মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৩

আব্বু স্বরণে.......

(আমার আব্বু আলহাজ্ব মাস্টার নুরূল হক)



প্রত্যেক সন্তানের কাছে বাবা শুধু জন্মদাতা নয়,আদর্শের প্রতীক। আব্বুকে বিশেষ ভাবে স্বরন করার জন্য ৩৬৫ দিনের মধ্যে একটি দিন বরাদ্দ, প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস।তবে আমার কাছে কোন দিবস নাই। আমি আমার আব্বুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে প্রতি মুহুর্তে স্বরন করি।
বাবা দিবস প্রথম পালন হয় আমেরিকায়। পশ্চিম ভার্জিনিয়ায মিসেস জন ডড তার বাবাকে সম্মান দেখাতে এ দিনটির প্রচলন করেন। তবে তার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি,অনেকের ধারণা পুরো ব্যাপারটি ছিল পারিবারিক।১৯৫৬ সালে রাষ্ট্রপতি রিন্ডন বেনিস জনসন আনুষ্টানিকভাবে এ দিনটির ঘোষনা করেন।
বিশেষ করে আজকে আব্বুর সব ভালবাসার কথা মনে পড়ছে। একদিন মসজিদ থেকে এশার নামায পড়ে বাসায় আসছিলাম। বর্ষাকাল,খুব বৃষ্টি হচ্ছে। এক ছাতায় দু’জন। আব্বু নিজে ভিজে যাচ্ছে কিন্তু আমাকে ভিজতে দিচ্ছেনা।আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ভিজে গেলে তোর সর্দি হবে।
তিনি আর কেউ নন।আলহাজ্ব মাস্টার নুরূল হক,তিনি আমার বাবা। নুরূল হক মাস্টার নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলার জনপ্রতিনিধি এবং আমলা সহ নানা পেশাজীবি সম্মানী ব্যক্তিদের কাছে আব্বুর গ্রহণযোগ্যতা চোখে পড়ার মতো। খুব কম লোকই পেয়েছি যারা আব্বুকে চিনেনা। সব সময় গর্ববোধ করি আব্বুকে নিয়ে।
আব্বু ঢেমশা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যারয় থেকে এস.এস.সি এবং গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি পাশ করেন। দাদু ভাই  মাস্টার মনির আহমদ এর কর্মস্থল দক্ষিন গাটিয়া ডেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরূ। পরবর্তীতে তিনি প্রধান শিক্ষক এবং সচিব হন। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। তার মেধাবী ছাত্ররা আজ সমাজে প্রতিষ্টিত।
আব্বুর ধার্মিকতা আমাকে খুব মোহিত করে। তিনি ধর্মীয় বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। পয়সাওয়ালা না হলেও গরীব আসহায়দের সহযোগীতার ব্যাপারে কয়েক ধাপ এগিয়ে। আমি জীবনে আব্বুর মতো সহজ সরল ব্যক্তি আর দেখিনি। আব্বুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে একটি কবিতা লিখেছিলাম।যেটি পরবর্তীতে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ হয়।
 
আমি শিক্ষক হতে চায়
আব্বুর মেতা
কিংবা তার চেয়ে বড় শিক্ষক দাদুর মতো
আব্বু মস্ত বড় শিক্ষক
ব্যস্ততা আর কর্মক্লান্তির মাঝে
জটির কাজের ফাকে ফাকে
করেছিলেন তিনি শিক্ষকতা
আব্বুর প্রতিভা বহুমুখী
আকে সমাজ সংস্কারের ভীন্ন ভীন্ন প্রতিচ্ছবি

জাগতিক মোহে কিংবা সুখের লোভে
টাকার পিছে ছুটেনি কখনো
মানুষের মাঝে তিনি সম্মানীত
দিকে দিকে প্রশংসিত
গ্রামে গন্ঝে মফস্বলে কাংখিত
থানা উপজেলায সর্বাত্বক সংবর্ধিত
হাসি খুশি অমায়িক সর্বদা প্রাণোচ্ছল
জীবনের কল্পনায় মুখরিত

তিনি একজন আদর্শবান ব্যাক্তি
সবার কাচে বিরল দৃষ্টান্ত
সামাজিকতা ও রাজনৈতিক জগতে
তিনি জ্বল জ্বলে নক্ষত্র

আমার আব্বু মতো একজনের মাঝে
এতগুনের সমাহার
যে কোন মানুষের পক্ষে বড় দায়

একটিও যদি পায়
জীবন হবে পূর্ন সার্থকতায়

আব্বুকে নিয়ে আরেকটি কবিতা

আব্বু আমার শিক্ষক ছিলেন
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
আব্বু আমার অভিভাবক
সমগ্র জীবনে
আব্বু আমার উপদেষ্টা
জীবনের বাকে বাকে

আব্বু আমার বন্ধু ছিলেন
শৈশব যৌবনে
আব্বু! সৃষ্টিকর্তার কাছে সার্বক্ষনিক প্রার্থনা,তোমার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন