মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৩

উপহার হিসেবে বই শ্রেষ্ঠ

Central library-International Islamic University Chittagong

                                           
পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। মহানবী (সাঃ) এর উপর নাযিলকৃত পবিত্র কোরআন পাকের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ পাক মানব জাতিকে পড়ার প্রতি আদেশ দিয়েছেন। মানুষের যাবতীয় শিক্ষার মুল উৎস স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। সৃষ্টিজগৎ ও সৌরজগতের সবকিছুর বিবরন বই পুস্তকে লিপিবদ্ধ। এই বই হলো বিশ্বমানবের জন্য একটি মানচিত্রসদৃশ।বই পড়ে সৃষ্টিজগতের সব রহস্য এবং আল্লাহর নির্দেশনাবালির পরিচয় জানা যায়। পৃথিবীর সব জ্ঞানের ভান্ডার হলো বই। এত রয়েছে মানব জাতির ইতিকথা ও জ্ঞানের প্রদর্শন। বই মানব জীবনের এক হিতৈষী বন্ধু এবং জীবনসঙ্গি। মানুষ একা একা বসে থাকতে পারেনা। অবসরে পড়াশুনা করলে বই তখন তার সঙ্গে মনের কথা বলে। বই ধর্মভীরু মানুষকে সৎ পথ দেখায়। জীবনকে উন্নতির উচ্চশিখরে পৌছে দেয়। পৃথিবীর উন্নতি সাধনে ্টাধুনিক জগতের প্রচার-প্রসারে এবং মানুষের মরনব্যাধির প্রতিরোধে,জীবনদানের ব্যাপারে ওষুধপত্র আবিষ্কারের বাহন হচ্ছে মহামুল্য বই। দুনিয়ায় যারা মরেও অমর হয়ে আছেন,সেই সব মহামানব,ধর্মীয় নেতা,জ্ঞানী-গুণীজন,কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক,বৈজ্ঞানিক সবাইকে এই বইয়ের মাধ্যমে আয়নাস্বরুপ দেখা যায়। জ্ঞান- বিজ্ঞানের চর্চা মানুষকে মহৎপ্রাণ করে তোলে, চিত্তকে মুক্তি দেয়  এবং মানবাত্বকে জীবনবোধে বিকশিত করে। বিভিন্ন বষিয়ে সুশৃংখল ও পুর্ণাঙ্গ জ্ঞানঅর্জন এবং পরিপূর্ণ মানসিক পশান্তি লাভ করতে হলে অবশ্যই বই পড়ার বিকল্প নেই। উপহার হিসেবেও কিন্তু বইয়ের বিকল্প নেই। বলতে গেলে বই উপহার হিসেবে শ্রেষ্ঠ। তাই প্রিয়জনকে উপহার দাও হয় একটি ভাল বই না হয় একটি গোলাপ। তবে গোলাপের চেয়ে বইখানা অনেক দামি, কেননা গোলাপের সৌন্দর্য ক্ষনস্থায়ী পক্ষান্তরে বইখানা অনন্ত যৌবনা ও চিরস্থায়ী যদি তেমন বই হয়। বই মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মিডিয়া তথা মাধ্যম। বই মানুষের মুক্ত চিন্তার প্রতীক। বই প্রকাশের মাধ্যমে লেখককুল তাদের মনের সুপ্ত প্রতিভা চিন্তা-ভাবনা- কল্পনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন। বইকে নিয়ে যে কোন স্থানে যাওয়া যায। তাই বলা যায় বই মানুষের নিত্যসঙ্গি। বই-এ নিহিত থাকে একজন লেখকের হৃদয়ে লালিত স্বপ্নের প্রকৃত নির্যাস। বই ছাড়া একজন মানুষ কখনো জ্ঞানী হতে পারেনা। জ্ঞানী হতে হলে অবশ্যই প্রচুর বই পড়তে হবে।একজন লেখক তার তৃতীয় নয়নের মারফতে নিজের চিন্তা -চেতনা -বাস্তব অনুভুতি কল্পনার নব দিগন্ত উন্মোচিত করে বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে। সুতরাং বইকে ভালবাসেনা এমন লোক পৃথিবীতে পাওয়া অসম্ভব। অচেনাকে চিনতে অজানাকে জানতে মনোরাজ্যকে পুর্ন বিকশিত করতে হৃদয়ের দর্পনকে প্রসারিত করতে বই সবচে বেশি ভুমিকা রাখে।  একটি বইয়ে লেখক লিপিবদ্ধ করেন তার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার ফসল এবং অর্জিত সাধনার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। কেননা কোন কিছু সাধারন মানুষ দেখা আর লেখকের দেখার মধ্য রয়েছে অনেক ব্যবধান। যেহেতু লেখকের রয়েছে তৃতীয় নয়ন আর তৃতীয় নয়নের মারফতে লেখক অবলোকন করে তা বিচার বিশে¬ষন গভীর গবেষনা ব্যাপক পর্যালোচনা করে সরু কলমের ডগায় প্রকাশ করে থাকেন। হয়তো এই জন্যই ডেল কার্নেগী বলেছেন-বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ট ক্লোরোফর্ম বই পেিেমক মাত্রই মার্জিত রুচির লোক। যারা বইয়ের সাথে আত্মিয়তা গড়তে পেরেছে তারা নিজেদের মাঝে এক ভুবন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। আন্তর্র্জাতিক  খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেল  বলেছেন সংসারের জ্বালা যন্ত্রনা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করা এবং বিপদ কালে এর ভিতর ডুব দেওয়া। যে যতো বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে ভাবযন্ত্রনা এড়াবার ক্ষমতা তার ততো বেশি হয়। বই পড়ে দেশ ভ্রমন করা যায় কিন্তু সাধারনত দেশ ভ্রমন করার ক্ষমতা তথা আর্থিক সামর্থ সবার থাকেনা । কাজেই শেষ পর্যন্ত বাকি থাকে বই। ওমর খৈয়াম যথার্থই বলেছেনÑ  ঐবৎব রিঃয ধ ষড়ড়ভ ড়ভ নৎবধফ নবহবধঃয ঃযব নড়ঁময. অ ভষধংশ ড়ভ রিহব. অ নড়ড়শ ড়ভ াবৎংব ধহফ ঃযড়ঁ. ইবংরফব সু ংরহমরহম রহ ঃযব রিষফবৎহবংং ধহফ  রিষফবৎহবংং রং ঢ়ধৎধফরংব বহড়.ি  জাতিয় কবি নজরুল ইসলাম ঠিক এই ভাবে অনুবাদ করেছেন এক সুরাহি সুরা দিও , একটু রুটির ছিলকি আর প্রিয়া সাকি তার সাথে একখানি কবিতার বই, জীর্ন আমার জীবন জুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সাথে , এই যদি পায় চাইবো নাকো তখত শাহান শা’র । অতএব এই মুহুর্তে আমাদের প্রয়োজন ব্যাক্তিগত কিংবা সমাজিক ভাবে পাঠাগার গড়ে তোলা। কেননা পাঠগার অফরুন্ত জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞান আহরনের মধ্য দিয়ে মানুষ প্রকৃত মনুষত্যবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে ইঠে। দু চোখে আমরা সারা বিশ্ব অবলোকন করতে অক্ষম কিন্তু পাঠাগারে বসে আমরা বিশ্ব বৈচিত্রের সাথে পরিচিত হতে পারি। জ্ঞানের রাজ্য যেখানে প্রস্বফুটিত মনুষত্য সেখানে উদ্ভাসিত, আর এই জ্ঞানের একমাত্র অবলম্বন হলো বই তথা পাঠাগার। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন দেহের চিকিৎসার জন্য যেমন হাসপাতাল প্রয়োজন তেমনি মানসিক প্রশান্তির জন্য পাঠাগার প্রয়োজন কারন পাঠাগার অতীত ও বর্তমানের মধ্য যোগসুত্র স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যুগান্তকালের মনিষিদের চিন্তা ভাবনা আশা আকাংখা পাঠাগারের গ্রন্থরাজির কালো অক্ষরের বাধ বাধনে পড়ে আছে। ঠিক যেমনি হিমালয়ের চূড়ায় জমাট বাধা বরফের মধ্য  বন্যার প্রচন্ডতা লুকিয়ে আসে। এক কথায় অবহেলিত সমাজকে সুশিল সমাজে পরিনত করতে পাঠাগারের বিকল্প নেই। প্রথিবীতে জ্ঞান বিকাশ ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে পাঠগারের ভুমিক অনস্বিকার্য। আর এই পাঠাগার প্রতিষ্ট করা ইসলামি সভ্যতারও একটি অভিচ্ছেদ্য অংশ । বিশ্বনবী মহানবী (সাঃ) বলেছেন -তোমার দোলনা হতে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন কর, জ্ঞান অর্জন করার জন্য প্রয়োজনে চীন দেশে যাও। সুতরাং আসুন আমরা ব্যাক্তিগত কিংবা সামাজিক পাঠাগার গড়ে তুলি আমরা একটু সচেতন হলেই আমাদের আশেপাশে অনেক পাঠগার গড়ে তুলতে পারবো জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করতে পারবো। আতএব আসুন আমরা বেশি বেশি বই পড়ি প্রিয়জনকে বই উপহার দিই বই হোক নিত্যসঙ্গি পাঠাগার হোক অবসরের স্থান।পারবারিক সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে চোখ ধাধানো সামগ্রীর পরিবর্তে বই উপহার দেয়া, প্রতিমাসে অন্তত একটি বই কেনার এবং বই পড়ার আন্দেলন সমাজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিতে হবে। সভ্যতার বিকাশে বইয়ের ভুমকা অপরিসীম। একটি যুক্তিবাদী অগ্রসরমান ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য বই হলো এক অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও দিবালোকের মত সত্য যে আজকাল পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠনাদিতে বই উপহার দেয়ার রেওয়াজ নাই বললেই চলে। আমাদের উৎসব অনুষ্ঠান ও দৈনন্দিন জীবনে উপহারের ক্ষেত্রে বই হোক প্রথম নির্বাচন। উপহারের ক্ষেত্রে বইয়ের শ্রেষ্টত্ব ও মুল্য কারো পক্ষেই অস্বীকারের উপায় নেই।  আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বই যদি উপহার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।  তাহলে এই দুর্ভাগ্য সমাজে বই এর কাড়তি যেমন বাড়বে অন্যদিকে বইয়ের প্রতি সচেতনতা ও মনোযোগও বাড়বে।  দুঃখ জনক হলো অভিজাত মহলে বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্টানে উপহার হিসেবে বই এখনো উপেক্ষা ও তাচ্ছিল্যের বস্তু। রঙ-বেরঙের মুল্যবান উপহারের সারিতে বই যেন অনেবখানি দ্বিধাকম্পিত ও শংকাকুল। কারন বর্তমানে সামাজিক অনুষ্টােন উপহারেরে মান ও মুল্য দিয়েই অতিথির সামাজিক মর্যাদা নির্র্নিত হয়। ফলে সেখানে বই উপহার হিসেবে অনেকটা নি®প্রভ ও ম্রিয়মান। এই ম্রিয়মানতার লজ্জা আসলে উপহার প্রদানকারী অতিথীকেও বহন করতে হয়। ব্যক্তি সমাজ জীবনে উপহারের ক্ষেত্রে এই মানসিক দৈন্য না ঘুচলে উপহার হিসেবে বইয়ের জনপিয়তা ও গুরুত্ব বাড়ানো সম্ভব কম। কাই উপহারের ক্ষেত্রে বইকে জনপ্রিয় করতে হলে  সর্বাগ্রে এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিরই পরিবর্তন সাধন করতে হবে। না হলে বই উপহার দেয়া ও কিনার  আহবান কেবল আহবানই থেকে যাবে। উপহার হিসেবে বইয়ের মর্যাদা কম নয় বরং অন্য বস্তুর চেয়ে বেশি তাই আগে উপলদ্ধি করা প্রয়োজন। উপহারের বৈষয়িক মুল্য না দেখে এর সার্বিক গুনুগুন বিচার করলে দেখা যাবে উপহারের সাথে øেহ, প্রিতী, ভালবাসা  ও হৃদয়ের যে সম্পর্ক বিদ্যামান বই তারই সর্বশ্রেষ্ট বাহন ও প্রতীক।  কিন্তু এই সমাজে বই হয়ে আছে সবদিক দিয়েই উপেক্ষিত ও  অনাদৃত। গৃহের আসবাবপত্র বইয়ের তুলসায় সুন্দর নয়- এই বিবেচনাও বই সংগ্রহে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, গ্রন্থের প্রতি এই অনীহা মুলত জ্ঞানের প্রতি আমদের ঊদাসীন্যের স্বক্ষরই তুলে ধরে। আরো অনেক বেশি দুঃখের সাথে বলতে হয় জ্ঞানই এই হতভাগ্য সমাজে সবচেয়ে অসম্মানের বস্তু।  যে সমাজে জ্ঞানকে উপেক্ষা অনাদর করে  তার না আত্মিক না বৈষয়িক কোন দারিদ্রই ঘোচেনা।   দারিদ্র জয় করতে হলেও চাই জ্ঞানের চর্চা ও বিকাশ। বলা- বাহুল্য বই হলো তার শ্রেষ্ট বাহন। প্রগতির পথে এগুতে হলে আমাদেরকেও পাঠ্যভ্যাস বাড়াতে হবে। যে সমাজ বইয়ের প্রতি মুখ ফিরিয়ে থাকে সে সমাজ আসলেই জ্ঞানকেই অবজ্ঞা করে। আমাদের গ্রন্থ বিমুখতার সার্বজনীন অপবাদ তাই আমাদের মানসিক দৈন্যর সত্যতাকেই বড় করে তোলা। প্রকাশনার সংকট, বইয়ের বাজারের হতাশাদীর্ণ চেহারা ও বই প্রকাশকদের অসহায় অবস্থার দিকে তাকালেই বোঝা যায় সামগ্রিক ভাবে দেশে বই কাড়তির চিত্র কতোখানি নৈরাশ্যবেন্জক। বইয়ের ক্ষেত্রে যে করুন অবস্থা চলছে তা দুর করতে হলে অধিক বই কিনা ,বইয়ের গঠন পাঠন বৃদ্ধি, উপহার হিসেবে বইয়ের প্রচলন ও পাঠাগার আন্দেলনকে সক্রিয় ও ব্যাপক ভিত্তিক করে তোলা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। একটি আন্দোলন হিসেবে বই পড়াকে সমাজের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে হবে। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান,ধর্ম,দর্শন,অনুরাগ-বিরাগম,আশা-আকাঙ্খা এবং অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন-সবকিছুর সমন্বয়েই বিভিন্ন সাহিত্যের জন্ম। অন্যান্য শাস্তের চেয়ে সাহিত্যই এসবের পরিপূর্ণতা দিতে সক্ষম। এ জন্য বেশি বেশি বই পুস্তক অধ্যযন করতে হবে। বই পড়া ছাড়া শিক্ষা,সাহিত্য,সংস্কৃতিচর্চার অন্য কোন উপায় নেই। বই পড়ার নির্মল আনন্দ মানুষের মনে পুষ্টি জোগায়,তার ভেতরকার সুকুমার বৃত্তিগুলোকে প্রস্ফুটিত করে তোলে। রাসূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে-মানুষ যখন মৃত্যু বরন করে, তখন তার সব আমল বন্ধ হযে যায়, কিন্ত তিনটি আমলের সাওয়াব জারি থাকে ০১-সদকাযে জারিয়া০২-এমন বিদ্যা, যা থেকে মানব জাতি লাভবান হয়। এবং ০৩- এমন সুসন্তান যে তার জন্য দোয় করে( মুসলিম)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন