মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৩

পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানা কথা



   
যখন আমি কোন কাজে যাওয়ার জন্য রাস্তায বের হই তখন সবচেযে বেশি অনুভব করি সময়ের মূল্যটা। কেননা যানজটটা আমাদের বাংলাদেশে নিত্যদিনের ব্যাপার।  শত অনিচ্ছা থাকা সত্তেও আমাদেরকে তা মেনে নিতে হচ্ছে। কারন এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা।  শত জরুরী কাজ থাকার পরও আমাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার মাঝখানে অপেক্ষা করতে হয় ।  ছোট কাল থেকে আব্বু আমাকে একটা কথা বারবার বলে আসছে- সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। সময়ের চেয়ে মুল্যবান আর কিছুই নেই,( সময়ের ব্যাপারে আমার আব্বু খুবই সিরিয়াস)।  একবার বয়ে গেলে তা আর ফিরে আসেনা কোনদিন। এরপরও আমাদের জীবনে সময়ের অপচয় কিন্তু  যথেষ্ট।  কখনো জেনে শুনে আবর কখনো বাধ্য হয়ে সময় অপচয় করছি। হাজরো অনিচ্ছা থাকার পরও আমরা এই নিরুপায় থেকে বাচঁতে পরছিনা।  এমন কিছু সময় আমাদের প্রত্যেকের জীবনে রয়েছে সেখানে অবশ্যই সময়ের অপচয় করতে হবে।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং বহুল আলোচিত হলো আমাদের ছাত্রজীবনে সেশনজট। এই সেশনজটের মোকাবিলা করতে হয়না এমন ছাত্র পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়না।  বিশেষ করে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদেরকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে নিঃসন্দেহে। আর পক্ষান্তরে সেশনজট শব্দটা কল্পনাও করা যায়না সেটা হলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।  আমরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি কিন্তু সেখান থেকে কখন বের হবো এর কোন নিশ্চয়তা নেই।  একটা বড় ধরনের সময় হাতে নিয়ে আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হচ্ছে।  একসাথে দুইজন ছাত্র যদি একজন পাবলিকে আরেকজন প্রাইভেটে ভর্তি হয় তাহলে দেখা যাবে যখন প্রাইভেটের ছাত্রটা মাস্টার্স কমপ্লিট করলো তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটা সেকেন্ড কিংবা থার্ড ইয়ারের চেয়ে বেশি এগুতে পারেনি।   এইরকম শত-সহস্র ছাত্র-ছাত্রি আটকে যাচ্ছে এই সেশনজটের নিষ্টুর নিরুপায় আবর্তে। হতাশ হয়ে যাচ্ছে মা-বাবা। ছেলে-মেয়ের বিয়ের বয়স পর্যন্ত চলে যাচ্ছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ হয়নি। সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় জীবনে জটিলতা। অর্থনীতিবীদরা বলেছেন তাদের কথা। রাজনীতিবীদরা আদায় করেছেন তাদের অধিকার আর এই অধিকার আদাযে কতো ভংচুর কতো হরতাল আরো কতো কি। এইভাবে নানা আন্দোলন সহ বিভিন্ন সমস্যার কারনে আমরা আটকে পড়ি সেশনজটে।  সম্প্রতি   দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে  বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের নানা করুন কাহিনী। ১- ঢাবিতে সেশন জট সাড়ে তিনঃ গড় আড়াই বছর। ০২Ñ চবিতে দেড় থেকে তিন বছর গড়ে সোয়া দুই বছর।০৩-শাবিতে দেড় থেকে তিবছর গড়ে আড়াই বছর। ০৪- রাবিতে প্রায় দুই বছর ০৫- জাবিতে প্রায় চার বছর ০৬। ইসবিতে দেড় থকে তিন বছর। ০৭-জগন্নাথে দেড় থেকে দুই বছর। ০৮- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন বছর।  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আসন সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে এবং গুনসম্মত আরো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা করা প্রয়োজন্। কেননা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুমিকা অনস্বিকার্য। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রাখছে।  আমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবীদের জন্য আশির্বাদ বলে মনে করি। অবশ্যই এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে বানিজ্যমুখি না হয় এবং ইচ্ছেমতো ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিতে না পারে সেদিকে অবশ্যই সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। অনুমোদন দিয়েই সরকারের দায়িত্ব শেষ নয়। কেননা অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যায় একটা বাড়ী বাড়া করে শুরু করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য। তাছাড়া আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের তুলনায় আসন সংখ্যা খুবই সীমিত। যেমন। ০১-জা-বিতে চারটি অনুষদে ২৫ টি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা ১২৮৩টি। ০২-চবিতে ৩৪ টি বিভাগে২৪০০ আসন মাত্র। ই-বিতে৩২০টি বিভাগে আসন সংখ্যা ১২২০ টি। শাবিপ্রবি-তে ১০টি বিভাগে আসন সংখ্যা ১২৫০টি। ৫-খু-বিতে ১৬ টি বিভাগে আসন সংখ্যা ৬০০। ৬- রাবিতে ৩৩৫০টি।৭- বুয়েটে ৮৮৬টি এবং দেশের বর্তমান মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় ২০৬০ শিক্ষার্থীকে। ছাত্রদের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ বলে আমি মনে করি যে পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কাস শুরু হতে একটা বছর চলে যায় অনর্থক। রেজাল্ট বের হবার পর পর ভর্তি শুরু হলে সমস্যা কোথায় আমি জানিনা। এই বিষয়ে আমি সবচেয়ে বেশি দোষারুপ করবো সরকারের অনিচ্ছাকে। অনেকে আবার কোচিং বানিজ্যর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পত্রিকায় লেখালেখি করে আসছে  কিন্তু আমি বলবো রেজাল্ট বের হবার পর পর ভর্তিপরীক্ষা হয়ে গেলে কোচিং বানিজ্য এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। অতি শীঘ্রই তা বাস্তবায়ন হোক এটাই আমার কাম্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন