কমে যায়নি। এবারের মহান
নির্বাচনে এক নিমেষে দেড় শতাধিক আসনে সেই আস্ফাালনকে নিশ্চিহ্ন করা গেছে।
যেসব আসনে একতরফা নির্বাচন হবে, সেখানেও এই কালোটাকা আর পেশিশক্তি প্রয়োগের
সম্ভাবনা প্রায় ধূলিসাৎ হয়েছে। পেশিশক্তি আর কালোটাকা দমনের জন্য
নির্বাচনহীন নির্বাচনের এই অভিনব, অচিন্তনীয় আর অসাধারণ পদ্ধতি আবিষ্কারের
জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে আর বেশি প্রশংসা কে পেতে পারে!
এই মহান বিজয়ের পথ তাই বলে নিষ্কণ্টক ছিল না। এই বিজয় রুখতে বিরোধী দলের
জঙ্গিরা শহরে-গ্রামে আওয়ামী লীগের লোকদের পুড়িয়ে বা কুপিয়ে হত্যা করছে,
পুলিশ-র্যাব নির্বিচারে গুলি ছুড়ে জঙ্গিদের হত্যা করছে, রহস্যময় নাশকতার
ঘটনায় সাধারণ মানুষ প্রাণ দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে ককটেল আর
পেট্রলবোমা মারার জন্য দোষারোপ করেছে।
দেশের সুশীল সমাজের অধিকতর বিদগ্ধ অংশটি শুধু বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার
বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, অন্য অংশ শুধু পুলিশ আর রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর
সন্ত্রাসের নিন্দা করেছে। মিডিয়ার অধিকতর ‘প্রগতিশীল’ একটি অংশ শুধু
জঙ্গিদের ককটেলে পোড়া মৃতদেহের ছবি ছাপছে, ‘সরকারবিরোধী’ অংশটি ছাপছে শুধু
পুলিশের গুলিতে নিহতদের ছবি! সুশীল সমাজ আর মিডিয়া যে কত ‘অনিরপেক্ষ’ তা এই
নির্বাচনের ডামাডোলে এভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীসহ
আওয়ামী লীগের নেতারা কেন এত দিন সুশীল সমাজ আর মিডিয়াকে তুলাধোনা করেছেন,
তা ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ এখন বুঝতে পারছে। তাদের পক্ষ থেকে তাই নেতাদের
অভিবাদন!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের একজন বর্ষীয়ান নেতা বহু আগে নেলসন
ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিংকন আর মহাত্মা গান্ধীর সমষ্টি বলে বর্ণনা
করেছিলেন। উদার হূদয় এই গুণমুগ্ধ ব্যক্তি পরে রাষ্ট্রপতির পদকে অলংকৃত
করেছিলেন। কিন্তু আমরা এত দিনে বুঝতে পারছি যে তিনি আসলে প্রধানমন্ত্রীর
যথেষ্ট তারিফ করতে পারেননি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিছু ক্ষেত্রে
ম্যান্ডেলা-লিংকনদের সবার সমষ্টিরও ঊর্ধ্বে। ম্যান্ডেলা আর লিংকনরা মিলে
তাঁর মতো বন্ধুত্বময় নির্বাচনের কথা ভাবতে পারবেন না! লাস্কি থেকে শুরু করে
হান্টিংটন পর্যন্ত পৃথিবীর তাবত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিলেও গণতন্ত্রের এমন
নতুন দ্যোতনা সৃষ্টি করতে পারবেন না। তিনি নতুনভাবে গণতন্ত্রকে বিনির্মাণ
করেছেন। আসুন, আমরা তাঁর অবদানকে নতশিরে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি।
এই নির্বাচনের বিজয়যাত্রার পথে শত মানুষ প্রাণ দিয়েছে, হাজার মানুষ আহত
হয়েছে, হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আরও বহু ক্ষয়ক্ষতি ভবিষ্যতে হয়তো
হবে। কিন্তু এত কিছুর বিনিময়ে হলেও সংবিধান তো আমরা রক্ষা করতে পেরেছি!
অতীতে কোনো সামরিক বা বেসামরিক সরকার বা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সংবিধান রক্ষার
জন্য এতটা ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। পেরেছে শুধু আওয়ামী লীগের
সরকার। দেশি-বিদেশি সব মূর্খের নসিহত প্রত্যাখ্যান করে এই সরকার একটি
নজিরবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান, গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতির অধিকারকে
রক্ষা করেছে।
আসুন, আমরা মুক্তকণ্ঠে আওয়ামী লীগ সরকারের গুণকীর্তন করি! আওয়ামী লীগের বিজয়ের বন্দনা করি! জয় হোক আওয়ামী লীগের!
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩
পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ভোটারবিহীন নির্বাচন
ভোটারবিহীন এমপি নির্বাচনের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল বলে মন্তব্য করেছেন
দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ যে নির্বাচন করছে তা
অর্থহীন এবং হাস্যকর ও অগ্রহণযোগ্য। এটা ইলেকশন নয়, সিলেকশন। দেশের বর্তমান
সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় ও ভোটারবিহীন নির্বাচন সম্পর্কে খোলামেলা কথা
বলেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, ভোটার ছাড়াই ভোট এবং ভোটারবিহীন নির্বাচন
কেউ আশা করে না। জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা
পাবে না। এতে দিন দিন অশান্তি বাড়বে।
তারা আরো বলেন, বর্তমান সমস্যার সমাধানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজকে বসে চিন্তা করা দরকার। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই কেবল দেশে গণতন্ত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে এসে বলতে হচ্ছেÑ দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়নি। অর্থনৈতিকভাবেও স্বাধীন হয়নি। বর্তমান অবস্থায় স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে বলে মন্তব্য দেশের বিশিষ্টজনদের।
প্রবীণ আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, নির্বাচনের আগেই সরকার দুই গোল দিয়ে ফেলেছে। একদলীয় নির্বাচন সবাই দিয়েছে। শেখ সাহেব যেটা দিয়েছিলেন সেটা নির্বাচন ছিল কিন্তু তখন সিলেকশন হয়নি। বর্তমানে যেটা হচ্ছে সেটা সিলেকশন, ইলেকশন নয়। ভোটার ছাড়া ভোট এবং ভোটারবিহীন নির্বাচন। এটা আমরা আশা করি না। এতে দিন দিন অশান্তি বাড়বে।
তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটিক (গণতান্ত্রিক) আচরণ করতে হবে। কিন্তু এখন অটোক্র্যাটিক ডেমোক্র্যাসি বা স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্র এসেছে। বর্তমান সমস্যার সমাধানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজকে বসে চিন্তা করা দরকার। কাউকে বাদ দিয়ে হবে না।
প্রবীণ এ আইনবিদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেবকে কেন সিএমএইচে পাঠানো হলো? আমি অসুস্থ হলে ডাক্তার নিয়ে যাবে, র্যাব কেন নেবে? সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্র আসবে; তা না হলে গণতন্ত্র ও শান্তি আসবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কেবল পথ বের হতে পারে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৬ জন নির্বাচিত হলে বাকি যারা আছে তারাও নির্বাচিত হয়ে যাবেন।’
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের নয়, সাধারণ মানুষেরই জীবন যাচ্ছে। বিরোধী দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি অবরোধ করেন, হরতাল করেন শান্তিপূর্ণভাবে। এ অবস্থায় বিএনপির কিছু করা দরকার। কিন্তু বিএনপি কিছু করছে না। কার বুদ্ধিতে বিএনপি চলছে আমি বুঝতে পারছি না।’
তিনি বলেন, অবরোধে দেশের অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে। অর্থনীতি টিকবে না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে বলতে হচ্ছে দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়নি। অর্থনৈতিকভাবেও স্বাধীন হয়নি। কেবল সামাজিক স্বাধীন হলেই চলবে না। বর্তমান অবস্থায় স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমানে সরকার যেভাবে নির্বাচন করছে তা অর্থহীন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। এ জন্য সরকারি দল বেশির ভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
এই নির্বাচন জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক আগেই বলেছে তারা এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। এখন সমঝোতার দিকে এগিয়ে আসতে আর দেখছি না। বিবেককে ব্যবহার করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তা না হলে এই নির্বাচন অর্থহীন হবে। বর্তমান অবস্থায় দেশে সঙ্ঘাত বাড়বে আমরা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হবো।
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে সুষ্ঠু নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেই কেবল দেশে শান্তি ফিরে আসতে পারে। তারানকো যে আলোচনার সূচনা করে গেছেন তার মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধানের উপায় বের করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কোনো অথরিটি নেই। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন সব কিছু সেভাবে হচ্ছে। এখন আলোচনা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সমঝোতা না হলে দেশের ক্ষতি বাড়বে, জীবনের ক্ষতি হবে এবং দেশের সম্পদের ক্ষতি হবে।
একটি স্বপ্নের দেশ হিসেবে আমরা বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছি। এখন সচেতনতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমদের বিশ্লেষণ হলোÑ নির্বাচনের বৈধতা-অবৈধতা, গ্রহণযোগ্যতা-অগ্রহণযোগ্যতা তা আইনগত, শাসনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক দিকের ওপর নির্ভর করে। সাংবিধানিক দিকে দিয়ে তারা নির্বাচন করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক ও নৈতিকতার দিক দিয়ে এটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, যারা তিন তিনবার সরকারে ছিল। তারাই এই নির্বাচনে অনুপস্থিত। ফলে এই নির্বাচন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না; আর যা হচ্ছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, সরকার নিজেকে রক্ষা করছে। আমাদের দেশের নির্বাচনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যেটা ছিল তাকে সরকার ুণœ করেছে। এটা সরকারের আগে থেকে পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে আজ যে অবস্থা তাতে সেখানে গিয়ে মহাজোটের প্রার্থীরা নির্বাচন করতে পারবেন না। এমনকি সরকারের মন্ত্রীরাও ঢাকায় বসে আছেন। তাই সরকার নির্বাচনকে মনোনয়নে পরিণত করেছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ এমন এক মাসে প্রার্থীবিহীন নির্বাচন করল যে মাস বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মাস। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করেছে। প্রার্থীবিহীন নির্বাচন পৃথিবীর ইতিহাসে অতীতে কখনো ঘটেনি। বিশ্বে এ ধরনের নির্বাচন এবারই প্রথম।
তিনি বলেন, এ নির্বাচন হাস্যকর, অগ্রহণযোগ্য ও প্রহসনের। দেশের জনগণ ও কোনো উন্নয়নকামী মানুষ কেউই মেনে নিবে না। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ যদি সরকার গঠন করে তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বাকশালের নতুন রূপ দেখবে বলে মনে করেন ড. দিলারা চৌধুরী।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিয়াস করিম বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচনের ঘটনা সবচেয়ে প্রহসনমূলক, যা অতীতে কখনো হয়নি। তিনি বলেন, আমরা এমন এক দিনে এ ধরনের নির্বাচন দেখছি যখন বুদ্ধিজীবী দিবস। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীরা আরেকবার শাহাদতবরণ করল। যত কিছুই করুক আওয়ামী লীগ পার পাবে না।
বিশিষ্ট দার্শনিক হেগেল ও কার্ল মার্কসের উদ্ধৃতি দিয়ে পিয়াস করিম বলেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। অতএব আওয়ামী লীগ যা করছে এরও ফল পেতে হবে। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যার ট্রাজেডি ঘটিয়েছিল। এবার পরিহাস হলো।
তিনি আরো বলেন, সরকারের মৃত্যঘণ্টা বেজে গেছে। অত্যাচার নিপীড়নের দিন একদমই শেষ। ঢাকার আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিয়ে টিকে থাকা যাবে না। যদি এ ধরনের অপকর্ম করে টিকে থাকা যেত তাহলে তার বাবা শেখ মুজিবও রক্ষা পেতেন। কিন্তু তারও শেষ রক্ষা হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা। শুধু তাই নয় এ নির্বাচন প্রহসনমূলক, অগ্রহণযোগ্য, হাস্যকর ও অগণতান্ত্রিক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করে। কিন্তু তাদের অধীনে এ ধরনের নির্বাচন কল্পনা করা যায় না। এ নির্বাচনে একটি ভোটারও ভোট দেয়নি। অথচ প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে গেলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকারের সংজ্ঞা এখন থেকে নতুনভাবে লিখতে হবে।
বাংলাদেশের সামরিক বা স্বৈরশাসকদের আমলে এ ধরনের ঘটনা হয়নি উল্লেখ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, অতীতে নির্বাচন হতো ভোটারবিহীন। কিন্তু এখন নির্বাচন হচ্ছে প্রার্থীবিহীন! তিনি বলেন, যদি কেউ মনে করেন যে, এ ধরনের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ক্ষমতায় থাকবে। তাহলে ধরে নিতে হবে ভোট সম্পর্কে তাদের ধারণা দুর্বল।nayadiganta
তারা আরো বলেন, বর্তমান সমস্যার সমাধানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজকে বসে চিন্তা করা দরকার। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই কেবল দেশে গণতন্ত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে এসে বলতে হচ্ছেÑ দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়নি। অর্থনৈতিকভাবেও স্বাধীন হয়নি। বর্তমান অবস্থায় স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে বলে মন্তব্য দেশের বিশিষ্টজনদের।
প্রবীণ আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, নির্বাচনের আগেই সরকার দুই গোল দিয়ে ফেলেছে। একদলীয় নির্বাচন সবাই দিয়েছে। শেখ সাহেব যেটা দিয়েছিলেন সেটা নির্বাচন ছিল কিন্তু তখন সিলেকশন হয়নি। বর্তমানে যেটা হচ্ছে সেটা সিলেকশন, ইলেকশন নয়। ভোটার ছাড়া ভোট এবং ভোটারবিহীন নির্বাচন। এটা আমরা আশা করি না। এতে দিন দিন অশান্তি বাড়বে।
তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটিক (গণতান্ত্রিক) আচরণ করতে হবে। কিন্তু এখন অটোক্র্যাটিক ডেমোক্র্যাসি বা স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্র এসেছে। বর্তমান সমস্যার সমাধানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজকে বসে চিন্তা করা দরকার। কাউকে বাদ দিয়ে হবে না।
প্রবীণ এ আইনবিদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেবকে কেন সিএমএইচে পাঠানো হলো? আমি অসুস্থ হলে ডাক্তার নিয়ে যাবে, র্যাব কেন নেবে? সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্র আসবে; তা না হলে গণতন্ত্র ও শান্তি আসবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কেবল পথ বের হতে পারে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৬ জন নির্বাচিত হলে বাকি যারা আছে তারাও নির্বাচিত হয়ে যাবেন।’
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের নয়, সাধারণ মানুষেরই জীবন যাচ্ছে। বিরোধী দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি অবরোধ করেন, হরতাল করেন শান্তিপূর্ণভাবে। এ অবস্থায় বিএনপির কিছু করা দরকার। কিন্তু বিএনপি কিছু করছে না। কার বুদ্ধিতে বিএনপি চলছে আমি বুঝতে পারছি না।’
তিনি বলেন, অবরোধে দেশের অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে। অর্থনীতি টিকবে না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে বলতে হচ্ছে দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়নি। অর্থনৈতিকভাবেও স্বাধীন হয়নি। কেবল সামাজিক স্বাধীন হলেই চলবে না। বর্তমান অবস্থায় স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমানে সরকার যেভাবে নির্বাচন করছে তা অর্থহীন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। এ জন্য সরকারি দল বেশির ভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
এই নির্বাচন জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক আগেই বলেছে তারা এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। এখন সমঝোতার দিকে এগিয়ে আসতে আর দেখছি না। বিবেককে ব্যবহার করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তা না হলে এই নির্বাচন অর্থহীন হবে। বর্তমান অবস্থায় দেশে সঙ্ঘাত বাড়বে আমরা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হবো।
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে সুষ্ঠু নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেই কেবল দেশে শান্তি ফিরে আসতে পারে। তারানকো যে আলোচনার সূচনা করে গেছেন তার মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধানের উপায় বের করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কোনো অথরিটি নেই। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন সব কিছু সেভাবে হচ্ছে। এখন আলোচনা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সমঝোতা না হলে দেশের ক্ষতি বাড়বে, জীবনের ক্ষতি হবে এবং দেশের সম্পদের ক্ষতি হবে।
একটি স্বপ্নের দেশ হিসেবে আমরা বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছি। এখন সচেতনতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমদের বিশ্লেষণ হলোÑ নির্বাচনের বৈধতা-অবৈধতা, গ্রহণযোগ্যতা-অগ্রহণযোগ্যতা তা আইনগত, শাসনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক দিকের ওপর নির্ভর করে। সাংবিধানিক দিকে দিয়ে তারা নির্বাচন করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক ও নৈতিকতার দিক দিয়ে এটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, যারা তিন তিনবার সরকারে ছিল। তারাই এই নির্বাচনে অনুপস্থিত। ফলে এই নির্বাচন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না; আর যা হচ্ছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, সরকার নিজেকে রক্ষা করছে। আমাদের দেশের নির্বাচনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যেটা ছিল তাকে সরকার ুণœ করেছে। এটা সরকারের আগে থেকে পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে আজ যে অবস্থা তাতে সেখানে গিয়ে মহাজোটের প্রার্থীরা নির্বাচন করতে পারবেন না। এমনকি সরকারের মন্ত্রীরাও ঢাকায় বসে আছেন। তাই সরকার নির্বাচনকে মনোনয়নে পরিণত করেছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ এমন এক মাসে প্রার্থীবিহীন নির্বাচন করল যে মাস বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মাস। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করেছে। প্রার্থীবিহীন নির্বাচন পৃথিবীর ইতিহাসে অতীতে কখনো ঘটেনি। বিশ্বে এ ধরনের নির্বাচন এবারই প্রথম।
তিনি বলেন, এ নির্বাচন হাস্যকর, অগ্রহণযোগ্য ও প্রহসনের। দেশের জনগণ ও কোনো উন্নয়নকামী মানুষ কেউই মেনে নিবে না। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ যদি সরকার গঠন করে তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বাকশালের নতুন রূপ দেখবে বলে মনে করেন ড. দিলারা চৌধুরী।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিয়াস করিম বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচনের ঘটনা সবচেয়ে প্রহসনমূলক, যা অতীতে কখনো হয়নি। তিনি বলেন, আমরা এমন এক দিনে এ ধরনের নির্বাচন দেখছি যখন বুদ্ধিজীবী দিবস। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীরা আরেকবার শাহাদতবরণ করল। যত কিছুই করুক আওয়ামী লীগ পার পাবে না।
বিশিষ্ট দার্শনিক হেগেল ও কার্ল মার্কসের উদ্ধৃতি দিয়ে পিয়াস করিম বলেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। অতএব আওয়ামী লীগ যা করছে এরও ফল পেতে হবে। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যার ট্রাজেডি ঘটিয়েছিল। এবার পরিহাস হলো।
তিনি আরো বলেন, সরকারের মৃত্যঘণ্টা বেজে গেছে। অত্যাচার নিপীড়নের দিন একদমই শেষ। ঢাকার আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিয়ে টিকে থাকা যাবে না। যদি এ ধরনের অপকর্ম করে টিকে থাকা যেত তাহলে তার বাবা শেখ মুজিবও রক্ষা পেতেন। কিন্তু তারও শেষ রক্ষা হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা। শুধু তাই নয় এ নির্বাচন প্রহসনমূলক, অগ্রহণযোগ্য, হাস্যকর ও অগণতান্ত্রিক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করে। কিন্তু তাদের অধীনে এ ধরনের নির্বাচন কল্পনা করা যায় না। এ নির্বাচনে একটি ভোটারও ভোট দেয়নি। অথচ প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে গেলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকারের সংজ্ঞা এখন থেকে নতুনভাবে লিখতে হবে।
বাংলাদেশের সামরিক বা স্বৈরশাসকদের আমলে এ ধরনের ঘটনা হয়নি উল্লেখ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, অতীতে নির্বাচন হতো ভোটারবিহীন। কিন্তু এখন নির্বাচন হচ্ছে প্রার্থীবিহীন! তিনি বলেন, যদি কেউ মনে করেন যে, এ ধরনের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ক্ষমতায় থাকবে। তাহলে ধরে নিতে হবে ভোট সম্পর্কে তাদের ধারণা দুর্বল।nayadiganta
সাতক্ষীরায় হিন্দু বাড়িতে আগুন দিয়ে পালানোর সময় যুবলীগ নেতা আটক : সেনবাগে ট্রাইব্যুনাল বিচারপতির বাড়িতে হামলার সময় ধরা পড়েছে ৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী
দেশের চলমান অস্থির পরিস্থিতির সুযোগে বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থাপনায় বার বার
হামলা-অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেই চলেছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, এসব
ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারপন্থীয় মিডিয়া
ঘটনার দায় কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে দেয়। কিন্তু বর্তমানে
জনতা এসব ঘটনার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ায় ধরা পড়তে শুরু করেছে আসল দায়ীরা।
সাতক্ষীরার দেবহাটায় শনিবার দিবাগত রাতে সংখ্যালঘু হিন্দু সমপ্রদায়ের দুটি
বাড়িতে আগুন দিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়েছে এক যুবলীগ নেতা। এদিকে
নোয়াখালীর সেনবাগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি
জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের কাবিলপুর গ্রামের বাড়িতে হামলার প্রস্তুতির সময়
ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে একই রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমাদের
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সাতক্ষীরায় হিন্দু বাড়িতে আগুন দিয়ে পালানোর সময় যুবলীগ নেতা আটক
সাতক্ষীরার দেবহাটায় শনিবার দিবাগত রাতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। মুখোশ পরা অবস্থায় ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী আগুন দিয়ে পালানোর সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হয় এক যুবলীগ নেতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর দুবৃর্ত্তরা পালিয়ে যেতে থাকে। এসময় এলাকাবাসী ধাওয়া করে মুখোশ পরা অবস্থায় আব্দুল গফফার নামের একজনকে আটক করতে সমর্থ হয়। গাফফার নিজেকে যুবলীগ নেতা বলে দাবি করে। পরে রাতভর একটি গাছের সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখে এলাকাবাসী। দেবহাটা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আটক যুবলীগ নেতা আব্দুল গফফর একই এলাকার এলবার গাইনের ছেলে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গফফর জানায়, স্থানীয় এক আ’লীগ নেতার নির্দেশে তারা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনায় জড়িত থাকার আরো তিনজনের নাম পুলিশকে জানিয়েছে সে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর মালিক সুনীত সরকার জানান, জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দেবহাটা থানার ওসি তারক বিশ্বাস জানান, স্থানীয়রা আগুন ধরিয়ে দেয়ার সন্দেহে আব্দুল গফফারকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের আমীর আসাদুজ্জামান মুকুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়িতে আ’লীগ আগুন ধরিয়ে দিয়ে জামায়াতের উপর দায় চাপাতে এ ঘটনা ঘটায়।
সেনবাগে ট্রাইব্যুনাল বিচারপতির বাড়িতে হামলার সময় তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী গ্রেফতার
নোয়াখালীর সেনবাগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের কাবিলপুর গ্রামের বাড়িতে আবারও হামলার প্রস্তুতির সময় ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মো. জাহিদ হাসান বাবু (২০), রাসেল বাবু (১৮) ও ওমর ফারুক (১৮)।
পুলিশ জানায়, রাত ১২টার দিকে উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা ও মহিদিপুর গ্রামের আবুল মোতালেবের ছেলে জাহিদ হাসান বাবু, একই গ্রামের দুলাল হোসেন মনিরের ছেলে রাসেল ওরফে বাবু ও পার্শ্ববর্তী আজিজপুর গ্রামের শরিয়ত উল্লার ছেলে মো. ফারুক সহ আরও ১৫-১৬ জন মিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের কাবিলপুর গ্রামের বাড়ির ৫শ’ গজ দূরে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অবস্থান করছিল। এসময় স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিত্কার শুরু করলে গ্রামবাসী দৌড়ে গিয়ে তিনজনকে হাতেনাতে আটক করে।
খবর পেয়ে সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইকুল আহম্মেদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
সাইকুল আহম্মেদ ভূইয়া জানান, তাদেরকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের গ্রামের বাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ এবং নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আজ দুুপুরে নেয়াখালী বিচারিক আদালতে প্রেরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে একটার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের বাড়ির সামনের ফটক লক্ষ্য করে পর পর কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় কোনো প্রমাণ না থাকলেও মিডিয়া ও সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি জামায়াতকে দায়ী করা হয়।amerdesh
সাতক্ষীরায় হিন্দু বাড়িতে আগুন দিয়ে পালানোর সময় যুবলীগ নেতা আটক
সাতক্ষীরার দেবহাটায় শনিবার দিবাগত রাতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। মুখোশ পরা অবস্থায় ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী আগুন দিয়ে পালানোর সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হয় এক যুবলীগ নেতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর দুবৃর্ত্তরা পালিয়ে যেতে থাকে। এসময় এলাকাবাসী ধাওয়া করে মুখোশ পরা অবস্থায় আব্দুল গফফার নামের একজনকে আটক করতে সমর্থ হয়। গাফফার নিজেকে যুবলীগ নেতা বলে দাবি করে। পরে রাতভর একটি গাছের সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখে এলাকাবাসী। দেবহাটা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আটক যুবলীগ নেতা আব্দুল গফফর একই এলাকার এলবার গাইনের ছেলে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গফফর জানায়, স্থানীয় এক আ’লীগ নেতার নির্দেশে তারা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনায় জড়িত থাকার আরো তিনজনের নাম পুলিশকে জানিয়েছে সে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর মালিক সুনীত সরকার জানান, জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দেবহাটা থানার ওসি তারক বিশ্বাস জানান, স্থানীয়রা আগুন ধরিয়ে দেয়ার সন্দেহে আব্দুল গফফারকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের আমীর আসাদুজ্জামান মুকুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়িতে আ’লীগ আগুন ধরিয়ে দিয়ে জামায়াতের উপর দায় চাপাতে এ ঘটনা ঘটায়।
সেনবাগে ট্রাইব্যুনাল বিচারপতির বাড়িতে হামলার সময় তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী গ্রেফতার
নোয়াখালীর সেনবাগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের কাবিলপুর গ্রামের বাড়িতে আবারও হামলার প্রস্তুতির সময় ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মো. জাহিদ হাসান বাবু (২০), রাসেল বাবু (১৮) ও ওমর ফারুক (১৮)।
পুলিশ জানায়, রাত ১২টার দিকে উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা ও মহিদিপুর গ্রামের আবুল মোতালেবের ছেলে জাহিদ হাসান বাবু, একই গ্রামের দুলাল হোসেন মনিরের ছেলে রাসেল ওরফে বাবু ও পার্শ্ববর্তী আজিজপুর গ্রামের শরিয়ত উল্লার ছেলে মো. ফারুক সহ আরও ১৫-১৬ জন মিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের কাবিলপুর গ্রামের বাড়ির ৫শ’ গজ দূরে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অবস্থান করছিল। এসময় স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিত্কার শুরু করলে গ্রামবাসী দৌড়ে গিয়ে তিনজনকে হাতেনাতে আটক করে।
খবর পেয়ে সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইকুল আহম্মেদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
সাইকুল আহম্মেদ ভূইয়া জানান, তাদেরকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের গ্রামের বাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ এবং নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আজ দুুপুরে নেয়াখালী বিচারিক আদালতে প্রেরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে একটার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের বাড়ির সামনের ফটক লক্ষ্য করে পর পর কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় কোনো প্রমাণ না থাকলেও মিডিয়া ও সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি জামায়াতকে দায়ী করা হয়।amerdesh
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে দেড় শতাধিক প্রার্থী
ফারুক হোসাইন : আওয়ামী লীগ সরকারের একতরফা নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে
সর্বাধিকসংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এই
প্রথম কোন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক দেড় শতাধিক প্রার্থী বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ১০৫টি আসনে
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়,
দেড়শ’ আসনে কমিশনকে নির্বাচন করতে হবে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত
তফসিল অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে একক প্রার্থী
ছিলেন ৮ জন। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর যাচাই বাচাই শেষে একক প্রার্থী হিসেবে বৈধতা
পান ৩৩ জন প্রার্থী। সর্বশেষ গতকাল (শুক্রবার) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ
দিনে সারাদেশে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের মধ্য
দিয়ে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রায় দেড় শতাধিক
প্রার্থী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন ৭ জন প্রার্থী। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত
৩০০টি সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো রিপোর্ট হতে এ তথ্য জানা
যায়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে তৎকালীন
বিএনপি সরকারের একতরফা নির্বাচনে ৪৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হয়। বিএনপির ওই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ৪১টি রাজনৈতিক দল। তখন
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ১ হাজার ৪৫০ জন প্রার্থী এবং মনোনয়নপত্র জমা
দিয়েছিলেন ১ হাজার ৯৮৭ জন প্রার্থী। কিন্তু বর্তমান শেখ হাসিনার অধীনে হতে
যাওয়া নির্বাচনে অংশ নেয়া দলের সংখ্যা ১৪টি। যদিও প্রথমে জাতীয় পার্টি
নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচনের পরিবেশ নেই এবং
সব দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির
চেয়ারম্যান এইচ.এম. এরশাদ। এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ১০৬ প্রার্থী
মনোনয়নপত্র জমা দিলে যাচাই বাচাইয়ে ২৬০ জন প্রার্থী বাতিল হয়। আপিল শুনানি
শেষে ৩৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পান। সব মিলিয়ে বৈধ প্রার্থীর
সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮০ জন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে
জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কারণে শতাধিক আসনে বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই রিপোর্ট লেখা
পর্যন্ত দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকা থেকে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত
জাতীয় পার্টির প্রায় দুইশতাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে।
সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করছে নির্বাচন কমিশন। বিরোধী
দল নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে সরকার একদলীয় বা একতরফা নির্বাচন দিয়ে
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করল। দেশী
বিদেশী পর্যবেক্ষকদের কাছে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ
হলেও সরকারের অনড় অবস্থান রাজনৈতিক সংঘাত ও সংকটের মধ্য দিয়ে আগামী
নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
ঢাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম (ঢাকা-২), নসরুল হামিদ বিপু (ঢাকা-৩), ফজলে নুর তাপস (ঢাকা-১০), আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২), জাহাঙ্গীর কবীর নানক (ঢাকা-১৩ ), ডা. এনাম (ঢাকা-১৯ ), এম.এ. মালেক (ঢাকা-২০)। এছাড়া সারাদেশে মো. দবিরুল ইসলাম (ঠাকুরগাঁও-২), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), টিপু মুন্সী (রংপুর-৪), আহসানুল হক চৌধুরী (রংপুর-২), এইচ.এন. আশিকুর রহমান (রংপুর-৫), নুরুজ্জামান আহমেদ (লালমনিরহাট-২), ওমর ফারক চৌধুরী (রাজশাহী-১), ফজলে হোসেন বাদশা (ওয়ার্কার্স পার্টি) (রাজশাহী-২), এনামুল হক (রাজশাহী-৪), মো. আবুল কালাম (নাটোর-১), মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল (নাটোর-২), মো. আব্দুল কুদ্দুস (নাটোর-৪), মো. নাসিম (সিরাজগঞ্জ-১), মো. হাবিবে মিল্লাত (সিরাজগঞ্জ-২), মো. ইসহাক হোসেন তালুকদার (সিরাজগঞ্জ-৩), তানভীর ইমাম (সিরাজগঞ্জ-৪), মো. হাসিবুর রহমান স্বপন (সিরাজগঞ্জ-৬), শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), শেখ হেলাল উদ্দিন (বাগেরহাট-১), মীর শওকত আলী বাদশা (বাগেরহাট-২), তোফায়েল আহমেদ (ভোলা-১), আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (ভোলা-৪), আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ (বরিশাল-১), আমির হোসেন আমু (ঝালোকাঠি-২), এ.কে.এম.এ. আউয়াল (সাঈদুর রহমান) (পিরোজপুর-১), আমানুর রহমান খাঁন রানা (টাঙ্গাঈল-৩), প্রমোদ মানকিন (ময়মনসিংহ-১), শরীফ আহমেদ (ময়মনসিংহ-২), আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন (ময়মনসিংহ-৯), সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১), রেজওয়ান আহমদ তৌফিক (কিশোরগঞ্জ-৪), মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২), মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সিগঞ্জ-৩), আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), রাজি উদ্দিন আহমেদ (নরসিংদী-৫), মো. নজরুল ইসলাম বাবু (নারায়নগঞ্জ-২), শামীম ওসমান (নারায়নগঞ্জ-৪), কাজী কেরামত আলী (রাজবাড়ী-১), মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১), খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ফরিদপুর-৩), নূর-ই-আলম চৌধুরী (মাদারীপুর-১), শাজাহান খান (মাদারীপুর-২), আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম (মাদারীপুর-৩), বি.এম. মোজাম্মেল হক (শরীয়তপুর-১), শওকত আলী (শরীয়তপুর-২), নাহিম রাজ্জাক (শরীয়তপুর-৩), মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভী বাজার-৪), অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (কুমিল্লা-৭), আ.হ.ম. মুস্তফা কামাল (কুমিল্লা-১০), ড. মহিউদ্দিন খাঁন আলমগীর (চাঁদপুর-১), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (চাঁদপুর-২), ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩),ড. মো. শামছুল হক ভূইয়া (চাঁদপুর-৪), মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (চাঁদপুর-৫), নিজাম উদ্দিন হাজারী (ফেনী-২), মোরশেদ আলম (নোয়াখালী-২), ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), এ.কে.এম. শাহজাহান কামাল (লক্ষীপুর-৩), ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (চট্টগ্রাম-১), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬), মো. হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), মাঈন উদ্দীন খান বাদল (জাসদ) (চট্টগ্রাম-৮), আফসারুল আমিন (চট্টগ্রাম-১০), নজরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), আবুল মাল আব্দুল মুহিত (সিলেট-১), কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩), মো. ফজলে রাব্বি মিয়া (গাইবান্ধা-৫), আব্দুল মান্নান (বগুড়া-১), শরিফুল ইসলাম জিন্না (জাতীয় পার্টি) (বগুড়া-২), মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার (জাতীয় পার্টি-জেপি) (বগুড়া-৩), মো. হাবিবুর রহমান (বগুড়া-৫), মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী (চাপাইনবাবগঞ্জ-১), মো. আব্দুল ওয়াদুদ (চাপাইনাবাবগঞ্জ-৩), মো. ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬), তালুকদার আব্দুল খালেক (বাগেরহাট-৩), আব্দুল হাফিজ মল্লিক (বরিশাল-৬), আনোয়ার হোসেন (পিরোজপুর-২), মো. আব্দুর রাজ্জাক (টাঙ্গাইল-১), আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৪), মো. একাব্বর হোসেন (টাঙ্গাইল-৭), শওকত মোমেন শাহজাহান (টাঙ্গাইল-৮), সালাইদ্দিন আহমেদ মুফতি (ময়মনসিংহ-৫), মো. সোহরাব উদ্দীন (কিশোরগঞ্জ-২), মো. আফজাল হোসেন (কিশোরগঞ্জ-৫), নজমুল আহসান পাপন (কিশোরগঞ্জ-৬), জাহিদ মালেক (মানিকগঞ্জ-৩), মো. জাহিদ আহসান রাসেল (গাজীপুর-২), মো. রহমত আলী (গাজীপুর-৩), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর-৫), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (নরসিংদী-৪), সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (ফরিদপুর-২), সৈয়দ মোহসিন আলী (মৌলভীবাজার-৩), আশেক উল্লাহ রফিক (কক্সবাজার-২) ও সাইমুম সরওয়ার কমল (কক্সবাজার-৩)।
এদিকে কমিশনের উপ সচিব ফরহাদ আহমেদ খান গতকাল জানান, যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন তাদের বাদ দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখন প্রকাশ করা হবে। কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবে ইসি। আজ দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় আসলেও এখন নির্বাচন কমিশনের জন্য বিষয়টি জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। গতকাল সন্ধ্যায় ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। দলের প্রতীক বরাদ্দ ও প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান সিইসি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পাঠানো চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তা করবেন আইন মোতাবেক। আমরা বলে দিয়েছি, সে মোতাবেক করবেন। চলমান সংলাপ ও বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কাজী রকিব বলেন, ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ সব সময় থাকবে। সবাই যদি বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্তে আসেন উনারাই বলে দিবেন কীভাবে আমরা অগ্রসর হবো।from Daily inkilab
ঢাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম (ঢাকা-২), নসরুল হামিদ বিপু (ঢাকা-৩), ফজলে নুর তাপস (ঢাকা-১০), আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২), জাহাঙ্গীর কবীর নানক (ঢাকা-১৩ ), ডা. এনাম (ঢাকা-১৯ ), এম.এ. মালেক (ঢাকা-২০)। এছাড়া সারাদেশে মো. দবিরুল ইসলাম (ঠাকুরগাঁও-২), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), টিপু মুন্সী (রংপুর-৪), আহসানুল হক চৌধুরী (রংপুর-২), এইচ.এন. আশিকুর রহমান (রংপুর-৫), নুরুজ্জামান আহমেদ (লালমনিরহাট-২), ওমর ফারক চৌধুরী (রাজশাহী-১), ফজলে হোসেন বাদশা (ওয়ার্কার্স পার্টি) (রাজশাহী-২), এনামুল হক (রাজশাহী-৪), মো. আবুল কালাম (নাটোর-১), মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল (নাটোর-২), মো. আব্দুল কুদ্দুস (নাটোর-৪), মো. নাসিম (সিরাজগঞ্জ-১), মো. হাবিবে মিল্লাত (সিরাজগঞ্জ-২), মো. ইসহাক হোসেন তালুকদার (সিরাজগঞ্জ-৩), তানভীর ইমাম (সিরাজগঞ্জ-৪), মো. হাসিবুর রহমান স্বপন (সিরাজগঞ্জ-৬), শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), শেখ হেলাল উদ্দিন (বাগেরহাট-১), মীর শওকত আলী বাদশা (বাগেরহাট-২), তোফায়েল আহমেদ (ভোলা-১), আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (ভোলা-৪), আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ (বরিশাল-১), আমির হোসেন আমু (ঝালোকাঠি-২), এ.কে.এম.এ. আউয়াল (সাঈদুর রহমান) (পিরোজপুর-১), আমানুর রহমান খাঁন রানা (টাঙ্গাঈল-৩), প্রমোদ মানকিন (ময়মনসিংহ-১), শরীফ আহমেদ (ময়মনসিংহ-২), আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন (ময়মনসিংহ-৯), সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১), রেজওয়ান আহমদ তৌফিক (কিশোরগঞ্জ-৪), মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২), মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সিগঞ্জ-৩), আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), রাজি উদ্দিন আহমেদ (নরসিংদী-৫), মো. নজরুল ইসলাম বাবু (নারায়নগঞ্জ-২), শামীম ওসমান (নারায়নগঞ্জ-৪), কাজী কেরামত আলী (রাজবাড়ী-১), মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১), খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ফরিদপুর-৩), নূর-ই-আলম চৌধুরী (মাদারীপুর-১), শাজাহান খান (মাদারীপুর-২), আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম (মাদারীপুর-৩), বি.এম. মোজাম্মেল হক (শরীয়তপুর-১), শওকত আলী (শরীয়তপুর-২), নাহিম রাজ্জাক (শরীয়তপুর-৩), মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভী বাজার-৪), অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (কুমিল্লা-৭), আ.হ.ম. মুস্তফা কামাল (কুমিল্লা-১০), ড. মহিউদ্দিন খাঁন আলমগীর (চাঁদপুর-১), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (চাঁদপুর-২), ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩),ড. মো. শামছুল হক ভূইয়া (চাঁদপুর-৪), মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (চাঁদপুর-৫), নিজাম উদ্দিন হাজারী (ফেনী-২), মোরশেদ আলম (নোয়াখালী-২), ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), এ.কে.এম. শাহজাহান কামাল (লক্ষীপুর-৩), ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (চট্টগ্রাম-১), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬), মো. হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), মাঈন উদ্দীন খান বাদল (জাসদ) (চট্টগ্রাম-৮), আফসারুল আমিন (চট্টগ্রাম-১০), নজরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), আবুল মাল আব্দুল মুহিত (সিলেট-১), কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩), মো. ফজলে রাব্বি মিয়া (গাইবান্ধা-৫), আব্দুল মান্নান (বগুড়া-১), শরিফুল ইসলাম জিন্না (জাতীয় পার্টি) (বগুড়া-২), মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার (জাতীয় পার্টি-জেপি) (বগুড়া-৩), মো. হাবিবুর রহমান (বগুড়া-৫), মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী (চাপাইনবাবগঞ্জ-১), মো. আব্দুল ওয়াদুদ (চাপাইনাবাবগঞ্জ-৩), মো. ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬), তালুকদার আব্দুল খালেক (বাগেরহাট-৩), আব্দুল হাফিজ মল্লিক (বরিশাল-৬), আনোয়ার হোসেন (পিরোজপুর-২), মো. আব্দুর রাজ্জাক (টাঙ্গাইল-১), আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৪), মো. একাব্বর হোসেন (টাঙ্গাইল-৭), শওকত মোমেন শাহজাহান (টাঙ্গাইল-৮), সালাইদ্দিন আহমেদ মুফতি (ময়মনসিংহ-৫), মো. সোহরাব উদ্দীন (কিশোরগঞ্জ-২), মো. আফজাল হোসেন (কিশোরগঞ্জ-৫), নজমুল আহসান পাপন (কিশোরগঞ্জ-৬), জাহিদ মালেক (মানিকগঞ্জ-৩), মো. জাহিদ আহসান রাসেল (গাজীপুর-২), মো. রহমত আলী (গাজীপুর-৩), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর-৫), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (নরসিংদী-৪), সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (ফরিদপুর-২), সৈয়দ মোহসিন আলী (মৌলভীবাজার-৩), আশেক উল্লাহ রফিক (কক্সবাজার-২) ও সাইমুম সরওয়ার কমল (কক্সবাজার-৩)।
এদিকে কমিশনের উপ সচিব ফরহাদ আহমেদ খান গতকাল জানান, যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন তাদের বাদ দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখন প্রকাশ করা হবে। কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবে ইসি। আজ দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় আসলেও এখন নির্বাচন কমিশনের জন্য বিষয়টি জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। গতকাল সন্ধ্যায় ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। দলের প্রতীক বরাদ্দ ও প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান সিইসি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পাঠানো চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তা করবেন আইন মোতাবেক। আমরা বলে দিয়েছি, সে মোতাবেক করবেন। চলমান সংলাপ ও বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কাজী রকিব বলেন, ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ সব সময় থাকবে। সবাই যদি বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্তে আসেন উনারাই বলে দিবেন কীভাবে আমরা অগ্রসর হবো।from Daily inkilab
জারজনামা গোলাম মাওলা রনি
এই শতাব্দীর সেরা পণ্ডিত শ্রী নিরোদ চন্দ্র চৌধুরী বহু বছর আগে লিখেছিলেন
‘বাঙ্গালী জীবনে রমণী’ নামে এক অকাট্য প্রামাণ্য দলিল। নিরোদ বাবু চোখে
আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, আবহমান বাংলার গ্রামগঞ্জে নারী-পুরুষ কীভাবে অবাধ এবং
নীতিহীন যৌনাচারে মেতে ওঠে এবং সমাজসংসারকে ফাঁকি দিয়ে একের পর এক জারজ
সন্তান পয়দা করে। প্রায় ষাট বছর হতে চলল, কিন্তু আজ অবধি নিরোদ বাবুর বইকে
চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কোনো বাঙালি লেখক কোনো বই রচনা করেননি।
দেশ-বিদেশের সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা বাবা-মায়ের অবৈধ সন্তানদের কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। প্রথমত, তারা কথায় কথায় অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে, যাকে আমরা সোজা বাংলায় বলি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। এরা খুবই অধৈর্য প্রকৃতির এবং সন্দেহপ্রবণ হয়ে থাকে। কখনো কখনো তারা অতিমাত্রায় অত্যাচারী হয়ে ওঠে, আবার একই ব্যক্তি প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে ছোট করতে করতে পশুর পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাদের বিবেক বলতে তেমন কিছু থাকে না। ফলে তাবত্ বিশ্বে অনাদিকাল থেকে বাবা-মায়ের অবৈধ সন্তানরা সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি পরিবার কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে আসছে।
আজ আমার হঠাত্ করেই এসব কথা মনে পড়ল একটি কারণে। গতকাল ফেসবুকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার অন্তিম অনুরোধ রাখতে গিয়ে আমি একটি স্ট্যাটাস দিই। এর পর থেকে কিছু অমানুষের অশ্লীল বাক্যবাণে ফেসবুকের পাতা ভরে যেতে থাকে। ওদের পাশবিক অভিব্যক্তি কেবল তাদের বাবা-মায়ের কর্মকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
পৃথিবীতে মানুষ আসার পর থেকেই এক মানুষ অন্য মানুষের অন্তিম ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখায়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হয়। পছন্দমতো খাবার পরিবেশন কিংবা নিকটতম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। আসামি যদি মুসলমান হয়, সেক্ষেত্রে মৌলভী ডেকে দোয়া-দরুদ পড়ানো হয়। কাদের মোল্লার অন্তিম মুহূর্তের একটি অছিয়ত পালন করে মানুষ হিসেবে আমি নিজের কর্তব্যটুকু পালন করেছি মাত্র।
যেসব তরুণ বন্ধুরা ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ বলে দাবি তুলছেন, তাদের বলব— চলে যান ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার আমিরাবাদ গ্রামে। গ্রামের দীনদরিদ্র ঘনা মোল্লার ঘরে কাদের মোল্লা কত সালে জন্মগ্রহণ করেছিল সেই তথ্য নিয়ে কাজ শুরু করুন। তারপর যান বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমিতে। সেখানে কাদের মোল্লা প্রথমে ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়েন এবং পরে একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। নিজের দরিদ্রতার জন্য তিনি এলাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পীর ধলামিয়া সাহেবের বাড়িতে লজিং থাকতেন। এই লজিং থাকার সময়কাল সম্পর্কে এলাকাবাসীর সাক্ষ্য নিন।
ধলামিয়া পীর সাহেবের পরিবার ব্রিটিশ আমল থেকে এলাকার অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত এবং সম্মানিত পরিবার হিসেবে পরিচিত। পীর সাহেবের বড় ভাই আবুল হাসানাত ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের আইজি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আইজি সাহেবকে বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন। পীর সাহেবের পরিবার মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন এবং তার মেয়ের জামাই গাফফার ইঞ্জিনিয়ার ফরিদপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এই গাফফার ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী ছিলেন কাদের মোল্লার ছাত্রী।
ঢাকা প্রেস ক্লাবে এসেও তার সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন। নির্মল সেন ও সন্তোষ গুপ্তের মতো সাংবাদিকরা যখন দেশের সাংবাদিক সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তখন কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি হিসেবে কীভাবে দুইবার নির্বাচিত হলেন? তার চাকরিজীবনে উদয়ন স্কুল কিংবা বিডিআর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়েও খোঁজ নিতে পারেন।
আমি যে তথ্যগুলো দিলাম তা কিন্তু আমার নয়। আসামিপক্ষ উত্থাপন করেছিল। সরকার নিয়োজিত প্রসিকিউটররা একটু চেষ্টা করলেই ওইগুলোর সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কেবল ঘটনাস্থল মিরপুরকে কেন্দ্র করে তথ্য-উপাত্ত এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করায় সংক্ষুব্ধ পক্ষ তাদের আপত্তি উত্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে এটা আপনার জন্য বিবেকের দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আপনি সবকিছু শুনবেন, নাকি কিছু কিছু শুনবেন এবং বাকিগুলো শুনবেনই না।
আমি যখন স্ট্যাটাসটি প্রথম লিখেছিলাম, তখন ধরে নিয়েছিলাম রাত ১২টা ১ মিনিটে তা কার্যকর করা হবে। অন্যদিকে আজ যখন লিখছি তখন খবর এলো— কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ধারণা করা যায়, আজ রাতেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা বা দায়দায়িত্ব নেই। আমার দায়িত্ব কেবল ততটুকুই যতটুকু আমি জানি এবং যতটুকু পর্যন্ত আমার ক্ষমতা কার্যকর। আল্লাহ পাক যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন তারাই ভালো জানবেন কিংবা বলবেন— দুনিয়া এবং আখিরাতে।
লেখক : আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য
(নিবন্ধটি তার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া)
দেশ-বিদেশের সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা বাবা-মায়ের অবৈধ সন্তানদের কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। প্রথমত, তারা কথায় কথায় অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে, যাকে আমরা সোজা বাংলায় বলি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। এরা খুবই অধৈর্য প্রকৃতির এবং সন্দেহপ্রবণ হয়ে থাকে। কখনো কখনো তারা অতিমাত্রায় অত্যাচারী হয়ে ওঠে, আবার একই ব্যক্তি প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে ছোট করতে করতে পশুর পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাদের বিবেক বলতে তেমন কিছু থাকে না। ফলে তাবত্ বিশ্বে অনাদিকাল থেকে বাবা-মায়ের অবৈধ সন্তানরা সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি পরিবার কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে আসছে।
আজ আমার হঠাত্ করেই এসব কথা মনে পড়ল একটি কারণে। গতকাল ফেসবুকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার অন্তিম অনুরোধ রাখতে গিয়ে আমি একটি স্ট্যাটাস দিই। এর পর থেকে কিছু অমানুষের অশ্লীল বাক্যবাণে ফেসবুকের পাতা ভরে যেতে থাকে। ওদের পাশবিক অভিব্যক্তি কেবল তাদের বাবা-মায়ের কর্মকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
পৃথিবীতে মানুষ আসার পর থেকেই এক মানুষ অন্য মানুষের অন্তিম ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখায়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হয়। পছন্দমতো খাবার পরিবেশন কিংবা নিকটতম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। আসামি যদি মুসলমান হয়, সেক্ষেত্রে মৌলভী ডেকে দোয়া-দরুদ পড়ানো হয়। কাদের মোল্লার অন্তিম মুহূর্তের একটি অছিয়ত পালন করে মানুষ হিসেবে আমি নিজের কর্তব্যটুকু পালন করেছি মাত্র।
যেসব তরুণ বন্ধুরা ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ বলে দাবি তুলছেন, তাদের বলব— চলে যান ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার আমিরাবাদ গ্রামে। গ্রামের দীনদরিদ্র ঘনা মোল্লার ঘরে কাদের মোল্লা কত সালে জন্মগ্রহণ করেছিল সেই তথ্য নিয়ে কাজ শুরু করুন। তারপর যান বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমিতে। সেখানে কাদের মোল্লা প্রথমে ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়েন এবং পরে একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। নিজের দরিদ্রতার জন্য তিনি এলাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পীর ধলামিয়া সাহেবের বাড়িতে লজিং থাকতেন। এই লজিং থাকার সময়কাল সম্পর্কে এলাকাবাসীর সাক্ষ্য নিন।
ধলামিয়া পীর সাহেবের পরিবার ব্রিটিশ আমল থেকে এলাকার অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত এবং সম্মানিত পরিবার হিসেবে পরিচিত। পীর সাহেবের বড় ভাই আবুল হাসানাত ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের আইজি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আইজি সাহেবকে বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন। পীর সাহেবের পরিবার মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন এবং তার মেয়ের জামাই গাফফার ইঞ্জিনিয়ার ফরিদপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এই গাফফার ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী ছিলেন কাদের মোল্লার ছাত্রী।
ঢাকা প্রেস ক্লাবে এসেও তার সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন। নির্মল সেন ও সন্তোষ গুপ্তের মতো সাংবাদিকরা যখন দেশের সাংবাদিক সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তখন কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি হিসেবে কীভাবে দুইবার নির্বাচিত হলেন? তার চাকরিজীবনে উদয়ন স্কুল কিংবা বিডিআর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়েও খোঁজ নিতে পারেন।
আমি যে তথ্যগুলো দিলাম তা কিন্তু আমার নয়। আসামিপক্ষ উত্থাপন করেছিল। সরকার নিয়োজিত প্রসিকিউটররা একটু চেষ্টা করলেই ওইগুলোর সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কেবল ঘটনাস্থল মিরপুরকে কেন্দ্র করে তথ্য-উপাত্ত এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করায় সংক্ষুব্ধ পক্ষ তাদের আপত্তি উত্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে এটা আপনার জন্য বিবেকের দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আপনি সবকিছু শুনবেন, নাকি কিছু কিছু শুনবেন এবং বাকিগুলো শুনবেনই না।
আমি যখন স্ট্যাটাসটি প্রথম লিখেছিলাম, তখন ধরে নিয়েছিলাম রাত ১২টা ১ মিনিটে তা কার্যকর করা হবে। অন্যদিকে আজ যখন লিখছি তখন খবর এলো— কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ধারণা করা যায়, আজ রাতেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা বা দায়দায়িত্ব নেই। আমার দায়িত্ব কেবল ততটুকুই যতটুকু আমি জানি এবং যতটুকু পর্যন্ত আমার ক্ষমতা কার্যকর। আল্লাহ পাক যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন তারাই ভালো জানবেন কিংবা বলবেন— দুনিয়া এবং আখিরাতে।
লেখক : আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য
(নিবন্ধটি তার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া)
পঙ্কজ-সুজাতা বাংলাদেশীদের মুখ বিস্বাদ করে দিয়েছেন
১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, শুক্রবার, ১০:৪০
একজন মানুষের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী শোকের এমন বহিঃপ্রকাশ আগে মাত্র একবারই দেখেছিলামÑ ১৬ বছর আগে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুতে। সব জনমত অনুযায়ী সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রিটিশ রাজনীতিক ছিলেন স্যার উইনস্টন চার্চিল। ১৯৬৫ সালে তার শবযাত্রার ধারাবিবরণী প্রচারের সুযোগ আমার হয়েছিল। কিন্তু তখনো সাধারণ মানুষ কিংবা মিডিয়ার মধ্যে এমন ব্যাপক শোক, এমন আবেগ আর এমন আগ্রহ দেখিনি, যেমন দেখেছি নেলসন ম্যান্ডেলার মহাপ্রয়াণে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার (ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত) শাসকেরা সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শাসন ও শোষণ চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে অ্যাপার্থাইড (বর্ণভেদ) পদ্ধতি চালু করেছিলেন। তারা ‘পাস ল’ জারি করে পাসবুক ছাড়া কৃষ্ণাঙ্গদের শ্বেতাঙ্গ বসতি এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তরুণ আইনজীবী নেলসন ম্যান্ডেলা এবং আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) দল প্রথমে আইনের সাহায্যে এবং পরে গান্ধীর মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তাদের সহিংস গেরিলা যুদ্ধ শুরু করতে হয়। ম্যান্ডেলা ও তার সহকর্মীরা গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাবাসের বিপুল গরিষ্ঠ অংশ ম্যান্ডেলা রোবেন দ্বীপে বন্দী ছিলেন। দিনের বেশির ভাগ সময় তাকে পাথর ভেঙে কুচি তৈরি করতে হয়েছে।
ম্যান্ডেলার অসহনীয় নির্যাতন ভোগ এবং আফ্রিকানদের অমানুষিক অবিচার বিশ্বমানবতার অন্তর স্পর্শ করেছিল। ম্যান্ডেলার মুক্তির ও অ্যাপার্থাইড পদ্ধতির অবসানের দাবিতে বহু দেশে আন্দোলন শুরু হয়। এসব দাবির সপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপের দাবি ওঠে সর্বত্র। কিন্তু সাবেক সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার ও প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে দাবি মেনে নেয়নি। তারা অ্যাপার্থাইড সরকারকে সমরাস্ত্রসহ যাবতীয় উপকরণ সরবরাহ করে যায়। সেসব অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যা করে চলে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। লন্ডনে-নিউ ইয়র্কে ছাত্রজনতা দিনের পর দিন অবরোধের দাবিতে প্রায়ই সহিংস আন্দোলন করে। ব্রিটিশ লেবার দলীয় সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী পিটার হেইন ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিপ্লবী লেখক তারিক আলী সে আন্দোলনেই খ্যাতি লাভ করেন। টোরিদলীয় প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ঘৃণাভরে তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় এএনসিকে সন্ত্রাসী দল বলে ঘোষণা করেন। বর্তমান টোরিদলীয় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সে সময় একটি ব্রিটিশ কোম্পানির হয়ে বাণিজ্যিক অর্ডারের তদবির করতে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার পরবর্তী সময়ে তার সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ম্যান্ডেলাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। ম্যান্ডেলার প্রয়াণে ডেভিড ক্যামেরন তার মৃত্যুকে সর্বোজ্জ্ব¡ল একটি আলোকবর্তিকা নিভে যাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ম্যান্ডেলাকে তার অনুপ্রেরণার উৎস বলে বর্ণনা করেছেন। ওবামা বলেছেন, ম্যান্ডেলার কথা মনে হলেই ব্যক্তি হিসেবে তার আরো ভালো হতে ইচ্ছে করে। ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জোহানেসবার্গের বিশ্বকাপ ফুটবল স্টেডিয়ামে ম্যান্ডেলার স্মৃতি অনুষ্ঠানে ৯০ হাজারেরও বেশি লোক যোগ দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। মুষল বৃষ্টি সত্ত্বেও ৫০ হাজারের বেশি লোক এসেছিলেন। সেখানে বাঘে-ছাগলে যেন এক ঘাটে পানি খেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা আর আমেরিকার চিরশত্রু কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো মুখোমুখি হয়েছেন, করমর্দন করে কথা বলেছেন এবং একই মঞ্চ থেকে ম্যান্ডেলার উদ্দেশে শ্রদ্ধানিবেদন করেছেন। তিনজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ আর জিমি কার্টার যোগ দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। যোগ দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং তিনজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, টোনি ব্লেয়ার ও জন মেজার।
ম্যান্ডেলার প্রতি বিশ্বমানবের শ্রদ্ধার্ঘ্য
প্রায় ১০০ দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। প্রেসিডেন্ট ওবামা ও প্রেসিডেন্ট ক্যাস্ট্রো ছাড়াও চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্রাজিল ও ভারতের রাষ্ট্রপতিরা ভাষণ দিয়েছেন সে অনুষ্ঠানে। রোববার ১৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব ট্র্যানস্কি প্রদেশে ম্যান্ডেলার পিতৃগ্রামে তাকে সমাহিত করা হবে। ম্যান্ডেলার কারাজীবনের প্রায় ২০ বছর তাকে পাহারা দিয়েছেন উগ্র অ্যাপার্থাইডপন্থী শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার গ্রেগরি। তিনি তার বইতে লিখেছেন, কারামুক্তির মুহূর্তে ম্যান্ডেলা করমর্দনের জন্য তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি ভুলব না’। গ্রেগরি লিখেছেন, তিনি তখন কান্না চেপে রাখতে পাারেননি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ম্যান্ডেলার অভিষেকে গ্রেগরি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
কারাভোগের শেষের বছরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ছিলেন এফ ডব্লিউ ডি কের্ক। শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে গিয়ে ডি কের্ক বলেছেন, কারামুক্ত হয়ে ম্যান্ডেলা তার অফিসে এলেন। তাকে দেখেই ডি কের্কের মনে হয়েছিল যে, লোকটিকে তার ভালো লাগবে। ম্যান্ডেলা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা এক দেশে আছি, আমাদের একসাথে (মিলেমিশে) কাজ করতে হবে। ডি কের্ক নাকি তখনই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু ম্যান্ডেলা চার বছর পরের নির্বাচন পর্যন্ত তাকে স্বপদে বহাল থাকতে অনুরোধ করেন। ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চাননি। দলের ও দেশের পীড়াপীড়িতে এক মেয়াদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করলেও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি কিছুতেই প্রেসিডেন্ট হতে রাজি হননি। মঙ্গলবারের স্মৃতি অনুষ্ঠানে ডি কের্কও উপস্থিত ছিলেন। এই হচ্ছে একটা মানুষের একটা পরিমাপ। তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত (এফ ডব্লিউ ডি কের্কের সাথে যৌথভাবে) করে নোবেল কমিটি অবশ্যই নিজেদের ধন্য মনে করেছিল। নিজের পরিবর্তে অন্য কাউকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে বলে যারা মেয়েশিশুর মতো কান্নাকাটি করে সব কিছু ভেঙেচুরে তছনছ করে দেন, তারা কি নিজেদের ম্যান্ডেলার নখের তুল্য বলেও মনে করেন? নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তখন প্রথম মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। সে সময় এক কলামে তাকে ম্যান্ডেলার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কি কখনো নিজের কথা ছাড়া আর কারো কথা শোনেন? ম্যান্ডেলার মাহাত্ম্যের একটু হাওয়াও কি তাদের গায়ে লেগেছে? ম্যান্ডেলা মহামানব ছিলেন এ কারণে যে, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা নয়, ক্ষমা ও সমঝোতাকে তিনি জীবনের আদর্শ করে তুলেছিলেন। ক্ষমা ও সমঝোতা শব্দ দুটো যে অভিধানে আছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জানে বলে মনে হয় না। ম্যান্ডেলার স্মৃতিতে বাংলাদেশ সরকার তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ম্যান্ডেলাকে অনুসরণ করলেই বলা যাবে, আন্তরিকতা আছে এই কর্মসূচিতে।
হাসিনার রাজনীতি এবং সুজাতার উসকানি
বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজেদের বর্তমান দেখে এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে শোকাপ্লুত। শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ নির্বাচনে রাজি নন, অতএব সংলাপের পথেও তারা যাবেন না। তারা জানেন এবং গোটা বিশ্ব জানে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় অনিবার্য। হাসিনা গোঁ ধরে বসে আছেন মধ্যযুগীয় রাজা-বাদশার মতো : লোকে সমর্থন করুক কী না-ই করুক সিংহাসনে বসে থাকব। ভারত ছাড়া আর কেউ তাকে সমর্থন করছে না। ভারত অবশ্যই সে মূল্য আদায় করে নিচ্ছে এবং নেবে। তারা বাংলাদেশের সড়ক, নৌ, রেলপথ ও সমুদ্রবন্দরগুলো বিনামূল্যে আদায় করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া সে ‘উপহার’ আর কেউ ভারতকে দেবে না। সুতরাং যেকোনো মূল্যে দলটিকে গদিতে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত সরকার।
মনে হচ্ছে, সে প্রক্রিয়া অনুসারে ভারত সব দিক দিয়ে বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এক দিনের সফর করে গেছেন। তার পিতা ষড়যন্ত্র করে সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সুজাতা নিজে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম আদায় করে নিয়েছিলেন। চাণক্যের উপযুক্ত শিষ্যা তিনি। অবশ্যই তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আরো উসকানি দিয়ে যেতে। সুজাতা বলে গেছেন, যেসব দল অংশ নিতে রাজি আছে তাদের নিয়ে নির্বাচন করলেই সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। একই দমে তিনি বলেছেন, ‘সেটা বাংলাদেশের মানুষই স্থির করবে।’
সুজাতা আরো বলেছেন, গণতন্ত্র একেক দেশে একক রকম হয়। বাংলাদেশের মানুষ, কিন্তু জানে গণতন্ত্র মানেই হলো, গণতন্ত্র। তারা জানে স্ট্যালিনের একদলীয় নির্বাচনকে গোটা বিশ্ব গণতন্ত্র বলে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি এবং সে জন্যই অর্ধশতাব্দীজুড়ে বিশ্বব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধ হয়েছিল। অবশ্যি সুজাতার দেশ ভারত সে অর্ধ শতাব্দী ধরে স্বৈরতন্ত্রী স্ট্যালিন ও তার উত্তরসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের লেজুড় ছিল। বাংলাদেশের মানুষের আরো মনে আছে, আইয়ুব খানের কনভেনশন মুসলিম লীগের নির্বাচন কিংবা ‘বুনিয়াদি গণতন্ত্রকে’ গণতন্ত্র বলে মানতে তারা রাজি হয়নি। আজো তারা গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায়, সুজাতা সিংয়ের মতলবি গণতন্ত্র নয়।
বিজেপি ও জামায়াতে ইসলামী
সুজাতা সিং তার গণতন্ত্রের সপক্ষে বলে গেছেন, শেখ হাসিনা গদিতে না থাকলে বাংলাদেশ ‘ইসলামী সন্ত্রাসী’ হয়ে যাবে। ভারত সরকার এমনই অন্ধ হয়ে গেছে যে, প্রকৃত পরিস্থিতি তাদের চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ধর্মভীরু মুসলমান। তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দাড়ি রাখে আর টুপি পরে মসজিদে যায় এবং এ দেশে ধর্মীয় রাজনীতি আছে। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী আছে, যেমন ভারতে আছে বিজেপি, শিব সেনা প্রমুখ হাজারো উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল। তাদের কেউ কেউ ২০ কোটি মুসলমানকে ভারতের নাগরিক বলে স্বীকার করতে রাজি নয়। ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভাঙায় বড় ভূমিকা ছিল বিজেপির। সে দলের শীর্ষনেতারা নিজের হাতে মসজিদ ভেঙেছেন। ২০০২ সালে গুজরাটের বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উৎসাহ ও সাহায্যে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় দুই হাজার মুসলমান প্রাণ হারান।
মোদি তার তদন্ত কিংবা বিচার করেননিÑ যেমন বাংলাদেশ সরকার বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। শেষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টই এই দাঙ্গা আর মোদির ভূমিকা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজো নরেন্দ্র মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকার করছে। আগামী বছরের নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলে নরেন্দ্র মোদি হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেই ভারতের মুখে বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির নিন্দা পরিহাসের মতোই শোনায়। প্রকৃত পরিস্থিতি হচ্ছে, বর্তমান সরকার তার বিদেশী মুরব্বিদের মনোরঞ্জনের জন্য মুসলিম নির্যাতন করে দেখাতে চাইছে যে, তারা সন্ত্রাস দলন করছেন। ওদিকে যতই নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, বাংলাদেশী মুসলমানের ধর্মীয় অনুরাগ ততই বেড়ে চলেছে। এ সরকার গদিতে আসার আগে তো হেফাজতে ইসলাম বলে কোনো আন্দোলন বাংলাদেশে ছিল না!
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের অবাঞ্ছিত ও অশোভন হস্তক্ষেপের সমালোচনা অনেকে করেছেন। অন্যরা অবিশ্বাস আর ক্ষোভে মুখ ফিরিয়ে আছেন। তার ওপর ‘রঙের ওপর রসান চড়ালেন’ সুজাতা সিং। পঙ্কজ শরণ ও সুজাতা সিংয়ের বোঝা উচিত, ভারতের আধিপত্যবাদ এবং সাম্প্রতিক অন্যায় হস্তক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের মানুষের মুখ বিস্বাদ হয়ে আর মন বিষিয়ে গেছে। দুই বছর আগে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মন বিষিয়ে দিচ্ছে। সেটা কতটা সত্যি জানি না, কিন্তু ইদানীং অন্যদের গোপন এবং পঙ্কজ শরণ ও সুজাতা সিংয়ের প্রকাশ্য ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষের মন বিষয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সে কাজে আর জামায়াতে ইসলামীকে কিছু করতে হবে না।
অশুভ জন্মলগ্ন!
আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে একটা ‘অশুভ প্রেতাত্মা’ যেন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে তারিখটাÑ ২৩ জুন ১৯৪৮Ñ ছিল পলাশী যুদ্ধের বার্ষিকী। ১৭৫৭ সালের ওই একই তারিখে পলাশীর আম্রকাননেই মীর জাফর ও তার সহষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার স্বাধীনতা ইংরেজের হাতে তুলে দিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের এবং তার উত্তরসূরি বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে তাদের জীবনের মূল ব্রত বলে স্বীকার করে নিয়েছে। এ দেশের জনতার আন্দোলনেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিব মুক্তি পেয়েছিলেন।
একাত্তরে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের চলে গেলেন। এদিকে বাংলাদেশের জনতা তার অনুপস্থিতিতেই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। অবশ্যি মুজিবের সপক্ষে বলতেই হবে, একাত্তরে তাজউদ্দীন আহমদের সাথে ভারতের সাত দফা চুক্তি মেনে নিতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী তুলে নিতে ইন্দিরা গান্ধীকে বাধ্য করেছিলেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান নেত্রী কি দেশের মানুষকে বিশ্বাস করেন না? তিনি জনতার স্বার্থ ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে গেছেন।
আওয়ামী লীগের চরিত্রের আরেকটা ত্রুটি, তারা ফাঁকা মাঠে রাজনীতি করতে ভালোবাসে। স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনীকে দিয়ে ৪০ হাজার সমালোচক ও বিরোধীকে হত্যা করা হয়েছিল। ৩০০ সদস্যের সংসদে মাত্র চার-পাঁচজন সদস্য মুজিবের সমালোচক ছিলেন। সেটাও সহ্য হয়নি। একদলীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কথা ভুলে গিয়ে তিনি মধ্য মেয়াদে বিভাজক নির্বাচন করেছিলেন। পত্রপত্রিকায় অশাসন-কুশাসনের সমালোচনা হচ্ছিল। তিনি সব বেসরকারি পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিলেন। তিনি রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একদলীয় ব্যবস্থায় আজীবন রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গোড়া থেকেই বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধী ও সমালোচকদের বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুম-খুন করছে, হাজার হাজার লোককে কয়েদ করে রেখেছে। বিরোধী দলের সমর্থক পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিয়ে, ১৯ জন সাংবাদিকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এবং মাহমুদুর রহমানসহ সমালোচকদের মিথ্যা মামলায় বন্দী করে বিরোধী দলের বাকরোধ করেছে। ওদিকে গৃহপালিত মিডিয়া দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বিরোধী দল এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে চলেছে। বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাইকেই মিথ্যা মামলায় জেলে পুরে রাখা হয়েছে। এভাবে তারা নির্বাচন করতে চায়, এটাকে তারা রাজনীতি বলে। আপনাদের কি নিচের কবিতাটির কথা মনে পড়ে না?
‘বাবুরাম সাপুড়ে/কোথা যাস বাপুরে/ আয় বাবা দেখে যা/ দুটো সাপ রেখে যা/ যে সাপের দাঁত নেই, চোখ নেই/ করে নাকো ফোঁস-ফাঁস/ মারে নাকো ঢুঁস-ঢাঁস/ সেই সাপ জ্যান্ত/ গোটা দুই আন তো/ তেড়ে মেরে ডাণ্ডা/ করে দিই ঠাণ্ডা।naya diganta
একজন মানুষের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী শোকের এমন বহিঃপ্রকাশ আগে মাত্র একবারই দেখেছিলামÑ ১৬ বছর আগে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুতে। সব জনমত অনুযায়ী সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রিটিশ রাজনীতিক ছিলেন স্যার উইনস্টন চার্চিল। ১৯৬৫ সালে তার শবযাত্রার ধারাবিবরণী প্রচারের সুযোগ আমার হয়েছিল। কিন্তু তখনো সাধারণ মানুষ কিংবা মিডিয়ার মধ্যে এমন ব্যাপক শোক, এমন আবেগ আর এমন আগ্রহ দেখিনি, যেমন দেখেছি নেলসন ম্যান্ডেলার মহাপ্রয়াণে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার (ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত) শাসকেরা সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শাসন ও শোষণ চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে অ্যাপার্থাইড (বর্ণভেদ) পদ্ধতি চালু করেছিলেন। তারা ‘পাস ল’ জারি করে পাসবুক ছাড়া কৃষ্ণাঙ্গদের শ্বেতাঙ্গ বসতি এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তরুণ আইনজীবী নেলসন ম্যান্ডেলা এবং আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) দল প্রথমে আইনের সাহায্যে এবং পরে গান্ধীর মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তাদের সহিংস গেরিলা যুদ্ধ শুরু করতে হয়। ম্যান্ডেলা ও তার সহকর্মীরা গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাবাসের বিপুল গরিষ্ঠ অংশ ম্যান্ডেলা রোবেন দ্বীপে বন্দী ছিলেন। দিনের বেশির ভাগ সময় তাকে পাথর ভেঙে কুচি তৈরি করতে হয়েছে।
ম্যান্ডেলার অসহনীয় নির্যাতন ভোগ এবং আফ্রিকানদের অমানুষিক অবিচার বিশ্বমানবতার অন্তর স্পর্শ করেছিল। ম্যান্ডেলার মুক্তির ও অ্যাপার্থাইড পদ্ধতির অবসানের দাবিতে বহু দেশে আন্দোলন শুরু হয়। এসব দাবির সপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপের দাবি ওঠে সর্বত্র। কিন্তু সাবেক সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার ও প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে দাবি মেনে নেয়নি। তারা অ্যাপার্থাইড সরকারকে সমরাস্ত্রসহ যাবতীয় উপকরণ সরবরাহ করে যায়। সেসব অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যা করে চলে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। লন্ডনে-নিউ ইয়র্কে ছাত্রজনতা দিনের পর দিন অবরোধের দাবিতে প্রায়ই সহিংস আন্দোলন করে। ব্রিটিশ লেবার দলীয় সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী পিটার হেইন ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিপ্লবী লেখক তারিক আলী সে আন্দোলনেই খ্যাতি লাভ করেন। টোরিদলীয় প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ঘৃণাভরে তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় এএনসিকে সন্ত্রাসী দল বলে ঘোষণা করেন। বর্তমান টোরিদলীয় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সে সময় একটি ব্রিটিশ কোম্পানির হয়ে বাণিজ্যিক অর্ডারের তদবির করতে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার পরবর্তী সময়ে তার সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ম্যান্ডেলাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। ম্যান্ডেলার প্রয়াণে ডেভিড ক্যামেরন তার মৃত্যুকে সর্বোজ্জ্ব¡ল একটি আলোকবর্তিকা নিভে যাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ম্যান্ডেলাকে তার অনুপ্রেরণার উৎস বলে বর্ণনা করেছেন। ওবামা বলেছেন, ম্যান্ডেলার কথা মনে হলেই ব্যক্তি হিসেবে তার আরো ভালো হতে ইচ্ছে করে। ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জোহানেসবার্গের বিশ্বকাপ ফুটবল স্টেডিয়ামে ম্যান্ডেলার স্মৃতি অনুষ্ঠানে ৯০ হাজারেরও বেশি লোক যোগ দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। মুষল বৃষ্টি সত্ত্বেও ৫০ হাজারের বেশি লোক এসেছিলেন। সেখানে বাঘে-ছাগলে যেন এক ঘাটে পানি খেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা আর আমেরিকার চিরশত্রু কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো মুখোমুখি হয়েছেন, করমর্দন করে কথা বলেছেন এবং একই মঞ্চ থেকে ম্যান্ডেলার উদ্দেশে শ্রদ্ধানিবেদন করেছেন। তিনজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ আর জিমি কার্টার যোগ দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। যোগ দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং তিনজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, টোনি ব্লেয়ার ও জন মেজার।
ম্যান্ডেলার প্রতি বিশ্বমানবের শ্রদ্ধার্ঘ্য
প্রায় ১০০ দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। প্রেসিডেন্ট ওবামা ও প্রেসিডেন্ট ক্যাস্ট্রো ছাড়াও চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্রাজিল ও ভারতের রাষ্ট্রপতিরা ভাষণ দিয়েছেন সে অনুষ্ঠানে। রোববার ১৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব ট্র্যানস্কি প্রদেশে ম্যান্ডেলার পিতৃগ্রামে তাকে সমাহিত করা হবে। ম্যান্ডেলার কারাজীবনের প্রায় ২০ বছর তাকে পাহারা দিয়েছেন উগ্র অ্যাপার্থাইডপন্থী শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার গ্রেগরি। তিনি তার বইতে লিখেছেন, কারামুক্তির মুহূর্তে ম্যান্ডেলা করমর্দনের জন্য তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি ভুলব না’। গ্রেগরি লিখেছেন, তিনি তখন কান্না চেপে রাখতে পাারেননি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ম্যান্ডেলার অভিষেকে গ্রেগরি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
কারাভোগের শেষের বছরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ছিলেন এফ ডব্লিউ ডি কের্ক। শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে গিয়ে ডি কের্ক বলেছেন, কারামুক্ত হয়ে ম্যান্ডেলা তার অফিসে এলেন। তাকে দেখেই ডি কের্কের মনে হয়েছিল যে, লোকটিকে তার ভালো লাগবে। ম্যান্ডেলা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা এক দেশে আছি, আমাদের একসাথে (মিলেমিশে) কাজ করতে হবে। ডি কের্ক নাকি তখনই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু ম্যান্ডেলা চার বছর পরের নির্বাচন পর্যন্ত তাকে স্বপদে বহাল থাকতে অনুরোধ করেন। ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চাননি। দলের ও দেশের পীড়াপীড়িতে এক মেয়াদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করলেও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি কিছুতেই প্রেসিডেন্ট হতে রাজি হননি। মঙ্গলবারের স্মৃতি অনুষ্ঠানে ডি কের্কও উপস্থিত ছিলেন। এই হচ্ছে একটা মানুষের একটা পরিমাপ। তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত (এফ ডব্লিউ ডি কের্কের সাথে যৌথভাবে) করে নোবেল কমিটি অবশ্যই নিজেদের ধন্য মনে করেছিল। নিজের পরিবর্তে অন্য কাউকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে বলে যারা মেয়েশিশুর মতো কান্নাকাটি করে সব কিছু ভেঙেচুরে তছনছ করে দেন, তারা কি নিজেদের ম্যান্ডেলার নখের তুল্য বলেও মনে করেন? নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তখন প্রথম মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। সে সময় এক কলামে তাকে ম্যান্ডেলার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কি কখনো নিজের কথা ছাড়া আর কারো কথা শোনেন? ম্যান্ডেলার মাহাত্ম্যের একটু হাওয়াও কি তাদের গায়ে লেগেছে? ম্যান্ডেলা মহামানব ছিলেন এ কারণে যে, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা নয়, ক্ষমা ও সমঝোতাকে তিনি জীবনের আদর্শ করে তুলেছিলেন। ক্ষমা ও সমঝোতা শব্দ দুটো যে অভিধানে আছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জানে বলে মনে হয় না। ম্যান্ডেলার স্মৃতিতে বাংলাদেশ সরকার তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ম্যান্ডেলাকে অনুসরণ করলেই বলা যাবে, আন্তরিকতা আছে এই কর্মসূচিতে।
হাসিনার রাজনীতি এবং সুজাতার উসকানি
বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজেদের বর্তমান দেখে এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে শোকাপ্লুত। শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ নির্বাচনে রাজি নন, অতএব সংলাপের পথেও তারা যাবেন না। তারা জানেন এবং গোটা বিশ্ব জানে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় অনিবার্য। হাসিনা গোঁ ধরে বসে আছেন মধ্যযুগীয় রাজা-বাদশার মতো : লোকে সমর্থন করুক কী না-ই করুক সিংহাসনে বসে থাকব। ভারত ছাড়া আর কেউ তাকে সমর্থন করছে না। ভারত অবশ্যই সে মূল্য আদায় করে নিচ্ছে এবং নেবে। তারা বাংলাদেশের সড়ক, নৌ, রেলপথ ও সমুদ্রবন্দরগুলো বিনামূল্যে আদায় করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া সে ‘উপহার’ আর কেউ ভারতকে দেবে না। সুতরাং যেকোনো মূল্যে দলটিকে গদিতে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত সরকার।
মনে হচ্ছে, সে প্রক্রিয়া অনুসারে ভারত সব দিক দিয়ে বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এক দিনের সফর করে গেছেন। তার পিতা ষড়যন্ত্র করে সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সুজাতা নিজে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম আদায় করে নিয়েছিলেন। চাণক্যের উপযুক্ত শিষ্যা তিনি। অবশ্যই তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আরো উসকানি দিয়ে যেতে। সুজাতা বলে গেছেন, যেসব দল অংশ নিতে রাজি আছে তাদের নিয়ে নির্বাচন করলেই সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। একই দমে তিনি বলেছেন, ‘সেটা বাংলাদেশের মানুষই স্থির করবে।’
সুজাতা আরো বলেছেন, গণতন্ত্র একেক দেশে একক রকম হয়। বাংলাদেশের মানুষ, কিন্তু জানে গণতন্ত্র মানেই হলো, গণতন্ত্র। তারা জানে স্ট্যালিনের একদলীয় নির্বাচনকে গোটা বিশ্ব গণতন্ত্র বলে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি এবং সে জন্যই অর্ধশতাব্দীজুড়ে বিশ্বব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধ হয়েছিল। অবশ্যি সুজাতার দেশ ভারত সে অর্ধ শতাব্দী ধরে স্বৈরতন্ত্রী স্ট্যালিন ও তার উত্তরসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের লেজুড় ছিল। বাংলাদেশের মানুষের আরো মনে আছে, আইয়ুব খানের কনভেনশন মুসলিম লীগের নির্বাচন কিংবা ‘বুনিয়াদি গণতন্ত্রকে’ গণতন্ত্র বলে মানতে তারা রাজি হয়নি। আজো তারা গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায়, সুজাতা সিংয়ের মতলবি গণতন্ত্র নয়।
বিজেপি ও জামায়াতে ইসলামী
সুজাতা সিং তার গণতন্ত্রের সপক্ষে বলে গেছেন, শেখ হাসিনা গদিতে না থাকলে বাংলাদেশ ‘ইসলামী সন্ত্রাসী’ হয়ে যাবে। ভারত সরকার এমনই অন্ধ হয়ে গেছে যে, প্রকৃত পরিস্থিতি তাদের চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ধর্মভীরু মুসলমান। তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দাড়ি রাখে আর টুপি পরে মসজিদে যায় এবং এ দেশে ধর্মীয় রাজনীতি আছে। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী আছে, যেমন ভারতে আছে বিজেপি, শিব সেনা প্রমুখ হাজারো উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল। তাদের কেউ কেউ ২০ কোটি মুসলমানকে ভারতের নাগরিক বলে স্বীকার করতে রাজি নয়। ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভাঙায় বড় ভূমিকা ছিল বিজেপির। সে দলের শীর্ষনেতারা নিজের হাতে মসজিদ ভেঙেছেন। ২০০২ সালে গুজরাটের বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উৎসাহ ও সাহায্যে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় দুই হাজার মুসলমান প্রাণ হারান।
মোদি তার তদন্ত কিংবা বিচার করেননিÑ যেমন বাংলাদেশ সরকার বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। শেষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টই এই দাঙ্গা আর মোদির ভূমিকা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজো নরেন্দ্র মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকার করছে। আগামী বছরের নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলে নরেন্দ্র মোদি হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেই ভারতের মুখে বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির নিন্দা পরিহাসের মতোই শোনায়। প্রকৃত পরিস্থিতি হচ্ছে, বর্তমান সরকার তার বিদেশী মুরব্বিদের মনোরঞ্জনের জন্য মুসলিম নির্যাতন করে দেখাতে চাইছে যে, তারা সন্ত্রাস দলন করছেন। ওদিকে যতই নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, বাংলাদেশী মুসলমানের ধর্মীয় অনুরাগ ততই বেড়ে চলেছে। এ সরকার গদিতে আসার আগে তো হেফাজতে ইসলাম বলে কোনো আন্দোলন বাংলাদেশে ছিল না!
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের অবাঞ্ছিত ও অশোভন হস্তক্ষেপের সমালোচনা অনেকে করেছেন। অন্যরা অবিশ্বাস আর ক্ষোভে মুখ ফিরিয়ে আছেন। তার ওপর ‘রঙের ওপর রসান চড়ালেন’ সুজাতা সিং। পঙ্কজ শরণ ও সুজাতা সিংয়ের বোঝা উচিত, ভারতের আধিপত্যবাদ এবং সাম্প্রতিক অন্যায় হস্তক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের মানুষের মুখ বিস্বাদ হয়ে আর মন বিষিয়ে গেছে। দুই বছর আগে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মন বিষিয়ে দিচ্ছে। সেটা কতটা সত্যি জানি না, কিন্তু ইদানীং অন্যদের গোপন এবং পঙ্কজ শরণ ও সুজাতা সিংয়ের প্রকাশ্য ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষের মন বিষয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সে কাজে আর জামায়াতে ইসলামীকে কিছু করতে হবে না।
অশুভ জন্মলগ্ন!
আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে একটা ‘অশুভ প্রেতাত্মা’ যেন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে তারিখটাÑ ২৩ জুন ১৯৪৮Ñ ছিল পলাশী যুদ্ধের বার্ষিকী। ১৭৫৭ সালের ওই একই তারিখে পলাশীর আম্রকাননেই মীর জাফর ও তার সহষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার স্বাধীনতা ইংরেজের হাতে তুলে দিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের এবং তার উত্তরসূরি বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে তাদের জীবনের মূল ব্রত বলে স্বীকার করে নিয়েছে। এ দেশের জনতার আন্দোলনেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিব মুক্তি পেয়েছিলেন।
একাত্তরে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের চলে গেলেন। এদিকে বাংলাদেশের জনতা তার অনুপস্থিতিতেই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। অবশ্যি মুজিবের সপক্ষে বলতেই হবে, একাত্তরে তাজউদ্দীন আহমদের সাথে ভারতের সাত দফা চুক্তি মেনে নিতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী তুলে নিতে ইন্দিরা গান্ধীকে বাধ্য করেছিলেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান নেত্রী কি দেশের মানুষকে বিশ্বাস করেন না? তিনি জনতার স্বার্থ ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে গেছেন।
আওয়ামী লীগের চরিত্রের আরেকটা ত্রুটি, তারা ফাঁকা মাঠে রাজনীতি করতে ভালোবাসে। স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনীকে দিয়ে ৪০ হাজার সমালোচক ও বিরোধীকে হত্যা করা হয়েছিল। ৩০০ সদস্যের সংসদে মাত্র চার-পাঁচজন সদস্য মুজিবের সমালোচক ছিলেন। সেটাও সহ্য হয়নি। একদলীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কথা ভুলে গিয়ে তিনি মধ্য মেয়াদে বিভাজক নির্বাচন করেছিলেন। পত্রপত্রিকায় অশাসন-কুশাসনের সমালোচনা হচ্ছিল। তিনি সব বেসরকারি পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিলেন। তিনি রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একদলীয় ব্যবস্থায় আজীবন রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গোড়া থেকেই বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধী ও সমালোচকদের বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুম-খুন করছে, হাজার হাজার লোককে কয়েদ করে রেখেছে। বিরোধী দলের সমর্থক পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিয়ে, ১৯ জন সাংবাদিকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এবং মাহমুদুর রহমানসহ সমালোচকদের মিথ্যা মামলায় বন্দী করে বিরোধী দলের বাকরোধ করেছে। ওদিকে গৃহপালিত মিডিয়া দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বিরোধী দল এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে চলেছে। বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাইকেই মিথ্যা মামলায় জেলে পুরে রাখা হয়েছে। এভাবে তারা নির্বাচন করতে চায়, এটাকে তারা রাজনীতি বলে। আপনাদের কি নিচের কবিতাটির কথা মনে পড়ে না?
‘বাবুরাম সাপুড়ে/কোথা যাস বাপুরে/ আয় বাবা দেখে যা/ দুটো সাপ রেখে যা/ যে সাপের দাঁত নেই, চোখ নেই/ করে নাকো ফোঁস-ফাঁস/ মারে নাকো ঢুঁস-ঢাঁস/ সেই সাপ জ্যান্ত/ গোটা দুই আন তো/ তেড়ে মেরে ডাণ্ডা/ করে দিই ঠাণ্ডা।naya diganta
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩
শাহবাগিদের দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি, ইমরান সরকারকে দেশত্যাগে বাধা
তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার অতিগোপনে দেশ ছেড়ে কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করেও শাহজালাল বিমানবন্দরে পুলিশের বাধার কারণে যেতে পারেননি। শনিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের ঘোষিত মহাসমাবেশ ঠেকাতে ইমরান এইচ সরকারকে সরকার মাঠে রাখতে চায় বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করেছেন।
ডা. ইমরান কোনোভাবে বিদেশে যেতে পারলে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে না পারলে তিনি আগামী কয়েক বছর দেশে ফিরবেন না বলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।
এ নিয়ে অনলাইন নিউজ এজেন্সি ‘এ ওয়ান নিউজ’ খবর প্রকাশ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে।
এদিকে শাহবাগি আন্দোলনের ১১ নেতা কানাডার ভিসা পেয়েছেন বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে।
এছাড়া গায়ক প্রীতম আমেরিকার, ব্লগার অমি রহমান পিয়াল কানাডার, নির্ঝর মজুমদার আমেরিকার, রাকিবুল বাশার ফিনল্যান্ডের, মারুফ রসুল লন্ডনের, দেওয়ান তকি ফ্রান্সের, ইয়াসিন ফিদা হোসেন আমেরিকার, মাহমুদুল হক মুন্সী আমেরিকার ভিসার জন্য চেষ্টা করছেন বলে এসব মাধ্যমে বলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঘোষিত তফসিল বাতিল দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের লাগাতার নজিরবিহীন আন্দোলনে ভীত হয়ে নিরপেক্ষতাহীনতার অজুহাতে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ শাহবাগি আন্দোলনের নেতারা।
তাছাড়া ব্লগে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগারদের ফাঁসিসহ ১৩ দফা আন্দোলনের দাবিতে ফের আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় হেফাজতের মহাসমাবেশ করার ঘোষণায়ও শাহবাগি আন্দোলনের নেতারা আতঙ্কিত বলে জানা গেছে।
তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা দেশ ছাড়তে চাইছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জল্পনা-কল্পনা চলছিল।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপদ মনে করছেন। তাদের কারণেই দলের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে মনে করছেন গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অন্যতম সহযোগী, পৃষ্ঠপোষক, সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ। তাদের কারণেই পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতা।
আওয়ামী লীগের এসব নেতা মনে করছেন, বিরোধী দলের লাগাতার আন্দোলনের মাঝে হেফাজতসহ ইসলামপন্থীরা মাঠে নামলে শাহবাগি আন্দোলনের নেতারা টার্গেট হতে পারেন, তখন তাদের রক্ষায় প্রশাসন আগের মতো আন্তরিক নাও হতে পারে। এসব চিন্তা থেকে দলটির অনেক নেতাই চাইছেন, গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা আপাতত বিদেশে চলে যাক।
এসব কারণে শাহবাগি আন্দোলনের নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকার দেশ ছেড়ে কানাডায় যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ডা. ইমরান এইচ সরকার তাকে বিদেশে যেতে বাধা দেয়া হলো কেন—এ বিষয়ে পুলিশের কাছে জানতে চাইলেও তাকে কোনো উত্তর দেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আপনাকে দেশের বাইরে যেতে না দেয়ার জন্য উপরের নির্দেশ রয়েছে।’
ডা. ইমরানের ঘনিষ্ঠ গণজাগরণ মঞ্চের এক কর্মী অভিযোগ করেন, নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজত ১৩ দফা বাস্তবায়নের নামে নতুন করে ‘নৈরাজ্য’ সৃষ্টি করতে চাইছে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর সংগঠনটি সমাবেশ কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছে। হেফাজত মাঠে নামলে গণজাগরণ মঞ্চকেও সরকার মাঠে চায়। এজন্যই সরকার ডা. ইমরানকে আপাতত দেশের বাইরে যেতে দিতে চাইছে না।
এ ব্যাপারে ওসি ইমিগ্রেশন বেল্লাদ হোসেন জানান, রাত ১০টার আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি-না তা আমার জানা নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে কথিত গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে আন্দোলন করে দেশজুড়ে নিন্দিত হন ডা. ইমরান।
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের ব্যানারে এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার শাহবাগে রাস্তা বন্ধ করে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয়। আওয়ামী মিডিয়ার প্রচারের বদৌলতে অল্পদিনেই আন্দোলন দেশ-বিদেশে আলোচনায় উঠে আসে। আন্দোলনকারীদের তিন-চার স্তরের নিরাপত্তা দেয় সরকার। পাশাপাশি সরবরাহ করা হয় বিরিয়ানির হাজার হাজার প্যাকেট। ইমরান এইচ সরকার তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেন।
এ অবস্থায় আমার দেশসহ দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশ হয় ব্লগারদের জঘন্য আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী লেখা। তাদের ফাঁসির দাবিতে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম নামের অরাজনৈতিক সংগঠনের। ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম মহাসমাবেশ করে সংগঠনটি। একই রাতে ঘুমন্ত ও জিকিররত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।amerdesh
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩
সুজাতা সিং-এর বাংলাদেশ সফর : পিণ্ডির শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীনতা কী দিল্লির দাসত্বের জন্য!
ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশে ২১ ঘণ্টা ঝটিকা সফরের পর
নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে। সুজাতা সিং আবারো ইন্ডিয়ার অভিপ্রায়
প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের জনগণের সামনে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে
সাক্ষাত্ এবং সংবাদ সম্মেলনে ইন্ডিয়ার আসল ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
বাংলাদেশকে তারা ইতোমধ্যে একটি করদরাজ্য হিসেবেই মনে করছেন। আর এটা মনে
করার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণও রয়েছে। তার এই আচরণে প্রশ্ন উঠেছে মানচিত্রে
স্বাধীন হলেও সার্বভৌমত্বে স্বাধীন আছে কি বাংলাদেশ? গত ৫ বছরে শেখ হাসিনার
নেতৃত্বে আওয়ামী-বাম জোট বাংলাদেশকে উজাড় করে দিয়েছে ইন্ডিয়ার স্বার্থে।
হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসেছে ইন্ডিয়াকে। কোনো রকমের রাখডাক না করে সুজাতা সিং
যে ভারত আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় দেখতে চায় একেবারে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। একটি
দেশের নির্বাচন নিয়ে অপর কোনো রাষ্ট্র এরকম মন্তব্য সার্বভৌম কোনো জাতির
জন্য নিতান্তই লজ্জার বিষয়। আমরা কী তাহলে সত্যিই একটি সার্বভৌম জাতি!
মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদ প্রাণ উত্সর্গ করেছিলেন এরকম একটি বাংলাদেশের জন্য!
লাখো শহীদের আত্মত্যাগ, অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা
কী তাহলে ইন্ডিয়ার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য! ১৬ কোটি মানুষের ইচ্ছাকে
জলাঞ্জলি দিয়ে ইন্ডিয়ার অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্যই কী ছিল আমাদের
স্বাধীনতা সংগ্রাম।
ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে অনেক কথাই বলেছেন। বৈঠক করেছেন মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ৩০ মিনিটের একান্ত বৈঠক করেছেন সুজাতা। কি কথা হয়েছে দু’জনের মধ্যে কেউ জানেন না। একান্ত বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী শেখ হাসিনা ফুরফুরা মেজাজে রয়েছেন। কোনোকিছু কেয়ার করছেন না। যে কোনো মূল্যে তাদের সাজানো নির্বাচন করতে মরিয়া। একান্ত বৈঠকে এমন কী ইশারা পেয়েছেন শেখ হাসিনা তা তার ফুরফুরা মেজাজেই আভাস দিচ্ছে।
ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফরের বক্তব্য অনেক তাত্পর্যপূর্ণ। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি মন্তব্য পর্যালোচনা করলে সবই পরিষ্কার হয়ে যায়। আগামী নির্বাচন, ক্ষমতায় কাকে দেখতে চায়, সব দল নয়, অধিকসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ হলেই চলবে এমন সবই বলে গেছেন তিনি। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, নির্বাচনে ইন্ডিয়ার অভিপ্রায়ের প্রতিফলন দেখতে চায় সুজাতা। যেমন-(ক) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জাতীয় পার্টিকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের ভাষায় সুজাতা সিং তাকে বলেছেন, নির্বাচনে না গেলে অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলে জামায়াতে-শিবিরের উত্থান হবে। এখানে একেবারেই স্পষ্ট, তিনি এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের মানুষ কাদের নির্বাচিত করবে সেটা নিয়েও হুশিয়ার করছেন এরশাদ সাহেবকে। অর্থাত্ ইন্ডিয়া ভালো করেই জানে নীল-নকশার নির্বাচন না হলে তাদের পদলেহনকারীরা পরাজিত হবে। ক্ষমতায় আসবে বিরোধী দলীয় জোট।
(খ) সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুজাতা সিং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, অধিকসংখ্যক রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে দেখতে চায় ভারত। অধিকসংখ্যক দল অংশ নিলেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
খোলামেলা এই বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেছেন বিরোধীদলীয় জোটকে বাইরে রেখেই নির্বাচন চায় ভারত। জাতিসংঘ, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, চীন, জাপান, কানাডাসহ দুনিয়ার সব দেশ সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছে। আর সে জায়গায় সুজাতা সিং বললেন ভারত অধিকসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ দেখতে চায়। তাদের নীল নকশা অনুযায়ী প্রধান বিরোধীদলীয় জোটকে বাইরে রেখে এরশাদের দল জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা ছিল। যাতে আগামীতে পার্লামেন্টে সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো বাংলাদেশকে ভারতের করদরাজ্য হিসেবে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেও কেউ বিরোধিতা না করে।
সিকিম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে লেন্দুপ দর্জি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সিকিমকে ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশকে গত ৭ বছরে লেন্দুপ দর্জির মতো ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে ঘোষণা না দিলেও জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনের মাধ্যমে সব উজাড় করে দেয়া হয়েছে ভারতকে। এমনকি ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন মুদ্রা চালুর প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ট্রানজিটের নামে ভারত করিডোর চেয়েছে। বিনাশর্তে তা দেয়া হয়েছে। কোন শর্তে ট্রানজিটের নামে ভারতকে করিডোর দেয়া হয়েছে—বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছিল। তখন শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মসিউর রহমান কিছুটা স্পষ্ট করেছিলেন। তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে বলেছিলেন—বন্ধুরাষ্ট্রকে ট্রানজিটের বিনিময়ে কিছু চাওয়া হবে অসভ্যতা! তার এই উক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ হয় এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাতায়াতে শর্তহীন করিডোর দিতে কতটা উদারতা দেখিয়েছে শেখ হাসিনা।
সিলেট বিভাগসহ বাংলাদেশের একটি বিশাল এলাকা মরুভূমিতে রূপান্তর হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও ভারতকে টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে শেখ হাসিনা সরকার। তখনও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন—আগে বাঁধ দেয়া হোক, তারপর দেখা যাবে আমাদের কতটুকু ক্ষতি হয়। বাঁধ না দিলে তো আর সেটা বোঝা যাবে না! কিন্তু নদী বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সবাই সতর্ক করেছেন টিপাইমুখ বাঁধ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সুরমা- কুশিয়ারা নদী শুকনো মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়বে। এর প্রভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো পানির নদী হিসেবে পরিচিত মেঘনা শুকিয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চল তলিয়ে যাবে। এছাড়া হারিয়ে যাবে সিলেট অঞ্চলের হাওরের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে জেনেও টিপাইমুখ বাঁধের অনুমোদন দেয় আওয়ামী সরকার।
ভারতের পূর্বাঞ্চল ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানায় বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি নিতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারের কল্যাণে নৌ ট্রানজিটের বিনিময়ে ভারতের ভারী মালামাল প্রথমে আনা হয় আশুগঞ্জ নদীবন্দরে। সেখানে থেকে দেড়শ’ চাকার বিশাল গাড়িতে করে ভারী যন্ত্রপাতি বহনের মতো ব্রিজ, কালভার্ট নেই সড়কপথে। এজন্য ভারত নিজেই বাংলাদেশের তিতাস নদীসহ ১৮টি ছোট-বড় নদী এবং খালে বাঁধ দেয়। পানির প্রবাহ বন্ধ করে ভারী যানবাহন যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করা হয়। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে যেটা কল্পনাও করা যায় না; অথচ সেটাই বাংলাদেশের ভেতরে করেছে ভারত। বাংলাদেশে একটি দাসত্ব মনোভাবের সরকার থাকার ফলেই এসব সম্ভব হয়েছে।
(গ) সংবাদ সম্মেলনে সুজাতা সিং আরও স্পষ্ট করেই বলেছেন, নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি বিরাজমান এবং বলেছেন ভারত চায় সেটা অব্যাহত থাকুক। সুজাতা সিং এ বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বস্তিদায়ক। বাংলাদেশের মানুষ যা-ই ভাবুক না কেন, তারা এ সরকারকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়।
নিরাপত্তার দিক থেকে কতটা স্বস্তিদায়ক—সেটা আমাদের সীমান্তের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সীমান্তে প্রতিনিয়ত ভারতীয় হানাদার বিএসএফ বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করছে। সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতীক হয়ে আছে কাঁটাতারে ঝুলন্ত কিশোরী ফেলানীর লাশ। সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে বর্গির মতো হানা দিয়ে বাংলাদেশে নিরীহ কৃষকদের গরু-ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে মুক্তিপণের বিনিময়ে কারওটা ফেরত পায় আবার কেউ ফেরত পায় না। সীমান্তে বাংলাদেশী যুবকদের ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে বিএসএফ ক্যাম্পে নির্যাতনের বীভত্স চিত্র ইথারে ভাসে। গত ৫ বছরে দেড় হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য। সীমান্তে হানা দিয়ে বাংলাদেশের জমিতে চাষাবাদরত কৃষক এবং রাখাল নিধনের সংবাদও প্রকাশ হয় অহরহ।
অথচ একটি ঘটনারও কোনো কার্যকর প্রতিবাদ নেই। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রতি বছর যত নাগরিক বিএসএফ হত্যা করে, দুনিয়ার আর কোনো সীমান্তে এতটা হত্যাকাণ্ড ঘটে না। এমনকি বিরোধপূর্ণ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্তেও নয়। এটাই হলো সুজাতা সিংদের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক সম্পর্কের নমুনা! কারণ কোনো ঘটনা এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ নেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এজন্য ভারত বাংলাদেশে এরকম সেবাদাস সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে মরিয়া।
অপরদিকে একনজরে দেখা যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ঝুলে থাকা ন্যায্য পাওনা আদায় করা সম্ভব হয়নি। ন্যায্য প্রাপ্তি আদায়ের হিসাবটাও শূন্যের ঘরে। স্বাধীনতার পর থেকে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত চিহ্নিতকরণের চুক্তি হয়ে আছে। চুক্তি হয়ে আছে ছিটমহলগুলোর সমস্যা সমাধানের। কিন্তু ভারত সেগুলো আজও বাস্তবায়ন করেনি। বরং স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের অনুমোদনে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে রাজশাহী অঞ্চলকে মরুভূমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে ন্যায্য পাওনা পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে শুকিয়ে মরুভূমিতে রূপান্তর হচ্ছে তিস্তার দুই পাড়ের ভূমি। এমনিভাবে স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে ভারত। আমাদের ন্যায্য হিস্যার পানি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। ৪২ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা একটি সমস্যারও সমাধান করেনি। বরং নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করে বাংলাদেশের উর্বর ভূমিকে মরুভূমিতে রূপান্তরের প্রচেষ্টা নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। আর এটাই হচ্ছে সুজাতা সিংয়ের ভাষায় স্বস্তিদায়ক সম্পর্কের নমুনা। বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে এখানে কিছু নাইবা আনলাম।
প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বাংলাদেশের সব নাগরিকেরই প্রত্যাশা। তবে ন্যায্য পাওনা ঝুলিয়ে রেখে শুধু উজাড় করে দেয়ার নাম যদি বন্ধুত্ব হয়, তাহলে সেই বন্ধুত্ব মানুষ চায় না। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিনাসী আওয়ামী-বাম জোট সরকার সেটাই করেছে ভারতের সঙ্গে। এজন্যই তো ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করে প্রতিদান দিতে চায়। বিশেষ বিমানে উড়ে এসে পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা বলে গেছেন—সব দল নয়, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনই বাঞ্ছনীয়। মওলানা ভাসানীর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই। আর তা হলো—‘পিন্ডির শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছি দিল্লির দাসত্বের জন্য নয়’।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে অনেক কথাই বলেছেন। বৈঠক করেছেন মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ৩০ মিনিটের একান্ত বৈঠক করেছেন সুজাতা। কি কথা হয়েছে দু’জনের মধ্যে কেউ জানেন না। একান্ত বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী শেখ হাসিনা ফুরফুরা মেজাজে রয়েছেন। কোনোকিছু কেয়ার করছেন না। যে কোনো মূল্যে তাদের সাজানো নির্বাচন করতে মরিয়া। একান্ত বৈঠকে এমন কী ইশারা পেয়েছেন শেখ হাসিনা তা তার ফুরফুরা মেজাজেই আভাস দিচ্ছে।
ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফরের বক্তব্য অনেক তাত্পর্যপূর্ণ। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি মন্তব্য পর্যালোচনা করলে সবই পরিষ্কার হয়ে যায়। আগামী নির্বাচন, ক্ষমতায় কাকে দেখতে চায়, সব দল নয়, অধিকসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ হলেই চলবে এমন সবই বলে গেছেন তিনি। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, নির্বাচনে ইন্ডিয়ার অভিপ্রায়ের প্রতিফলন দেখতে চায় সুজাতা। যেমন-(ক) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জাতীয় পার্টিকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের ভাষায় সুজাতা সিং তাকে বলেছেন, নির্বাচনে না গেলে অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলে জামায়াতে-শিবিরের উত্থান হবে। এখানে একেবারেই স্পষ্ট, তিনি এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের মানুষ কাদের নির্বাচিত করবে সেটা নিয়েও হুশিয়ার করছেন এরশাদ সাহেবকে। অর্থাত্ ইন্ডিয়া ভালো করেই জানে নীল-নকশার নির্বাচন না হলে তাদের পদলেহনকারীরা পরাজিত হবে। ক্ষমতায় আসবে বিরোধী দলীয় জোট।
(খ) সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুজাতা সিং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, অধিকসংখ্যক রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে দেখতে চায় ভারত। অধিকসংখ্যক দল অংশ নিলেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
খোলামেলা এই বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেছেন বিরোধীদলীয় জোটকে বাইরে রেখেই নির্বাচন চায় ভারত। জাতিসংঘ, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, চীন, জাপান, কানাডাসহ দুনিয়ার সব দেশ সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছে। আর সে জায়গায় সুজাতা সিং বললেন ভারত অধিকসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ দেখতে চায়। তাদের নীল নকশা অনুযায়ী প্রধান বিরোধীদলীয় জোটকে বাইরে রেখে এরশাদের দল জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা ছিল। যাতে আগামীতে পার্লামেন্টে সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো বাংলাদেশকে ভারতের করদরাজ্য হিসেবে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেও কেউ বিরোধিতা না করে।
সিকিম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে লেন্দুপ দর্জি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সিকিমকে ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশকে গত ৭ বছরে লেন্দুপ দর্জির মতো ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে ঘোষণা না দিলেও জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনের মাধ্যমে সব উজাড় করে দেয়া হয়েছে ভারতকে। এমনকি ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন মুদ্রা চালুর প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ট্রানজিটের নামে ভারত করিডোর চেয়েছে। বিনাশর্তে তা দেয়া হয়েছে। কোন শর্তে ট্রানজিটের নামে ভারতকে করিডোর দেয়া হয়েছে—বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছিল। তখন শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মসিউর রহমান কিছুটা স্পষ্ট করেছিলেন। তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে বলেছিলেন—বন্ধুরাষ্ট্রকে ট্রানজিটের বিনিময়ে কিছু চাওয়া হবে অসভ্যতা! তার এই উক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ হয় এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাতায়াতে শর্তহীন করিডোর দিতে কতটা উদারতা দেখিয়েছে শেখ হাসিনা।
সিলেট বিভাগসহ বাংলাদেশের একটি বিশাল এলাকা মরুভূমিতে রূপান্তর হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও ভারতকে টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে শেখ হাসিনা সরকার। তখনও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন—আগে বাঁধ দেয়া হোক, তারপর দেখা যাবে আমাদের কতটুকু ক্ষতি হয়। বাঁধ না দিলে তো আর সেটা বোঝা যাবে না! কিন্তু নদী বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সবাই সতর্ক করেছেন টিপাইমুখ বাঁধ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সুরমা- কুশিয়ারা নদী শুকনো মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়বে। এর প্রভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো পানির নদী হিসেবে পরিচিত মেঘনা শুকিয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চল তলিয়ে যাবে। এছাড়া হারিয়ে যাবে সিলেট অঞ্চলের হাওরের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে জেনেও টিপাইমুখ বাঁধের অনুমোদন দেয় আওয়ামী সরকার।
ভারতের পূর্বাঞ্চল ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানায় বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি নিতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারের কল্যাণে নৌ ট্রানজিটের বিনিময়ে ভারতের ভারী মালামাল প্রথমে আনা হয় আশুগঞ্জ নদীবন্দরে। সেখানে থেকে দেড়শ’ চাকার বিশাল গাড়িতে করে ভারী যন্ত্রপাতি বহনের মতো ব্রিজ, কালভার্ট নেই সড়কপথে। এজন্য ভারত নিজেই বাংলাদেশের তিতাস নদীসহ ১৮টি ছোট-বড় নদী এবং খালে বাঁধ দেয়। পানির প্রবাহ বন্ধ করে ভারী যানবাহন যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করা হয়। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে যেটা কল্পনাও করা যায় না; অথচ সেটাই বাংলাদেশের ভেতরে করেছে ভারত। বাংলাদেশে একটি দাসত্ব মনোভাবের সরকার থাকার ফলেই এসব সম্ভব হয়েছে।
(গ) সংবাদ সম্মেলনে সুজাতা সিং আরও স্পষ্ট করেই বলেছেন, নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি বিরাজমান এবং বলেছেন ভারত চায় সেটা অব্যাহত থাকুক। সুজাতা সিং এ বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বস্তিদায়ক। বাংলাদেশের মানুষ যা-ই ভাবুক না কেন, তারা এ সরকারকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়।
নিরাপত্তার দিক থেকে কতটা স্বস্তিদায়ক—সেটা আমাদের সীমান্তের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সীমান্তে প্রতিনিয়ত ভারতীয় হানাদার বিএসএফ বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করছে। সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতীক হয়ে আছে কাঁটাতারে ঝুলন্ত কিশোরী ফেলানীর লাশ। সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে বর্গির মতো হানা দিয়ে বাংলাদেশে নিরীহ কৃষকদের গরু-ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে মুক্তিপণের বিনিময়ে কারওটা ফেরত পায় আবার কেউ ফেরত পায় না। সীমান্তে বাংলাদেশী যুবকদের ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে বিএসএফ ক্যাম্পে নির্যাতনের বীভত্স চিত্র ইথারে ভাসে। গত ৫ বছরে দেড় হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য। সীমান্তে হানা দিয়ে বাংলাদেশের জমিতে চাষাবাদরত কৃষক এবং রাখাল নিধনের সংবাদও প্রকাশ হয় অহরহ।
অথচ একটি ঘটনারও কোনো কার্যকর প্রতিবাদ নেই। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রতি বছর যত নাগরিক বিএসএফ হত্যা করে, দুনিয়ার আর কোনো সীমান্তে এতটা হত্যাকাণ্ড ঘটে না। এমনকি বিরোধপূর্ণ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্তেও নয়। এটাই হলো সুজাতা সিংদের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক সম্পর্কের নমুনা! কারণ কোনো ঘটনা এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ নেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এজন্য ভারত বাংলাদেশে এরকম সেবাদাস সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে মরিয়া।
অপরদিকে একনজরে দেখা যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ঝুলে থাকা ন্যায্য পাওনা আদায় করা সম্ভব হয়নি। ন্যায্য প্রাপ্তি আদায়ের হিসাবটাও শূন্যের ঘরে। স্বাধীনতার পর থেকে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত চিহ্নিতকরণের চুক্তি হয়ে আছে। চুক্তি হয়ে আছে ছিটমহলগুলোর সমস্যা সমাধানের। কিন্তু ভারত সেগুলো আজও বাস্তবায়ন করেনি। বরং স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের অনুমোদনে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে রাজশাহী অঞ্চলকে মরুভূমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে ন্যায্য পাওনা পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে শুকিয়ে মরুভূমিতে রূপান্তর হচ্ছে তিস্তার দুই পাড়ের ভূমি। এমনিভাবে স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে ভারত। আমাদের ন্যায্য হিস্যার পানি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। ৪২ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা একটি সমস্যারও সমাধান করেনি। বরং নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করে বাংলাদেশের উর্বর ভূমিকে মরুভূমিতে রূপান্তরের প্রচেষ্টা নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। আর এটাই হচ্ছে সুজাতা সিংয়ের ভাষায় স্বস্তিদায়ক সম্পর্কের নমুনা। বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে এখানে কিছু নাইবা আনলাম।
প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বাংলাদেশের সব নাগরিকেরই প্রত্যাশা। তবে ন্যায্য পাওনা ঝুলিয়ে রেখে শুধু উজাড় করে দেয়ার নাম যদি বন্ধুত্ব হয়, তাহলে সেই বন্ধুত্ব মানুষ চায় না। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিনাসী আওয়ামী-বাম জোট সরকার সেটাই করেছে ভারতের সঙ্গে। এজন্যই তো ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করে প্রতিদান দিতে চায়। বিশেষ বিমানে উড়ে এসে পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা বলে গেছেন—সব দল নয়, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনই বাঞ্ছনীয়। মওলানা ভাসানীর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই। আর তা হলো—‘পিন্ডির শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছি দিল্লির দাসত্বের জন্য নয়’।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩
বিদায় ম্যান্ডেলা : কাঁদছে বিশ্ব
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের বিশ্বনন্দিত নেতা, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা আর নেই।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় জোহানেসবার্গের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ম্যান্ডেলা দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। কয়েক মাস হাসপাতালে থাকার পর সম্প্রতি নিজের বাসভবনেই নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন তিনি।
ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বের মানুষের মনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ম্যান্ডেলার মৃত্যু ঘোষণা করে বলেন, ‘আমরা হারিয়েছি আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।’
দক্ষিণ আফ্রিকাকে নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছিলের দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা।
প্রেসিডেন্ট জুমা জানান, ১৫ ডিসেম্বর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত নেলসন ম্যান্ডেলাকে সমাধিস্থ করা না হবে ততদিন পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ভাষণে জুমা বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, আমাদের সবার প্রিয় নেলসন ম্যান্ডেলা চলে গেছেন। নিজের বাড়িতেই শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মারা গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম যে বিদায়ের এই দিন একদিন আসবে। কিন্তু তবুও, তার বিদায়ে আমরা যে গভীর বেদনা পেয়েছি, যে অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের হয়েছে, তা কিছুতেই কমানো সম্ভব নয়।’
১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তবে নিজের দেশের মানুষের কাছে অনেক বেশি পরিচিত ‘মাদিবা’ নামে। এটি তার গোত্র নাম। নিজের গোত্রে অজ গ্রামীণ জীবন থেকেই তার উত্থান। তার বাবা ছিলেন ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের থেম্বো রাজকীয় পরিবারের কাউন্সিলর।
দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ সমপ্রদায়ের আধিপত্য, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক শাসন ব্যবস্থা চলছিল তখন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় নামেন ম্যান্ডেলা। প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডের অপরাধে দীর্ঘ ২৭ বছর তিনি কারাবন্দি জীবন কাটিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ শাসনের আধিপত্যের অবসান ঘটে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ে শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ৩০ বছরের সংগ্রামের পরে দেশটিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা ধীরে ধীরে নমনীয় হতে শুরু করলে দেশ পুনর্গঠন ও ক্ষমা ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও বিলম্ব করেননি মহান এই নেতা।
১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে প্রথম নির্বাচনে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি আফ্রিকার অন্যান্য দেশের নেতাদের জন্যও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
১৯৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ নেতা এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন ম্যান্ডেলা।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার সামনে ছিল বর্ণবাদের ভিত্তিতে অসমতা ও বঞ্চনায় কয়েক যুগ ধরে পিষ্ট হতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে একত্রিত করার বিপুল কর্মযজ্ঞ। দায়িত্ব নেয়ার পর এ লক্ষ্যেই কাজ করে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে বর্ণবাদবিরোধী দীর্ঘ সংগ্রামের সময়ে উভয়পক্ষের দ্বারা সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার করেন। এর মধ্যে দিয়ে জাতিগত দাঙ্গার ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পায় দেশটির নাগরিকরা।
২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলার সময় শেষবারের মতো জনসমক্ষে আসেন ম্যান্ডেলা। সোয়েতোর সেই স্টেডিয়ামে ৯০ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সেদিন তাকে স্বাগত জানায়। এই সোয়েতোতেই সংগ্রামের নেতা হিসেবে অভিষেক হয়েছিল ম্যান্ডেলার।
১৯৬৩ সালে কুখ্যাত রিভোনিয়া ট্রায়ালে হত্যার অভিযোগে বিচারের সময় কাঠগড়ায় ম্যান্ডেলার দেয়া বক্তব্যটি তার রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন সম্পর্কে তার সাক্ষ্য বহন করে।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সারা জীবন আমি উত্সর্গ করেছি আফ্রিকার জনগণের জন্য। আমি লড়েছি শ্বেতাঙ্গ শোষণের বিরুদ্ধে, আমি লড়েছি কৃষ্ণাঙ্গ শোষণের বিরুদ্ধেও।’
ম্যান্ডেলার বর্ণাঢ্য জীবন
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু বর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর রসবোধ, তিক্ততা ভুলে বৈরী প্রতিপক্ষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মতো উদারতা এবং বর্ণাঢ্য ও নাটকীয় জীবনকাহিনী মিলিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
বর্ণবাদের অবসানের পর ১৯৯৪ সালের ১০ মে নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এর মাত্র এক দশক আগেও সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গশাসিত দক্ষিণ আফ্রিকায় এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছিল এক অকল্পনীয় ঘটনা। এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও তিনি ভূমিকা রাখেন।
তরুণ বিপ্লবী
তরুণ বয়সে নেলসন ম্যান্ডেলা চলে আসেন জোহানেসবার্গে, সেখানে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে।
একই সঙ্গে তিনি কাজ শুরু করেন একজন আইনজীবী হিসেবেও। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা অলিভার টাম্বোর সঙ্গে মিলে তিনি তার অফিস খোলেন জোহানেসবার্গে।
১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আদৌ আর লাভ হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
এ সময় এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিষম্ফল।
কারাগার থেকে রাজপ্রাসাদে
ম্যান্ডেলার দল এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উত্খাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নেলসন ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেন দ্বীপে তার দীর্ঘ কারাজীবন।
কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এএনসির শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দি করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ টাউনশিপগুলোতে বর্ণবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান শত শত কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ।
নেলসন ম্যানডেলার মুক্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান।
সেদিন কারাগারের সামনে দেয়া বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা তার সমর্থকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন সেই কথা, যা তিনি তার বিচারের সময় আদালতে বলেছিলেন।
ম্যান্ডেলা বলেন, এমন এক দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন দেখেন তিনি, যেখানে সব জাতি, সব বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘এটা এমন এক আদর্শ, যেটির আশায় আমি বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু যদি দরকার হয়, এই আদর্শের জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’
পুরনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে নতুন আফ্রিকা গড়ার কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা অতীতের তিক্ততার প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে তার সাবেক শ্বেতাঙ্গ নিপীড়কদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন। শুরু হলো এক নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার পথ চলা।
মুক্তির পর দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের সঙ্গে নতুন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়, যেখানে সব বর্ণ এবং সব জাতির সমানাধিকার থাকবে। এর পথ ধরেই ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নেলসন ম্যান্ডেলা।
রাজনৈতিক জীবনের মতো, নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বারের মতো বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার প্রথম স্ত্রী ইভলিন মেস। ইভলিনের ঘরে চার ছেলেমেয়ে জন্ম নেয়ার পর ১৯৫৮ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
দ্বিতীয় স্ত্রী এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা উইনি ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটি ছিল তার জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্তগুলোর একটি। ৮০তম জন্মদিবসে তিনি তৃতীয় বার বিয়ে করেন মোজাম্বিকের সাবেক ফার্স্ট লেডি গ্রাসা মার্শেলকে।
বিশ্বশান্তির প্রতীক
অবসরে যাওয়ার পরও নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যস্ততা থামেনি। স্বাধীনতা এবং বিশ্বশান্তির এক আইকন বা প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি। সুতরাং তার ডাক পড়তে থাকে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে।
তার এক ছেলে মারা গিয়েছিলেন এইডসে। এ ঘটনার পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় এইডস প্রতিরোধ এবং এর চিকিত্সা নিয়ে সোচ্চার হন। বাকি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এইডস নিরাময়ের লক্ষ্যে প্রচারণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
নেলসন ম্যান্ডেলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাকে কীভাবে মনে রাখলে খুশি হবেন তিনি? তার উত্তর ছিল, ‘আমি চাই আমার সম্পর্কে এ রকম কথাই বলা হোক— এখানে এমন এক মানুষ শায়িত আছেন, যিনি পৃথিবীতে তার কর্তব্য সম্পাদন করেছেন। আমি চাই এটুকুই বলা হোক আমার সম্পর্কে।’
বিশ্বনেতাদের শোক
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা।
ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘একজন মানুষ যা অর্জন করতে পারে ম্যান্ডেলা তার থেকেও বেশি কিছু অর্জন করেছেন। তিনি অন্যদের স্বাধীনতার জন্য নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘আজ তিনি চলে গেছেন এবং আমরা হারিয়েছে সবচেয়ে প্রভাবশালী, সাহসী ও সুগভীর ভালো মানুষটিকে।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘পৃথিবীর একটি মহান বাতি নিভে গেছে। ম্যান্ডেলা ছিলেন আমাদের সময়ের হিরো।’
বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটু বলেন, ‘মাদিবা ১৯৯০ সালে যখন জেল থেকে বের হন তখন তিনি ছিলেন মাটির নিচে মহামূল্যবান হীরার মতোই নিখুঁত। তিনি রক্তের বদলা রক্ত নিতে চাননি। এর পরিবর্তে তিনি ক্ষমা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে অসাধারণ মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ‘ন্যায়বিচারের মহীরুহ ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি ছিলেন গোটা বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণা।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ এবং সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠকরা একজন মহান নেতাকে হারিয়েছেন। স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য তার প্রচণ্ড আবেগ সারা বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের জন্য আশার সঞ্চার করেছে। তার কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা আজ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ।’
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল বলেন, ‘নেলসন ম্যান্ডেলার অহিংস রাজনীতির উত্তরাধিকার এবং সব ধরনের বর্ণবাদের নিন্দা বছরের পর বছর বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।’
বাংলাদেশে নেলসন ম্যান্ডেলা
বিশ্ববরেণ্য এই নেতার আগমন ঘটেছিল বাংলাদেশেও। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উত্সবে অংশ নিতে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ তিনি ঢাকায় আগমন করেন। সেই সময় আরও এসেছিলেন ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেদা ইয়াসির আরাফাত ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল। তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত শিখা চিরন্তন উদ্বোধন করবেন।
বাংলাদেশের মানুষ তার সেই ঐতিহাসিক সফরকে স্মরণে রেখেছে। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত শোক পালনকালে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
রাষ্ট্রপতির শোক
বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গতকাল এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাকে সুবিশাল ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে বিশ্ব অন্যতম এক প্রভাবশালী ও সাহসী নেতাকে হারালো।
আবদুল হামিদ বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলা জনগণের মুক্তি অর্জন ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তার দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলার পরিবার ও দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের প্রতি তার গভীর শোক জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ও বিংশ শতাব্দীর রাজনীতির বিশাল ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ এক শোকবার্তায় ম্যান্ডেলাকে মানবজাতির একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার মৃত্যুতে শান্তি, স্বাধীনতা ও সাম্যের জন্য নিরলস সংগ্রামী এক জীবনের অবসান হলো।
খালেদা জিয়ার শোক প্রকাশ
ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক মর্যাদা এবং সব মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠায় তিনি অপরিসীম সাহস দেখিয়েছেন। এই সর্বজনীন মূল্যবোধে যারা বিশ্বাস করেন তাদের কাছে তিনি চিরকাল অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে বিশ্ব হারিয়েছে এক মহান রাষ্ট্রনায়ককে।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেন।
মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩
সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আলোচিত প্রার্থী নদভী
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত শিবিরের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে
এবারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবু
রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী
কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন হাসান চৌধুরীসহ এক ডজন নেতাকে ডিঙিয়ে
আবু রেজা নদভী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অবাক হয়েছেন তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী। তারা বলেছেন, তিনি
অতীতে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে
নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর
সাথে আবু রেজা নদভীর পরিচয়ও নেই। এমনকি উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাও তাকে
ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না। এরপরও নেত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে দলীয়
প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন কিছু আওয়ামী লীগ নেতা। আবার কেউ
কেউ বলছেন নদভী এক সময় জামায়াতের পক্ষে ভোট চাওয়ায় এখন নৌকার পক্ষে ভোট
আদায় করাটা একটু কঠিন হবে। অনেকে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি
হননি। কেউ বলছেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের কাছে নদভী এখন ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ নেতা হিসাবে পরিচিত। তবে এলাকায় তিনি ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনেক মসজিদ, মাদ্রাসাসহ
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করেছেন। সে সুবাদে ধর্মীয়
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষের সাথে নদভীর
সুসম্পর্ক রয়েছে। এদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের
সাথে নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেছেন বলে
জানিয়েছেন। আবু রেজা নদভীকে দলের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। প্রত্যেক ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে নৌকা প্রতীকের পক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। লোকজন যথেষ্ট সাড়াও দিয়েছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া
ছাড়াও নেত্রী আমাকে যখন যেখানে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা সঠিক ভাবে পালন করে
এলাকার মানুষের সম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবু
রেজা নদভীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সে বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। নেত্রীর
সিদ্ধান্তকে আমি সব সময় শ্রদ্ধা করি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আবু
রেজা নদভী এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। জামায়াত
প্রার্থীর পক্ষে তিনি ভোটও চেয়েছেন। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে তার
কোন সম্পর্ক ছিল না। এরপরও নেত্রী যেহেতু তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তার
পক্ষে কাজ করবো। নেত্রী বলেছেন প্রার্থী নয়, নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য।
এ বিষয়ে আবু রেজা নদভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের
পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দেয়ার জন্য
সাধ্যমত চেষ্টা করবো। ইতোমধ্যে আমি কাজ শুরু করেছি। নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে সাড়াও পাচ্ছি। অতীতে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত না থাকলেও অনেক দলের অনেক নেতা-কর্মীর সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আশা করছি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, সমর্থকদের পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোটে আমি এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।
লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, অতীতে
লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আবু রেজা নদভীর কোন সম্পর্ক ছিলনা।
দলের হয়ে তাকে কোন কাজ করতে দেখিনি। আমার সাথে নদভীর ব্যক্তিগত কোন
সম্পর্কও নেই। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমিনুল ইসলাম আমিন দলের হয়ে অনেক কাজ
করেছেন। তার সাথে উপজেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। আমিন মনোনয়ন পেলে কাজ করতে কিছুটা সহজ হতো। তবে নেত্রী আমাদেরকে বলেছেন প্রার্থীর পক্ষে নয়, নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে। আমরা নদভীর পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করবো।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ মতলব জানান, নেত্রী
নদভীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো। অতীতে নদভীর
জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার ফরিদুল আলম জানান, আবু রেজা নদভী অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি এক সময় জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, রাজনীতিতে
শেষ কথা বলতে কিছুই নেই। এখন যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এসেছেন
আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। নৌকা প্রতীককে জয়ী করতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা
করবো।
এদিকে জামায়াতের সাথে আবু রেজা নদভীর এখনো
সুসম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা
মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, আবু
রেজা নদভীর পিতা আল বদরের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষের এই
লোককে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা চরমভাবে হতাশ হয়েছি। নদভী এখনো আওয়ামী লীগের সদস্য
ফরমও পূরণ করেন নি। ভোটের পরে তিনি আওয়ামী লীগ করবেন কিনা সে বিষয়েও
সন্দেহ রয়েছে। তবে নেত্রী যেহেতু নদভীকে প্রার্থী করেছেন আমরা তার বিপক্ষে
ভূমিকা রাখবো না।
লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আবু রেজা নদভীকে আমি চিনি না। দলের নেতা-কর্মীদের সাথেও তার পরিচয় নেই। তার পক্ষে ভোট আদায় করাটা একটু কঠিন হবে।
সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল মমতাজ চৌধুরী বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় অতীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভাল করতে পারেন নি। নদভীর সাথে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত
ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের সুসম্পর্ক রয়েছে। আবু রেজা নদভীকে মনোনয়ন প্রদান
করায় আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। নদভী অতীতের প্রার্থীদের চেয়ে
ভাল করবেন।From Daily Azadi
রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৩
১৫ নভেম্বর শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ : হাটহাজারীতে লক্ষাধিক তৌহিদি জনতার সমাবেশে আল্লামা শফীর ঘোষণা
আগামী ১৫ নভেম্বর ফের রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পার্বতীপুর হাইস্কুল মাঠে হেফাজতের বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে ১৫ নভেম্বরের এ মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বাধা দিলে পরে হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হাটহাজারীর মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। একই সঙ্গে শাপলা চত্বরের ১৫ নভেম্বর এ মহাসমাবেশের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ৭ নভেম্বর সিলেট, ৮ নভেম্বর খুলনায় মহাসমাবেশ করার পাশাপাশি সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন হেফাজত নেতারা।
মহাসমাবেশে অবিলম্বে শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার, রাসুলের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী ব্লগার ও নাস্তিকদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি জানানো হয়। অন্যথায় এদেশের সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদি জনতা তাদের ঈমানি শক্তি দিয়ে ওইসব নাস্তিক-মুরতাদদের কঠোরহস্তে প্রতিহত করবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
গতকালে হাটহাজারীর এ মহাবেশে লাখো আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার ঢল নামে। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন দেশ শীর্ষ আলেম ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। মহাসমাবেশ থেকে আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ইসলাম ও সত্য কথা লেখার কারণে আটক রাখা হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন হেফাজতের নেতারা। অন্যথায় বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
প্রসঙ্গত মতিঝিলের শাপলা চত্বরেই ব্লগে আল্লাহ, রাসুল (স.) ও পবিত্র কোরআন নিয়ে অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় কটূক্তির দায়ে নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসিসহ ১৩ দফা দাবিতে গত ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ও পরে ৫ মে ঢাকা অবরোধের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের বিশাল জনসমাগম ঘটিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি। তবে ৫ মে’র সমাবেশ লাখ লাখ আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার ওপর রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খল বাহিনী বর্বর গণহত্যা চালালে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এ গণহত্যার পর হেফাজতে ইসলাম ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও গত ছয় মাসে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। তবে ১৫ নভেম্বর আবারও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে নতুন করে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশের ঘোষণা দিল হেফাজত।
গতকাল হাটহাজারীর মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতের নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে শাপলা চত্বর থেকে আলেম-ওলামাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেই শাপলা চত্বরেই আবার তারা জমায়েত হবেন। এই সমাবেশে বাধা দিলে সরকারকে এর কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আইন পাস থেকে সরকারকে বিরত থাকা, উলামা-মাশায়েখ ও কওমি মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ও কটূক্তি বন্ধ, সংসদ বহাল থাকতেই সংবিধান সংশোধন করে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর কটূক্তিকারীদের ফাঁসির আইন পাস, ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও দমন-পীড়ন বন্ধ করাসহ ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল হাটহাজারীতে ওই মহাসমাবেশ করা হয়।
গতকালের মহাসমাবেশে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। দেশ বর্তমানের চেয়ে অনেক ভালো চলবে। আমাদের ১৩ দফায় কোনো মারামারি, হানাহানি, মিথ্যাচার, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী নেই। ওলামায়ে কেরাম সবসময় দুর্নীতি, মিথ্যাচার, সন্ত্রাস, হানাহানি ও জোর-জুলুমের বিরুদ্ধে। ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে দেশের শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার পাবে। গামেন্টকর্মীরা তাদের নিরাপত্তা, ন্যায্য বেতন-ভাতাসহ তাদের সব অধিকার ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও কর্তাব্যক্তিরা মিথ্যাচার ও কটূক্তি করে যাচ্ছেন। আমি যা বলেছি, তা ঠিকমত প্রকাশ না করে তারা মিথ্যা ও কারসাজির আশ্রয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমি মহিলাদের ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছি। রানীর সঙ্গে তুলনা করেছি। তারা মায়ের জাত। ওলামায়ে কেরাম সবসময় নারী জাতির সম্মান, ইজ্জত ও নিরাপত্তার কথা বলে থাকেন। ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে, কোনো ধর্ম সে সম্মান দেয়নি।
হেফাজতের আমির বলেন, আমাদের ঈমানি আন্দোলনে শাপলা চত্বরসহ সারাদেশে যারা শহীদ হয়েছেন, জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের আল্লাহ কবুল করুন।
তিনি একই সঙ্গে বলেন, ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে দেড় লাখ গুলি খরচ হয়েছে। কতজন আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ নবীপ্রেমিকদের হত্যা করেছেন, তার হিসাব সরকারের কাছে আছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি জানাচ্ছি।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী সরকারের সাম্প্রতিক কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাসের উদ্যোগের প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের শর্ত মেনে যদি সনদ দেয়া হয়, তবে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সনদের কোনো উল্লেখ না করে সরকার কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং দেশ থেকে ইসলামী শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য আইন পাস করতে চাচ্ছে। ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ও বিধ্বংসী আইন পাস করতে দেবে না।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, রাউজান, ফতেয়াবাদ, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মিরেরসরাই, রাঙামাটি, রামগড়, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষাধিক ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতা, সাধারণ মানুষ, আলেম-ওলামা এ মহাসমাবেশে যোগ দেয়।
এ সময় জনস্রোতে পরিণত হাটহাজারী এলাকা। ওলামা-মাশায়েখ, কওমি মাদরাসা ও তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে মহাজোট সরকারের ষড়যন্ত্র ও ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাস ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে মহাসমাবেশ এলাকা।
একই সঙ্গে তৌহিদি জনতা সরকারের ইসলাম ও দেশবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ, দুর্নীতি ও জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। এ সময় মিছিলকারীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল।
নানুপুর জামিয়া ওবাইদিয়ার পরিচালক আল্লামা সালাহউদ্দীন নানুপুরীর সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা মির ইদরীস, এম আহসান উল্লাহ ও মাহমুদ হোসাইনের পরিচালনায় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মজলুম জননেতা আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী। মহাসমাবেশে সংহতি জানিয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক আল্লামা মুফতি নূর হোসাইন কাসেমী, প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, আল্লামা আবদুল হামিদ পীরসাহেব মধুপুর, আল্লামা তাজুল ইসলাম, মাওলানা মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা সলিম উল্লাহ নাজিরহাট, মাওলানা মুঈনুদ্দিন রুহী, মাওলানা ইসহাক রাঙ্গুনিয়া, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা আহমদ দিদার, মাওলানা আনাস মাদানি, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন ঢাকা, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফি, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মুফতি আবদুল আজিজ, মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা হাফেজ ফয়সল, মাওলানা আজিজুর রহমান বাবুনগর, মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা মুহিউদ্দিন একরাম, মাওলানা ইবরাহিম শিকদার, মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা আবদুল্লাহ চারিয়া, মাওলানা ওসমান চারিয়া, মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান, মাওলানা আলমগীর প্রমুখ।
প্রধান বক্তা আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আমরা আগেও বলেছি, ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে ঈমান-আকিদার বিপক্ষে, ইসলামের বিপক্ষে এবং নাস্তিক ব্লগারসহ ধর্মদ্রোহীদের পক্ষে এভাবে অবস্থান নিয়ে কেউ ক্ষমতায় যেমন টিকে থাকতে পারবে না, তেমনি কেউ ক্ষমতায় যেতেও পারবে না। এদেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতা, আলেম-ওলামা এখন দল-মত ও ছোটখাট মতভেদ ভুলে গিয়ে ১৩ দফা ঈমানি দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। মুসলমানদের ঈমানি দৌলত ও হিম্মতের কাছে ষড়যন্ত্র করে কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, আমি আবারও পরিষ্কার বলতে চাই—হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি এদেশের অধিকাংশ মানুষের দাবি। এ দাবি গণদাবি। জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করার পরিণাম শুভ হবে না। যারা নাস্তিক ব্লগার, রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারী ধর্মদ্রোহীদের পক্ষ নিচ্ছেন, তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।
তিনি রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারী নাস্তিক ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান, ধর্ম অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে আইন পাস, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থার নীতি ফিরিয়ে আনাসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় জনগণ আপনাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
হেফাজত মহাসচিব আলেম-ওলামাদের ওপর হয়রানি বন্ধ, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং মুফতি ওয়াক্কাস, মুফতি সাখাওয়াত, মুফতি হারুনসহ গ্রেফতার করা আলেম-ওলামাদের মুক্তির দাবি জানান।
মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ইসলাম ও সত্য কথা তার পত্রিকায় লেখার কারণে এই সরকার তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে।
তিনি অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি করে বলেন, বাংলাদেশের লাখ মানুষের প্রাণপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ-এর বন্ধ প্রেস খুলে দিতে হবে, অন্যথায় বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কঠোর কর্মসূচি দেবে।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধ্বংস ও ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সরকারের অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপের নীল নকশা, অবিলম্বে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস, ইসলাম অবমাননাকারী ব্লগারদের ফাঁসি ৫, মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা ও পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার বিচার, সরকারের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন নীতি বাতিল এবং উলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়ে বক্তৃতা করেন।
বক্তারা বলেন, তৌহিদি জনতার একটাই দাবি, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই বাংলাদেশে ইহুদিদের এজেন্ট নাস্তিক-মুরতাদদের যেমন বেঁচে থাকার অধিকার নেই, তেমনি নাস্তিক্যবাদের সহায়ক ও দোসরদের ক্ষমতায় থাকারও কোনো সুযোগ নেই। এদেশের মুসলমানদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতেও ইসলাম ও নবীকে (সা.) নিয়ে জঘন্যতম কটূক্তিকারী ও ইসলামবিরোধী ধর্মহীন নাস্তিক সরকারকে বরদাস্ত করবে না, বরদাশত করা যায় না।
সমাবেশে বক্তারা শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা ও পীর আউলিয়ার এ দেশে আলেম-উলামা, ইসলামী শিক্ষা, মসজিদ-মাদরাসার বিরুদ্ধে অবস্থান, নবী (সা.) সম্পর্কে কটাক্ষ এবং ইসলামকে নির্মূলের যে কোনো ষড়যন্ত্র জীবন দিয়ে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ইসলামের মর্মবাণী না বুঝে ইহুদি-নাসারাদের এজেন্টের মতো তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদসহ ক্ষমতাসীন সরকারের কিছু মন্ত্রী-এমপি লাগামহীনভাবে উলামা-মাশায়েখ, কওমি মাদরাসা ও ইসলামবিরোধী বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে আঘাত হানছেন।
তারা বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, ইসলাম ও রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বন্ধ, শাপলা চত্বরের গণহত্যায় দায়ী এবং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক চক্রের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হওয়া ছাড়া ফুঁসে ওঠা উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতা ঘরে ফিরবে না। সুতরাং অবিলম্বে সরকারকে তার ইসলামবিরোধী নীতি বদল করে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নসহ আমাদের সব দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে, অন্যথায় ইসলামের দুশমন এই জালিম সরকারের পতনসহ আগামী নির্বাচনে কোটি কোটি তৌহিদি মানুষ সমুচিত জবাব দেবে।
হেফাজতে ইসলমের নায়েবে আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, বর্তমান সরকার পবিত্র ইসলাম ও ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সরকার নাস্তিক-মুরতাদদের মদতদাতা, নাস্তিকদের পক্ষ অবলম্বন করে সরকার একের পর এক ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকার নাস্তিক্যবাদের মদতদাতা হিসেবে জাতির কাছে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে।
যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ধর্ম কারও সম্পত্তি নয়। দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা নতুন করে চালু হওয়ার পর থেকেই ইসলামবিরোধীদের আস্ফাালন লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আড়ালে সারাদেশে অনাচার-ব্যাভিচার ছড়িয়ে দেয়ার অপতত্পরতা চলছে।
তিনি সরলমনা জনসাধারণ প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন পরিষ্কার বুঝে গেছে যে, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা সরকারের ছত্রছায়ায় তরুণ সমাজের আবেগকে বিভ্রান্ত করে এক জঘন্য ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
তিনি তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত না হয়ে নাস্তিক-মুরতাদ ও তাদের সহায়তাকারীদের প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারকে অবিলম্বে রাসুলের অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তিসহ সব ইসলামবিরোধী অপতত্রতা বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় ইসলামী নেতারা তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এর প্রতিরোধে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির আচরণ ও বক্তব্যে মনে হচ্ছে, মহাজোট সরকার সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সরকার ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে প্রমাণ করেছে এই সরকার তৌহিদি জনতা ও ইসলামবিরোধী। তাই বর্তমান ইসলামবিরোধী সরকার ও কুলাঙ্গার নাস্তিকদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী ক্যাডাররা মসজিদের খতিবদের নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে এই ধরনের হুমকি বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশে ইসলামের এ দুঃসময়ে যদি মুসলমানরা বসে থাকে, তবে এই মুরতাদ সরকারের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করা যাবে না।
মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ কোরবানির জন্য সর্বস্তরের তৌহিদি জনতাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পবিত্র হাদিস শরীফে আছে, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নবীজীর প্রতি মহব্বত নিজের, পরিবার-পরিজনের, ছেলে-সন্তানদের মহব্বতের চেয়ে অধিক হবে।’ অথচ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে সেক্যুলার বর্তমান মহাজোট সরকারের ছত্রছায়ায় নাস্তিক, মুরতাদ ও গোমরাহ ব্লগাররা সরাসরি মহান আল্লাহ তায়ালা, প্রিয় নবীজী, ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে নির্লজ্জভাবে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার দুঃসাহস দেখানোর সাহস পাচ্ছে। এই মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, অবিলম্বে শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার, রাসুলের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা ব্লগার ও নাস্তিকদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিতে হবে; অন্যথায় এদেশের সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদি জনতা তাদের ঈমানি শক্তি দিয়ে ওই নাস্তিক-মুরতাদদের কঠোর হস্তে প্রতিহত করবে।
মাওলানা মীর ইদরীস বলেন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়ার ফলে নতুন প্রজন্ম ইসলামের ভাবাদর্শ থেকে ছিটকে পড়ে নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে দ্রুত ধাবিত হয়ে পড়ছে। যার কুফল এরই মধ্যে আমরা অবলোকন করতে শুরু করেছি। দাড়ি-টুপিধারী ও ইসলামপন্থীদের ওপর আক্রমণ এবং আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব তৈরি হওয়া ছাড়াও দেশব্যাপী সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ধর্ষণ-ব্যাভিচার বিরামহীনভাবে বেড়ে গিয়ে আদর্শ ও নৈতিকতার ধস নামতে শুরু করেছে।
মহাসমাবেশে হেফজাতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব কর্মসূচি ঘোষণা করন। এতে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম ৭ নভেম্বর সিলেট ও ৮ নভেম্বর খুলনায় মহাসমাবেশ, ১৫ নভেম্বরের আগে সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ, ১৫ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করবে।
শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৩
রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩
পহেলা নভেম্বর মাঠে নামছে হেফাজত : কওমি মাদরাসা সরকারি নিয়ন্ত্রণে আইন পাস হলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে : আল্লামা শফী
হেফাজতের আমির ও কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমেদ শফী দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার তত্পরতা থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আলেমদের কথা না শুনে একগুঁয়েমি করে সরকার কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩ পাস করলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। আল্লামা শফী আরও বলেন, কওমি মাদরাসাগুলো যদি সরকারি নিয়ন্ত্রণে যায়, তবে দেশে ধর্মীয় শিক্ষা থাকবে না। এ জন্য সরকারকে বারবার বলছি, এ মাদরাসাগুলো পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে চালিয়ে আসছি সেভাবে রাখার জন্য।
এদিকে কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩ পাস থেকে সরকারের বিরত থাকা ও ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকালের সংবাদসম্মেলনে হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামবাদী।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ নভেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম হাটহাজারী কলেজ ময়দানে মহাসমাবেশ এবং ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিকভাবে মহাসমাবেশ। এদিকে হেফাজত নেতারা সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, এসব কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হলে হরতালসহ কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
হাটহাজারী ডাকবাংলোয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আজিজুল হক ইসলামবাদী সরকার এই আইনের মাধ্যমে নিজেদের মনোনীত কিছু লোককে চাপিয়ে দিয়ে বস্তুত কওমি মাদরাসাগুলো ওপর খবরদারি করতে চায়। সনদের তথাকথিত স্বীকৃতির নাম দিয়ে আলিমদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টিরও গভীর চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, আলিম-ওলামাকে ইমান-আকিদার প্রশ্নে যে কোনো আন্দোলন থেকে বিরত রেখে আত্মরক্ষামূলক ভূমিকায় ঠেলে দেয়ার জন্য এটি সরকারের আরেকটি নতুন চাল। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলিম, কওমি মাদরাসা বোর্ডের দায়িত্বশীল ও বিভিন্ন মাদরাসার প্রিন্সিপালরা সরকারের এই হঠাকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার ও অতি উত্সাহী কিছু মিডিয়া কওমি মাদরাসার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া একের পর এক মিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত সংবাদ পরিবেশন করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। লালখান বাজার মাদরাসায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনাকে ঘিরে হাটহাজারী মাদরাসাসহ সারা দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে জঙ্গি ও বোমাবাজির সঙ্গে জড়িত প্রমাণ করার জন্য ভয়াবহ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের কোনো কওমি মাদরাসায় কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ নেই। এসব মাদরাসায় সত্, আদর্শবান ও খোদাভীরু আলিম তৈরি হয়, যারা সারা জীবন সমাজ, সমাজের মানুষ ও মানবতার সেবায় নিজেদের জীবন উত্সর্গ করে যায়। দেশের আইনবিরোধী অনৈতিক কাজে তারা কখনও সম্পৃক্ত হয়নি।
দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে বহু দিন থেকে নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বিধৃত মাদরাসা শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে সরকার ১৫ এপ্রিল ২০১২ সালে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন নামে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) চেয়ারম্যান, উপমহাদেশের বিখ্যাত কওমি মাদরাসা দারুল উলুম হাটহাজারীর মুহতামিম, আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে। সরকারের ছলচাতুরী বুঝতে পেরে আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম এই কমিশন প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু সরকার তার আজ্ঞাবহ মাওলানা ফরিদুদ্দিন মাসউদ ও মাওলানা রুহুল আমিনের মাধ্যমে কওমি মাদরাসা ও ওলামায়ে কেরামদের সরকারের পক্ষে আনতে ব্যর্থ হয়ে কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩-এর খসড়া তৈরি করে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে যে, গত ৮ অক্টোবর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করা হয়। এরপর অতি দ্রুত, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হয়। গত ২০ অক্টোবর সকালে তা প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। এখন শুধু মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলেই তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।
আমরা মনে করি, সরকারের ঘাড়ে চেপে-বসা ইসলামবিদ্বেষী একটি চক্রের প্ররোচনায় নানা ছলছুতোয় কওমি মাদরাসাগুলো কব্জা করার অশুভ পথে পা বাড়াতে উদ্যত হয়েছে সরকার। কেননা একদিকে তারা কওমি মাদরাসার দরদি সেজে তাদের মতো করে কওমি সনদের স্বীকৃতির প্রলোভন দেখাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের সব কওমি মাদরাসা, আলিমসমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের অবিসংবাদিত আধ্যাত্মিক নেতা, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আমরা সরকারকে আবারও সতর্ক করতে চাই—কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আইনের নামে হাজার হাজার কওমি মাদরাসার ওপর ছড়ি ঘোরানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। নইলে সারা দেশের আলিম সমাজ ও মাদরাসা-শিক্ষকরা সর্বস্তরের মুসলমানদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের এই অশুভ পদক্ষেপ রুখে দাঁড়াবে। গড়ে তুলবে দুর্বার গণআন্দোলন। কওমি মাদরাসার অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা রক্ষার প্রয়োজনে কঠিনতর কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে।
বিগত ২৫ সেপ্টেম্বর আমরা সারা দেশে স্মারকলিপি দিয়ে সরকারকে কওমি মাদরাসার স্বার্থবিরোধী এই আইন বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে উপস্থাপিত আমাদের দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সরকার তার নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথেই অগ্রসর হচ্ছে। আমরা মনে করি এ পথ থেকে সরে না এলে সরকারকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
আজিজুল হক ইসলামবাদী বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, দেশে হাজার হাজার কওমি মাদরাসার লাখ লাখ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তাওহিদি জনতা এই আইন কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবে না ইনশাআল্লাহ।
বিগত ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিদ্যুিবচ্ছিন্ন করে, রাতের অন্ধাকারে নবীপ্রেমিক জনতার ওপর যৌথবাহিনী দিয়ে এক লাখ পঞ্চান্ন হাজার রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। লাখ লাখ নিরীহ মুসলমানদের ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। এ ঘটনা অসংখ্য ওলামা-পীর-মাশায়েখকে শহীদ করা হয়েছে। বহু মানুষ চিরদিনের জন্য পঙ্গু ও অন্ধ হয়ে গেছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরকারদলীয় ক্যাডার, নাস্তিক-মুরতাদদের দোসররা নৃশংস হামলা চালালো অথচ উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে অর্ধশতাধিক মামলা হয়রানি করা হচ্ছে।
বায়তুল মোকাররম এলাকায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা সেদিন পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করা হয়, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় দায়িত্বশীল হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অব্যাহত মিথ্যাচার করে চলেছেন। আমীরে হেফাজত, শায়খুল ইসলাম, আলামা শাহ্ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদসহ সর্বত্র কুত্সা রটিয়ে আলিমসমাজকে জাতির সামনে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলিম, সাবেক মন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ও মুফতি হারুন ইজহারসহ অসংখ্য আলিম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ তাওহিদি জনতাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে গ্রেফতারদের নিঃশর্তমুক্তি এবং দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদসম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী, নায়েবে আমির মাওলানা শামশুল আলম, কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা লোকমান, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মঈনুদ্দী রুহী, মাওলানা সেলিম উল্লাহ, হাটহাজারী উপজেলা হেফাজতের আমির মাওলানা মাহমুদুল হাসান, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, নির্বাহী সদস্য মাওলানা মুফতি হাবিবুল রহমান কাসেমী, উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মোজাম্মেল হক, নির্বাহী সদস্যে মাওলানা আবদুল্লাহ, হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকিরিয়া নোমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সফিউল্লাহ, আহসান উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গির মেহেদী, মহানগর নেতা মাওলানা ফয়সল তাজ, মাওলানা ইব্রাহিম সিকদার, মাওলানা আনাস আহমেদ উল্লাহ প্রমুখ। Daily Amerdesh
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)