শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৩

নারীর অধিকার প্রদানে মহানবী



   

বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর নারী জাতির প্রতি ছিল গভীর ভালবাসা। তার আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীতে নারী ছিল ঘৃণিত অবহেলিত,নির্যাতিত,পদদলিত। নারীর কোন মানবাধিকার ছিলনা। যুগে যুগে কালে কালে নারী হয়েছে নিষ্ঠুরতা,বর্বরতার শিকার। নারী ছিল একটি পরিবারের জন্য কলঙ্খ, তাই সদ্যজাত মেয়ে শিশুকে তারা জীবন্ত কবর দিত। কেবল আরবের মাটিতেই নয়, গোটা দুনিয়ায সর্বত্র নারী সমাজের উপর চলেছে নিপীড়ন,নির্যাতন,অবহেলা। সে যুগে গোটা বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পেয়েছে পরিবার ও সমাজের সম্মানের আসন পেয়েছে,তাদের সাথে মানবিক আচরণ করা হয়েছে এমন কোন নজির খুজে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়না। বিশ্ব নবী (সাঃ) এর পূর্বে কোন সমাজ সংস্কারক,কোন সমাজ সেবী,কোন রাজা বাদশাহ,কোন দার্শনিক কিংবা ধর্ম প্রবর্তক, নারী জাতির কোন প্রকার সম্মান মর্যাদা প্রদান করেছেন এমন নজির ইতিহাসে পায়নি। এ ছাড়া নারী জাতির প্রতি ইতিহাসের বড়মাপের মানুষগুলো ব্যাক্তিগত ধ্যান ধারণা,আচার-আচরণ,মেলামেশা,চলাফেরা কাজ- কারবার কেমন ছিল, অথবা কি ধরনের লেনদেন হতো এরও কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। মহানবী (সাঃ) নারী জাতিকে দিয়েছেন যথার্থ মর্যদার আসন। তিনি নারীকে দিয়েছেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পূর্ণ অধিকার। কুসংস্কার,অবিচার,আনাচার অত্যচারের বন্দীশালা থেকেই নারীকে মুক্ত করেন। মানব জাতির ইতিহাসে নবী কারীম সাঃ প্রথম নারী জাতিকে পরিপূর্ণ মানবাধিকার দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের আলোকে তাদেও জন্য পুর্ণাঙ্গ বিধি বিধান  ও আইন কানুন প্রবর্তন ও প্রয়োগ করেন। মহানবী (সাঃ) ছিলেন পবিত্র কোরআনের বাস্তব নমুনা। তিনি কোরআনের আলোকে নারী সমাজের সাথে সম্মানজনক আচার আচরণ কওেছেন। তাদের সাথে মর্যাদাপূর্ণ  ব্যবহার করার জন্য অন্যদেরকে আদেশ দিয়েছেন। ফলে ইসলামী পরিবার ,সমাজ, রাষ্ট্র নারীর মর্যাদা ব্যাপক প্রতিষ্টা লাভ করে যা বিধর্মী দার্শনিকরাও শিকার করতে বাধ্য হয়েছেন। খায়বার বিজিত হওয়ার পর আসমা বিনতেদ উমাইশ রাঃ নামে এক মহিলা সাহাবী হাবশা  থেকে মসদীনায় হিজরত করেন। তিনি মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে, অত্যাচারিত মুসলমানদের সাথে আবিসিনিয়া হিজরত করেছিলেন। একদিন তিনি হযরত হাফসার  সাথে দেখা করতে যান। হঠাৎ হযরত ওমর ফারূেক (রাঃ)সেখানে উপস্থিত হলেন। হযরত আসমাকে দেখে হযরত ওমর (রাঃ) প্রশ্ন করলেন ওনি কে? হযরত হাফসা (রাঃ) নাম বললেন। হযরত ওমর (রাঃ) বললেন হাবশায় যে আসমা হিযরত করেছিলেন, উনি কি সেই নাকি? হযরত আসমা (রাঃ) জবাব দিলেন, হ্যা আমি সেই। আলাপচারিতায় এক সময় হযরত ওমর (রাঃ) বললেন- আমাদের তোমাদের আগেই মদীনা হিযরত করে এসেছি। তাই মহানবী (সাঃ) এর উপর তোমাদের চাইতে আমাদের দায়- দায়িত্ব ও হক অনেক বেশী। হযরত আসমা (রাঃ) ওমর (রাঃ) এর এ দাবী মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলেন না তা কখনো হতে পারেনা। তোমরা নবী কারীম (সাঃ) এর আশ্রয়ে ছিলে। তোমাদের নিরাপত্তার বিধান তিনিই করেছিলেন। আর আমরা স্বজন হারা হয়ে সুদূর হাবশায় অপরিচিত হাবশিদের মাঝে দিন কাটিয়েছি। আমাদের জান-মালের কোন নিরাপত্তা ছিলনা। আমাদের মনে সব সময় মৃত্যুর ভয় লেগ থাকত। নানা রকম অত্যচার- অবিচার চলত। আমরা কখনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ পেতামনা। আমাদের কোন সাহায্যকারী ছিলনা। তাদের আলাপচারিতায় নবী কারীম (সাঃ) উপস্থিত হলেন  হযরত আসমা নবী কারীম (সাঃ) এর নিককট ঘটনা খুলে বললেন । মহানবী ঘটনা শুনার জবাব দিলেন আমার কাছে ওমরের হক তোমাদের চাইতে বেশি নয়। রাসূল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক পিতা এবং স্বামীর সম্পদে নারীর অংশগ্রহন নিশ্চিত করে গেছেন। যেই যুগে নারীর ইজ্জত দিন দুপুরেও নিরাপদ ছিলনা সেখানে একজন নারী যদি গভীর রানেও দীর্ঘপথ অতিক্রম করতো তাহলে নিরাপত্তার ব্যাপাÍ বিন্দুমাত্র ভয়ও থাকতোনা। ঘৃন্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির মাধ্যমে পরাধীন জীবন যাপন থেকে নারী সহ সকলকে মুক্ত করে গেছেন আল্লাহর রাসূল। তিনি দাস-দাসীর মুক্তির জন্য সাহাবায়ে কেরামদের উৎসাহ দিয়েছেন। একদা খানসা বিনতে খাদ্দাম আনসারী নামক এক মহিলা রাসুল (সাঃ) এর কাছে অভিযোগ দিলেন, তার বাবা তার মতের বিরূদ্ধে এক পুরূষের সাথে বিয়ে দিচ্ছেন। তখন রাসূল (সাঃ) ঐ বিয়ে বাতিল করে দেন(সহীহ বুখারী ও মুসলিম) শিক্ষার ক্ষেত্রেও মহানবী (সাঃ) নারী ও পরূষের ক্ষেত্রে সমান গুরূত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- শিক্ষা অর্জন করার জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে যাও। এখানে নারী কিংবা পুরূষের কথা উল্লেখ করেননি। এভাবেই নবী করীম (সাঃ) নারীর অধিকার সংরক্ষনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমানে মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশে যে নারীদের অধিকারের নামে সম্পদের অধিকারের ক্ষেত্রে কোরআন-হাদীস বিরোধী আইন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা সম্পুর্ন ইসলাম ধর্মের প্রতি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ইতিহাস সাক্ষি ইসলাম ধর্মে নারীদের যে রকম সম্মান দেওয়া হয়েছে তা আর কোন ধর্মে দেওয়া হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে নারীরা এখন পুরূষের চেয়ে অনেকগুন এগিয়ে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন অবস্থা যে অধিকার আদায়ের জন্য পুরুষদেরকে আন্দোলন করার জন্য মাটে নামতে হবে।যেখানে ইসলামী শাসনব্যবস্থা আছে সেখানে নারী ধর্ষনের খবর আমরা পায়না আর ভারত কিংবা পশ্চিমাতে যেখানে আধুনকতার নামে বার স্লোগান দেওয়া হচ্ছে??

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন