বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৩

সরকারের খুন দুর্নীতি দুঃশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ (অলিউল্লাহ নোমান)

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য দিয়ে শুরু করতে চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি সভা-সমাবেশে বক্তব্যটি উপস্থাপন করেন। সেটি হলো বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ডে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা দেখতে পান। শুধু তাই নয়, পিরোজপুরে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্বাচনী এলাকায় জনসভা করে তাকে কুলাঙ্গার হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই জনসভায় তিনি আরও বলেছেন, পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের দায় বিরোধীদলীয় নেত্রীকে নিতে হবে। পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই পুলিশের গুলিতে সাধারণ প্রতিবাদী মানুষ নিহত হওয়ার দায় বিরোধী দলের নেত্রীর ওপর চাপিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্র্রী শেখ হাসিনা। এটাই হলো আওয়ামী রাজনীতি।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন বিজয়ী হলে কৃষককে বিনামূল্যে সার দেবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন, ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবেন। ক্ষমতায় এসে ঘরে ঘরে চাকরির পরিবর্তে ঘরে ঘরে লাশ উপহার দিচ্ছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পৌনে দুই মাসের মধ্যে সেনাবাহিনী পেয়েছে তাদের ৫৭ জন কর্মকর্তার লাশ। এগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্ন ওঠালেই বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কৃষককে বিনামূল্যে সারের পরিবর্তে উপহার দেয়া হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি মূল্য বাড়িয়ে। এছাড়া ইশতেহারে লিখিত ওয়াদাগুলোর কথা এখানে উল্লেখ করলে সরকারের ওয়াদা ও জাতিকে উপহারের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ হবে। এজন্য পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না।
যেটা বলতে চাচ্ছিলাম। বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে যে যাই বলুক না কেন, সবই হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা! বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর প্রতিবাদ করা হলে সেটাও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা, কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রোলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করলে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা হলে সেটাও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা, শেয়ার মার্কেট থেকে লক্ষ-কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচারের প্রতিবাদ করা হলে সেটাও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেটাও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সীমাহীন দলীয়করণের প্রতিবাদ করলে সেটাও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা বলে জিগির তুলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্র্রী। আর সব দোষ দেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সুর তুলেন অন্যান্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামীপন্থী ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়াগুলো সেই সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সানাই বাজায়।
অর্থাত্ আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর মিডিয়াগুলো সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যর্থতা, অপশাসন, দলীয়করণ, নির্যাতন-নিপীড়ন সবকিছুকে আড়াল করতে চায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যত লোকের সঙ্গে কথা হয় সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করে থাকলে তার বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত, সেটা বলেন সবাই। ১৯৭১ সালে কেউ মানবতাবিরোধী কাজ করে থাকলে সেটা যেমন অপরাধ, ২০১৩ সালেও সেটা অপরাধ। সুতরাং যে কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাওয়া নৈতিক দায়িত্ব। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপিও শুরু থেকেই বলে আসছে তারাও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার চায়। তবে সেই বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। বিচারের নামে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের প্রচেষ্টা কোনো সভ্য জাতি বা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না।
বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়ায় সর্বশেষ বক্তব্যে এটাও পরিষ্কার করেছেন স্বাধীনতাযুদ্ধের পরও যত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে সেগুলোর বিচারের জন্যও ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। তবে সেই ট্রাইব্যুনালের বিচার যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হয় সেটা নিশ্চিত হওয়া চাই। কোনো দলীয় লোককে বিচারকের আসনে বসিয়ে যেন আবার সেই আসনকে বিতর্কিত করা না হয় সেটা বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দেখতে চাইবে জাতি।
১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের নামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শব্দটি সংযোজিত রয়েছে। যে আইনে বিচার হচ্ছে সেই আইনের শিরোনামের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক শব্দটি। আইনটির শিরোনাম হচ্ছে—‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩।’ এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে যাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে তাদের জন্য নয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের জন্য আইনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেই আইনে বিচারের জন্য তখন চিহ্নিত করা হয়েছিল ১৯৫ জন পাকিস্তানি আর্মির সদস্যকে। হালজামানায় যাদের বিচার হচ্ছে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য আইনটির সংশোধন করেছে বর্তমান সরকার। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান ভুল করেছিলেন। সেই ভুল সংশোধন করেছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।
এই আইনের আওতায় বিচারের জন্য গঠিত আদালতের নাম হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’। আইন ও ট্রাইব্যুনালের শিরোনামগুলো দেখে একটি বিজ্ঞাপনের কথা আমার মনে পড়ছে। ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এশিয়ান টেক্সটাইলের একটি বিজ্ঞাপন শুনতে খুবই ভালো লাগত। বিজ্ঞাপনটি প্রচারের ভাষা ছিল—‘কাপড় পরবেন দেশি—দেখলে মনে হবে বিদেশি।’ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্টটিও সেরকমই। শুনতে ইন্টারন্যাশনাল—বিচার হবে নিজস্ব স্টাইলে। অর্থাত্ নামে বিদেশি—কামে নিজস্ব স্টাইল। কারণ এখানে আন্তর্জাতিক কোনো মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি বা হচ্ছে না, সেটা দুনিয়ার সব স্বীকৃত সংস্থাগুলো থেকে বলা হয়েছে। আমাদের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ নিজেও বহুবার বলেছেন, আইনটির নাম আন্তর্জাতিক হলেও বিচার হবে দেশীয় আইনে। তবে দেশের প্রচলিত ফৌজদারি বা সাক্ষ্য আইনও এখানে প্রজোয্য নয়। এই ট্রাইব্যুনাল চলছে একেবারেই একটি ব্যতিক্রমী আইনে। বিচার চলাকালীন কোনো সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হলে আসামি পক্ষের উচ্চতর আদালতে আপিলের কোনো সুযোগ নেই এ আইনে। শুধু বিচার শেষে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার একটি সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রচলিত আইনে বিচার চলাকালীন আদালতের কোনো আদেশে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রচলিত সাক্ষ্য আইনে কোনো পাঠ্যপুস্তক বা পত্রিকা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের সুযোগ নেই। এই ট্রাইব্যুনালে সেই সুযোগ রয়েছে। সাক্ষী আদালতে উপস্থিত না করেও তাদের নামে তদন্ত কর্মকর্তার পেশ করা জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের সুযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক নামের দেশীয় ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু আমাদের ফৌজদারি আইনে বিচারব্যবস্থায় সেই সুযোগ নেই। এই ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে পৃথিবীর যে কোনো বিচারব্যবস্থার চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী একটি আইনে পরিচালিত। দুনিয়ার কোনো যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী বিচারের জন্য প্রণীত আইনের সঙ্গে এ আইনের মিল নেই। এমনকি দেশীয় প্রচলিত আইনের সঙ্গেও নয়।
এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান স্কাইপ কথোপকথনে স্বীকার করেছেন ‘নাটক ভালোই হচ্ছে’। তার বন্ধু ড. আহমদ জিয়াউদ্দিন বিচারের বিষয়ে জানতে চেয়ে বলেছিলেন, ‘আজ আপনার নাটক কেমন হলো।’ জবাবে চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘নাটক ভালোই হচ্ছে—আমি হলাম অভিনেতা।’ সরকার কীভাবে বিচার নিয়ন্ত্রণ করছিলেন এবং রায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন সেটাও প্রকাশিত হয়েছে কথোপকথনে। ট্রাইব্যুনালে গ্রহণ করা চার্জ কীভাবে ড. আহমদ জিয়াউদ্দিন লিখে পাঠিয়েছেন সেটাও প্রকাশিত হয়েছে স্কাইপ কথোপকথনের মাধ্যমে। এসব কথোপকথনের দায় নিয়ে চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। কোনো প্রতিবাদ হয়নি। এমনকি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি কীভাবে চেয়ারম্যানকে ৩টা রায় দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং রায়ের বিনিময়ে প্রমোশনের কথা বলেছিলেন সেটাও প্রকাশিত বিষয়। এই আপিল বিভাগেই এখন ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। সেই আপিল বিভাগই আবার শুনানি করে রায় দেবেন। তারপরও এই বিচার নিয়ে কে্উ কথা বলতে পারবেন না। বললেই অভিযোগ উঠবে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। বিচার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে এই বিচারালয় থেকে ঘোষিত রায়ে কাউকে সরাসরি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংগঠনে পাকিস্তানি আর্মিকে সহযোগিতা করেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মির সহযোগিতার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। কিন্তু সেই পাকিস্তানি আর্মির চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের স্বাধীনতা পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তাদের নিরাপদে পাকিস্তান চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। তারপরও এটা বলা যাবে না। বললে যুদ্ধাপরাধীকে বাঁচানোর অভিযোগ উঠবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে দিয়ে সহযোগীদের এখন দণ্ড দেয়া হচ্ছে। এদিক থেকেও একটি ব্যতিক্রমী বিচার বলা চলে। এই বিচার অবশ্যই পৃথিবীর ইতিহাসে আন্তর্জাতিক নামের আদালতে দেশীয় স্টাইলে দণ্ড দেয়ার নজির সৃষ্টি করবে। সেই নজির ও ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে রায় ঘোষণাকারী বিচারপতিদের প্রজ্ঞা।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ইসলাম-বিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচিকেও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অভিযোগ হিসেবে তোলা হয়েছে। যেসব পত্রিকা মাথায় টুপি ও মুখে দাড়িওয়ালা ব্যক্তিদের সংবাদ প্রকাশ করতে লজ্জা বোধ করে সেই প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদ দেখে আমি চমকিত হয়েছিলাম। গত ৫ দিন আগে ইমাম ও ওলামা মাশায়েখ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একজনের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ওই পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। শিরোনাম ছিল হেফাজতে ইসলাম আসলে হেফাজতে জামায়াতে ইসলাম। অর্থাত্ মুফতি আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকেও একটি মহল যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ইসলাম-বিদ্বেষী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন, সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী ৬ এপ্রিল আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে ঢাকা অভিমুখে সারাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষদের লংমার্চকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই সরকারি ষড়যন্ত্রে হাওয়া দিচ্ছেন তথাকথিত আওয়ামী পক্ষের মিডিয়াগুলো। আল্লামা আহমদ শফির আন্দোলনের বিপরীতে এরই মধ্যে ভ্রান্ত আলেম হিসেবে খেতাবপ্রাপ্ত ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে দিয়ে কাউন্টার আন্দোলন গড়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল সরকার। গত শনিবার তাদের আহূত মহাসমাবেশ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম মিডিয়ার দিকে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের তাঁবেদার হিসেবে খ্যাত দৈনিক ইনকিলাবের প্রচারিত প্রতিবেদনেও এই মহাসমাবেশের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ইনকিলাব বলেছে, মহাসমাবেশে লোকসমাগম না দেখে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছিল। যারা লাইফ টেলিকাস্ট করার জন্য যন্ত্রপাতি এখানে এনেছিল তারা রীতিমত বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। এতেই বোঝা যায় আওয়ামীপন্থী কোনো আন্দোলন সংগ্রামে জনসমর্থন নেই। দেশের গোটা আলেম সমাজ আজ সরকারের ইসলামবিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ। ষড়যন্ত্র করে টাকা বিলিয়ে আলেম সমাজের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদের ডাকা মহাসমাবেশ সুপার ফ্লপ হওয়ার মধ্য দিয়ে।
অথচ তারপরও যেই সংগঠনের মূল নেতা নিজেকে নষ্টভ্রষ্ট বলে দাবি করেন সেই সংগঠনকে সরকার আস্কারা দিচ্ছে। ৩ স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে তাদের জন্য। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে রাজপথে লাশের ওপর নৃত্যকারী স্বঘোষিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাহবাগে সরকার ৩ স্তরের নিরাপত্তা দিলেও মুসল্লিদের হত্যা করছে পাখির মতো গুলি করে। অভিযোগ হচ্ছে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়। তারা ইসলাম-বিদ্বেষী ও আল্লাহর রাসুলকে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের দাবি জানায়। এজন্য তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর প্রধানমন্ত্রী এই হত্যার জন্য দায়ী করেন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছুতে কথা একটাই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই আওয়াজ দিয়েই সব ব্যর্থতা, অপশাসন আড়াল করতে মরিয়া সরকার।
২৭.০৩.২০১৩ লেখক : যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সাংবাদিক(দৈনিক আমার দেশের ২৮ মার্চ থেকে সংকলিত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন